মো. কেরামত আলী
মো. কেরামত আলী (১৯০১-১৯৬৯) একজন বাঙালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও দানশীল ছিলেন। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এর কৃষক শ্রমিক পার্টি হতে এম এল এ নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে এম এন এ নির্বাচিত হন।[১]
মো. কেরামত আলী | |
---|---|
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৬৫ – ১৯৬৯ | |
নির্বাচনী এলাকা | সিলেট-৩ |
পূর্ব পাকিস্তানের এম এল এ | |
কাজের মেয়াদ ১৯৫৪ – ১৯৫৪ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৯০১ মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা , ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান কমলগঞ্জ উপজেলা , বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ৩ নভেম্বর ১৯৬৯ পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তান (ঢাকা, বর্তমান বাংলাদেশ) |
সমাধিস্থল | কেরামতনগর, কমলগঞ্জ উপজেলা |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৬৯ সাল পর্যন্ত) |
রাজনৈতিক দল | কৃষাণ লীগ কৃষক শ্রমিক পার্টি কনভেনশন মুসলিম লীগ |
দাম্পত্য সঙ্গী | জুলেখা খাতুন |
সন্তান | ৭জন |
শৈশব ও পড়ালেখা
সম্পাদনামৌলভী কেরামত আলী মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার বাদে সোনাপুর অঞ্চলে ১৯০১ সালে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী মোঃ সফাত আলী এবং মাতা মোছাঃ মরিয়ম বিবি। সাত ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি বড়।
মৌলভী কেরামত আলী বাল্যকালে গ্রামের পাঠশালা বিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন, অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং মাইনার (ষষ্ঠ) পর্যন্ত পড়ালেখা করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা শেষ করেন।এছাড়াও তিনি স্থানীয় মক্তবে আরবী, ফারসী ও উর্দু শিক্ষাগ্রহণ করেন। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৩০-১৯৩২ সালে বনজমহালের ব্যবসা শুরু করেন।তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের বনবিভাগ জুড়ি রেঞ্জ,রাজকান্দি রেঞ্জ ও রঘুনন্দন রেঞ্জের অধিকাংশ বনজমহাল ক্রয় করেছেন বনজমহালের পাশাপাশি পাট, চা, ইট, জ্বালানী, মেশিনারী সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেন। তৎকালীন সময় তিনি বর্তমান সিলেট বিভাগের মধ্যে প্রসিদ্ধ কেরামতনগর ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (কে.আই.সি), কেরামতনগর, কমলগঞ্জ নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশ-বিদেশে সরবরাহ করতেন।তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তিনি পাট ও বনজমহালের (বাশ ও গাছ) অফিস স্থাপন করেন। জায়গা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নাম হলঃ নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা (প্রধান অফিস), মনুমুখ, আশুগঞ্জ, তামাকপট্টি, ফান্দাউক। তিনি লন্ডনের ডান্ডি শহর ও আদমজি জুটমিলসহ অন্যান্য জুটমিলে পাট রপ্তানি করতেন।তৎকালীন সরকারের শিল্পখাত, কৃষিখাত ও পাটখাতসহ বিভিন্নধরনের বাণিজ্য ও রপ্তানির কাজ করেন। কাজের অংশ হিসেবে বিশ্বের সতেরটিরও অধিক দেশে সফর করেন। [৩]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাতিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৪৫ সালে এডভোকেট জসিম উদ্দিনকে সাথে নিয়ে কৃষাণ লীগ গঠন করেন।১৯৪৬ সালে অনুষ্ঠিত আইন পরিষদ র্নিবাচনে কৃষাণ লীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে আইন পরিষদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে পরাজিত হন। ১৯৫৩ সালে শেরে বাংলার নেতৃত্বে ‘কৃষক শ্রমিক পার্টি’র প্রতিষ্ঠাকালে মূখ্যভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ র্নিবাচনে যুক্তফ্রন্ট এর কৃষক শ্রমিক পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এম.এল.এ র্নিবাচিত হন।
১৯৫৪ সালের ২৪ অক্টোবর যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের প্রায় দুই মাস পর তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার জরুরী অবস্থা জারীর মাধ্যমে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে বাতিল করে এবং মো. কেরামত আলী ও শেখ মুজিবুর রহমান সহ ৩৫ জন যুক্তফ্রন্ট নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। পরর্বতীতে ১৯৫৫ সালের ৬জুন সকল বন্দিদের সাথে কেরামত আলীও মুক্তি পান।
আইয়ুব খান গঠিত কনভেনশন মুসলিমলীগ থেকে মনোনয়ন নিয়ে আলহাজ্ব কেরামত আলী ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৪] জাতীয় নির্বাচনে তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সিলেট অঞ্চলের হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী মাতা জনাব সিরাজুন নেসা ও মৌলভীবাজার জেলার পৃথিমপাশা এলাকার প্রথিতযশা জমিদার নবাব আলী আমজাদ খানের পুত্র নবাব আলী সফদার খান রাজা। [৫]
উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড
সম্পাদনা- মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ আর্থিক সহযোগিতা ও একটি বিজ্ঞানভবন প্রতিষ্ঠা করেন।
- শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ ,শ্রীমঙ্গল প্রতিষ্ঠার জন্য আর্থিক সহযোগীতা ও অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন।
- সফাত আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা,কমলগঞ্জ তার পিতার নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠা করেন।
- 'কেরামতনগর-৩২২১', কমলগঞ্জ নামক ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন।
- মো. কেরামত আলী জামে মসজিদ,কমলগঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়া তিনি সমাজসেবা মূলক বহুকাজ করেছেন তৎকালীন সময়।
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাজুলেখা খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৬৯ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যু বরণ ৬নভেম্বর তাঁর প্রতিষ্ঠিত সফাত আলী মাদ্রাসার ভিতর অবস্থিত হিফজখানার পাশে সমাহিত করা হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "মৌলভীবাজার জেলা প্রখ্যাত ব্যক্তি"। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ কমলগঞ্জ উপজেলা পরিচিতি। কমলগঞ্জ: কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ,। ২০১৫। পৃষ্ঠা ২০৪,২২৬–২২৭। আইএসবিএন 9789849133513।
- ↑ দানবীর আলহাজ্ব কেরামত আলী ও মোঃ মুহিবুর রহমান জীবন। নাজমুর রহমান শাহীন। ২০১৫। পৃষ্ঠা ২১–৮১।
- ↑ "LIST OF MEMBERS OF THE 4TH NATIONAL ASSEMBLY OF PAKISTAN FROM 1965-1969" (PDF)। National Assembly of Pakistan। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০২০।
- ↑ ইতিহাসের পাতা থেকে দানবীর মৌলভী মকবুল আলী। পাপড়ী প্রকাশনী,। ২০১৯। পৃষ্ঠা ৪৪–৪৫। আইএসবিএন 9789849374718।