মোরয়া গোসাবী

মারাঠি হিন্দু সাধু

মোরয়া গোসাবী (নামান্তরে মোরোবা গোসাবী) ছিলেন হিন্দু গাণপত্য সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট সন্ত। গাণপত্যেরা মোরয়া গোসাবীকে তাদের সম্প্রদায়ের আদিগুরু তথা গণেশের “সর্বাপেক্ষা খ্যাতনামা ভক্ত” মনে করে।[১]

মোরয়া গোসাবী
মোরয়া গোসাবীর লিথোগ্রাফ চিত্র
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৩৭৫ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু১৫৬১ খ্রিস্টাব্দ
চিঞ্চবড, মহারাষ্ট্র, ভারত
ধর্মহিন্দুধর্ম
দর্শনগাণপত্য
ধর্মীয় জীবন
সাহিত্যকর্মগণেশ-বিষয়ক ভক্তিমূলক কবিতা
সম্মানগাণপত্য সম্প্রদায়ের আদিগুরু

মোরয়া গোসাবীকে খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যক্তিত্ব মনে করা হয়। মোরয়ার জীবন নিয়ে অসংখ্য কিংবদন্তি প্রচলিত। মোরগাঁও গণেশ মন্দিরে যাতায়াত শুরু করার পর মোরয়া গণেশের ভক্তে পরিণত হন। কথিত আছে, একবার তিনি এই মন্দিরে পূজা দিতে গিয়ে বাধা পেয়েছিলেন; তারপরই গণেশ মোরয়াকে বলেন যে তিনি চিঞ্চবডে আবির্ভূত হবেন এবং মোরয়া যেন সেখানেই গণেশের পূজার ব্যবস্থা করেন। সেই কারণেই মোরয়া মোরগাঁও ছেড়ে চিঞ্চবডে এসে গণেশের মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীকালে চিঞ্চবডেই মোরয়া জীবন্ত ভূগর্ভে সমাহিত হয়ে ‘সঞ্জীবন সমাধি’ গ্রহণ করেন।

মোরয়ার পুত্র চিন্তামণিকে সাক্ষাৎ গণেশ মনে করা হত এবং ‘দেব’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। চিন্তামণির পর মোরয়ার বংশ-পরম্পরায় আরও ছয় জন ‘দেব’ মর্যাদা পেয়েছিলেন। চিঞ্চবডের গণেশ মন্দিরে মোরয়া গোসাবীর সমাধি আজও বহু ভক্তকে আকৃষ্ট করে।

সময়কাল সম্পাদনা

যুবরাজ কৃষ্ণন মোরয়া গোসাবীকে ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীর ব্যক্তিত্ব মনে করলেও আর. সি. ধেরের মতে তিনি ছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর মানুষ।[২][৩] পল বি. কার্টরাইট ও অ্যানি ফেল্ডহাউসের মতে মোরয়ার সময়কাল হল ১৬১০-১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দ।[৪][৫] পিম্পরি-চিঞ্চবড পৌরসংস্থা কর্তৃপক্ষ মোরয়ার জীবনকাল বলে উল্লেখ করেছেন আনুমানিক ১৩৩০-১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কালকে।কথিত আছে, তিনি ১৪৭০ খ্রিস্টাব্দে বিবাহ করেছিলেন এবং পুত্র চিন্তামণির জন্ম হয়েছিল ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে।[৬] এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়ন মতে, মোরয়ার মৃত্যু ঘটেছিল ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে।[১]

বিভিন্ন কিংবদন্তিতে মোরয়া গোসাবীর সঙ্গে হুমায়ুন (১৫০৮-১৫৫৬),[৬] শাহজি (১৫৯৪–১৬৬৫)[২] ও শাহজির পুত্র শিবাজিকে (১৬২৭-১৬৮০) সাক্ষাতের কথা জানা যায়।[৭] মোরয়ার স্মারক মন্দিরের লেখ থেকে জানা যায় মন্দিরটির নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল ১৬৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দে।[৭]

প্রথম জীবন সম্পাদনা

একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, অধুনা কর্ণাটক রাজ্যের অন্তর্গত বিদারে এক দেশস্থ ব্রাহ্মণ পরিবারে মোরয়া গোসাবীর জন্ম।[৮] প্রথম জীবনে অকর্মণ্য মোরয়া পিতা কর্তৃক বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। মোরগাঁওতে এসে মোরয়া আকৃষ্ট হন গণেশের প্রতি। পরে মোরগাঁওয়ের বাস উঠিয়ে তিনি চলে আসেন ৫০ মাইল (৮০ কিমি) দূরে চিঞ্চবডে[৭]

অপর এক কিংবদন্তি অনুযায়ী অবশ্য যে দরিদ্র ধর্মপ্রাণ দেশস্থ ব্রাহ্মণ পরিবারে মোরয়ার জন্ম সেই পরিবারের বাস ছিল অধুনা মহারাষ্ট্র ভূখণ্ডের পুণেতে। কথিত আছে, গণেশ-ভক্ত এই নিঃসন্তান দম্পতি গণেশের বরেই মোরয়াকে পুত্র রূপে পেয়েছিলেন। মোরয়ার জন্মের পর এই পরিবার চিঞ্চবড থেকে ৪০ মাইল (৬৪ কিমি) পিম্পলিতে চলে আসেন। পিতামাতার মৃত্যুর পর মোরয়া চিঞ্চবড থেকে ২ মাইল (৩.২ কিমি) দূরে তাথবডেতে চলে যান।[৭] তবে উভয় কিংবদন্তিতেই দেখা যায়, মোরয়া রোজ অথবা মাসে একবার মোরগাঁও মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন।[৭]

অপর এক কিংবদন্তি অনুযায়ী, মোরয়ার জন্ম হয়েছিল শালিগ্রাম পদবির এক দেশস্থ ব্রাহ্মণ পরিবারে।[৯] মোরয়ার পিতা ভট শালিগ্রাম সপরিবারে বিদার থেকে মোরগাঁওতে চলে আসেন এবং সপত্নী গণেশের কাছে প্রার্থনা করেন পুত্রলাভের জন্য। এর কিছুকাল পরে মোরয়ার জন্ম হয়। অল্প বয়সে মোরয়া একবার ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে শালিগ্রাম দম্পতি পুত্রের নিরাময়ের অন্য উপায় না দেখে পুনরায় গণেশের কাছে প্রার্থনা জানান। কিছুকাল পরে নয়ন ভারতী নামে এক ‘গোসাবী’ (পুরোহিত) এসে মোরয়াকে ঔষধ প্রদান করায় তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয়, নয়ন ভারতীর থেকে মোরয়া ধর্মশিক্ষাও লাভ করেছিলেন। সেই থেকে শালিগ্রাম পরিবার ‘গোসাবী’ পদবি গ্রহণ করেন এবং মোরয়া পরিচিত হন মোরয়া গোসাবী নামে।[২][৬]

মোরগাঁও থেকে চিঞ্চবডে সম্পাদনা

 
মোরগাঁও গণেশ মন্দির; চিঞ্চবডে চলে যাওয়ার আগে মোরয়া গোসাবী এখানেই গণেশ-আরাধনা করতেন।

একটি কিংবদন্তির সূত্রে জানা যায়, গাণপত্য সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ উৎসব গণেশ চতুর্থী উপলক্ষ্যে একবার মোরগাঁও গণেশ মন্দিরে সাধারণ পুণ্যার্থী ও ধনী পিংলে পরিবারের লোকজনের ভিড়ে মোরয়া মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি। পূজার আনীত সামগ্রি একটি গাছের তলায় রেখে তিনি চলে যান। কিন্তু তারপরই এক অলৌকিক শক্তিবলে মোরয়ার পূজাপচারের সঙ্গে সাধারণের আনীত পূজাপচার অদলবদল হয়ে যায়। সাধারণ পুণ্যার্থীরা মোরয়ার বিরুদ্ধে জাদুবিদ্যা প্রয়োগের অভিযোগ আনে এবং মোরগাঁওয়ে মোরয়ার প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। গণেশ পিংলেকে স্বপ্ন দিয়ে জানান যে প্রিয় শিষ্য মোরয়ার অসম্মানে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাই পিংলে মোরয়াকে অনুরোধ করেন মোরগাঁওতে ফিরে আসতে। কিন্তু মোরয়া তা করতে অস্বীকার করেন। তখন গণেশ মোরয়াকে দর্শন দিয়ে বলেন যে তিনি চিঞ্চবডে গিয়ে মোরয়ার সঙ্গে বাস করবেন। এরপর মোরয়া নদীতে স্নান করার সময় মোরগাঁওয়ে পূজিত গণেশবিগ্রহের অনুরূপ একটি বিগ্রহ খুঁজে পান এবং একটি ক্ষুদ্র মন্দির নির্মাণ করে সেই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।[৭]

অপর এক কিংবদন্তি অনুযায়ী, মোরগাঁওয়ের প্রধান মোরয়ার পবিত্র জীবনযাপন দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মোরয়া মোরগাঁওতে আসলেই তিনি মোরয়াকে দুগ্ধ নিবেদন করতেন। একদিন প্রধান বাড়িতে ছিলেন না। তাই এক অন্ধ বালিকা মোরয়ার জন্য দুধ নিয়ে আসেন। মোরয়া যেখানে অপেক্ষা করছিলেন, সেই বাড়ির প্রাঙ্গনে প্রবেশ করা মাত্র বালিকাটি নিজের দৃষ্টি ফিরে পায়। এই অলৌকিক কার্যের জন্য মোরয়ার খ্যাতি বহুগুণ বেড়ে যায়। কথিত আছে, তিনি শিবাজির (১৬২৭-১৬৮০) চক্ষুও আরোগ্য করেছিলেন। পরবর্তীকালে শিবাজি মারাঠা সাম্রাজ্য স্থাপন করেন। লোকজনের ভিড় এড়াতে মোরয়া একটি বনে চলে যান। এখানেই বর্তমানে চিঞ্চবড শহরটি অবস্থিত। বার্ধক্যের কারণে মোরগাঁওতে আসাযাওয়া করতে মোরয়ার অসুবিধা হত। একবার মোরগাঁও পৌঁছে তিনি দেখেন মন্দির বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। গণেশ স্বপ্নে মোরয়াকে দর্শন দিয়ে পূজার নির্দেশ দেন এবং বলেন যে তিনি মোরয়ার সঙ্গে চিঞ্চবডে বাস করবেন এবং মোরয়ার পরম্পরায় সাত পুরুষ ধরে অবতীর্ণ হবেন। ঘুম ভেঙে মোরয়া দেখেন যে মন্দিরের দরজা অলৌকিক উপায়ে খুলে গিয়েছে। তিনি ভিতরে ঢুকে পূজা নিবেদন করেন। পরদিন সকালে পুরোহিতেরা দেখেন যে মন্দিরের দরজা খোলা এবং দেবতার পায়ে তাজা ফুল পড়ে রয়েছে। কিন্তু বিগ্রহের একটি মুক্তোর হার অদৃশ্য। হারটি পাওয়া যায় মোরয়ার কণ্ঠে। তিনি বন্দী হন, কিন্তু গণেশের কৃপায় মুক্তিলাভও করেন। চিঞ্চবডে নিজের গৃহে মোরয়া একটি চোঙাকৃতি পাথর উঠে আসতে দেখেন। সেটিকে গণেশ হিসেবে শনাক্ত করার পর তিনি একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।[৭]

অপর এক কিংবদন্তিতে মোরয়ার বন্দীদশার কথা বলা হয়েনি। বলা হয়েছে যে, মোরয়া মোরগাঁওয়ের মন্দিরে গণেশের উপস্থিতি উপলব্ধি করলেও এও বুঝতে পারেন যে নিজের ভক্তিতে কিছু খামতি রয়েছে। তাই তিনি তাথবডের কাছে বনে চলে আসেন গণেশ উপাসনার জন্য। প্রত্যেক শুক্লা চতুর্থী তিথিতে তিনি থেউরের চিন্তামণি মন্দির দর্শনে যেতেন। একবার চিঞ্চবডের ভক্তেরা মোরয়াকে অনুরোধ করেন পাবন নদীর তীরে চিঞ্চবডে যেতে। কথিত আছে, সেখানে থেউরে পূজিত গণেশের চিন্তামণি রূপটি মোরয়াকে বিবাহ করার নির্দেশ দেন। সেই মতো মোরয়া চিঞ্চবডের কাছে তাথবডের অধিবাসী গোবিন্দরাও কুলকার্ণির কন্যা উমাকে বিবাহ করেন।[৬]

আরেকটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, গুরুর নির্দেশে মোরয়া থেউরে ৪২ দিন কঠোর উপবাসে থেকে তপস্যা করেছিলেন। কথিত আছে, এই সময়ই তিনি গণেশের প্রত্যাদেশ লাভ করেন।[২] পিতামাতার মৃত্যুর পর মোরয়া মোরগাঁও থেকে চিঞ্চবডে চলে আসেন।[২] থেউর মন্দিরের বর্তমান স্থাপনাটি মোরয়া কর্তৃক নির্মিত।[১০]

মৃত্যু ও পরম্পরা সম্পাদনা

মোরয়া এরপরেও থেউর, রঞ্জনগাঁও ও চিঞ্চবডের গণেশ মন্দিরে যাতায়াত করতেন। মোরয়ার পুত্র চিন্তামণিকে (চিন্তামন)[৬] সাক্ষাৎ গণেশ রূপে সম্মান জানানো হত।[৭] কিন্তু কোনও কোনও গবেষকের মতে, এর আগে তিনি মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে (১৫০৮-১৫৫৬) কাবুলে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন। পরে হুমায়ুন যখন আবার দিল্লির সম্রাট হন, তখন মোরয়াকে প্রচুর উপঢৌকন প্রেরণ করেছিলেন।[৬] ধেরের মতে, ছত্রপতি শিবাজির পিতা শাহজি (১৫৯৪-১৬৬৫) মোরয়া গোসাবীকে অর্থদান করতেন।[২]

পত্নীর মৃত্যু ও গুরু নয়ন ভারতীর ‘সঞ্জীবন সমাধি’র পর মোরয়াও একটি ধর্মগ্রন্থ হাতে নিয়ে জীবন্ত সমাহিত হয়ে ‘সঞ্জীবন সমাধি’ গ্রহণ করেন।[২][৬][৭] মোরয়ার কঠোর নির্দেশ ছিল যাতে সমাধি কখনও না উন্মোচিত করা হয়।[৭] চিন্তামণি সেই স্থানে একটি সমাধিমন্দির নির্মাণ করে দেন।[২] কথিত আছে, বরকারি সন্তকবি তুকারামকে (১৫৭৭ – আনুমানিক ১৬৫০) চিন্তামণি গণেশ রূপে নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেন। তিনি চিন্তামণিকে ‘দেব’ (বা ‘দেও’) আখ্যা দেন। এই কারণে চিন্তামণির পরম্পরাটি দেব পরিবার নামে পরিচিত।[৭]

চিন্তামণির পর দেব পরম্পরায় আসেন নারায়ণ, দ্বিতীয় চিন্তামণি, ধর্মধর, তৃতীয় চিন্তামণি, দ্বিতীয় নারায়ণ ও দ্বিতীয় ধর্মধর। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭) নারায়ণকে হিন্দুদের নিষিদ্ধ গোমাংসের একটি টুকরো প্রেরণ করেন, কিন্তু সেই মাংস অলৌকিক উপায়ে জুঁই ফুলে পরিণত হয়। এই ঘটনায় বিস্মিত হয়ে আওরঙ্গজেব নারায়ণকে আটটি গ্রামের বংশানুক্রমিক অনুদান প্রদান করেন।[১১] দ্বিতীয় নারায়ণ মোরয়ার নির্দেশ অমান্য করে মোরয়ার সমাধি উন্মোচিত করেছিলেন। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী, মোরয়া তখনও নিজের সমাধিতে ধ্যান করছিলেন। তিনি বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় নারায়ণকে অভিশাপ দেন যে নারায়ণের পুত্রই হবেন শেষ দেব। দ্বিতীয় নারায়ণের পুত্র দ্বিতীয় ধর্মধর ছিলেন মোরয়ার অধস্তন সপ্তম পুরুষ। ১৮১০ সালে তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। ফলে মোরয়ার প্রত্যক্ষ পরম্পরাটি লুপ্ত হয়। কিন্তু মন্দিরের অর্থসাহায্য অব্যাহত রাখার জন্য পুরোহিতেরা ধর্মধরের দূর সম্পর্কের আত্মীয় সখারিকে দেব হিসেবে নিয়োগ করেন।[৭] সকল দেবের রচিত ভক্তিমূলক কবিতা আজও সুলভ।[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

মোরয়া গোসাবীকে গণেশ-উপাসক গাণপত্য সম্প্রদায়ের আদিগুরু তথা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সন্ত মনে করা হয়। গাণপত্যেরা মনে করেন, তিনি ছিলেন গণেশের “সর্বাপেক্ষা খ্যাতনামা ভক্ত”।[১]

চিঞ্চবডে পূর্বতন দেবদের সমাধিমন্দির অবস্থিত। এই দেবদের প্রধান ছিলেন মোরয়া। মোরয়ার সমাধিমন্দিরটি একটি নিচু ভবন (৩০' x ২০' x ৪০')। এটিতে একটি বর্গাকার মণ্ডপ ও একটি অষ্টভূজ গর্ভমন্দির রয়েছে। এই সমাধিমন্দিরে মারাঠি ভাষায় উৎকীর্ণ আছে: "এই মন্দিরটির কার্য আরম্ভ হয়েছিল বিলম্বী সম্বৎসর ১৫৮০ শকের (১৬৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দ) কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বাদশীতে এবং সমাপ্ত হয়েছিল বিকরী সম্বৎসরের আষাঢ় মাসের শুক্লা চতুর্থী সোমবারে।"[৭] অতীতে আওরঙ্গজেব যে আটটি গ্রামের রাজস্ব এই মন্দিরগুলির জন্য মঞ্জুর করেছিলেন সেগুলির আয়েই এগুলি চলত।[৭] মোরয়া গোসাবীর সমাধিমন্দির ও মোরয়ার নির্মিত গণেশ মন্দির আজও চিঞ্চবডের দিকে গণেশ ভক্তদের আকর্ষিত করে।[১][৬] ভক্তেরা মনে করেন মোরয়া গোসাবী মোক্ষ লাভ করলেও তিনি এখনও উপস্থিত থেকে মন্দিরটিকে পবিত্র গুরুত্ব প্রদান করছেন।[১]

মোরগাঁও গণেশ মন্দিরের প্রদক্ষিণ পথটিতে কল্পবৃক্ষ মন্দিরের কাছে একটি গাছ আছে। কথিত আছে, এই গাছটির নিচেই মোরয়া গোসাবী তপস্যা করতেন।[১২] মন্দির চত্বরেও মোরয়া গোসাবীর একটি মূর্তি পূজিত হয়। মনে করা হয়, মোরয়া গোসাবীই মোরগাঁও মন্দিরটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।[১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "গাণপত্যজ"এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়ন। ম্যাকমিলান রেফারেন্স ইউএসএ, অ্যান ইমপ্রিন্ট অফ দ্য গেল গ্রুপ। ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১০ 
  2. ধেরে, আর. সি.। "সামারি অফ প্রাচীন মারাঠিচ্য নবধারা (মারাঠি বুক) চ্যাপ্টার ২: মারাঠি লিটারেচার অফ গণেশ কাল্ট"আর. সি. ধেরের প্রাতিষ্ঠানিক সাইট। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১০ 
  3. যুবরাজ কৃষ্ণন (১ জানুয়ারি ১৯৯৯)। গণেশ: আনর‍্যাভেলিং অ্যান এনিগমা হিন্দুইজম অ্যান্ড ইটস সোর্সেস সিরিজ। ভারতীয় বিদ্যা ভবন। পৃষ্ঠা ৮৩। আইএসবিএন 978-81-208-1413-4 
  4. পল বি. কার্টরাইট (১৯৮৫)। গণেশ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ইনকর্পোরেটেড। পৃষ্ঠা ২২১। আইএসবিএন 978-0-19-503572-8 
  5. অ্যানি ফেল্ডহাউস (১৯ ডিসেম্বর ২০০৩)। কানেক্টেড প্লেসেস: রিজিয়ন, পিলগ্রিমেজ, অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইম্যাজিনেশন ইন ইন্ডিয়া। প্যালগ্রেভ ম্যাকমিলান। পৃষ্ঠা ১৪২–১৪৩, ১৪৫–১৪৬, ১৬০। আইএসবিএন 978-1-4039-6324-6 
  6. "কালচার অ্যান্ড হিস্ট্রি"। পিম্পরি চিঞ্চবড পৌরসংস্থা। ২০০৮। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১০ 
  7. "পুণা ডিস্ট্রিক্ট: প্লেসেস – চিঞ্চবড"। গেজেটিয়ার বিভাগ, মহারাষ্ট্র সরকার। ২০০৬ [1885]। ১৪ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১০ 
  8. নরেন্দ্র কে. ওয়াগলে (১৯৮০)। ইমেজেস অফ মহারাষ্ট্র: আ রিজিওনাল প্রোফাইল অফ ইন্ডিয়া। কার্জন প্রেস। পৃষ্ঠা ১১০। আইএসবিএন 9780700701445 
  9. নরেন্দ্র কে. ওয়াগলে (১৯৮০)। ইমেজেস অফ মহারাষ্ট্র: আ রিজিওনাল প্রোফাইল অফ ইন্ডিয়া। কার্জন প্রেস। পৃষ্ঠা ১১০। আইএসবিএন 9780700701445Moroba Gosavi was a Deshastha Brahmin surnamed Shaligram. 
  10. জন এ. গ্রিমস (১৯৯৫)। গণপতি: সং অফ দ্য সেলফ। সুনি প্রেস। পৃষ্ঠা ১১৯। আইএসবিএন 978-1-4384-0501-8 
  11. ফ্রেডেরিক জে. সাইমনস (১৯৯৪)। "বিফ"ইট নট দিস ফ্লেশ: ফুড অ্যাভয়েডেন্সেস ফ্রম প্রিহিস্ট্রি টু দ্য প্রেজেন্ট। ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন প্রেস। আইএসবিএন 978-0-299-14254-4। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৩ 
  12. মিলিন্দ গুণাজি (২০০৩)। অফবিট ট্র্যাকস ইন মহারাষ্ট্র। পপুলার প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১০৬–১০৭। আইএসবিএন 978-81-7154-669-5 
  13. স্বামী পরমেশ্বরানন্দ (১ জানুয়ারি ২০০১)। এনসাইক্লোপিডিক ডিকশনারি অফ পুরাণাজ। Sarup & Sons। পৃষ্ঠা ৫৬২। আইএসবিএন 978-81-7625-226-3