রক্তাক্ত বাংলা
রক্তাক্ত বাংলা মম চলচ্চিত্রের প্রথম প্রযোজনায় এবং মমতাজ আলীর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থায় গৃহীত, মুদ্রিত ও পরিস্ফূটিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটির মূল কাহিনি রত্না চ্যাটার্জীর; এবং চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেন শান্তি কুমার চ্যাটার্জী।[১] স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়।[২] চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ করেন সাধন রায় ও এম.এ মোবিন এবং শব্দগ্রহণ করেন মোজাম্মেল হক আর সম্পূর্ণ চলচ্চিত্রর সম্পাদনা করেন বুলবুল চৌধুরী।
কাহিনি সংক্ষেপ
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটি শুরু হয় গ্রাম বাংলার অপরূপ দৃশ্য দিয়ে। পরের দৃশ্যে দেখা যায় হাসি নামে একটি মেয়েকে ও তার বড় ভাই শাহেদকে যিনি একজন ভাস্করশিল্পী। শাহেদের বোন শাহেদের খুব আদরের, শাহেদ কোনও ভাস্কর্য বানালে হাসি তার ভাইকে ছড়া বানিয়ে গান শুনাতো। একদিন শাহেদের বাড়িতে সন্ধ্যা নামে এক মেয়ে আসে। সন্ধ্যা শাহেদের ভক্ত, সেও শাহেদের মত শিল্পী হতে চায়। সন্ধ্যা শাহেদের ঘরে শাহেদের হাতে তৈরি কিছু মূর্তি ও ভাস্কর্য নাড়িয়ে দেখে, তখনই দুর্ঘটনা ক্রমেই সন্ধ্যার হাত থেকে মাটির পুতুল পড়ে ভেঙে যায়, যেটি দেখে শাহেদ প্রচন্ড রেগে যায় এবং সন্ধ্যাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়।
২৫শে মার্চ ১৯৭১। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের মানুষের উপর চালায় বর্বরোচিত গণ্যহত্যা; মসজিদ, মন্দির ধর্মীয় উপাসনালয় মানুষের ঘরবাড়ি তাদের নির্মমতা ও অত্যাচারের শিকার। শাহেদের বোন হাসিকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। যা দেখে শাহেদ ভেঙে পড়ে। হাসির মৃতদেহে রক্ত দিয়ে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে আর মানুষের এই নির্মম অবস্থা দেখে শাহেদ মুক্তিযুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। শাহেদ মুক্তিবাহিনীর ক্যাপ্টেন এবং সেক্টর ইনচার্জের দায়িত্ব পায়। শাহেদ ও তার গেরিলা দল বহু আক্রমণে সফল হয়। দেশ স্বাধীন হলে শাহেদ বুঝে উঠতে পারেনা সে কোথায় যাবে কী করবে? ঠিক সেই মূহুর্তেই একটি গাছের নিচে বিশ্রাম নেবার সময় এক মেয়ের চিৎকার শুনতে পায় শাহেদ। অন্ধকারে লাইট মেরে শাহেদ চিনতে পারে সেই মেয়েকে যে মেয়ে তার বাড়িতে পুতুল ভেঙে ছিলো। সেখানেই উপস্থিত হয় সন্ধ্যার বড় ভাই ডাক্তার মাসুদ যিনি পূর্বে সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন। মাসুদের কাছে শাহেদ জানতে চায় সন্ধ্যার এই অবস্থার কারণ। জবাবে মাসুদ বলে সন্ধ্যা পাকবাহিনীর নির্যাতনের শিকার। শাহেদকে দেখার পর থেকে সন্ধ্যা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করে। শাহেদ দুটি কারণে সন্ধ্যার কাছে ক্ষমা চায়। মাসুদকে শাহেদ প্রতিশ্রুতি দেয়ে সন্ধ্যাকে সুস্থ করার। একদিন শাহেদ ভাবতে ভাবতে তার মৃত ছোট বোন হাসির একটি ভাস্কর বানায়, সন্ধ্যা জানতে চায় কে? শাহেদ বলে, ওর নাম হাসি। সন্ধ্যা মনে করে এটি বুঝি শাহেদের প্রেমিকা। সন্ধ্যার মনে প্রচুর অশান্তি হয়। পরে শাহেদ সন্ধ্যাকে বলে হাসি তার কী হয়। সব শুনে লজ্জায় আর অপমানে আত্মহত্যা করতে যায় সন্ধ্যা। তার আগে শাহেদ চলে এসে অনেক কষ্টে সন্ধ্যাকে এই আত্মহত্যা থেকে বের করে আনে। চলচ্চিত্রটি শেষ হওয়ার পূর্বে একটি লেখা দিয়ে শেষ হয় "শেষ নয় শুরু"।
কুশীলব
সম্পাদনাশ্রেষ্ঠাংশে ছিলেন বিশ্বজিৎ, কবরী, গোলাম মুস্তফা, সুলতানা, জয়নাল, খলীল মঞ্জু দত্ত ও সরকার কবিরউদ্দিন।[১]
- বিশ্বজিৎ - শাহেদের চরিত্রে অভিনয় করেন
- কবরী - সন্ধ্যার চরিত্রে অভিনয় করেন
- গোলাম মুস্তাফা - মাসুদের চরিত্রে অভিনয় করেন
- সুলতানা - হাসির চরিত্রে অভিনয় করেন
অন্যান্য কলাকুশলী
সম্পাদনাএই চলচ্চিত্রর অন্যান্য কলাকুশলীরা হলেন-
- শিল্প নির্দেশনাঃ হাসান আলী
- রূপসজ্জাঃ শহীদ আলী
- স্থিরচিত্রঃ পিয়াসী ফটগ্রাফার
- পরিস্ফূটনঃ মফিজউদ্দিন
- মুদ্রণঃ ইউসুফ আলী খান
- প্রচারঃ নকশা
সংগীত
সম্পাদনাএই চলচ্চিত্রটির আবহ সঙ্গীত পরিবেশনা করেছে আলাউদ্দিন লিটল অর্কেষ্ট্রা। ছবির সংগীত পরিচালনা করেন সলিল চৌধুরী।[১] এছাড়া অন্যান্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন লতা মুঙ্গেশকর, মান্না দে ও সবিতা চৌধুরী।[১] এই ছায়াছবির ‘দাদাভাই মূর্তি বানাও’ গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়।[১]
সমালোচনা
সম্পাদনাএই চলচ্চিত্রটি একশন দৃশ্যের দুর্বলতা ও মোটা দাগে ধর্ষণের দৃশ্য চিত্রায়ণের কারণে সমালোচিত হয়েছিল।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ মারিয়া, শান্তা। "রক্তাক্ত বাংলা: যুদ্ধদিনের ছবি"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ২০১৯-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৫।
- ↑ ক খ "বাংলা চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধ"। quizards.co। ২০১৮-১০-১৪। ২০২০-০৮-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৫।