মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
মোহাম্মদ আজিজুর রহমান (জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৪৫) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে।[১][২][৩]
মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান | |
---|---|
জন্ম | ১ জানুয়ারি ১৯৪৫ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
মাতৃশিক্ষায়তন | জগন্নাথ কলেজ মুরারিচাঁদ কলেজ |
নিয়োগকারী | বাংলাদেশ সেনাবাহিনী |
প্রতিষ্ঠান | বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক |
পরিচিতির কারণ | বীর উত্তম |
দাম্পত্য সঙ্গী | সেলিনা আজিজ |
সন্তান | ১ কন্যা ১ পুত্র |
পিতা-মাতা | শরাফত আলী, মহিবুন্নেছা |
তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক হিসেবে ২৫ আগস্ট ১৯৯৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।[৪]
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাআজিজুর রহমান ১ জানুয়ারি ১৯৪৫ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস গোলাপগঞ্জের রানাপিংয়ের ছত্তিশ গ্রামে। তার বাবার নাম সরাফত আলী এবং মায়ের নাম মহিবুন নেছা। পিতার কর্মস্থল হিসেবে তাকে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেট শহরে পড়াশুনা করতে হয়। তিনি সিলেট এমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।[১]
তিনি বসবাস করেন ঢাকার মহাখালীর ডিওএইচএসে। তার স্ত্রীর নাম সেলিনা আজিজ। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে।[১][৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাআজিজুর ১৯৬৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং কাকুলস্থ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে কমিশন লাভের পর লাহোরে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সাথে তিনি ঢাকার জয়দেবপুরে বদলি হয়ে আসেন।[১]
স্বাধীনতা পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমিক পদোন্নতির মাধ্যমে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। ১৯৯৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের এরিয়া কমান্ডার ও ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক হিসেবে ২৫ আগস্ট ১৯৯৬ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৪]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এর অবস্থান ছিল জয়দেবপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার পর তিনি ৩ নম্বর সেক্টরের আশ্রমবাড়ি/বাঘাইছড়ি সাবসেক্টরের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। পরে এস ফোর্সের ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নেয় শেরপুর-সাদিপুরে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, মুজাহিদ ও আনসার এবং ছাত্র-যুবক সমন্বয়ে গড়া দল। তারা এখানে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিরোধ যুদ্ধ করে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন মো. আজিজুর রহমান। কুশিয়ারা নদীর পাশে শেরপুর। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার সংযোগস্থল। সড়কপথে ঢাকা ও অন্যান্য জেলার সঙ্গে ওই চার জেলার যোগাযোগ শেরপুরের ওপর দিয়ে। এর অদূরে সাদিপুর। ৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ সিলেট শহরে, একাংশ খাদিমনগরে এবং আরেকটি অংশ অম্বরখানা ও ওয়্যারলেস স্টেশনে ছিলেন। সেদিন রাতেই তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। সিলেটের খাদিমনগরে প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধ হয়। অম্বরখানায় সারা রাত যুদ্ধ চলে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ তখন ছিল সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে। তারা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের। পাকিস্তানি সেনা সংখ্যায় ছিল বিপুল। সে তুলনায় মুক্তিযোদ্ধা ছিল অনেক কম। রাত তিনটার দিকে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। প্রচণ্ড আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হন। দক্ষিণ তীরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারাও ব্যাপক গোলাবর্ষণের মুখে পড়েন। চার ঘণ্টা যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনারা সিলেট শহর দখল করে নেয়। কিন সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের একটি এলএমজি পোস্ট। ওই স্থান তখনো মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। সেখানে পাকিস্তানি সেনারা বিরামহীনভাবে গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এতে এলএমজিম্যান শহীদ হন। তখন মো. আজিজুর রহমান নিজেই এলএমজি দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকেন। তার সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা অনেকক্ষণ নদী পারাপারে বিরত থাকতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে অনিবার্য অবস্থা নেমে আসে। এ সময় মো. আজিজুর রহমান জানতে পারেন তার ডান দিকের আরআর (রিকোয়েললেস রাইফেল) চালনাকারী দল অবস্থান ছেড়ে চলে গেছে। তখন তিনি দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখতে পান আরআরটি একটি জিপে পড়ে আছে। চালকও উধাও। এ অবস্থায় তিনি নিজেই ওই গাড়ি চালিয়ে তার কমান্ড পোস্টে যেতে উদ্যত হন। তখনই পাকিস্তানি সেনারা সরাসরি জিপের ওপর গোলাবর্ষণ করে। জিপটি নদীর ঢাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে। তিনি আহত হন। আহত আজিজুর রহমান এরপর পেছনে যান। সেখানে তার দেখা হয় পশ্চাদপসরণরত কয়েকজন সহযোদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু তারা আতঙ্কগ্রস্ত। পরে ওই সহযোদ্ধারা পালিয়ে গেল। তিনি এতে বিচলিত হলেন না।[৬]
৯ এপ্রিল ১৯৭১ সালে সিলেট শহরের সুরমা নদীর উপর কীনব্রিজের যুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য তাকে ‘বীর উত্তম' খেতাবে ভূষিত করা হয়।[১]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৬৪। আইএসবিএন 9789843351449। Archived from the original on ২৬ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৩-০৬-২০১২"। ২০২০-০৯-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩।
- ↑ আনোয়ার শাহজাহান (২০১৭)। স্বাধীনতাযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ: বইপত্র প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৭৫৬।
- ↑ ক খ "Border Guard Bangladesh"। www.bgb.gov.bd। ২০১৬-১১-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ ডেস্ক, প্রথম আলো। "মো. আজিজুর রহমান, বীর উত্তম"। চিরন্তন ১৯৭১ | প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-২৭।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৫৩। আইএসবিএন 9789849025375।
- প্রতিবেদন
এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে “তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না” শিরোনামে প্রকাশিত ধারাবাহিক প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
সামরিক দপ্তর | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী মেজর জেনারেল ইজাজ আহমেদ চৌধুরী |
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক ২৫ আগস্ট ১৯৯৬ – ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯৯ |
উত্তরসূরী মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান |