মনিরুল খান

বাংলাদেশী অধ্যাপক ও গবেষক
(মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মনিরুল খান, প্রকৃত নাম মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান, যিনি এম. মনিরুল এইচ. খান নামেও পরিচিত, একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের উপর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান-এর তিনি একজন সহপ্রণেতা।[১] তাঁর বন্যপ্রাণী গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে পুরস্কৃত হন।[২][৩]

মনিরুল খান
জন্ম
মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান

১৯৭৪ (বয়স ৪৯–৫০)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
অন্যান্য নামএম. মনিরুল এইচ. খান
পেশাঅধ্যাপনা
পরিচিতির কারণবাঘ বিশেষজ্ঞ
উল্লেখযোগ্য কর্ম
বাঘ গবেষণায় ক্যামব্রিজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

টাঙ্গাইল মডেল প্রাইমারি স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয়। পরবর্তীতে টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, এম. এম. আলি কলেজ থেকে এইচএসসি, এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।[৪] ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কমনওয়েল্‌থ বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. ডেভিড চিভার্সের তত্ত্বাবধানে সুন্দরবনে বাঘের পরিবেশ ও সংরক্ষণ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রীলাভ করেন। এসময় মাঠপর্যায়ের গবেষণার জন্য তিনি বন্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ডব্লিউডব্লিউএফ' এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থায়ন পান।[৫]

কর্মজীবন সম্পাদনা

তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন)-এর ঢাকা কার্যালয়ে কাজ শুরু করেন।[৫] পরবর্তীতে পিএইচডি ডিগ্রী নেবার সময় সুন্দরবনে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হয় দীর্ঘদিন। পিএইচডি লাভের পরও 'সেভ দ্যা টাইগার ফান্ড' এবং 'জুলোজিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডন'-এর অর্থায়নে তিনি সুন্দরবনে বাঘ গবেষণা চালিয়ে যান আরো কয়েক বছর।[৫] এরও পরে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে পরবর্তিতে একজন অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।[৪]

জন্ম ও ব্যক্তিজীবন সম্পাদনা

মনিরুল খান ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন টাঙ্গাইলে লৌহজঙ নদের পাশেই একটি গ্রামে। তার বাবার নাম সাদত আলী খান, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চাকরী করতেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট মনিরুল।[৬]

পুরস্কার সম্পাদনা

তিনি ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে "ফর্কটেল জাইস পুরস্কার", জুলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন কর্তৃক প্রদানকৃত "ফিউচার কনসারভেসনিস্ট পুরস্কার" (ভবিষ্যৎ সংরক্ষণবাদী পুরস্কার)-এ ভূষিত হোন।[৬] বন্যপ্রাণী গবেষণা ও সংরক্ষণে অবদান রাখার জন্য ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদানকৃত "বঙ্গবন্ধু আওয়ার্ড অর ওয়াইল্ডলাইফ কনসার্ভেশন ২০১৫" (বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ২০১৫) পুরস্কারেও ভূষিত হোন তিনি।[২][৩][৭]

লেখালেখি সম্পাদনা

নিজের গবেষিত বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধের পাশাপাশি বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় তাঁর বইও প্রকাশিত হয়েছে:

  • প্রটেকটেড এরিয়াস অব বাংলাদেশ, এ গাইট টু ওয়াইল্ড লাইফ (বাংলাদেশের সংরক্ষিত এলাকা, বন্যপ্রাণী নিয়ে একটি নির্দেশিকা) (২০০৮), নিসর্গ প্রকল্প[৬]
  • টাইগার্স ইন দ্যা ম্যানগ্রোভস (ম্যানগ্রোভের বাঘসমূহ) (২০১১), আরণ্যক ফাউন্ডেশন
  • ফটোগ্রাফিক গাইড টু দ্যা ওয়াইল্ডলাইফ অফ বাংলাদেশ (বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীসমূহ নিয়ে আলোকচিত্র নির্দেশিকা) (২০১৮), আরণ্যক ফাউন্ডেশন
  • চিটাগাং হিলট্রাক্টস—দ্য ল্যান্ড অব ডাইভারসিটি[৬] (চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল—বৈচিত্র্যের ভূমি)
  • সুন্দরবনে বাঘের সন্ধানে (মার্চ ২০২১), প্রথমা প্রকাশন

এছাড়া তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৈনিকে বন্যপ্রাণী বিষয়ে লেখালেখিও করে থাকেন।

গণমাধ্যমে প্রচার সম্পাদনা

বিবিসি নিউজ তার সুন্দরবনের বাঘ গবেষণাকে উপজীব্য করে ২০০৮-০৯-এর দিকে "ম্যান-এটিং টাইগার্স অফ দা সুন্দরবনস" (সুন্দরবনের মানুষখেকো বাঘ) নামে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করে।[৮]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৮-২০২৭, বিএফআইএস ই-লাইব্রেরি, বাংলাদেশ বন বিভাগ
  2. বাংলাদেশ গেজেট, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বন শাখা-২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৭ মে ২০১৫।
  3. Govt awards 4 for conserving wildlife [বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সরকার ৪টি পুরস্কার প্রদান করেছে], দ্য ডেইলি স্টার, ১২ জুলাই ২০১৫
  4. শিক্ষক প্রোফাইল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  5. সুন্দরবনে বাঘের সন্ধানে, মনিরুল খান, প্রথমা প্রকাশন, মার্চ ২০২১।
  6. শিকারসঙ্গী থেকে বন্য প্রাণী সংরক্ষক, খসরু চৌধুরী, ৫ নভেম্বর ২০১৮, দৈনিক প্রথম আলো
  7. JU professor Monirul gets Bangabandhu Award [জেইউ অধ্যাপক ইমরুল বঙ্গবন্ধু পুরস্কার পেয়েছেন], বাংলানিউজ২৪, ১০ জুন ২০১৫
  8. Man Eating Tigers of the Sundarbans, a review [সুন্দরবনের মানুষখেকো বাঘ, একটি পর্যালোচনা], আবদুল্লাহ আল মামুন, নিউ এজ, ০৭ এপ্রিল ২০১৯

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা