যদি রাত পোহালে শোনা যেত

"যদি রাত পোহালে শোনা যেত" হল ১৯৯১ সালের বাংলাদেশী সঙ্গীত অ্যালবাম জনতার নৌকা-এর একটি গান। আধুনিক এই সঙ্গীতের গীতিকার ছিলেন হাসান মতিউর রহমান। মলয় কুমার গাঙ্গুলী রচিত এই গানটি মূলত আলমাস আলীর পরিচালনায় গেয়েছেন। গানটি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় গান হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অডিও অ্যালবামের অন্যান্য গানের সাথে গানটি চেনাসুর থেকে প্রকাশিত হয়।[১]

"যদি রাত পোহালে শোনা যেত"
জনতার নৌকা অ্যালবাম থেকে
মলয় কুমার গাঙ্গুলী কর্তৃক সঙ্গীত
ভাষাবাংলা
রচিত১৯৯০
প্রকাশিত১৯৯০
মুক্তিপ্রাপ্ত১৯৯১
রেকর্ডকৃত১৯৯১
স্টুডিওঝংকার স্টুডিও
স্থানঢাকা
ধারাআধুনিক গান
দৈর্ঘ্য০৪:২৭
লেবেলচেনাসুর
সুরকারমলয় কুমার গাঙ্গুলী
গীতিকারহাসান মতিউর রহমান
প্রযোজকহাসান মতিউর রহমান
বহিঃস্থ অডিও
audio icon ইউটিউবে "মলয় কুমার গাঙ্গুলীর কণ্ঠে গাওয়া গান"
audio icon ইউটিউবে "সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া গান"

পটভূমি সম্পাদনা

গায়ক মলয় কুমার গাঙ্গুলীর প্রিয় ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তিনি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেই যন্ত্রণা থেকেই মলয় তাকে নিয়ে একটি গান করতে চেয়েছিলেন।[২] ১৯৯০ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলনে গান গাওয়ার দায়িত্ব পান তিনি। এরপর তিনি হাসান মতিউর রহমানকে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি করে দুটি গান লিখতে বলেন। মুজিবকে নিয়ে গান লেখা দায়িত্বের দিক থেকে কঠিন ছিল বিধায় তিনি প্রথমে রাজি না হলেও পরে বাধ্য হয়েছিলেন। ভোরবেলায় যখন তার হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ল, তখন তিনি গানের কথার জন্য কিছু ধারণা পেয়ে লিখে ফেলেন।[৩] তারপর সকালে তিনি মলয় কুমার গাঙ্গুলীর কাছে গিয়ে গানের কথাগুলো দেখান। সঙ্গে সঙ্গে গানটির সুরও করেন মলয়। সেই সম্মেলনে এটি গেয়েছিলেন মলয়। সম্মেলনে উপস্থিত শ্রোতারা গানটি পছন্দ করেন ও প্রশংসা করেন।[৪] ১৯৯৬ সালের জুনে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক বছর পর প্রধানমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে গানটি গাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সে সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী ফরিদ আহমেদের পরিচালনায় সাবিনা গানটি গান।[১]

রেকর্ড ও মুক্তি সম্পাদনা

তৎকালীন সামরিক জান্তার হুমকির ভয়ে ঢাকার কোনো স্টুডিও গানটি রেকর্ড করতে না চাইলে মলয় প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে গানটি রেকর্ড করেন। গানটি রেকর্ড করার জন্য সামরিক সরকার মলয় কুমার গাঙ্গুলীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে ও তার সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেয়।[২] বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের ফলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পদত্যাগ করার পর সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এরপর হাসান মতিউর রহমান দ্বিতীয়বারের মতো চেনাসুর লেবেলে গানটি রেকর্ড করেন। জনতার নৌকা শিরোনামের অ্যালবামে গানটি প্রকাশিত হয়।[১] আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার অ্যালবাম প্রকাশের পর গানটি জনপ্রিয়তা পায়।[২][৫] অ্যালবামটি ১৯৯১ সালে এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে লোকেরা এটির ক্যাসেট কেনার জন্য লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।[৪]

পুনর্নির্মাণ সম্পাদনা

কৌশিক হোসেন তাপস পরিচালিত গানটির তৈরি নতুন সংস্করণটি গান বাংলাইউটিউবে ১৫ আগস্ট ২০২১-এ প্রকাশিত হয়।[৬]

অর্জন সম্পাদনা

বছর পুরস্কার মনোনয়ন বিভাগ ফলাফল সূত্র
২০২০ নাট্যজন শ্যামল অধিকারী স্মৃতি পুরস্কার হাসান মতিউর রহমান শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত বিজয়ী [৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "'যদি রাত পোহালে শোনা যেত...': একটি গানের জন্মকথা"প্রথম আলো। ১৫ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২ 
  2. সাদ, সাইমুম (১৫ আগস্ট ২০২১)। "বিরূপ পরিস্থিতিতে যেভাবে সৃষ্টি হল 'যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই'"বিডিনিউজ২৪.কম। ১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২ 
  3. আকবর, জাহিদ (১৫ আগস্ট ২০২১)। "যেভাবে লেখা হলো 'যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই' গানটি"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২ 
  4. "গানের গল্প: যদি রাত পোহালে শোনা যেত"ভোরের কাগজ। ১১ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২ 
  5. "'এখনকার শিল্পীরা মনে করেন গানের কথা ও সুর একটা হলেই হলো'"ইত্তেফাক। ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২ 
  6. "বঙ্গবন্ধু স্মরণে নতুন করে 'যদি রাত পোহালে শোনা যেত'"ঢাকা পোস্ট। ১৪ আগস্ট ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২ 
  7. "বঙ্গবন্ধু গানে পুরস্কৃত হলেন গীতিকার হাসান মতিউর রহমান ও সুজন হাজং"আমাদের সময়। ৪ মার্চ ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০২২