মুহাম্মদ আবদুল আলিম সিদ্দিকী

ইসলামী আলেম (১৮৯২-১৯৫৪), যিনি সুন্নী-হানাফি রেজভী মতবাদের প্রচারক ছিলেন

মুহাম্মদ আবদুল আলিম সিদ্দিকী আল কাদেরী মিরাটী (৩ এপ্রিল ১৮৯২– ২২ আগস্ট ১৯৫৪) একজন ইসলামী পণ্ডিত, আধ্যাত্মিক গুরু, গ্রন্থকার এবং ধর্মপ্রচারক যাকে মুবাল্লিগ-ই-ইসলাম নামেও ডাকা হত। তিনি সুন্নী ইসলাম ধারার বেরলভী বা রেজভি মতধারার অনুসারী ছিলেন। তিনি ভারতের মিরাটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আহমদ রেজা খান বেরলভীর কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।[১] তিনি সিঙ্গাপুরের অল-মালায়া মুসলিম মিশনারী সোসাইটির (জামিয়াহ সিঙ্গাপুর) প্রবর্তক ছিলেন।

মুহাম্মদ আবদুল আলিম সিদ্দিকী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম৩ এপ্রিল ১৮৯২
মৃত্যু২২ আগস্ট ১৯৫৪(1954-08-22) (বয়স ৬২)
ধর্মইসলাম
আখ্যাসুন্নী
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
ধর্মীয় মতবিশ্বাসMaturidi
আন্দোলনরেজভী
প্রধান আগ্রহধর্মপ্রচার, ইসলাম পুনরুদ্ধার
মুসলিম নেতা
শিক্ষকআহমদ রেজা খান বেরলভী
ওয়েবসাইটwfim.org.pk/abdul-aleem-siddiqui/

জীবন সম্পাদনা

সিদ্দিকী ৩ এপ্রিল ১৮৯২[২] সালে মিরাটে জন্মগ্রহন করেন এবং তিনি আবু বকরের বংশধর ছিলেন। কথিত আছে তিনি চার বছর বয়সেই কুরান মুখস্ত করেছিলেন, এবং ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে ১৬ বছর বয়সেই একটি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।[৩] তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছিলেন।[৪]

বা'য়াত এবং খিলাফত সম্পাদনা

তিনি কাদিরিয়া রেজভীয়া মতে আহমদ রেজা খান বেরলভীর মুরিদ হন এবং তার খিলাফত লাভ করেন।[৫]

ধর্মপ্রচারণার কর্মকাণ্ড সম্পাদনা

সিদ্দিকী অবিরাম চল্লিশ বছর ভ্রমণ করেছিলেন ইসলামের প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে।[৬] তিনি সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ববোধের প্রচারক ছিলেন এবং শান্তির বার্তা প্রচারের জন্য কারো কারো কাছে তিনি ভ্রাম্যমান শান্তির দূত হিসেবে অভিহিত হতেন।[৭]

তিনি ১৯৩০ সালে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন।[৮] যেখানে তিনি অল-মালায়া মুসলিম মিশনারি সোসাইটি প্রবর্তন করেন, যা বর্তমানে জামিয়া সিঙ্গাপুর নামে পরিচিত।[৮][৯][১০] পুরো মালয় জুড়েই এই সোসাইটির শাখা ছিল।[৮] অল-মালায়া মুসলিম মিশনারি সোসাইটি (বর্তমানে জামিয়া সিঙ্গাপুর) মসজিদ আবদুল আলিম সিদ্দিক নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে।[১১] ১৯৪৯ সালের প্রথম দিকে, তিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার এবং সিঙ্গাপুর ও জোহর বাহরুর সার্বিক সহায়তায় হিন্দু, ইহুদি, জরথুস্ট্রিয়ান (পারসি), খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ এবং মুসলিম নেতাদের সাথে সিঙ্গাপুর এবং জোহর বাহরু আন্তঃধর্মীয় সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। জামিয়াহ সিঙ্গাপুরের তৎকালীন সভাপতি, সৈয়দ ইব্রাহিম ওমর আলসাগফ, যিনি ইতিমধ্যেই আন্তঃবিশ্বাসের কাজে সক্রিয় ছিলেন, অন্যান্য ধর্মীয় নেতা বা প্রতিনিধিদের সমর্থন ও সহযোগিতা অর্জন করে তাকে সহায়তা করেছিলেন।

তিনি ১৯৫০ সালে ত্রিনিদাদে গিয়ে সেখানকার পোর্ট অফ স্পেন জামে মসজিদে ওয়ার্ল্ড ইসলামিক মিশনের সূচনা করেন।[১২]

তিনি ১৯২৬ সালে মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন অফ দ্য ফিলিপিনস (মুসাফিল) প্রতিষ্ঠা করেন যা ফিলিপিন্সের একটি প্রভাবশালী সংস্থায় রূপ নিয়েছিল। ১৯৫০ এর দশকের প্রথমদিকে তার ম্যানিলা ভ্রমণকালে, তিনি কিছু মুসলিমকে সেখানে মাদ্রাসা ভিত্তিক শিক্ষা পুনপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উৎসাহী করে তোলেন।[১৩]

তার শিষ্য এবং জামাতা ফজলুর রহমান আনসারি-ও একজন আলেম ছিলেন যিনি করাচীতে আলিমিয়া ইনস্টিটিউট অফ ইসলামিক স্টাডিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।[১৪][১৫]

তিনি আরো ভ্রমণ করেছিলেন হেজাজ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, বার্মা, ভিয়েতনাম, সিলন, চীন, জাপান, ফিলিপাইন,[১৬] মরিশাস, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, বেলজিয়াম, মিশর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, জর্ডান, ইরাক, ফ্রান্স,ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট উইন্ডিজ, গায়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম,[১৭] যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা[১৮]

১৯৩৫ সালে, ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং কেনিয়ার আশ্রিত রাজ্য মোম্বাসায় আবদুল আলিম সিদ্দিকীর সাথে আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ'য়ের সাক্ষাৎ হয় এবং তারা চিন্তা ভাবনার বিনিময় উপভোগ করেন, বার্নার্ড শ' আবদুল আলিম সিদ্দিকীকে উদ্দেশ্য করে বলেন “একজন পরম বিজ্ঞ ব্যক্তি”।[১৯]

রাজনীতি সম্পাদনা

জিন্নাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং পাকিস্তান আন্দোলনের সমর্থক হওয়ায়, দেশভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে স্থানান্তরিত হয়, আর তার পুত্র শাহ আহমেদ নূরানী একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব্যে পরিণত হন, যিনি এক পর্যায়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় প্রধান হয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

তিনি পাকিস্তানের প্রথম ঈদের জামাতের নেতৃত্ব দেন।[২০]

বই এবং পুস্তিকা সম্পাদনা

তার কিছু কাজের মধ্যে রয়েছে:[২১]

  • ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষা (Elementary teachings of Islam)
  • ইসলামের নীতিসমূহ (The principles of Islam)
  • A Shavian and a theologian : an illuminating conversation between George Bernard Shaw, the sceptic, and Mohammed Abdul Aleem Siddiqui, al-Qaderi, the spiritualist at Mombasa, Kenya
  • The forgotten path of knowledge
  • The history of the codification of Islamic law : being an illuminating exposition of the conformist view-point accepted by the overwhelming majority of the Islamic world

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুন ২০২০ 
  2. Zia-e-Taiba, I. T. Department of। "Muslim Scholar: Biography of Maulana Shah Muhammad Abdul Aleem Siddiqui"scholars.pk (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-২৯ 
  3. Athyal, Jesudas M., সম্পাদক (১০ মার্চ ২০১৫), Religion in Southeast Asia: An Encyclopedia of Faiths and Cultures, ABC-CLIO, পৃষ্ঠা 283, আইএসবিএন 978-1-61069-250-2 
  4. Muhammed Haron, "The formation of religious networks between the Muslim heartlands and the South African Muslims" in Boleswa Journal of Theology, Religion and Philosophy, Volume 1, Issue 3, Jan 2007, p. 68
  5. Zia-e-Taiba, I. T. Department of। "Muslim Scholar: Biography of Maulana Shah Muhammad Abdul Aleem Siddiqui"scholars.pk (উর্দু ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-২৯ 
  6. Lacar, Luis Q.; Moner, Nagamura T. (১৯৮৬)। Madrasah Education in the Philippines and Its Role in National Integration। Coordination Center for Research and Development MSU-IIT। পৃষ্ঠা 123। 
  7. Athyal, Jesudas M., সম্পাদক (১০ মার্চ ২০১৫), Religion in Southeast Asia: An Encyclopedia of Faiths and Cultures, ABC-CLIO, পৃষ্ঠা 283, আইএসবিএন 978-1-61069-250-2 
  8. Athyal, Jesudas M., সম্পাদক (১০ মার্চ ২০১৫), Religion in Southeast Asia: An Encyclopedia of Faiths and Cultures, ABC-CLIO, পৃষ্ঠা 283, আইএসবিএন 978-1-61069-250-2 
  9. MENDAKI: 10 Years Making the Difference। Yayasan Mendaki। ১৯৯২। পৃষ্ঠা 212। 
  10. MENDAKI: 10 Years Making the Difference। Yayasan Mendaki। ১৯৯২। পৃষ্ঠা 212। 
  11. Ariff, Mohamed (১৯৯১)। The Islamic Voluntary Sector in Southeast Asia। Institute of Southeast Asian Studies। পৃষ্ঠা 225। আইএসবিএন 9813016078 
  12. Kassim, Halima-Sa'adia (জুন ২০১১)। "Institutionalising Islam: Community Building and Conflict in the Caribbean"ResearchGate-এর মাধ্যমে। 
  13. Lantong, Abdul. (2018). The Islamic Epistemology and its Implications for Education of Muslims in the Philippines. 10.2991/icigr-17.2018.16.
  14. "Dr Maulana Fazlur Rahman Ansari, His Life, Works and Thoughts" – Internet Archive-এর মাধ্যমে। 
  15. Saif M. (2018) Madrasah. In: Kassam Z.R., Greenberg Y.K., Bagli J. (eds) Islam, Judaism, and Zoroastrianism. Encyclopedia of Indian Religions. Springer, Dordrecht
  16. Lacar, Luis Q.; Moner, Nagamura T. (১৯৮৬)। Madrasah Education in the Philippines and Its Role in National Integration। Coordination Center for Research and Development MSU-IIT। পৃষ্ঠা 123। 
  17. His Eminence Maulana Shah Abdul Aleem Siddiqui (Rahmatullah Alaih). caribbeanmuslims.com
  18. Maulana Shah Muhammad Abdul Aleem Siddiqui (R.A). World Federation of Islamic Missions
  19. George Bernhard Shaw and the Islamic Scholar ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ জুলাই ২০১৭ তারিখে. Commentary and editing by Imran N. Hosein. December 2000.
  20. Sadouni Samadia, "Playing global: the religious adaptations of Indian and Somali Muslims to racial hierarchies and discrimination in South Africa" in Global Networks, Vol. 14 Iss. 3 (2014), p. 388
  21. Profile on WorldCat

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা