মোছলেম উদ্দিন আহমদ

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

মোছলেম উদ্দিন আহমদ (১ জুন ১৯৪৮ –৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার একজন রাজনীতিবিদ যিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।

মোছলেম উদ্দিন আহমদ
চট্টগ্রাম-৮ আসনের
সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৩ জানুয়ারি ২০২০ – ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
পূর্বসূরীমইন উদ্দীন খান বাদল
উত্তরসূরীনোমান আল মাহমুদ
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১ জুন ১৯৪৮
পশ্চিম কধুরখীল, বোয়ালখালী চট্টগ্রাম, পূর্ব পাকিস্তান
মৃত্যু৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩(2023-02-06) (বয়স ৭৪)
এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তা বাংলাদেশ
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বাসস্থানচট্টগ্রাম
পেশারাজনীতি
ধর্মইসলাম

জীবনী সম্পাদনা

মোছলেম উদ্দিন আহমদ চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার অন্তর্গত বোয়ালখালী পৌরসভার পশ্চিম কদুরখীল গ্রামের কাজী মোহাম্মদ নকী বাড়ীতে ১৯৪৯ ইংরেজি ২ নভেম্বর তারিখে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মোশাররফ উদ্দিন আহমদ ও মাতার নাম মরহুমা রওশন আরা বেগম। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে এস,এস,সি পরীক্ষায় হয়ে চট্টগ্রাম সরকারি কর্মাস কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেনীতে ভর্তি হন। উক্ত কলেজে থেকে ১৯৬৮ সালে এইচ,এস,সি এবং সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। স্নাতকোত্তর শ্রেনীতে পড়াশুনার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে পড়াশুনা করার সময় বাঙালি জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্ধুদ্ব হয়ে ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগদান করেন। ছাত্রলীগে যোগদান করেই তিনি সংগঠনের সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে তিনি অল্পসময়ের মধ্যেই ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ ও নিবেদিতপ্রান সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। প্রর্যায়ক্রমে তিনি ছাত্রলীগের কাতারের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সভাপতি ছিলেন জসিম উদ্দিন আহমদ খান(অ্যাডভোকেট)। মোছলেম উদ্দিন আহমদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ এর গনজাগরণ, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারন নির্বাচন, ১৯৭১ সালে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত পাকিস্তানি ঔঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্নক অসহযোগ আন্দোলন ও ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ছাত্রনেতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধেকে সংগঠিত করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। চট্টগ্রাম স্টেশন রোডস্থ রেস্ট হাউজে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাঙালি ইপি আর, বাঙালি আনসার, বাঙালি পুলিশ, বাঙালি সেনাবাহিনীর সদস্যরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল সে সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে অস্ত্র, কাপড় চোপড় ও খাদ্য সংগ্রহের কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সমগ্র চট্টগ্রাম শহরের অধিকাংশ এলাকা তখন মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। বাঙালিরা দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র, লাঠি, বল্লম, তীর ধনুক নিয়ে, এমন কি মরিচের গুড়া নিয়ে বাঙালি মহিলারা নিজ এলাকার রাস্তায়, বাসার ছাদে দালানের কোণায়, অবস্থান গ্রহণ করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য অসীম মনোবল ও সাহস নিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি কমান্ডোদের অতর্কিত আক্রমণে জামালখান এলাকার চেরাগী পাহার মোড়ে শহীদ হন দীপক,জাফর ও বদরুজ্জামানের মত বীর মুক্তিযোদ্ধারা, আর এমনি এক কমান্ডো বাহিনীর হাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে গ্রেপ্তার হন ছাত্রলীগ নেতা, মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন আহমদ ও মোঃ ইউনুস। দীর্ঘ আড়াইমাস তারা চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দী ছিলেন। কারাগারে বন্দী থাকাকালীন তাদের মাথায় এল এক দুঃসাহসিক চিন্তা। কীভাবে কারাগার থেকে পালানো যায়। তারা পাগল সেজে কারাগার থেকে বের হয়ে গেলেন। কারাগার থেকে পালানোর পর আবারো দেশকে শত্রু মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করেন,,,যাদের মধ্যে মোসলেম উদ্দিন ছিল অন্যতম। মোসলেন উদ্দিন শুধু একজন রাজনীতিবিদ নন। তিনি একজন সৃজনশীল প্রতিভার অধীকারী ব্যক্তি। ছাত্রজীবন থেক তিনি সাহিত্য চর্চার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০ সালে জয় বাংলা নামে একটি সাময়িকী তার সম্পাদনা প্রাকাশিত হয়। এছাড়াও চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সাহসী ঠিকানার তিনি সম্পাদক। তিনি একজন সার্বক্ষনিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বও তিনি পালন করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে তিনি সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৬ সাল হইতে ২০১২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘদিন তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসিবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারীতে চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ- নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। স্ত্রী শিরিন আহমদ ও চার মেয়ে নিয়ে তার পরিবার। তিনি বর্তমানে খুলশী থানার অধীনে লালখান বাজারস্থ হিলসাইড আবাসিক এলাকায় রওশন ইমন টাওয়ারে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের এম.পি মঈনউদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শুন্য আসনের উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন।"চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনিবার্চনে মোছলেম উদ্দিন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত"ইত্তেফাক। ১৩ জানুয়ারি ২০২০। ১৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০২০ </ref>[১][২]

তিনি ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।[৩] তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "চট্টগ্রাম-৮ আসনে এমপি হলেন নৌকার মোছলেম উদ্দিন"আরটিভি। ১৩ জানুয়ারি ২০২০। ১৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. "চট্টগ্রাম-৮ : বিপুল ভোটে জয়ী নৌকার মোছলেম"জাগোনিউজ২৪.কম। ১৩ জানুয়ারি ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. "সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা গেছেন"প্রথম আলো। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩