মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী
অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদ। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। পদাধিকার বলে তিনি ছিলেন ডাকসুর প্রথম সভাপতি। শিক্ষা ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে তাকে “শিক্ষায় স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয়।[১]
মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী | |
---|---|
মৃত্যু | ১৭ জানুয়ারি ১৯৭৮ ঢাকা |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
শিক্ষা | পিএইচডি |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অধ্যাপনা |
নিয়োগকারী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর প্রথম সভাপতি |
পুরস্কার | স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৯) |
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
সম্পাদনানোয়াখালি জেলার বীরাহিমপুর গ্রামে ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর তার জন্ম। তার পিতা মৌলবী ওবায়দুল্লাহ ছিলেন বাসিকপুর মাদ্রাসার হেড মওলানা।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামুজাফফর আহমদ নোয়াখালীর ফরাশগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক, ফেনী কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আই.এ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ অনার্স এবং ১৯৪৪ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনামুজাফফর আহমদ ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯৫০-৫২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে রিডার এবং ১৯৬৯ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।
মুজাফফর আহমদ ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যা ও পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সভায় তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সরকারের গণবিরোধী ও দমননীতির তীব্র সমালোচনা করেন। ফলে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় কারাভোগের পর ১৯৫৩ সালের ৫ মে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের শাসনতান্ত্রিক উপদেষ্টা এবং ১৯৫৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরূপে দায়িত্ব পালন করেন।
মুজাফফর আহমদ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক রাওয়ালপিন্ডিতে আহূত গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।
মুজাফফর আহমদ চৌধুরী ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান হন। তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭৫ সালে কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় মুজাফফর আহমদ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাকুরিতে ফিরে যান।
পুরস্কার ও সম্মননা
সম্পাদনাশিক্ষা ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[২][৩][৪] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[১]
গ্রন্থ
সম্পাদনামুজাফফর আহমদ লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
- The Civil Service in Pakistan (১৯৬৩),
- Constitutional Problems in Pakistan,
- An Examination of the Criticisms against Bureaucracy (১৯৬৪),
- Government and Politics in Pakistan (১৯৬৮),
- The Political System of Modern States, England USA, France, USSR and Germany, Rural Government in East Pakistan (১৯৬৯),
- The Specialist in Government।
মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৭৮ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ সানজিদা খান (জানুয়ারি ২০০৩)। "জাতীয় পুরস্কার: স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার"। সিরাজুল ইসলাম। জাতীয় পুরস্কার। ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ। আইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০১৭।
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
- ↑ "স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়ছে"। কালেরকন্ঠ অনলাইন। ২ মার্চ ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ "এবার স্বাধীনতা পদক পেলেন ১৬ ব্যক্তি ও সংস্থা"। এনটিভি অনলাইন। ২৪ মার্চ ২০১৬। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৭।