মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মিয়া

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মিয়া (জন্ম: অজানা, মৃত্যু: ২০১২ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১][২]

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মিয়া
মৃত্যু২০১২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

মোহাম্মদ বদরুজ্জামান মিয়ার জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম নজিরুজ্জামান মিয়া এবং মায়ের নাম রোকেয়া সানম। তার স্ত্রীর নাম বিউটি বেগম ও নূরমহল বেগম। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

মো. বদরুজ্জামান মিয়া ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ১ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল লালমনিরহাট হয়ে ধরলা নদী পেরিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার অভিমুখে আসে। তখন ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের সমন্বয়ে গড়া মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করেন। এই যুদ্ধে মো. বদরুজ্জামান মিয়া সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ সাবসেক্টরে।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ভুরুঙ্গামারীর তিন দিকেই ভারত। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ভূরুঙ্গামারীর পাকিস্তানিদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে। এখানে নিয়োজিত ছিল পাকিস্তানিদের মিশ্র এক বাহিনী। নিয়মিত সেনা, ইপিসিএএফ (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স) ও স্থানীয় রাজাকার। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী প্রথমে আক্রমণ করে পাটেশ্বরীতে। মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত ছিলেন। একটি দলের নেতৃত্ব দেন মো. বদরুজ্জামান মিয়া। তারা একযোগে আক্রমণ চালিয়ে পাটেশ্বরী দখল করেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হন ভূরুঙ্গামারীর পূর্ব পাশে। সেখান থেকে তারা গোলাগুলি শুরু করেন। পাকিস্তানিরাও তার পাল্টা জবাব দেয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর সকাল থেকে মিত্রবাহিনী কামানের সাহায্যে গোলাবর্ষণ শুরু করে। তাদের যুদ্ধবিমানও কয়েকবার ভূরুঙ্গামারীর আকাশে চক্কর দিয়ে গোলাবর্ষণ করে। এর ছত্রছায়ায় মো. বদরুজ্জামান মিয়া ও তার সহযোদ্ধারা এগিয়ে যান পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা অবস্থানের সাত-আট শ গজের মধ্যে। পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে তাদের আক্রমণ প্রতিরোধ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা অবস্থান নেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষার চার-পাঁচ শ গজের মধ্যে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ ছিল ত্রিমুখী। মো. বদরুজ্জামান মিয়ার দল এক দিক থেকে এবং অপর দুই দল অন্য দুই দিক থেকে আক্রমণ চালায়। এতে পাকিস্তানি সেনা, ইপিসিএফ ও রাজাকাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মধ্য রাত পর্যন্ত পাকিস্তানি অবস্থান থেকে থেমে থেমে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল। এরপর গোলাগুলি কমে যেতে থাকে। সকাল হওয়ার আগেই তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ১৪ নভেম্বর খুব ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ভূরুঙ্গামারীতে ঢুকে পড়েন। সার্কেল অফিসার অফিস ও হাইস্কুলের কাছে পৌঁছে তারা দেখেন পাকিস্তানিরা পালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেও গোলাগুলি করেনি। কারণ, ওদের অস্ত্রের গুলি শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে তারা আত্মসমর্পণ করে। সিও অফিসের কাছে ছড়িয়ে ছিল নিহত পাকিস্তানিদের মৃতদেহ। সব মিলে ৪০-৪৫ জন। এক বাংকারে পাওয়া যায় নিহত এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের মৃতদেহ।

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ০৫-০৭-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা