যশোর জিলা স্কুল
যশোর জিলা স্কুল বাংলাদেশের যশোর জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন সরকারি বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৩৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। এটি যশোর জেলাসহ সমগ্র বাংলার প্রাচীনতম বিদ্যালয়সমূহের অন্যতম। এই বিদ্যালয়ে প্রায় ২০৪০ জন ছাত্র প্রভাতী ও দিবা শাখায় অধ্যয়ন করে।[১] যশোর জিলা স্কুলের প্রখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে আছেন ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার।
যশোর জিলা স্কুল | |
---|---|
অবস্থান | |
, ৭৪০০ | |
স্থানাঙ্ক | |
তথ্য | |
বিদ্যালয়ের ধরন | সরকারি মাধ্যমিক |
নীতিবাক্য | পড় তোমার প্রভুর নামে |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৮ |
বিদ্যালয় বোর্ড | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর |
বিদ্যালয় জেলা | যশোর জেলা |
ইআইআইএন | ১১৫৯৫৮ |
প্রধান শিক্ষক | মোঃ শোয়াইব হোসেন |
শিক্ষার্থী সংখ্যা | ২০৪০ জন (প্রায়) |
শ্রেণি | ৩য় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি |
ভাষা | বাংলা |
ক্যাম্পাস | ১টি |
শিক্ষায়তন | ১১.৫৯ একর (৪৬,৯০০ মি২) |
ক্যাম্পাসের ধরন | শহুরে |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
ইতিহাস
সম্পাদনাএটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৩৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান নাম জিলা স্কুল করা হয় ১৮৭২ সালে। পূর্বে এর নাম ছিল যশোর মডেল স্কুল। বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। প্রথমে এটি স্থানীয় রানীর বাংলো বাড়িতে শুরু হয়েছিল, পরবর্তীতে এই স্কুলটি যশোর এর খড়কীতে ৭.৮ একর জমি অনুদান পায় এবং সেখানে স্থায়ীভাবে শুরু হয় স্কুলের কার্যক্রম। ১৯৭১ সালে স্কুলটি রাজাকাররা, পাক হানাদার বাহিনির সহায়তায় স্কুলের আসবাব পত্র, মূল্যবান দলিল দস্তাবেজ সব পুড়িয়ে ফেলে।
১৮৭৪ সালে এখানে পার্সিয়ান ভাষাতে শিক্ষা প্রদান, পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে উর্দুতে শিক্ষাদান করা হত, অ-বাঙালি শিক্ষার্থীদের জন্য। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই স্কুল টিকে পাইলট প্রোজেক্ট এর অন্তর্ভুক্ত করেন ১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি পর্যায়ে। এবং এই বছরেই বিজ্ঞান শাখা চালু হয়। বাণিজ্য শাখা খোলা হয় ১৯৬৫ সালে এবং মানবিক শাখা খোলা হয় ১৯৭০ সালে।[২]
জিলা স্কুলের প্রথম প্রধানশিক্ষক ছিলেন মিঃ জে স্মিথ। এছাড়া এখানে উপমহাদেশের বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ এই স্কুল এ শিক্ষকতা করেছেন। যেমন- ডঃ মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কৃষ্ণ চন্দ্র মজুমদার, আনিস সিদ্দিকি,জিল্লুর রহমান সিদ্দিকি, সিরাজুদ্দিন হোসেন,প্রফেসর মোহম্মদ মনিরুজ্জামান, এবং কমরেড আব্দুল হক।[৩]
কার্যক্রম
সম্পাদনাবর্তমানে যশোর জিলা স্কুল এর দুইটা শিফট খোলা, প্রভাতী, এবং দিবা শিফট। বিদ্যালয়ের মাঝে অবস্থান করছে যশোর শহরের অন্যতম বড় অডিটোরিয়াম, এছাড়া বিদ্যালয়ের ৪ টি প্রসাসনিক ভবন আছে, দুইটা পুকুর, একটি বৃহৎ খেলার মাঠ, দুইটা গ্যারেজ,একটি মসজিদ, এবং প্রায় দুই হাজারের অধিক শিক্ষার্থী এবং পঞ্চাশের অধিক শিক্ষক এখানে পাঠদান করেন। যশোর জিলা স্কুল এর গ্রন্থশালা তে প্রায় ৫০০০ এর অধিক বই এবং বেশ কিছু মূল্যবান নথিপত্র, ইতিহাসের দলিল সংরক্ষিত আছে। সম্প্রতি যশোর জিলা স্কুল এর মধ্যে, সরকারি প্রাথমিক স্তর এর বই এর সংরক্ষনশালা তৈরি করা হয়েছে।বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.শোয়াইব হোসেন।[২]
চিত্রশালা
সম্পাদনাখ্যাতনামা শিক্ষার্থী
সম্পাদনা- বিচারপতি লতিফুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের প্রধান বিচারপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা
- প্রফেসর ড. এম. শমশের আলী, পরমাণু বিজ্ঞানী, গবেষক
- রাধাগোবিন্দ চন্দ্র, জ্যোতিস্ক বিজ্ঞানী।
- মোহাম্মদ সুলতান, ভাষা সৈনিক ও রাজনীতিবিদ।
- প্রফেসর শরীফ হোসেন : বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক ও যশোর সরকারি এম, এম কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।
- প্রফেসর ডঃ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান : বিশিষ্ট সাহিত্যিক, গীতিকার, কবি, গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান।
- মেজর জেনালের আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গণপ্রজাতান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী।
- ক্যাপ্টেন ডাঃ জীবন রতন ধর : ভাতর সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী
- আব্দুল হক : বিশিষ্ট বামপন্থী রাজনীতিবিদ
- শহীদ মশিয়ুর রহমান : বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। পাকিস্তান সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী।
- মোশাররফ হোসেন (যশোরের রাজনীতিবিদ) - বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, জাসদের প্রতিষ্ঠাকালীন সহ-সভাপতি।
- তরিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী।
- অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সম্পাদক
- মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান : একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী গীতিকার ও কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, বেতার-টিভির নাট্যকার, প্রযোজক, অভিনেতা, উপস্থাপক ও রেডিও বাংলাদেশের প্রাক্তন পরিচালক।
- খালেদুর রহমান টিটো : বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি প্রাক্তন মন্ত্রী।
- রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি।
- কাজী রফিকুল আলম : অহছানিয়া মিশনের পরিচালক ও আহছানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা।
- মোঃ মানিরুজ্জামান : শিল্প দপ্তরের প্রাক্তন সচিব।
- শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুদ্দীন হোসেন : বিশিষ্ট সাংবাদিক।
- মোঃ আলমগীর সিদ্দিকী : প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ।
- দিদার ইসলাম, কুইক রেডিও’র আবিষ্কারক।
- সালাউদ্দীন লাভলু : বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা ও নাট্য পরিচালক।
- আজিজুল হাকিম : বিশিষ্ট নাট্যাভিনেতা।
- মহাত্মা শিশির কুমার ঘোষ - খ্যাতনামা সাংবাদিক ও বাংলা নবজাগরনের ব্যক্তিত্ব
- মথুরানাথ বসু, সমাজসেবক
- শাহ মোহাম্মদ ফারুক, বিজ্ঞানী, গবেষক
- মোঃ কাওসার আলী-বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল এবং হকি দলের খেলোয়াড় এবং জাতীয় হকি কোচ।
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ বাংলাপিডিয়াতে যশোর জিলা স্কুল।
- ↑ ক খ জিলা স্কুল, যশোর। বাংলাপিডিয়ায় যশোর জিলা স্কুল। বাংলাপিডিয়া।
- ↑ "যশোর জিলা স্কুল (১৮৩৮) - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail"। jessore.info। ২০১৯-০৫-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০৪।