রকি বালবোয়া (চলচ্চিত্র)

সিলভেস্টার স্ট্যালোন পরিচালিত চলচ্চিত্র

রকি বালবোয়া রকি ৬ নামেও পরিচিত) রকি সিরিজের ষষ্ঠ পর্ব, লেখা, পরিচালনা, অভিনয়ে রয়েছেন সিলভেস্টার স্ট্যালোন। মূল চরিত্রেই অভিনয় অবস্থান চালিয়ে গেছেন তিনি। ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালে। শুরুটা হয়েছিলো ৩০ বছর আগে, ১৯৭৬এ অ্যাকাডেমি পুরস্কার বিজেতা চলচ্চিত্র রকি-র মাধ্যমে। চলচ্চিত্রটিতে বালবোয়াকে মুষ্ঠিযুদ্ধ থেকে অবসর নেওয়া একজন বিপত্নীক হিসেবে দেখা যায়। স্থানীয় এক ইতালীয় রেস্তোঁরার মালিক এবং পরিচালকের ভূমিকায় কাজ করছে এখন রকি। রেস্তোঁরাটির নাম "আর্দ্রিয়ান'স", মৃতা স্ত্রীর নামের সঙ্গে মিলিয়ে এই নামটি রেখেছে সে। 

রকি বালবোয়া (চলচ্চিত্র)
রকি বালবোয়া ছায়াছবির পোস্টার
পরিচালকসিলভেস্টার স্ট্যালোন
প্রযোজকচার্লস উইঙ্কলার
ডেভিড উইঙ্কলার
বিলি চার্টঅফ
কেভিন কিং টেম্পলটন

নির্বাহী প্রযোজক:
রবার্ট চার্টঅফ


আরউইন উইঙ্কলার
রচয়িতাসিলভেস্টার স্ট্যালোন
শ্রেষ্ঠাংশেসিলভেস্টার স্ট্যালোন
আন্তোনিও টারভার
বার্ট ইয়ং
মাইলো ভেন্টিমিগলিয়া
সুরকারবিল কন্টি
চিত্রগ্রাহকক্লার্ক ম্যাথিস
সম্পাদকশন অ্যালবার্টসন
পরিবেশকমেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার কলম্বিয়ান পিকচারস
মুক্তি২০ ডিসেম্বর, ২০০৬
স্থিতিকাল১০০ মিনিট
দেশমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষাইংরেজি
নির্মাণব্যয়২৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার
আয়১৫৬.২ মিলিয়ন ইউএস ডলার

স্ট্যালোনের বক্তব্য অনুযায়ী, রকি-৫ নির্মানের সময় যথেষ্ট "মনোযোগী" তিনি ছিলেন না। যেকারণে অনেক ভক্তের সঙ্গে তিনি নিজেও অনুমানযোগ্য সমাপ্তি দেখে হতাশ হয়েছিলেন। কাজেই তিনি রকি বালবোয়ার কাহিনী নিজের সাম্প্রতিক সংগ্রাম এবং বিজয়ের সঙ্গে সমান্তরালে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।[১]

চলচ্চিত্রে তারকা অভিনেতা হিসেবে আরও রয়েছেন বার্ট ইয়ং (রকির বন্ধু এবং সম্বন্ধি পলির ভূমিকায়), রকি সিরিজে এটাই তার শেষ উপস্থিতি। বাস্তবজীবনেও মুষ্ঠিযোদ্ধা আন্তনিও টারভার এই ছবিতে অভিনয় করেন ম্যাসন "দ্য লাইন" ডিক্সনের ভূমিকায়। ছবিতে তাকে বর্তমান ওয়ার্ল্ড হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখা যায়। বক্সিং প্রোমোটার লু ডিবেলাকে ছবিতেও প্রোমোটার হিসেবেই দেখা যায়, তিনি এখানে ডিক্সনকে প্রমোট করেন। মাইলো ভেন্টিমিগলিয়া রকির ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন, এখন সে প্রাপ্তবয়স্ক। সিরিজের আগের চলচ্চিত্রগুলো থেকে দুটো গৌণ চরিত্রকে এখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখা যায়। মেরি, যে কিশোরীকে রকি ঝামেলা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলো রকি-তে, এবং স্পাইডার রিকো, ১৯৭৬ সালের চলচ্চিত্রে আবির্ভূত রকির প্রথম প্রতিপক্ষ। পেছনের ছবিগুলোর অনেকের কথাই রকি বালবোয়াতে উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে প্রথম ছবিটির।

চলচ্চিত্রটি ২০০৬ সালের ২০শে ডিসেম্বর মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার, কলাম্বিয়া পিকচারস এবং রেভুল্যুশন স্টুডিওজের সৌজন্যে মুক্তি পায়। বক্স অফিসের প্রত্যাশা ছাপিয়ে যায় এটি, সমালোচকরা ইতিবাচক মন্তব্য করেন। রকি বালবোয়া বেশ কয়েক ফরম্যাটে মুক্তি পেয়েছে, ডিভিডি বিক্রয় থেকেও উঠেছে ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সিরিজের সর্বশেষ সিকুয়েল ক্রীড ২০১৫সালের ২৫শে নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে।

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

বিশ বছর হয়ে গেল বিপত্নীক রকি বালবোয়া (সিলভেস্টার স্ট্যালোন) বক্সিং থেকে অবসর নিয়েছে। চার বছর হয়ে গেল ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে স্ত্রী আর্দ্রিয়ান পেনিও বালবোয়া (টালিয়া শায়ার)। ছোট অথচ অত্যন্ত সফল একটি ইতালীয় রেস্তোঁরা চালাচ্ছে এখন রকি, নাম রেখেছে স্ত্রীর নামে। খেতে আসা মানুষগুলোকে নিজের অতীত দিনের গল্প শোনায় সে, আর্দ্রিয়ানের মৃত্যুর পর থেকে নিজের সঙ্গেও এক নীরব লড়াই চলছে তার। ছেলে রবার্টের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন যেন দূরের হয়ে এসেছে। রবার্ট এখন সরকারি চাকুরে। রকির প্রাচীনতম বন্ধু পলি পেনিও এখনও ওর পাশেই আছে, তবে অতীত রোমন্থন করতে করতে সে-ও ক্লান্ত। 

এক রাতে প্রাপ্তবয়স্কা "ছোট্ট" মেরির (জেরাল্ডাইন হিউস) সঙ্গে দেখা হয়ে গেল রকির। মেয়েটি ওদের এলাকাতেই থাকতো। বারো বছরের এক কিশোরী ছিলো তখন সে, বখে যাচ্ছিলো রাতারাতি। এখন অবশ্য সে ভালই আছে, লাকি সেভেন-এ বারটেন্ডারের চাকরি করছে। (এককালে রকির এখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিলো)। স্বামী নেই তার, একমাত্র ছেলে স্টিফেনসনকে (ডাকনাম: স্টেপস) নিয়ে মেরির সংসার। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রকির সঙ্গে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলো ওদের। তার রেস্তোঁরাতে হোস্টেসের চাকরি পেল মেরি। স্টেপস তাকে পিতৃতুল্য সম্মান দিলো।

এর মধ্যে পেশাদার মুষ্ঠিযোদ্ধা মেসন "দ্য লাইন" ডিক্সন (আন্তোনিও টারভার) নিজেকে অপরাজিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দক্ষতার মতো খ্যাতি সে পায়নি, দর্শকরা তাকে ভালবাসে না। এর মধ্যে ইএসপিএন একটি কম্পিউটার সিমুলেশন লড়াইয়ের আয়োজন করলো। ঠিক যেমনটা আয়োজন করা হয়েছিলো ১৯৭০ সালে রকি মার্সিয়ানো এবং মোহাম্মদ আলীর ক্ষেত্রে। রকি (তার সময়ের দক্ষতা) এবং মেসনের মধ্যে ১৫ রাউন্ডের প্রোগ্রামিয় এই লড়াইয়ে রকি বালবোয়া নক আউট করে জয় পেল মেসনের বিরুদ্ধে।বিতর্কের প্রধান বিষয় হয়ে উঠলো এই প্রসঙ্গ। সংক্ষেপে বললে, এই সিমুলেশনটি রকিকে আবারও বক্সিংয়ে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করলো। জনতার সামনে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আবারও তার লাইসেন্স নবায়ন করলো সে। ডিক্সনের প্রোমোটার প্রস্তাব করলো এই সুযোগে একটা চ্যারিটি এক্সিবিশন হয়ে যেতে পারে। বক্সিং ম্যাচটি লাস ভেগাসে আয়োজিত হল, ডিক্সনের হারানো জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার একটা প্রচেষ্টা বলা চলে একে। 

দ্বিধাতে থাকলেও, এক পর্যায়ে দু'জনই লড়াই করতে রাজি হল। সংবাদমাধ্যমগুলোয় গুঞ্জন উঠলো বেশ, রকির পুরোনো সুনাম আর ডিক্সনের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে খোঁচাখুঁচি চালালো তারা। কারণ, আজ পর্যন্ত কোন শক্ত প্রতিপক্ষের সঙ্গে ডিক্সন লড়েনি। পরে অবশ্য রবার্ট এসে রকিকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে, নিজের ব্যর্থতার দায় বাবার ওপর চাপিয়ে দিতে চায় সে। পাল্টা উপদেশ দিয়ে তিরস্কার করে রকি। বলে, জীবনে সফল হওয়ার জন্য "এটা গুরুত্বপূর্ণ নয় তুমি কতো জোরে আঘাত হানতে পারো। ব্যাপারটা হচ্ছে, কত আঘাত তুমি সহ্য করতে পারো। আর সেটা সামলে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারো সামনে।" অন্য কাওকে দোষারোপ করা কারও উপকারে আসবে না। পরদিন সকালে বাবা-ছেলের দেখা হয়ে গেল আর্দ্রিয়ানের কবরের সামনে। পূনর্মিলন হল পিতাপুত্রের। রকির পাশে থাকার জন্য চাকরিটাই ছেড়ে দেয় রবার্ট। অ্যাপোলো ক্রীডের পুরোনো ট্রেইনার ডিউকের (টনি বারটন) সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে থাকে রকি। খুব দ্রুতই ডিউক একটা ব্যাপার বুঝে গেল, ধীরগতির এই রকি আগের মত প্রতিপক্ষকে ক্লান্ত করে জিততে পারবে না। জয়ের একমাত্র উপায়, মুঠোর দানবীয় শক্তির পরিপূর্ণ ব্যবহার করা। "ব্লান্ট ফোর্স ট্রমা"য় প্রতিপক্ষকে অসহায় করে দেওয়ার দিকেই তাকে মনোযোগ দিতে হবে। 

এইচবিওর একটি পে-পার-ভিউ ইভেন্টে পরিণত হল এই লড়াইটি। নাম দেওয়া হলো "উইল ভার্সেস স্কিল"। রকির খুব একটা সুযোগ এখানে ছিলো না। একজন টিভি ধারাভাষ্যকার কৌতুক করে বললো, "এটাকে তো আর এক্সিকিউশন বলা যাচ্ছে না, তাই ওরা এক্সিবিশন বলছে আরকি!" কিন্তু ফ্র্যাংক সিনাত্রার "হাই হোপ" মিউজিকের সঙ্গে রিংয়ে পা রাখলো রকি, পরনে তার ছিলো সোনালি-দাগের কালো ট্রাংক। এটা পরেই অ্যাপোলো ক্রীডকে প্রথমবারের মত পরাস্ত করেছিলো সে (রকি-২ দ্রষ্টব্য)। জনতার গর্জন শুনে বোঝা গেল ভিড়ের বড় একটি অংশই আজ রকির পাশে রয়েছে। 

প্রথম রাউন্ডে ডিক্সন অনায়াসে কর্তৃত্ব বজায় রাখলো। দ্বিতীয় রাউন্ডেই অবশ্য বাঁহাত আহত হয়ে গেল তার, নাটকীয়ভাবে ফিরে এলো রকি। একবার ডিক্সনকে নক ডাউনও করে ফেললো সে। তারপর দর্শককে একের পর এক চমক দিয়ে নিজের পরাক্রম আর সহ্যক্ষমতার প্রদর্শনী দেখিয়ে গেল রকি। অপেক্ষাকৃত তরুণ আর দ্রুত লড়াকুর বিরুদ্ধে এমন প্রতিরোধ দর্শকরা আশা করেনি। এমনটা আশা করেনি ডিক্সনও, শেষ রাউন্ডে রকিকে এক পায়ের ওপর বসিয়ে দিলো সে, তবে প্রবীণ এই যোদ্ধা আবারও শক্ত পায়ে উঠে দাঁড়ালো, শেষবারের মতো আক্রমণ করলো প্রতিপক্ষকে। শেষ পর্যন্ত একে অন্যকে আঘাত করে গেল তারা, লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার জন্য ডিক্সনকে ধন্যবাদ দিয়ে রিং ছেড়ে নেমে গেল রকি। তখনও ফলাফল ঘোষিত হয়নি। মেসন ডিক্সন সামান্য কয়েক পয়েন্টের জন্য জিতে গেলেও রকি যে এতে কিছু মনে করেনি, তা পরিষ্কার বোঝা গেল। 

শেষ দৃশ্যে রকি বাড়ি ফিরে আর্দ্রিয়ানের কবরের কাছে ফিরে আসে। পাশে থেকে সাহায্য করার জন্য স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সে।

অভিনয়ে যাঁরা ছিলেন সম্পাদনা

  • সিলভেস্টার স্ট্যালোন:  রবার্ট "রকি" বালবোয়া, সিনয়র। অবসরপ্রাপ্ত বক্সার প্রাক্তন দুই-দফা ওয়ার্ল্ড হেভীওয়েইট চ্যাম্পিয়ন। ইএসপিএনের এক ভার্চুয়াল ম্যাচে দেখানো হল, যদি রকি আজ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মেসন ডিক্সনের সাথে লড়াই করে, তাহলে হয়তো সে-ই জিতবে। পাবলিসিটি আর সংবাদমাধ্যমগুলোর মনোযোগ রকিকে অবসর থেকে ফিরিয়ে  আবারও রিংয়ের ভেতর নিয়ে এলো।
  • বার্ট ইয়ং: পলি পেনিও। রকির ভাবসর্বস্ব সম্বন্ধী, বেস্ট ফ্রেন্ড এবং আর্দ্রিয়ানের ভাই।
  • মাইলো ভেন্টিমিগলা: রকি বালবোয়া এবং আর্দ্রিয়ানের একমাত্র ছেলে।
  • জেরাল্ডাইন হিউস: মেরি। যে মহিলার সঙ্গে রকির পরিচয় ত্রিশ বছর আগে, হঠাৎই তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রকির বক্সিংয়ে ফিরে আসার সমর্থনে ছিলো মেরি।
  • জেমস ফ্র্যান্সিস কেলি - দ্য থার্ড: স্টিফেনসন "স্টেপস"। মেরির ছেলে, রকির সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় তার। 
  • টনি বার্টন: টনি "ডিউক" এভারস। রকির ট্রেইনার। রকি-৩ এ জেমস "ক্লাবার" ল্যাংয়ের সঙ্গে রকির দ্বিতীয় লড়াইয়ের সময় থেকেই তার কর্নারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে সে। এর আগে প্রথম আর দ্বিতীয় ছবিতে তাকে অ্যাপোলো ক্রীডের ট্রেইনার হিসেবে দেখা যায়। প্রথম দুই ছবিতে তারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, পরের দুটো ছবিতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। 
  • আন্তোনিও টারভার: মেসন "দ্য লাইন" ডিক্সন। বর্তমান হেভীওয়েইট চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য ওয়ার্ল্ড। ভার্চুয়াল এক ম্যাচে রকিকে তার বিরুদ্ধে বিজয়ী ঘোষণা করার পর প্রবীণ এই যোদ্ধার উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় ডিক্সন। ডিক্সন একালের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলেও রকির সময়ে রকিকে যেমন সম্মান দেখানো হতো, তেমনটা তাকে দেখানো হয় না। 
  • টালিয়া শায়ার: অ্যাদ্রিয়ানা "অ্যাদ্রিয়ান" পেনিও বালবোয়া। রকির মৃতা স্ত্রী এবং তার পুরো বক্সিং ক্যারিয়ার ও জীবনের একনিষ্ঠ সমর্থক। অ্যাদ্রিয়ানকে বিভিন্ন ফ্ল্যাশব্যাকের দেখানো হয়েছে এ ছবিতে। এই ফ্ল্যাশব্যাকগুলো সিরিজের প্রাক্তন মুভিগুলো থেকেই নেওয়া হয়েছে। আর্কাইভস ফুটেজের মধ্যেই এ ছবিতে শায়ারের উপস্থিতি সীমাবদ্ধ। তবে ফাইনাল ক্রেডিটে তার নাম এসেছে। 
  • বার্জেস মেরেডিথ: মিকি গডমিল। রকির পরলোকগত বন্ধু, ট্রেনার এবং ম্যানেজার। বার্জেসকেও এ ছবিতে আর্কাইভস ফুটেজ থেকে দেখানো হয়েছে।

নির্মাণ নেপথ্য সম্পাদনা

ক্রমবিকাশ সম্পাদনা

রকি-৫ ছায়াছবিটি বক্স অফিসকে হতাশ করেছিলো। স্ট্যালোন বুঝতে পারলেন রকি বালবোয়া চরিত্রটিকে পরের ছায়াছবিতে ঠিকমত পরিসমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে হবে। কাজেই ১৯৯৬ সালে এমজিএম স্টুডিও এক্সিকিউটিভদের কাছে তার চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করতে থাকলেন। তবে বার বার তাকে প্রত্যাখ্যান করা হল। ২০০৫ সালে হ্যারি ই. স্লোয়ান এমজিএমের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠ হন। এবার তার দল প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে রাজি হন। স্ট্যালোন আরেকজনকে এসময় বন্ধু হিসেবে পাশে পেয়েছিলেন। তিনি হলেন রেভ্যুলুশন স্টুডিওর প্রেসিডেন্ট জো রথ।[১]

বাজেট এবং সময়ক্রম সম্পাদনা

২০০৫-এর ডিসেম্বর মাস। নেভাডার লাস ভেগাসে  চলচ্চিত্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।  ২০০৬ সালে শুটিং সরে আসে ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে এবং পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায়।[২] ৩৮ দিনের শুটিংয়ের জন্য ২৪ মিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রস্তাবিত হয়। ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট'স ডে-তে এই ছবিটির মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো। পরে সময় এগিয়ে এনে ২০০৬ এর বড়দিনের ঠিক আগে আগে একে মুক্তি দেওয়া হয়।[৩] ২০০৬ এর মার্চে প্রথম মুভি টিজার ইন্টারনেটে মুক্তি পায়। পরিপূর্ণ মুভি ট্রেইলার পাইরেট অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড ম্যান'স চেস্ট এর সঙ্গে  ০৭ই জুলাই মুক্তি পায়। 

অভিনেতা-অভিনেত্রী বাছাই সম্পাদনা

পূর্বকার ছায়াছবিগুলো থেকে কয়েকটি চরিত্র থাকবে এটা অস্বীকার্য ছিলো। স্ট্যালোনের অবিশ্যম্ভবী পূনরাগমন, বার্ট ইয়ং এবং বারটনের ভূমিকা ছিলো অত্যাবশ্যকীয়। কেবলমাত্র এরা তিনজন ছ'টি ছায়াছবিতেই ছিলেন। ট্রেভারের উপস্থিতির সাথে সিরিজটিতে ষষ্ঠবারের মত কোন বাস্তবজীবনের পেশাদার বক্সারকে দেখা গেল। এর আগে জো ফ্রেজার (রকি) পেড্রো লোভেল (রকি), রবার্তো দুর‍্যান (রকি-২), টমি মরিসন(রকি-৫) এব্বং মাইকেল উইলিয়ামস (রকি-৫)কে এই সিরিজে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে স্ট্যালোন চেয়েছিলেন রয় জোনসকে। ডিক্সনের ভূমিকাতে তারই অভিনয় করার কথা। তবে মি. জোনস স্ট্যালোনের ফোনকল রিসিভ করতে অনীহা দেখান। কাজেই ট্রেভারকে ডাক দিয়ে চরিত্রটি বুঝিয়ে দেন তিনি।[৪] মেরি- চরিত্রটি প্রথম ছায়াছবি রকি-তেই ছিলো, তবে এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জোডি লেতিজিয়া।[৫] তবে এই ছায়াছবিতে মেরির ভূমিকায় অভিনয় করেন জেরালডাইন হিউজ (লেতিজিয়া অবশ্য রকি-৫ এর জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন, তবে সেইসব দৃশ্যগুলো পরিবর্তন করা হয়। ওই সংস্করণে মেরিকে ফিলাডেলফিয়ার রাস্তাতে উদ্বাস্তু এবং ভবঘুরে হিসেবে পাওয়া যায়।) আরেকজন পরিচিতমুখ হলেন শেষ পাঁচ ছবিতে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অভিনয় করা স্টু নাহান, যিনি প্রকৃত জীবনেও একজন ক্রীড়া ভাষ্যকার। ডিক্সন এবং বালবোয়ার মধ্যকার কম্পিউটার সিমুলেশন  লড়াইটির ধারাবিবরণীতে তিনি ছিলেন।  এর আগে তিনি প্রথম তিন ছায়াছবিতে রিংসাইড কমেন্টেটর হিসেবে ছিলেন। অ্যাপোলো ক্রীড এবং আইভান ড্র্যাগোর ঐতিহাসিক সেই লড়াইয়ের (রকি-৪) পর সংবাদমাধ্যমের কর্মী হিসেবে তাকে দেখা যায়। শেষে চ্যাম্পিয়ন টমি গানের সঙ্গেও তার একটি দৃশ্য ছিলো। রকি বালবোয়ার শুটিং চলাকালে তার লিম্ফোমা ধরা পড়ে, ২০০৭ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৬] অবশেষে পেড্রো লোভেল (প্রথম ছবিতে যিনি স্পাইডার রিকোর অভিনয় করেন) রকি বালবোয়া-তে অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তাকে রকির রেস্তোঁরার কর্মী হিসেবে কাজ করতে দেখা যায়। 

বেশ কয়েকজন ক্রীড়া-ব্যক্তিত্ব নিজেদের ভূমিকাতে নিজেরা অভিনয় করেছেন। এঁদের মধ্যে জিম ল্যাম্পলি, ল্যারি মারচ্যান্ট আর ম্যাক্স কেলারম্যান রিংসাইড ব্রডকাস্ট টীম হিসেবে উপস্থিত ছিলেন (তিনজনই এইচবিও বক্সিংয়ের তৎকালীন ধারাভাষ্যকার)। ক্রীড়া প্রতিবেদক বার্ট সুগার, বারনার্ড ফার্নান্দেজ এবং স্টিভ স্প্রিংগারের উপস্থিতিও সেখানে ছিলো। সত্যিকারের বক্সার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইক টাইসন (ছবি মুক্তি পেতে পেতে তিনি অবসরে চলে গেছেন) ক্যামিও অ্যাপিয়ারেন্স প্রদর্শন করেন। ডিক্সন রিংয়ে ঢোকার পর তাকে উদ্দেশ্য করে বক্রোক্তি ছুঁড়ে দেন তিনি। লু ডিবেলা, প্রকৃতপক্ষেই যিনি একজন বক্সিং প্রমোটার, ডিক্সনের প্রমোটারের ভূমিকাতে অভিনয় করেন। ইএসপিএন-এর কয়েকজন ব্যক্তিত্বও নিজেদের ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন। স্পোর্টসসেন্টার উপস্থাপক ব্রায়ান কেনি ছবিতে দেখানো কাল্পনিক "দেন অ্যান্ড নাউ" সিরিজের উপস্থাপক হিসেবে আবির্ভূত হন। যে ক্রফোর্ড, ডানা জ্যাকবসন, স্কিপ বেলিস এবং উডি পেইজকেও এই ছায়াছবিতে দেখা যায়। রিং অ্যানাউন্সার মাইকেল বাফার নিজের চরিত্রেই অবস্থান করেন, একই কথা রেফারি কো কর্টেজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। 

টালিয়া শায়ার কেন আর্দ্রিয়ানের ভূমিকাতে ছিলেন না, ইউএসএ টুডে-র এই প্রশ্নের জবাবে স্ট্যালোন বললেন, "মূল স্ক্রিপ্টে ও বেঁচেই ছিলো। কিন্তু ঠিক নাটকীয় ধাক্কাটা কোথায় তাতে? ভাবলাম, 'কি হবে যদি ও না থাকে?' রকির ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে নিশ্চয়। একদম ভেঙ্গে পড়বে সে।"[৭] শায়ার বলেন, তার মতে "ছবিটিতে এই বেদনাদায়ক মোড় ভাল ভূমিকা রেখেছে। শোক রকিকে শক্তি জুগিয়েছে, আর্দ্রিয়ানকে পৌরাণিক এক রূপ দিয়েছে এটা।"[৭]

সঙ্গীত সম্পাদনা

অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজেতা বিল কন্টি কম্পোজিশনে রকি মিউজিকের উন্নত এক সংস্করণ বাজানো হয়েছিলো। আগের রকি ছায়াছবিগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই বিশেষ মিউজিকটি তৈরি করা হয়। রকি সিরিজের প্রায় সবগুলোর কম্পোজিশন বিল কন্টির করা। রকি-৫ এ তিনি ছিলেন না, ও সময় অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। কাজেই তার স্থানটি নিয়েছিলেন ভিন্স ডিকোলা। আগের ছায়াছবিগুলোর মতই মিউজিক রাখতে চেয়েছিলেন কন্টি, তবে রকি বালবোয়ার জন্য বিশেষ একটি মিউজিক প্রস্তুত করেন তিনি। মেরিকে উপস্থাপনা করতে এর প্রয়োজন ছিলো।

খসড়ারূপে ৪০-মিনিটের স্কোর রেকর্ড করা হয়েছিলো ২০০৬ এর গ্রীষ্মে। ক্যালিফোর্নিয়ার হলিউডে ক্যাপিটোল স্টুডিওতে কাজ করছিলেন কন্টি। প্রি-রেকর্ড স্ট্রিং, ব্র্যাশ আর পিয়ানো ট্র্যাকগুলো তিনি ৪৪-টুকরো অর্ক্রেস্ট্রার সঙ্গে মিশিয়ে দেন। পিয়ানোর সব কাজ তিনি নিজেই করেছিলেন। প্রতিটি ছায়াছবির মিউজিক কম্পোজ করার পর তিনি এটা করেই থাকেন। পুরোটা সময় তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন স্ট্যালোন। কয়েকটি রেকর্ডিং সেশনেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।[৮]  ক্যাপিটোল রেকর্ড ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৬-এ ছবি মুক্তির সাথে সাথে সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম "রকি বালবোয়া: দ্য বেস্ট অফ রকি" রিলিজ করেছিলো। এর বেশিরভাগ ট্র্যাক অবশ্য রকি সিরিজ থেকেই নেওয়া হয়েছে। 

স্কোরের পাশাপাশি, ছায়াছবিটি নাতাশা বেডিংফিল্ড, থ্রি সিক্স মাফিয়া, ফ্র্যাঙ্ক স্ট্যালোন সহ ফ্র্যাংক সিনাত্রার "হাই হোপস" এবং "দ্য মিরাকল", "ও বেবি বেবি"র মত ক্লাসিক গান পরিবেশন করে।[৯]  মৌলিক ট্র্যাক হিসেবে ডায়ান ওয়ারেনের গান "স্টিল হিয়ার" সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব রাখে। আগের নিবন্ধগুলোতে এর উল্লেখ আছে।[১০]  ক্রেডিটে এর নাম থাকলেও ছায়াছবিতে শেষ পর্যন্ত একে ব্যবহার করা হয়নি।

অসঙ্গতিসমূহ সম্পাদনা

চিত্রনাট্য সম্পাদনা

পঞ্চম মুভিটির একটি কাহিনী-অংশকে ষষ্ঠ মুভিতে ঠিকভাবে ব্যখ্যা করা হয়নি। রকি বালবোয়াতে রকি আবারও লড়াইয়ে নেমেছিলো। অথচ রকি-৫ এ তাকে ব্রেন ড্যামেজের শিকার হতে দেখা যায়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তার বক্সিং  ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছিলো। অথচ রকি বালবোয়াতে সে আবারও বক্সিংয়ে কীভাবে নামল? এই প্রশ্নের উত্তর স্ট্যালোন এক সাক্ষাতকারে দিয়েছিলেন:

"যখন রকির ব্রেন ড্যামেজ ধরা পড়লো, আমাদের মনে রাখতে হবে অনেক ক্রীড়াবিদই নানাধাঁচের ব্রেন ড্যামেজ নিয়ে খেলে যাচ্ছেন, ফুটবল, সকার আর অন্যান্য সাংঘর্ষিক খেলা, যেমন রাগবিতেও এমন খেলোয়াড় খেলছেন। রকি কিন্তু দ্বিতীয় কোন উচ্চবাচ্য না করে তার স্ত্রীর কথা মেনে অবসর নিয়েছিলো। সে ত্রিশ বছর আগের কথা। তাহলে, আজকের উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ করে রকিও অন্য যে কোন মুষ্ঠিযোদ্ধার মতোই লড়তে পারে। সে সময় তাকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা হয়তো ছিলো, তবে আজকের দিনে রকির শারীরিক অবস্থাকে লড়াইয়ের অনুপযোগী বলার কোন কারণ নেই।"[১১]

সিনেমাটোগ্রাফি এবং ফাইট কোরিওগ্রাফি সম্পাদনা

ছায়াছবির নাটুকে দৃশ্যগুলোকে অবশ্যই সিনেমাটিক স্টাইলে ধারণ করা হয়েছিলো, ডিক্সন আর বালবোয়ার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিলো। প্রথম দুই রাউন্ডের শুটিং করা হয়েছিলো অনেকটা পে-পার-ভিউ ব্রডকাস্টের ধাঁচ মেনে চলে। বালবোয়ার টীজার মুক্তি পেলে সেখানে শুধু সিরিজের আগের ছায়াছবিগুলোর দৃশ্যই ব্যবহার করা হয়েছিলো। তবে ট্রেভারের সত্যিকারের লড়াইগুলো থেকে কিছু দৃশ্য এনে ডিক্সনের পুরোনো লড়াই হিসেবে দেখিয়ে দেওয়া হয় (মুভির শুরুতে)। তবে রকি এবং ডিক্সনের লড়াইটি হাই ডেফিনেশনে শুট করা হয়। পরে একে আরও বর্ধিত করে টিভি-স্টাইলে উপস্থাপনা করা হয়।[১২]

প্রথম দুটো রাউন্ড শেষে লড়াইটির বাকি শুটিং খানিক "সিনেমাটিক" স্টাইলে করা হয়। এ থেকে পুরোনো রকি ছায়াছবিগুলোর কথা মনে পড়ে যেতে পারে। তবে অন্য সব ছায়াছবি থেকে এর একটা পার্থক্য ছিলো। এখানে লড়াইটির কোরিওগ্রাফের তুলনায় তাৎক্ষণিক বিচারবুদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যে কারণে কোরিওগ্রাফ করা লড়াই নয়, এটা অনেকটাই সত্যিকারের বক্সিং ম্যাচে পরিণত হয়েছিলো।[১৩] আগের ছবিগুলো থেকে এখানেই রকি বালবোয়া-র পার্থক্য। আগে প্রতিটি ঘুষি, প্রতিটি পদক্ষেপ নিখুঁতভাবে লিখিত আর অনুশীলনকৃত ছিলো। তবে রকি বালবোয়াতে নয়।[১৪]

চূড়ান্ত লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সামান্য চিত্রনাট্যের সমস্যা থেকে গেছিলো। ক্যামেরার সামনে নকল ঘুষি নয়, শক্তিশালী আর প্রকৃত ঘুষিই ছুঁড়ছিলেন স্ট্যালোন আর টারভার। ফলাফল যা হবার তাই হলো। স্ক্রিপ্টের আগেই দুইজনের নাক থেকে রক্ত বের হতে শুরু করলো।[১৫] "যখন আপনি লক্ষ্য করবেন, দেখবেন আনতোনিও আমার দিকে এগিয়ে এসে দুমাদুম ঘুষি বসিয়ে দিচ্ছে, ফাটিয়ে দিচ্ছে আমাকে একদম, তারপর পাগলের মত হাহা করে হাসছেও," ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন স্ট্যালোন, "তারপর সে বলছিলো, 'আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে?!' আমি বললাম, 'দেখ,  আমি তোমার নাগালের বাইরে যেতে পারছি না। আর যাই হোক, মার খাওয়ার শখ ছিলো না আমার!" ধীরে ধীরে আসতে দেখবেন আপনি, তারপর সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন্ম, "মাথা সরান... মাথা, সরান... সরান।"[১৬]

একটি ছায়াছবি, দুটো সমাপ্তি সম্পাদনা

স্ক্রিনপ্লে-তে রকি  স্প্লিট ডিসিশনে হেরে যায়। (রকি-তে ঠিক যেমনটা হয়েছিলো), তবে আরেকটি সমাপ্তির শুটও করা হয়ে গেছিলো। ওতে তৃতীয় এবং চূড়ান্ত বিচারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রকি লড়াইয়ে বিজয়ী হয়ে যায়।[১৭] স্পিকার বলে ওঠে "আর এখনও ..." ডিক্সন আগ্রহী হয়ে ওঠে রীতিমত, "এখনও ... ফিলাডেলফিয়ার অপ্রাজেয় হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন রয়ে গেলেন রকি বালবোয়া!!"  জনতার সোল্লাসের প্রতি ডিক্সনের ক্রুরা ব্যাঙ্গ করে ওঠে, তবে হেরে যাওয়ার পরও ডিক্সন উদার ভঙ্গিতে সবকিছু মেনে নেয়। এভাবে এটা আবারও প্রথম মুভির মতো সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো।[১৮]

বন্টন সম্পাদনা

রকি বালবোয়া মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার, রেভ্যুলুশন স্টুডিওজ এবং কলাম্বিয়া পিকচারসের যৌথ সম্পত্তি। কলাম্বিয়া যে সনির অংশ তারা এমজিএমের ২০% অংশ ধারণ করে। রকি সিরিজ মূলত: ইউনাইটেড আর্টিস্টস (বর্তমানে এমজিএমের অধীন) গ্রুপের পরিবেশনায় চলছিলো, যৌথ-মালিকগণ ভেবে দেখলেন এই ছায়াছবিটি এমজিএমের নতুন বণ্টনের সুবিধা নিতে পারে এবং নেওয়া উচিতও।[১৯] টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স আমেরিকা এবং কানাডার বাইরের সব প্রেক্ষাগৃহে ডিভিডি বন্টণের দায়িত্ব বহন করলো। আমেরিকা আর কানাডার ভেতরে এই কাজটা করলো সনি পিকচার্স হোম এন্টারটেইন। টেলিভিশন সিন্ডিকেট রাইটস সংরক্ষণ করলো ডেমার-মার্কারি। ফিলিপাইন আর সুইজারল্যান্ডে ফক্স এবং ওয়ার্নার ব্রোস একসাথে ছায়াছবিটি মুক্তি দিলো। জাপানে ফক্স অন্য রকম প্রচার করে। ছায়াছবিটির নাম রাখা হয় "রকি: দ্য ফাইনাল" জাপানে ছবিটি ২০০৭ সালের ২০ এপ্রিল মুক্তি পায়।[২০]

হোম রিলিজ সম্পাদনা

রকি বালবোয়া তিনটি ফরম্যাটে পাওয়া যায়। ব্লু-রে ডিস্ক, ডিভিডি এবং ইউএমডি। অঞ্চল ০১ এ এটি ২০শে মার্চে মুক্তি পায়, অঞ্চল ০২ এ মুক্তি পায় ২১শে মে, ২০০৭এ।ছায়াছবিটি শুধু ডিভিডি বিক্রি করেই ৩,৫৬,২২,৯৯৮ ইউএস ডলার উপার্জন করে।[২১] ব্লু-রে এবং ডিভিডিতে মুছে দেওয়া দৃশ্যগুলোর পাশাপাশি দ্বিতীয় সমাপ্তিটুকুও উপহার দেওয়া হয়েছিলো। ব্লু-রে ভার্সনের বিশেষ আকর্ষণ অবশ্য ছিলো অন্য খানে। ডিভিডির সব ভিডিও ওখানে ছিলো, তবে 1080p হাই ডেফিনেশনে।[২২]

ভিডিও গেম সম্পাদনা

২০০৬ এর ডিসেম্বরে ইউবিসফট আর এমজিএম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়, রকি ভিডিও গেম রকি বালবোয়া মুক্তি পেতে চলেছে। প্লে-স্টেশন পোর্টেবল হ্যান্ডহেল্ড কনসোলের জন্য এই গেমটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো। ২০০৭ এর ২০শে মার্চ মুক্তি পায় গেমটি, ব্লু-রে এবং ডিভিডি রিলিজের সাথে একই সঙ্গে।

গ্রহণযোগ্যতা সম্পাদনা

বক্স অফিস সম্পাদনা

ছবিটি অপ্রত্যাশিতভাবে বক্স অফিস সফল হয়েছে। এমনকী স্টুডিওর প্রত্যাশাও ছাড়িয়ে যায় এই ছবিটি। ওপেনিং নাইটেই প্রত্যাশার তিনগুণ খরচ উঠিয়ে নিয়েছে তারা। খসড়া হিসেবে বিশ লাখ ইউএস ডলার উঠে গেছিলো, অথচ বাইরের কনকনে শীতে এতো মানুষের অংশগ্রহণ হবে এটা তারা কল্পনাও করেননি।[২৩] প্রথম সপ্তাহেই ১,২৫,৪০,০০০ ডলার এসেছিলো এই ছবি থেকে। এরপর একে ১৯৯৩ এর পর স্ট্যালোনের সবচেয়ে সফলতম অভিনয় বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছিলো। গ্রসিং সফলতার ভিত্তিতে একে পৃথিবীর ষষ্ঠ বক্সিং চলচ্চিত্র হিসেবে পাওয়া গেল। রকি বালবোয়ার ওপর রয়েছে চারটি রকি ফিল্ম এবং ক্লিন্ট ঈস্টউডের মিলিয়ন ডলার বেবি। পৃথিবীজুড়ে এই ছবিটি উপার্জন করেছে ১৫ কোটি ৫৭ লক্ষ ২১ হাজার একশ বত্রিশ ডলার।

সমালোচকদের মন্তব্য সম্পাদনা

রটেন টমেটো ওয়েবসাইটে এই ছায়াছবিটি ৭৬% "সার্টিফাইড ফ্রেশ" রেটিং পেয়েছে। ১৭৬টি রিভিউয়ের ওপর ভিত্তি করে ১০এ ৬.৫ রেটিং পেয়েছিলো ছবিটি। সাইটের সমালোচকবৃন্দ জানান, "অকল্পনীয় তবে উপভোগ্য আর ছুঁয়ে দেওয়ার মতো। রকি বালবোয়া অনেক বছর পর আবারও লড়াকু ফর্মে ফিরে এসেছে।" [২৪] মেটাক্রিটিকে এই ছায়াছবিটিকে ১০০তে ৬৩ দেওয়া হয়। ৩৬ জন সমালোচক এতে অংশ নেন। ভাল রিভিউ হিসেবেই বিবেচনা করা হয় এমন নাম্বারকে।

টেলিভিশন শো ইবার্ট অ্যান্ড রোপার-তে রিচার্ড রোপার এবং অতিথি রিভিউয়ার আয়শা টায়লার উভয়েই ছবিটিকে "থাম্বস আপ" রেটিং দেন। এছাড়াও ইতিবাচক রিচিউ এসেছে ভ্যারাইটি, নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনের ডেভিড এডেলস্টেইন [২৫], প্রিমিয়ার ম্যাগাজিনের ইথান অলটার, Filmsinreview.com এর ভিক্টোরিয়া আলেক্সান্ডার[২৬], পালো অলটো উইকলির জেন অফমাথ[২৭], Filmstew.com এর ব্রেট বাকলি[২৮], দ্য হলিউড রিপোর্টার[২৯], এন্টারটেইনমেন্ট উইকলির ঔয়েন গ্লেইবারম্যান[৩০] থেকে।

সমালোচনাও অবশ্য হয়েছে। ক্রিস্টি লেমায়ার বলেছেন এই ছবিটিতে স্রেফ এক সেলফ-প্যারোডি।[৩১] অর্থাৎ সিলভেস্টার স্ট্যালোনের অভিনয় দেখে তিনি মনে করেছেন এটা কোন এক প্যারোডি ছায়াছবিতে করলেই বেশি মানাতো। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের কেনেথ টুরান ছবিটির অযৌক্তিক অংশের সমালোচনা করেছেন। ম্যানক্স ইনডেপেন্ডেন্টের কম অ্যানড্রু বলেছেন, "গঠন আর অনুভবে প্রথম রকি ছবিটিকে তাঁরা ধারণ করতে পেরেছেন, তবে একটু বেশিই আবেগ দেখা গেল যেন এতে।" শেষে তিনি আরও বলেন, "স্ট্যালোন এই বিরক্তিকর স্মৃতিরোমন্থনগুলো না করলেও পারতো।"

স্ট্যালোন অবশ্য বলেছেন, যেমনটা করলে ভাল লাগছিলো তার তিনি সেটা সমালোচকদের কথা ভেবে চেপে যেতে চাননি। তিনি যেটা করতে উপভোগ করেছিলেন সেটাই করেছেন।

মুষ্ঠিযোদ্ধা সমাজে ছবিটিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। অনেক এক্সপার্ট মনে করেন রকি সিরিজটি এখনও ক্রীড়া বিষয়ক এক শক্তিশালী প্রতীক। বক্সিং দৃশ্যগুলো একেবারে বাস্তব বক্সিং খেলার মতোই দেখানো হয়েছে। ডিভিডিতে স্ট্যালোন জানান, এবার তিনি বাস্তব জীবনের ঘুষির শব্দই এই ছবিতে ব্যবহার করেছেন। আগের ছবিগুলোতে ঘুষির শব্দগুলো অনেক জোরে হয়েছিলো, যেটা সত্যিকারের শব্দ ছিলো না। আর অবশ্যই, স্ট্যালোন এবং টারভারের লড়াইয়ের দৃশ্যে তারা একে অন্যের দিকে সত্যিই ঘুষি ছুঁড়ছিলেন। ওটা শতভাগ অভিনয় ছিলো না। অনেকাংশেই ছিলো এক সত্যিকারের বক্সিং ম্যাচ।

টীকা সম্পাদনা

  1. Schwartz, Missy (December 14, 2006).
  2. "Rocky Balboa Filming Locations" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে.
  3. Welkos, Robert W. (November 26, 2005).
  4. DHB (December 16, 2006).
  5. "Jodi Letizia". 
  6. "Retired L.A. Sportscaster Stu Nahan Dies At 81".
  7. Keck, William (December 25, 2006).
  8. Goldwasser, Dan (June 14, 2006).
  9. "Rocky Balboa (2006) - Cast and Credits".
  10. "Natasha Bedingfield records 'Rocky' theme" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে.
  11. Moriaty (December 1, 2006).
  12. Tran, An (December 2006).
  13. Zwecker, Bill (December 14, 2006).
  14. Dutka, Elaine; J.D. Reed (June 14, 1982).
  15. Reality in the Ring: Filming Rocky's Final Fight (DVD).
  16. Walters, Mark.
  17. Horton, NP (September 7, 2012).
  18. "Rocky Balboa Alternate Ending - He Wins!
  19. "MGM to handle domestic distribution of "Rocky Balboa"".
  20. "Rocky The Final" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে.
  21. "Rocky Balboa".
  22. Wreckk.
  23. headgeek (২৩ ডিসেম্বর ২০০৬)। "Updated with New Comment From Sly! Stallone Would Like To Thank All Of You!"Aint It Cool News 
  24. "Rocky Balboa"। ২২ ডিসেম্বর ২০০৬। 
  25. "New York (magazine)" 
  26. http://www.rottentomatoes.com/m/rocky_balboa/articles/1562161/a_certified_crowd_pleaser_stallone_stayed_true_to_rocky_he_gave_rocky_back_to_us_without_dolling_him_up[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  27. "Palo Alto Online: Movie Screener - Rocky Balboa"। ২৪ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  28. "www.filmstew.com" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  29. http://login.vnuemedia.com/hr/login/login_subscribe.jsp?id=5oqi%2BHOaP1Ii4cw0KvPMlj09VHoUU1ZntqHzmkNCG5YG9WAq6db9hzY%2FRuFNP72stnF4CGdDKE%2By%0Ai6JO2SiWBUpE1bMcCvQOKYcBDyJ1HYoEt9Yl1IPHmCKROG2UdFA94IPOHeWji5UUQfaYPQVf3Gd2%0AhWd7UtPFwxmqgWqUF54aPvv1fq16ETj6UMfNaZObHyrYArJSIu8cv%2BORZ9DfPbHGmqfLahwdUa03%0AZthBxLygNPLabW5eIM%2Bo%2BptXfsbvUcTWQi0I%2F%2BYFPNyHkkobYEYFxhSeLI8r7GefszTloxqauBiW%0AYHFGabKLok7ZKJYFSkTVsxwK9A4phwEPInUdisEo%2Fg2VAiG7[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  30. Sylvester Stallone। "Rocky Balboa - EW.com"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  31. http://www.chinadaily.com.cn/entertainment/2006-12/19/content_762184.htm

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা