রবার্ট ডোপেল
জর্জ রবার্ট ডোপেল(৩ ডিসেম্বর ১৮৯৫-২ ডিসেম্বর ১৯৬২) একজন জার্মান আণবিক পদার্থবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি "ফার্স্ট উরানেভিন" (প্রথম ইউরেনিয়াম) নামক একটি সংঘের সদস্য ছিলেন। একটি টেকসই নিউক্লীয় বিক্রিয়ার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জানতে ১৯৩৯ সালের এপ্রিলে জার্মান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের(রাইখসার্জিমিনিস্টেরিয়াম) উদ্যোগে আয়োজিত একটি সভা থেকে এই সংঘের সৃষ্টি হয়। লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভের্নার হাইজেনবের্গের অধীনে কাজ করেছেন। তিনি ভারী পানিতে দ্রবীভূত ইউরেনিয়াম অক্সাইডের গোলীয় স্তরের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তিনি জার্মান পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পে অবদান রেখেছেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে পারমাণবিক বোমা নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করেন। তিনি ১৯৫৭ সালে জার্মানি প্রত্যাবর্তন করেন ও বর্তমান থুরিঙ্গিয়া প্রদেশের ইলমেনাউ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক পদে নিযুক্ত হন।
জর্জ রবার্ট ডোপেল | |
---|---|
জন্ম | ৩ ডিসেম্বর ১৮৯৫ স্যাক্সে-ওয়েমার-আইজেনাচ, জার্মান সাম্রাজ্য |
মৃত্যু | ২ ডিসেম্বর ১৯৮২ | (বয়স ৮৬)
জাতীয়তা | জার্মান |
নাগরিকত্ব | জার্মানি |
মাতৃশিক্ষায়তন | লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রিডরিচ শিলার বিশ্ববিদ্যালয় জেনা মিউনিখ লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | জার্মান পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্প সোভিয়েত পারমাণবিক বোমা প্রকল্প |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | আণবিক পদার্থবিজ্ঞান |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্জবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় মিউনিখ লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | ড. ভিলহেল্ম ভিন |
অন্যান্য উচ্চশিক্ষায়তনিক উপদেষ্টা | ড. ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ |
প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা
ডোপেল নিউস্টাড শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১৯-১৯২৪ সালে তিনি লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্রেডরিখ শিলার বিশ্ববিদ্যালয় ও লুডভিগ ম্যাক্সিমিলিয়ান ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখে পড়াশোনা করেন। শেষোক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিলহেল্ম ভেইনের অধীনে ১৯২৪ সালে ডোপেল পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[১]
কর্মজীবন সম্পাদনা
জার্মানিতে সম্পাদনা
ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর ডোপেল গটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে রবার্ট ডব্লিউ পোহলের শিক্ষণ সহকারী পদে নিযুক্ত হন। মিউনিখের পশ্চিমে অবস্থিত রুডলফ ফ্রেইহার্ন ফন হার্শ জু প্লানেগের ব্যক্তিগত বিজ্ঞানাগারে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী ইয়োহানেস স্টার্কের সাথে অ্যানোড রশ্মি নিয়ে কাজ করেন।
১৯২৯ সালে তিনি উর্জবুর্গের জুলিয়াস-ম্যাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষণ সহকারী পদে নিযুক্ত হন। ১৯৩২ সালে তিনি সেখানকার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।
১৯৩৩ সালে তিনি লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান। এখানে তিনি ভের্নার হাইজেনবার্গের অধীনে কাজ করেন। ডোপেল তেজস্ক্রিয় পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে ফ্রিৎস কির্চনারের স্থলাভিষিক্ত হন।[২]
১৯৩৯ সালের ২২ এপ্রিল জর্জ জুস নিউক্লীয় বিক্রিয়কে ইউরেনামের ব্যবহার সম্পর্কে উইলিয়াম হানলে-র গবেষণা উপস্থাপনা শুনেন। অতঃপর জুস ও হানলে জার্মান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভিলহেল্ম ড্যানকে ইউরেনিয়ামের সম্ভাব্য সামরিক ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করেন। সাত দিন পরে, একদল বিজ্ঞানী মন্ত্রণালয়ে টেকসই নিউক্লীয় শৃঙ্খল বিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করেন। এটিই প্রথম উরানভেরিন বা ইউরেনিয়াম ক্লাব নামে পরিচিত। এর সদস্য ছিলেন- ওয়ালথার বোথে, ভিলহেল্ম হানলে, রবার্ট ডোপেল , হান্স গাইগার,উলফগ্যাং জেটনার, গারহার্ড হফম্যান ও জর্জ জুস। জুস, হানলে ও তাদের সহকর্মী রাইনহোল্ড মানকফ অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন। সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ডাকা হলে ১৯৩৯ সালের আগস্টে তাদের কাজ স্থগিত রাখতে হয়।
সেনাবাহিনীর সমরাস্ত্র কার্যালয় রাইখ গবেষণা কাউন্সিলকে নিজেদের আওতাভুক্ত করার পর দ্বিতীয়বার উরানভেরিন শুরু হয়। এভাবে জার্মানির পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পের সূচনা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯-এ দ্বিতীয় উরানভেরিনের প্রথম সভা আয়োজিত হয়। দ্বিতীয়বার আরেকটি সভা আয়োজিত হয়, যেখানে নতুন করে ক্লাউস ক্লুসিয়াস, কার্ল ফ্রেডরিখ ফন ভিজসাকার , ভের্নার হাইজেনবের্গ ও ডোপেল যোগদান করেন।
১৯৪০ সালের আগস্টে ডোপেল আর তার স্ত্রী ক্লারা নিউক্লীয় বিক্রিয়কে ভারী পানি ব্যবহারের উপযোগিতা প্রমাণ করেন। ক্লারা শুরুতে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন ও ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৩৪ সাথে ডোপেলের সাথে বিয়ের পর তিনি পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন এবং বিনা বেতনে লাইপজিগে চাকরি করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিমান হামলার ফলে তাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়।
পরবর্তীতে সোভিয়েতদের নির্দেশে তিনি তাদের পারমাণবিক বোমা প্রকল্পে কাজ করেন। তিনি মস্কোয় ভারী পানি উৎপাদন নিয়ে লেভ ভোলমারের সাথে কাজ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ওরোনেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মিত অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন।
১৯৫৭ সালে তিনি পূর্ব জার্মানি ফিরে আসেন। ১৯৮২ সালে ইলমেনাউ শহরে রবার্ট ডোপেল মৃত্যুবরণ করেন।