রমাতোষ সরকার
ড.রমাতোষ সরকার (ইংরেজি: Dr.Ramatosh Sarkar) (ফেব্রুয়ারি ১৫, ১৯৩০ – জুলাই ১২, ১৯৯৯) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ লেখক।[১]
রমাতোষ সরকার | |
---|---|
জন্ম | |
মৃত্যু | ১২ জুলাই ১৯৯৯ | (বয়স ৬৯)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | সুরেন্দ্রনাথ কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | ইউনিফায়েড ফিল্ড থিয়োরি |
দাম্পত্য সঙ্গী | দীপা সরকার |
পুরস্কার | ফেলো অফ দ্যা রয়্যাল অ্যাসট্রোনমিক্যাল সোসায়িটি (লণ্ডন) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | জ্যোতির্বিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | এম. পি. বিড়লা তারামণ্ডল কলকাতা |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | গগনবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনারমাতোষ সরকারের জন্ম দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মগরাহাটে। পিতা রণতোষ সরকার ও মাতা রাধারাণী দেবী। পিতা ছিলেন জেলা সাব রেজিস্ট্রার। স্কুলের পড়াশোনা কলকাতার নারকেলডাঙা জর্জ হাই স্কুলে (বর্তমানে নারকেলডাঙা হাইস্কুলে)। এখান থেকেই ম্যাট্রিক পাশ করেন ও রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে) থেকে স্নাতক হন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী গগনবিহারীবন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে " ইউনিফায়েড ফিল্ড থিয়োরি" উপর গবেষণা করে পিএইচ.ডি.ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাপ্রথমে কর্মজীবন শুরু করেন হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে ও পরে সেন্ট পলস্ কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এশিয়ার বৃহত্তম তথা বিশ্বের দ্বিতীয় প্ল্যানেটরিয়াম বিডলা তারামণ্ডল (বর্তমানে এম. পি. বিড়লা তারামণ্ডল) স্থাপিত হলে সেখানে তিনি লেকচারার হিসেবে যোগ দেন এবং যোগদান করার সাথে সাথেই সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার জন্য চালু করেন ‘ফ্রি ইভিনিং কোর্স অফ অ্যাস্ট্রোনমি’।[২]
বিজ্ঞান সাধনা ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ও প্রসার
সম্পাদনাস্কুলে ছাত্রাবস্থায় রমাতোষ সরকার কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সংস্পর্শে আসেন এবং সুকান্তের পরিচালিত 'কিশোর বাহিনী' র সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। জাতীয়তাবাদী পরিবারে জন্ম হলেও কিশোর কবির প্রভাব সেই সাথে মার্কসিস্ট স্টাডি ক্লাবে দেবীপ্রসাদ চট্টাপাধ্যায় ও সুশোভন সরকার প্রমুখের সান্নিধ্য তার চিন্তাজগতে সাম্যবাদী চেতনার বাতাবরণ সৃষ্টি করে তা তার মধ্যে আমৃত্যু অটুট ছিল। আর সেই সাথে তার বিজ্ঞান সাধনার পিছনে বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহার প্রেরণা ও শুভেচ্ছা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞানাচার্যের তিনি বাংলাভাষায় বিজ্ঞান প্রচারকে জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের সঙ্গে তার তরুণ বয়স থেকেই যোগাযোগ। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচারের জন্য সহজ সরল ও সাবলীল গদ্যে সাহিত্য আকাদেমির 'প্রবন্ধ' পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখা শুরু হয়। বই লেখাও শুরু করেন। তার জ্যোতির্বিজ্ঞানের বইগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
- ‘মহাবিশ্ব’,
- ‘মহাকাশ’,
- ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান’,
- ‘প্রাচীন ভারতের গণিত চিন্তা’
তবে, বিজ্ঞানতাপস রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর জীবনীগ্রন্থ লিখেছেন ইংরাজীতে। শেষের দিকে তার চর্চার বিষয় ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাস - তার মধ্যে প্রত্নজোতির্বিজ্ঞান নিয়েই শেষ পর্যন্ত গবেষণা চালিয়ে গেছেন।[১]
সম্মাননা
সম্পাদনাবাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অবদানের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের 'সত্যেন্দ্রনাথ বসু পুরস্কার' ও বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের 'জ্ঞান ও বিজ্ঞান' পুরস্কার লাভ করেন। লণ্ডনের রয়াল অ্যাসট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ফেলো (FRAS) নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ইনটারন্যাশনাল প্ল্যানেটরিয়াম সোসাইটির (USA) সদস্য ও ক্যালকাটা ম্যাথামেটিক্যাল সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
অন্যান্য
সম্পাদনারমাতোষ সরকার ভালো ক্রিকেট খেলতেন। কলেজে ক্রিকেট দলের সদস্য হয়ে বিভিন্ন জায়গায় খেলেছেন। সঙ্গীত পিপাসু তিনি নিজে গানও গাইতেন। বিজ্ঞানমঞ্চের সহ-সভানেত্রী দীপ্তি (দীপা) সরকার তার সহধর্মিণী। কন্যারা হলেন শ্রবণা ও শতভিষা।[২]
মৃত্যু
সম্পাদনারমাতোষ সরকার ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই জুলাই ৬৯ বৎসর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ৩৪৩, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ ক খ টেমপ্লেট:Cite web url