রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ২০২২

স্থানীয় সরকার নির্বাচন

২০২২ সালের রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছিল একটি বাংলাদেশী স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এটি ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং রংপুরে এটি ছিল এ জাতীয় তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে কর্পোরেশনের মেয়র ও ৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচনে মোট ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং অন্যান্য ২৪৬ জন সাধারণ পরিষদ ও সংরক্ষিত (মহিলা) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।[১][২]

রংপুরের মেয়র নির্বাচন, ২০২২

২৭ ডিসেম্বর ২০২২
নিবন্ধিত ভোটার৪,২৬,৪৬৯
 
প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া লতিফুর রহমান মিলন
দল জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র[ক]
নির্বাচনী প্রতীক কাঠের লাঙ্গল নৌকা হাতি

নির্বাচনের পূর্বে মেয়র

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা
জাতীয় পার্টি

নির্বাচিত মেয়র

TBD

নির্বাচনের পূর্বেও এটিই একমাত্র শহর ছিল যা জাতীয় পার্টির অধীনে ছিল,[৩] যা জাতীয় সংসদের বর্তমান বিরোধী দল।[৪] এটিও দেশের বারোটির মধ্য়ে দুটি সিটি করপোরেশনের একটি যা আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর দখলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ-সরকার এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের জন্য নির্বাচনটি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল- কারণ এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনগুলিকে বাংলাদেশকে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের অধীনে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সরকারের একটি 'পুতুল কমিশন' হিসেবে বিএনপি ও তাদের সমমনাদের দ্বারা অভিযুক্ত করা হয়।[৫][৬]

এছাড়াও একই বছরের জুন মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়রের কার্যালয় বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগের কাছে চলে যাওয়ায় অভিযোগ বেড়ে ওঠে।[৭][খ]

পটভূমি সম্পাদনা

সিটি কর্পোরেশন বা সিটি কাউন্সিল হল বাংলাদেশের স্থানীয় কাউন্সিলগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর , সাধারণত শহর বা মেট্রোপলিটন এলাকা নিয়ে গঠিত । প্রতি পাঁচ বছর অন্তর মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের জন্য নির্বাচন হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলগুলি একটি শহরের প্রশাসনিক অংশগুলিকে বিভক্ত করে এবং একটি শহরের ওয়ার্ডের সংখ্যা মোট প্রশাসনিক এলাকার উপর নির্ভর করে। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাদের ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দ্বারা নির্বাচিত হয়। প্রতি ৩টি ওয়ার্ডের জন্য সাধারণ পরিষদে মহিলাদের জন্য একটি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, তারাও জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। তবে মেয়র নির্বাচন তাদের কাছে অনেক বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন (RpCC) মেট্রোপলিটন রংপুর নিয়ে গঠিত । এটি আবার ৩৩টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। রংপুরে কর্পোরেশন ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একই বছর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, প্রথম মেয়র হিসেবে শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিকভাবে, রংপুর অঞ্চলকে জাতীয় পার্টির 'ঘাঁটি' হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ সমর্থক রয়েছে। বিগত দুটি নির্বাচনে, প্রথমটি আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী যিনি জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্য ছিলেন এবং সর্বশেষ জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিতেছিলেন।[৮]

প্রার্থীতা সম্পাদনা

মেয়র নির্বাচন সম্পাদনা

নাম নির্বাচনী প্রতীক   দল তথ্যসূত্র
মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা লাঙল জাতীয় পার্টি (এরশাদ) [২]
হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নৌকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মোঃ আমিরুজ্জামান হাতপাখা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
আবু রায়হান ডাব বাংলাদেশ কংগ্রেস
সফিউর রহমান মশাল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল
তৌহিদুর রহমান মন্ডল দেওয়ালঘড়ি খেলাফত মজলিস
খোরশেদ আলম লাল গোলাপ জাকের পার্টি ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে
মেহেদী হাসান বনি হরিণ স্বতন্ত্র
লতিফুর রহমান মিলন হাতি স্বতন্ত্র

ফলাফল সম্পাদনা

রংপুরের মেয়র নির্বাচন ২০২২
দল প্রার্থী ভোট % ±%
জাতীয় পার্টি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১,৪৬,৭৯৮ ৫২.৪৪% N/A
ইসলামী আন্দোলন মোঃ আমিরুজ্জামান হোসেন ৪৯,৮৯২ ১৭.৮২% N/A
স্বতন্ত্র লতিফুর রহমান মিলন ৩৩,৮৮৩ ১২.১০% N/A
আওয়ামী লীগ হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ২২,৩০৯ ৭.৯৭% N/A
সংখ্যাগরিষ্ঠতা ৯৬,৯০৬
ভোটার উপস্থিতি ২,৫২,৮৮২ ৬৫.৮৮% (-৮.৪২%])
নিবন্ধিত ভোটার ৪,২৬,৪৬৯
জাতীয় পার্টি নির্বাচনী এলাকা ধরে রাখে

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা পেয়েছে ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। এছাড়া ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছে হাতি। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া ২২ হাজার ৩০৯ টি ভোট পায়।[৯]

এই নির্বাচনে মেয়র পদে নয়জন প্রার্থী ছিলো। ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন প্রার্থীছিলেন।[১০] এছাড়া ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।[১১]

আরো পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "CEC: Rangpur city polls will be free, fair"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ১৩ ডিসেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  2. "Candidates in Rangpur city polls given election symbols"New Age (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ ডিসেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  3. Karmaker, Kongkon (১ ডিসেম্বর ২০২২)। "Rangpur city polls: JP relieved, AL troubled over rebels"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  4. Badal, Liakat Ali (২৬ অক্টোবর ২০২২)। "GM Quader cements power as Rangpur JaPa boycotts Ranga"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  5. "BNP calls upon JaPa MPs to resign"JagoNews24 (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ ডিসেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  6. "BNP terms EC govt puppet"The New Nation (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫। ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ 
  7. কুমিল্লার নির্বাচনের ‘ফলাফল বিতর্ক’ নিয়ে যা বলল নির্বাচন কমিশনProthom Alo। ১৯ জুন ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. Molla, Mohammad Al-Masum; Karmaker, Kongkon (২২ ডিসেম্বর ২০১৭)। "JP wins big in bastion"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ 
  9. Dhakatimes24.com। "টানা দ্বিতীয়বারের মতো রংপুর সিটিতে লাঙলের জয়"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৭ 
  10. "রসিক নির্বাচনে আসছে ফল, এগিয়ে লাঙ্গল"banglanews24.com। ২০২২-১২-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৭ 
  11. Dhakatimes24.com। "রংপুর সিটি নির্বাচন: ১৪১ কেন্দ্রের ফলাফলে লাঙল প্রথম, নৌকা চতুর্থ"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২৭ 

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Awami League 'rebel candidate', sought nomination as independent candidate after not receiving party nomination.
  2. যদিও অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, বিএনপি-র মধ্যকার কন্দলই এর জন্য দায়ী। বিএনপি-র এক নেতা (যিনি নির্বাচনের পূর্বকালীন মেয়র ছিলেন) দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন এবং আরেক নেতা আলাদাভাবে নির্বাচনে দাঁড়ান। উভয়ের মোট ভোট যোগ করলে বিএনপি-পন্থীদের ভোটই বিপুল বেশী, এছাড়া কন্দলের ফলে অনেক ভোটারই বিমূক হয়ে যান।