রংপুর টাউন হল

বাংলাদেশের একটি সাংস্কৃতিক স্থান

রংপুর টাউন হল বাংলাদেশের রংপুর শহরের সিটি হল। ঐতিহাসিক রঙ্গপুর নাট্য সমাজ (আরডিএ) ১৮৯৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করে। রংপুরের নাগরিক সমাজের ইতিহাসে এর একটি গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। এটি শহরের অন্যতম পরিচিত একটি স্থাপনা। এর বর্তমান ভবনটি ১৯১৩ সালে নির্মিত হয়েছিল।[১]

রংপুর টাউন হল ভবন

ইতিহাস সম্পাদনা

১৮৮৫ সালে প্রথমবারের মত আরডিএ রংপুরে একটি নাট্যমঞ্চ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে ১৮৯১ সালে কাকিনার তৎকালীন জমিদার নগরীর প্রাণকেন্দ্রে এক টুকরো জমি দান করেন। ১৮৯৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের ভারত সচিব দ্বারা জমির টুকরাটি আরডিএর কাছে হস্তান্তর করেন।[২] এখানে মঞ্চস্থ প্রথম নাটকটি ছিল মাইকেল মধুসূদন দত্তের "শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯)"[২] নাটক। কিন্তু অন্য একটি সূত্র অনুসারে[১] এখানে মঞ্চস্থ প্রথম নাটকটি ছিল রামনারায়ণ তর্করত্ন রচিত "কুলিনকুলসর্বস্ব" (১৮৫৪)। এই টাউন হল প্রাঙ্গনে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগার, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি (প্রতিষ্ঠা ১৮৫৪) রয়েছে। এর পাশাপাশি কলকাতার বাইরে "বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ" -এর প্রথম শাখা ছিল, "রংপুর সাহিত্য পরিষদ" এই লাইব্রেরীর একাংশেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় রংপুরের মাটিতে প্রাণ দেয়া শহীদদের আত্মত্যাগের স্মরণে এই প্রাঙ্গনেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং অনন্য " শহীদ মিনার"। টাউন হলটির সাথে রংপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালে রংপুরের প্রতিরোধী বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের এবং নিরীহ জনতার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের স্বাক্ষী দেয় এই ভবন। সেসময় এটি "কনসেনট্রেশন ক্যাম্প" এবং টর্চার সেল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।[১] এখন পুরো ক্যাম্পাসে রয়েছে- রংপুরের দুটি প্রধান লাইব্রেরি- পাবলিক লাইব্রেরি এবং জেলা লাইব্রেরি, শহীদ মিনার এবং রংপুরের আঞ্চলিক "শিল্পকলা একাডেমি"।

সাংস্কৃতিক প্রভাব সম্পাদনা

রংপুরকে বলা হয় আনন্দের শহর (রং মানে আনন্দ, পুর মানে শহর)। ঐতিহাসিকভাবে, রংপুর বাংলার প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি।[৩][৪] প্রায় আড়াইশো বছরের নাগরিক সাংস্কৃতি রংপুরকে সমৃদ্ধির দিকে তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে চলতে সাহায্য করেছিল এবং এতে এই প্রতিষ্ঠানটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করে চলেছে। এখন এটি রংপুরের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রধান কেন্দ্র। পহেলা বৈশাখের মত প্রতিটি জাতীয় দিবস বা সাংস্কৃতিক দিনে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকারের সংগঠনই বিশাল পরিসরে এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এই দিনগুলিতে, পুরো ক্যাম্পাসটি শহরের আনন্দ উদযাপনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এটি আঞ্চলিক রংপুরী ভাষা ও সংস্কৃতির অন্যতম আধার এবং উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাওয়াইয়া সঙ্গীতের অন্যতম চর্চাকেন্দ্র। এখানে, প্রায় প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা আলোচনা শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী দ্বারা আয়োজিত হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি আসাদুজ্জামান নূর, তুলসী লাহিড়ী এবং বেবী নাজনিন সহ বাঙালি সংস্কৃতির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের সাথে জড়িত। এছাড়াও এটি পূর্বে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পদসঞ্চারণায় মুখরিত হয়েছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা। Śāmasujjāmāna Khāna, Bāṃlā Ekāḍemī। 2013-<2014>। আইএসবিএন 984-07-5336-3ওসিএলসি 930364524  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "Rangpur Town Hall"Rangpur District [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Journey to Rangpur City Corporation"। ১৭ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫ 
  4. "Rangpur"britannica। ১৭ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা