মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর আক্রমণ

(মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর জঙ্গী আক্রমন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এটি একটি পরীক্ষিত সংস্করণ, যা ১৮ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে পরীক্ষিত হয়েছিল।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) একজন বাংলাদেশী লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ৷ তাকে বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখা ও জনপ্রিয়করণের পথিকৃৎ হিসাবে গণ্য করা হয়৷ এছাড়াও তিনি একজন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক এবং কলাম-লেখক৷ তার লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে৷ তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানপ্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন এবং বর্তমানে অবসরোত্তর জীবন যাপন করছেন৷ ২০১৮ সালের ৩রা মার্চ বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠান চলাকালে তার উপর হত্যার উদ্দেশ্যে ফয়জুর নামক একজন মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আক্রমণ করে৷[]

ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল

হত্যার হুমকি ও অন্যান্য

  • ২০১৩ সালে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ সৃষ্টি হলে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন৷ সেই সময় থেকেই তাকে উপর্যুপরি হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো জঙ্গি সংগঠন এবং দৃর্বৃত্তরা৷ সেইসময় বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম (তৎকালিন নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা এবিটি) এর হিটলিস্টে জাফর ইকবালের নাম ছিল বলে জানা যায়৷[][]
  • ২০১৫ সালের ২০ মে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সহ কয়েক শিক্ষককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়৷ ‘আল কায়েদা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম: ১৩'-এর নামে এই হত্যার হুমকি দেওয়া হয়৷ এখানে খুদেবার্তায় হুমকি ছিল এরকম- ‘মাস্ট ইউ উইল প্রিপেয়ার ফর ডেড’৷[] সেসময় ডাকযোগে আসা এক চিঠিতে ‘টার্গেট’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কাবেরী গায়েন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ও তারানা হালিম সহ ১০ জনের একটি তালিকা ছিল৷ ওই সময় অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেছিলেন, “হত্যার হুমকি আমার জন্য নতুন কিছু না, তাই এতে আমি ভীত নই৷ আমি অসংখ্যবার এই রকম চিঠি পেয়েছি, অনেকবার হয়েছে আমি কাউকে বলিনি, এমনকি আমার স্ত্রীকেও না৷”[]
  • ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর (বুধবার) জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হককে মুঠোফোনের খুদে বার্তায় হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷ সেখানে লেখা ছিল, ‘Welcome to Our new top list! Your breath may stop at anytime. ABT’৷ একই তারিখ রাত ২টা ৩১ মিনিটে মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুঠোফোনেও হুমকি দিয়ে একটি খুদে বার্তা আসে৷ এতে লেখা ছিল, ‘Hi Unbeliever! We will strangulate you soon’৷ ওই ঘটনায় ১৪ অক্টোবর তারা সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন৷ ওই সময় পুলিশ জানায়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হককে ০১৬২৯৯৬৭৫৫১ নম্বর থেকে মেসেজের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নামে এই হুমকি দেওয়া হয়৷ ওই ঘটনায়ও মুহম্মদ জাফর ইকবাল একটি জিডি করেছেন৷ এরপর তাদের বাসভবনে সশস্ত্র পুলিশ পাহারা বসানো হয়৷[][][]
  • ইত্তেহাদুল মুজাহিদীন নামক একটি সংগঠন থেকে ২০১৫ এর আগস্টে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সহ ১৯ জন অনলাইন এক্টিভিটিস্ট, লেখক, ভাস্করের উপর হামলার হুমকি দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়৷[]
  • মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কয়েকবার কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হয়৷[]
  • ২০১৬ সালে পুলিশ বগুড়ায় জেএমবির একটি আস্তানা থেকে একটি হিটলিস্ট উদ্ধার করে, সেখানে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম পাওয়া যায়৷[]
  • ২০১৭ সালে পুলিশ আনসার আল ইসলাম এর ১৫ জন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির নাম সহ একটি হিটলিস্ট উদ্ধার করে, সেখানে মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম পাওয়া যায়৷[]
  • ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাফর ইকবাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ গত আগস্ট মাসে এক বক্তব্যে জাফর ইকবাল বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ হারলে কারণ হবে ছাত্রলীগ’৷ এসব কারণে জাফর ইকবালের ওপর ছাত্রলীগের একটি অংশ ক্ষুব্ধ ছিল৷[]
  • ২০১৫ সালের ২১ জুন ড. জাফর ইকবালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আওয়ামী ওলামালীগ এবং সমমনা ১৩টি দল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে৷ সেই কর্মসূচিতে বলা হয়, ‘এদেশে প্রগতিশীল, বুদ্ধিজীবী ও মুক্তমনার লেবেলে নাস্তিক্যবাদকে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে৷ নাস্তিকরা অনলাইনসহ সব জায়গায় প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে৷’[]
  • সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ সামাদ চৌধুরী জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন৷ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেটি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে দিতে আইনকানুন করা হয়েছে অভিযোগ করে এক সভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি বড় কিছু হতাম, তাহলে জাফর ইকবালকে কোর্ট পয়েন্টে ধরে এনে চাবুক মারতাম৷’[]
  • শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকদের জোট ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ এর অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার শিকার হন জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হক দম্পতি৷ ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিলে শুরু হওয়া ওই আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় উপাচার্য সমর্থিত ছাত্রদের হামলায় অধ্যাপক ইয়াসমিন হক মাটিতে পড়ে যান বলেও জানা যায়৷ সেসময় ক্ষুব্ধ জাফর ইকবাল বলেছিলেন, ‘এখানে যে ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর হামলা চালিয়েছে, তারা আমার ছাত্র হয়ে থাকলে আমার গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়া উচিৎ৷’[]

৩ মার্চ হত্যা প্রচেষ্টা

৩ মার্চ ২০১৮ রোজ শনিবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করা হয়৷[][][১০] বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) উৎসবের রোবটিক প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠান চলছিল৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কয়েকজন হুলুস্থুল শুরু করে৷ সে সময় একজন অধ্যাপকের মাথায় হামলা চালায়৷[১১] হামলার পরপর জাফর ইকবালকে সিলেট এম.এ.জি. ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়৷ সেখানে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে তার ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে সেখানে সেলাই দেওয়া হয়৷[১২] তার মাথায় চারটি আঘাত করা হয়৷ এগুলো রডের আঘাত বলে ধারণা করা হয়৷ এছাড়া তার বাঁ হাত ও পিঠে ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে৷ জাফর ইকবালের মাথায় ২৬টি সেলাই [১৩] ও বাম হাতে ছয়টি এবং পিঠের বাম পাশে আরও ছয়টি সেলাই অর্থাৎ ৩৮ টি সেলাই পড়েছে৷[১৪]

হামলার পরপরই উপস্থিত শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যরা হামলাকারীকে ধরে ফেলে৷ গণপিটুনী দিয়ে ওই তরুণকে ধরে নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে৷ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷[১২]

হামলাকারীর পরিচয়

বিভিন্ন পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসারে লেখক জাফর ইকবালের উপর হামলাকারীর নাম ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল (২৪)৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী কুমারগাঁওয়ের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শেখপাড়ার বাসিন্দা৷ তিনি এই শেখপাড়ার কাঁচা মঞ্জিলের স্বত্বাধিকারী হাফিজ আতিকুর রহমানের ছেলে৷[] তার মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কালিয়ারকাপন গ্রামে৷[] তিনি সিলেটের মঈন কম্পিউটার নামক একটি দোকানে কর্মরত ছিলেন৷ এলাকাবাসী ও টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) সূত্র মতে, হামলাকারী ফয়জুর দিরাই ধল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে৷ এরপর সিলেটে একটি মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দেয়৷ মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর সে আর পড়ালেখা করেনি৷[১৫] তবে কোন মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়েছে এ সম্পর্কে কেউ জানে না৷ ফয়জুলের বাবা মাওলানা আতিকুর রহমান সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পার্শ্ববর্তী টুকেরবাজার এলাকার শাহ খুররুম মখলিছিয়া হাফিজিয়া মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন বলে জানা গেছে৷[] সিটিটিসি আরো জানায়, প্রায় ২০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ফয়জুল পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছিল৷ শেখপাড়ায় জমি কিনে ফয়জুলের বাবা আধা পাকা বাড়ি করেন৷ শনিবার হামলার পরপরই শেখপাড়ার বাসাটি তালাবদ্ধ করে ফয়জুলের পরিবারের সদস্যরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে অন্যত্র পালিয়ে গেছেন৷[১৫][১৬] এই অভিযানে হামলাকারীর মামা ফজলুর রহমানকে আটক করা হয়[১৭] এবং হামলাকারীর বাবা মাওলানা আতিকুর রহমানের বাড়ি থেকে বইপত্র ও সিডি জব্দ করা হয়৷[১৮][১৯][২০] আটককৃত ফজলুর রহমান ফজলু সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক৷ তিনি জমি বিক্রির ব্যবসার সাথে জড়িত৷[২১][২২] হামলার পরদিন রোববার রাত সাড়ে ১০টায় সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে হামলাকারী ফয়জুল হাসানের বাবা হাফিজ আতিকুর রহমান ও মা মিনারা বেগমকে আটক করে পুলিশ [২৩]

বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদের পর হামলাকারী জাফর ইকবালকে ইসলামের শত্রু আখ্যা দিয়ে তাকে হত্যার কারণ সম্বন্ধে জানান৷ র‍্যাব-৯ এর অধিনায়ক এ তথ্য নিশ্চিত করেন৷[২৪] পরবর্তীতে ফয়জুল র‍‍্যাবকে জানায়, “‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ উপন্যাসের কারণে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালানো হয়েছে”৷[১৫]

সিলেট ব্যুরো জানায়, হামলাকারী ফয়জুল হাসান জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েই ড. জাফর ইকবালকে হত্যার চেষ্টা করে বলে স্বীকার করেছে৷ র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল স্বীকার করে, জাফর ইকবালের ‘ভূতের বাচ্চা সোলায়মান’ নামক উপন্যাস লিখে নবি সোলায়মানকে ব্যঙ্গ করায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালানো হয়েছে৷ ফয়জুল দাবি করে, “জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই তাকে হত্যা করার জন্য হামলা করেছি৷ উনি নিজে নাস্তিক এবং অন্য সবাইকেও নাস্তিক বানানোর জন্য প্রচার করে বেড়াচ্ছেন৷ তার লেখা পড়ে মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ছে৷” রোববার ফয়জুলের এই স্বীকারোক্তির কথা জানান র‍্যাব-৯-এর অধিনায়ক৷ ফয়জুর রহমান ওরফে ফয়জুল ওরফে শফিকুর জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী বলে জানিয়েছে র‍্যাব৷[২৫] ফয়জুর বিভিন্ন ওয়াজ দেখে, ইন্টারনেটে ভিডিও দেখে ও বই পড়ে হামলায় উদ্বুদ্ধ হন বলে জানান৷[২৬] হামলার দিন ফয়জুর মোট দুবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছিল বলেও জানান র‍্যাব কর্মকর্তা৷[২৭] ফয়জুল জানিয়েছে, হামলার সময়, তার আশেপাশে আর কেও ছিল না৷[১৫]

ফয়জুর ও তার পরিবারের রহস্যময় আচরণ এবং সালাফি সংযোগ

এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ফয়জুরের কুয়েত প্রবাসী দুই চাচার প্রভাবে পুরো পরিবার আহলে হাদিস বা সালাফি মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে৷ এমনকি পরিবারের সদস্যরা মসজিদে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ পড়তে শুরু করে৷[২৮] তার বড় ভাই এনামুল হাসান ঢাকায় ও অপর ভাই আবুল হাসান কুয়েতপ্রবাসী৷ আর ছোট দুই বোন হাফসা বেগম ও হাবীবা বেগম মাদ্রাসায় পড়ে৷ হাফসা রশীদিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আর হাবীবা ফয়জুরের পিতা আতিকুর রহমানের মাদ্রাসায় পড়ে৷ সবাই মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত৷ ফয়জুরের বড় ভাই হাফিজ হাসান আগে নগরের পাঠানটুলা জামেয়ায় পড়ালেখা করতেন, তিনি গ্রামের বাড়ির মসজিদে ভিন্ন পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে গিয়ে মুসল্লিদের তোপের মুখে পড়েছিলেন৷ একপর্যায়ে ফয়জুর ও তার চাচাকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া হয়৷[] ফয়জুলকে ফেরি করে কাপড় বেচতেও দেখা গেছে৷ বছরখানেক আগে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে পকেটমারতে গিয়ে ধরা পড়েছিল ফয়জুল৷ তখন স্থানীয়রা তার ব্যাপারে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছিল তার বাবাকে৷[২৮] ফয়জুল যে মার্কেটে কম্পিউটারের দোকানে কাজ করত; সে মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক তার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন, ‘ফয়জুলকে প্রায়ই নামাজে দেখা যেত৷ ভাবতাম-নামাজি ছেলে খুব ভালো হবে৷ এখন তো দেখি বড় জাহিল৷’ তিনি জানান, ‘সে দেখতে একদম সাদাসিধে৷ মনে হতো যেন কিছুই বোঝে না বা জানে না৷’[২৮]

ভূতের বাচ্চা সোলায়মান

২০০৬ সালে ভূতের বাচ্চা সোলায়মান নামে একটি নাটক তৈরী হয়; যার স্ক্রিপ্ট মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছিলেন৷[২৯] নাটকটি বাংলাদেশের বেসরকারী টিভি চ্যানেল এনটিভিতে প্রচারিত হয়৷ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি বইমেলা উপলক্ষে এই নাটকের স্ক্রিপ্টটিকে বই আকারে “ভূতের বাচ্চা সোলায়মান” নামে প্রকাশ করা হয়৷ বইটি একটি শিশুতোষ ভৌতিক কল্পকাহিনী৷[৩০]

বইয়ের সারসংক্ষেপ

বইয়ের অন্যতম চরিত্র নিতু অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে৷ একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে এসে নিতু দেখে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে তার এক দূরসম্পর্কের চাচা “দবির” এসে হাজির৷ প্রথম দিনই তার লোকটাকে খারাপ লেগে যায়৷ লোকটা মেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে কটুমন্তব্য করে৷ নিতুর বড় চাচার ছেলেমেয়েরা সেদিনই তাদের বাসায় বেড়াতে আসে৷ তাদেরও লোকটা নানাভাবে অপমান করতে বাকি রাখে না৷

নিতু তার চাচাতো বোন মিতির কাছ থেকে জানতে পারে দবির চাচা নাকি দেশে থাকতে একটা অপরাধ করেছিল৷ তারপর পুলিশের ভয়ে সে মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে গেছে৷ এখন আবার বহু বছর পর পোশাক-আশাক বদলে মৌলানা সেজে দেশে ফিরেছে ৷ বাইরে মৌলানা ভাব বা আল্লাহ-ভক্তি দেখালেও সে সারাদিন নিতুদের বাসার বৈঠকখানায় বসে হিন্দি সিরিয়াল আর গান দেখে আর সবার সম্পর্কে তাচ্ছিল্য ভাব দেখায়৷ শেখদের দেশ থেকে এসেছে বলে নিজের সংস্কৃতি ভুলে সে তাদের মতো জোব্বা পরে৷

লোকটার আচরণে বিরক্ত হয়ে নিতু আর তার তিন কাজিন তাদের মন ভালো করার জন্য একটি বুদ্ধি বের করে৷ নিতু একটা প্রেত সাধনা নামক একটি বই এ প্ল্যানচেট সম্পর্কে পড়েছিল৷ তারা চারজন মিলে ভূত ডাকতে বসে৷ একজনের বড় ভূত ভাল লাগে না বলে তারা একটি বাচ্চা ভূতকে আসতে অনুরোধ জানায়৷

তারা কখনো ভাবতেও পারেনি সত্যি সত্যি একটা বাচ্চা ভূত চলে আসবে৷ বাচ্চা ভূতটার নাম ছিল সোলায়মান৷ রাতে ঘুমানোর সময় নিতু আবিষ্কার করে সে তার ঘরে একটা বাচ্চা ভূত কাঁদছে৷ সে নিতুদের ডাকে এসে আর ফিরে যেতে পারছে না৷ নিতু তাকে সান্ত্বনা এবং অভয় দেয়৷ এদিকে ভূতের বাচ্চাকে শুধু নিতু আর তার চাচাতো ভাইবোনরাই দেখতে পায়৷ কারণ তারাই তাকে ডেকেছে; আর সবার কাছে সে অদৃশ্য৷

এদিকে দবির চাচা নিতুর আচরণ দেখে বুঝে ফেলে তার কাছে সত্যি সত্যি একটা ভূতের বাচ্চা আছে৷ সোলায়মান নিজেও দবির চাচার উপর বিরক্ত৷ সে নানা ভাবে দবির চাচাকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করে৷ এদিকে দবির চাচা ভূতের বাচ্চাকে বিদেশি চ্যানেল এ বিক্রি করে দেয়ার ফন্দি আঁটে৷ নিতুকে আটকে ভূতের বাচ্চাকে সে অপহরণ করে৷

ভূতের বাচ্চাকে তার দেশে পাঠানোর জন্য তাদের চারজন কে আবারো প্ল্যানচেট এ বসতে হবে, ডাকতে হবে আরো একজন ভূতকে যে এসে ভূতের বাচ্চাকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে৷

নিতুর বিপদ আঁচ করতে পেরে নিতুর চাচাতো ভাইবোনরা এসে প্রথমে নিতুকে উদ্ধার করে৷ তারপর প্ল্যানচেটে বসে তারা ভূতের বাচ্চার মাকে আহ্বান করে ভূতের বাচ্চাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে৷ অতঃপর বাচ্চা সোলায়মানের মা এসে তাকে উদ্ধার করে এবং যেসব অসৎ লোকদের কাছে দবির চাচা ভূতের বাচ্চা বিক্রি করবে বলে টাকা নিয়েছিল, উল্টো তারাই তাকে উত্তম-মধ্যম প্রদানের জন্য ধরে নিয়ে যায়৷

নাম নিয়ে সমালোচনা

বই প্রকাশের পরপরই একশ্রেণির মহল বইয়ের নাম নিয়ে ফেসবুক, ও অনলাইন পোর্টাল জুড়ে লেখকের বই নিষিদ্ধ করার জন্য দাবী তুলে৷[৩১] বিভিন্ন ধর্মীয় মিডিয়ায় একে স্লো পয়জনিং বলে আখ্যায়িত করা হয়৷ বলা হয়, লেখক এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে সোলায়মান নবীকে ব্যঙ্গ করেছেন৷[৩২] ধর্ম ভিত্তিক লেখালেখি করে এরকম অনেক কবি সাহিত্যিক লেখককে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজে৷[৩৩] ইউটিউবে "প্রবাসীদের জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে বিষেদাগার"  |ধারাবাহিক= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য), "ভূতের বাচ্চা সোলায়মান"  |ধারাবাহিক= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য), "প্রবাসীরা ভূতের বাচ্চা সোলায়মান নামকরণে ক্রুদ্ধ"  |ধারাবাহিক= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য) শিরোনামে অনেকে অধ্যাপককে আক্রমণ করে ভিডিও বানাতে থাকেন৷ ধর্মীয় অনলাইন পোর্টাল গুলোতে জাফর ইকবালকে ব্যঙ্গ করে অনেকে গল্প প্রবন্ধ লিখতে থাকেন৷[৩৪]

সমালোচনার প্রতিক্রিয়া

তৎকালীন সময়ে এবিষয়টা নিয়ে অনেকে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরীন তার ফেসবুক পাতায় তার মত অধ্যাপক জাফর ইকবালকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হবে বলে আশঙ্কা করেন৷ তিনি আরো বলেন যে, উক্ত বইটি কোনো ইসলামিক ইতিহাস নয়; নিছকই বাচ্চাদের জন্য লিখিত গল্প৷ যার সাথে ইসলামিক নবীর কোনো সংযোগ নেই৷ এমন অনেকের নাম আছে, যাদের নাম সোলায়মান; তাহলে কী এখন তাদের নামের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করা হবে কিনা এমনটা তিনি জানতে চান৷[৩৫] অনেক সাধারণ মানুষ নিজেদের মত সমালোচনাও করেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন, সোলায়মান নামে তো অনেক খারাপ মানুষ আছে বা এই বইয়েতো ইসলাম বিদ্বেষী কিছু নাই, তাহলে কেন এত উষ্কানী মূলক বক্তব্য করা হচ্ছে তবে এ সংক্রান্ত উষ্কানী মূলক বক্তব্যের মূল সমালোচনা শুরু হয়; জাফর ইকবালকে হত্যার জন্য দায়ী তার বই ফয়জুরের এই অজুহাত দিবার পরে৷

নিয়ন আলোয় প্রকাশিত একটি বক্তব্যে একজন বলেন, ‘গল্পের দবির চাচাকে হুজুর হিসাবে দেখানো হয় নি, মরুভূমির পোশাক হিসেবে দেখানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসীরা সবাই এই পোশাক পরে৷ উল্লেখ করা হয়, বইয়ের ভিতরে ধর্মবিদ্বেষী কোনো কিছুই নেই৷’

রেডটাইমসে বলা হয়, ‘সোয়া দুই লক্ষ পয়গম্বরদের প্রত্যেকের নামই ভিন্ন ছিল.....৭১ যুদ্ধের ধীকৃত নায়ক ইয়াহিয়া আর নবি হজরত ইয়াহিয়া কেও কী এক ব্যক্তি ভাবতে হবে?’ প্রশ্ন তোলা হয়, ‘একাত্তরের উন্মাতাল দিনে মিছিলে-মিটিং-এ “ইয়াহিয়ার দুই গালে জুতা মারো তালে তালে” বলাতে একবারো কারো মনে হয়নি এটা নবীর অবমাননা৷ তাহলে এখন কেন এই অজুহাত৷’ প্রশ্ন তোলা হয় দাউদ আর ইব্রাহীম নামে দুজন নবি নাম থাকলেও দাউদ ইব্রাহীম নামে আন্তর্জাতিক অপরাধী আছে; তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কী কথাও বলা যাবে না? বলা হয়, ২০১৭ সালে এটা নিয়ে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছিল, কিন্তু সেসময় মৌলবাদী শক্তি খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি৷ অভিযোগ করা হয়, ‘বিষয়টা ধর্ম অবমাননা নয়, আসলে বিষয়টা হলো জাফর ইকবালকে হত্যা করা; যেখানে ধর্ম অবমাননা অজুহাতকে ব্যবহার করে ঘাতল ফয়জুরকে উত্তেজিত করা হয়৷ আর মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি তাদের পরাজয়ের পর প্রতিশোধ নিতে পারে৷’[৩৬]

এগিয়ে চলো নামক বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন ডেস্কে হামলার কারণের সমালোচনা করে সোলায়মান নামক রাজাকার, প্রতারক [৩৭] ও প্রশ্নফাঁসকারী [৩৮] তিনজন মানুষের নাম আলাদা আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়৷ প্রশ্ন তুলা হয়, এখন এদের নামে সমালোচনা কী ধর্ম অবমাননা হবে কিনা৷ সেখানে বলা হয়, হামলার কারণ এই নাম নয়, বরং জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আর মৌলবাদের বিপক্ষে উচ্চকিত কন্ঠই এই ধরনের হামলাকে উষ্কে দেওয়ার মুখ্য কারণ৷

হত্যাচেষ্টার তাৎক্ষণিক মুহূর্তে ড. ইকবালের প্রতিক্রিয়া

  • প্রতিযোগিতার বিচারক এবং হামলা প্রচেষ্টার প্রত্যক্ষদর্শী নওশাদ সজীব এর ভাষ্যমতে, ছুরিকাঘাতের পরপরই লেখক উঠে দাঁড়িয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আই অ্যাম অলরাইট, তোমরা উত্তেজিত হয়ো না৷ তিনি আরো বলেন যে, সে সময় শিক্ষকের মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে তার মুখ ও শার্ট ভিজে যায়৷ ঐ কথা বলার পরপরই তিনি ক্ষতস্থানে এক হাত রেখে আরেক হাতে চেয়ার খুঁজে বসার চেষ্টা করেন৷ এর পরপরই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাকে ধরেন এবং হাসপাতালে হস্তান্তর করেন [৩৯]
  • সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ছেলেটা কই, ওকে তোমরা মারধর করো না[৪০]
  • অপারেশনে দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, রিভার্স হবার পর স্যার তার কাছে ঘুমের ঔষুধ চেয়েছেন৷ অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বে থাকা অপর একজন চিকিৎসক লিখেছেন, অধ্যাপক জাফর ইকবাল আমার দেখা একজন সাহসী মানুষ৷ অপারেশনের বিছানায় যখন তাকে এনস্থেশিয়া দেওয়া হচ্ছে তখনও তিনি বলেছেন- আমি ঠিক আছি৷ কিছু রক্তের প্রয়োজন৷ [৪১]
  • লেখক তার পত্নী ইয়াসমিন হককে মোবাইলের মাধ্যমে কল দিয়ে জানান, তার উপর হামলা হয়েছে৷ তবে তিনি সুস্থ আছেন এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ লেখক চান নি তার সম্পর্কে তথ্য যেন; তার পরিবার টেলিভিশন থেকে পান৷ লেখক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সামাল দেওয়ার জন্যও স্ত্রীকে মোবাইলে আহ্বান জানান৷ পরবর্তীতে লেখকের সাথে তার দেখা হওয়ার পর, প্রখ্যাত এই লেখক পুনরায় তার স্ত্রীকে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের উত্তেজনা তৈরী যাতে না করে, তাদের যেন সান্ত্বনা দেয়; এমনটা অনুরোধ করেন৷[৪২]

লেখক পরিবারের প্রতিক্রিয়া

লেখকের বড় ভাইয়ের পুত্র এবং নাট্যকার নুহাশ হুমায়ুন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সকল যন্ত্রণা বা সংঘাত বা মৃত্যু বা যাই আসুক না কেন; তার পরিবার সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা অব্যহত রাখবে৷[৪৩]

লেখকের স্ত্রী ইয়াসমিন হক গণমাধ্যমের সম্মুখে বলেছেন, ‘জাফর ইকবাল ক্যাম্পাসে ফিরে যাবেন৷ তার পাঁচটা কোর্স আছে৷ তিনি পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগকে সরাসরিই নাকচ করে দিয়েছেন৷’[৪২]

লেখক কন্যা ইয়েশিম প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘এই ধরনের মানুষ গুলো হচ্ছে ছত্রাকের ন্যায়৷ তাদের সঠিক ভাবে পরিষ্কার করা হয় নি৷...মুক্তিযুদ্ধের ন্যায় ঘটনার মত জন্ম নেওয়া এই দেশ ছেড়ে তারা কোথাও যাচ্ছে না৷’[৪৪]

সুস্থ হওয়ার পর লেখকের প্রতিক্রিয়া

প্রখ্যাত এই লেখক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পৃথিবীর সৌন্দর্য অনুভব আর তরুণদের সুন্দর কাজ করা ব্যতিরেকে যারা খুনের অভিপ্রায়ে লিপ্ত হয়, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন৷[৪৫]

ঘাতক ফয়জুরের সাথে সাক্ষাৎ

অধ্যাপক জাফর ইকবাল আক্রমণের পর থেকেই ঘাতক ফয়জুরের সাথে সাক্ষাতে আগ্রহী থাকলেও বেশ কয়েকদিন পরে তার সাথে সাক্ষাৎ হয়৷ সিলেট জেলখানায় আটককৃত ফয়জুরের সাথে সাক্ষাৎ হলে, লেখকের ভাষ্যমতে ঘাতকের চেহারায় হাসিখুশি ভাব ছিল৷ লেখক; ঘাতক ফয়জুর কেন একাজ করেছে এ প্রশ্ন করায় তার প্রত্যুত্তরে সে বলে, অধ্যক্ষ ইকবাল ইসলাম বিরোধী হওয়ায় সে এমনটা করেছে৷ কেন ঘাতক ফয়জুর এমনটা মনে করে, এপ্রশ্ন করায় সে জানায়, ভূতের বাচ্চা সোলায়মান লিখায় সে এমনটা মনে করেছে৷ অধ্যাপকের প্রশ্নের উত্তরে সে জানায় শিক্ষককে আঘাত করার পূর্বে সে এই বইটা পড়েনি৷ যদিও পুলিশ তাকে দিয়ে পরবর্তীতে বইটি পড়িয়ে নেয়, কিন্তু সে সেখানেও ইসলাম বিরোধী কোনো কথা খুঁজে পায় নি৷ জাফর ইকবাল তার সাথে কথা বলার পর, ফয়জুর সেস্থান ত্যাগ করার পূর্বে জানায় সে ভুল করে ফেলেছে৷ জাফর ইকবাল তার বই অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবীতে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনো অপরাধবোধ বা অনুশোচনা নয়, ঘাতক ফয়জুর মনে করে সে শুধুমাত্র ভুল করেছে৷’ ফয়জুর আদৌ এমনটা মনে করে কিনা; এবিষয়ে অধ্যাপক সন্দেহ প্রকাশ করে, বিষয়টিকে উড়িয়ে দিয়ে গ্রন্থের শেষাংশে উল্লেখ করেন, ‘এ চমৎকার পৃথিবীকে দেখাটাই তার জন্য অনেককিছু৷’[৪৬]

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিন্দা

এই হামলার পরপরই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা নিন্দা জানানো শুরু করেন৷ নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,[৪৭] রাজনীতিবিদ ওবায়েদুল কাদের,[৪৭] সিলেটে অবস্থানরত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ হাসপাতালে যান; উদ্বেগ প্রকাশ করেন [৪৮] নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি [৪৯], সিপিবি-বাসদ [৫০] তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) [৫১]

পরদিন বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন ধর্মান্ধরাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, ‘যারা হামলা করেছে তারা জীবনেও বেহেশতে যাবে না৷’[৫২] ৫ই মার্চ, সোমবার বেলা পৌনে একটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে দেখা করেন৷ সেখানে তিনি আধা ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করেন এবং জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সাথে কথা বলেন৷[৫৩]

একই দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ড. জাফরের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারেক রহমান৷ বিবৃতিতে বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালের ন্যায় একজন খ্যাতিমান লেখক ও শিক্ষকের মাথায়, পিঠে ও হাতে সন্ত্রাসীরা জখম করবে এটা এই সভ্য যুগে অকল্পনীয়৷ ড. জাফরের ওপর এই কাপুরুষোচিত হামলা নিঃসন্দেহে অশুভ ইঙ্গিত বহন করে৷ এটি কোনো পরিকল্পিত বিপর্যয় ডেকে আনার মাস্টারপ্ল্যান কিনা তা নিয়ে জনমনে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে৷[৫৪]

একইসাথে পৃথক এক বিবৃতিতে ড. জাফর ইকবালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর[৫৪]

তিনি বলেন, ‘যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে মতো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাচেষ্টা করা হয়, সেখানে দেশে যে অচিশ্চয়তার অন্ধকার বিরাজ করছে তা সংশয়াতীতভাবে সত্য৷ যারা ড. জাফর ইকবালকে ছুরিকাহত করেছে তারা সমাজের শত্রু৷’ ফখরুল আরও বলেন, ‘জাফর ইকবালের ন্যায় একজন স্বনামধন্য লেখককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আহত করা এক সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ৷ তার ওপর আক্রমণ বর্তমান কুশাসনের জঘন্যতম অধ্যায় হয়ে থাকবে৷’[৫৪]

বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

  • জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা[১১]
  • তার ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ময়মংসিংহে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়৷[৫৫]
  • শিক্ষকের উপর হামলার প্রতিবাদে শাহবাগে মশাল প্রজ্জ্বলন করে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়৷ সেখানে ইমরান এইচ সরকার সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন৷[৫৬]
  • লেখকের হত্যাপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে রাত সাড়ে আটটায় বিক্ষোভ করেছে সিলেট গণজাগরণ মঞ্চ[৫৭]
  • লেখকের জন্মস্থান নেত্রকোনায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয় [৫৮]
  • রাত ৮ টার দিকে একটি সংগঠন চট্টগ্রাম নগরীর প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করে৷[৫৯]
  • সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লেখক হত্যাপ্রেচেষ্টার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল হয়৷[৬০]
  • পরদিন রোববার শাবিপ্রবির অন্তত ৩ হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন করেন৷[৬১] পৃথকভাবে আন্দোলনে শাবিপ্রবির শিক্ষকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করে [৬২]
  • অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় নয়াদিল্লিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা৷ ৪ মার্চ রোববার ভারতের স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা চাণক্যপুরী ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করেন৷ এ প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাআফগানিস্তানের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন৷ তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে ‘লাভ ফর জাফর ইকবাল স্যার’ লেখা ছিল৷[৬৩]
  • জর্জিয়ায় সন্ধ্যায় অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে সভা করে জর্জিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা৷[৬৪]
  • অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ও শিক্ষক সমিতি৷ সোমবার দুপুর ১২টায় শেখ রাসেল চত্বরে পৃথক পৃথকভাবে মানববন্ধন করে হামলার বিচারের দাবি জানিয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা৷[৬৫]
  • মোমের আলো দিয়ে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রতিকৃতি তৈরি করে তার সুস্থতা কামনা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা৷ এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল মোম জ্বালিয়ে একাডেমিক ভবন ডি তে আসে৷ চারতলা এ বিল্ডিংয়ের সবগুলো ফ্লোরে মোম জ্বালিয়ে গ্রাউন্ডে ড. ইকবালের প্রতিকৃতি বানানো হয়৷ এসময় “Get well soon sir” ও লিখেন তারা৷[৬৬]
  • অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদের ভাষা ভিন্ন হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের৷ মানববন্ধন বিক্ষোভ ও সমাবেশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন কার্টুন ও পথনাটকের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছে হামলার৷ রোববার ও সোমবার দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন ঝুলিয়ে রাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কার্টুন ফ্যাক্টরি’৷ কার্টুন ফ্যাক্টরির আঁকা বিভিন্ন কার্টুনে ড. জাফর ইকবালের রক্তমাখা মাথা ও বিভিন্ন কথাবার্তা ফুটে উঠেছে৷ এছাড়া অর্জুনতলায়ও বিভিন্ন কার্টুন ঝুলিয়ে রেখেছে সংগঠনটি৷ অন্যদিকে নাট্য সংগঠন দিক থিয়েটার ‘আততায়ীর খোঁজে, ফাল্গুনে পথে’ শিরোনামে চার দিনব্যাপী পথনাটকের আয়োজন করেছে৷ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জুনতলায় এমসি কলেজের ‘থিয়েটার মুরারিচাঁদ’ এর পরিবেশনায় ‘ব্লাড টেস্ট’ নামক পথনাটক মঞ্চায়িত হয়৷ রোমেল রহমানের রচনায় নাটকটিতে নির্দেশনায় ছিলেন দেবদাস চক্রবর্তী৷ এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দিক থিয়েটারের ‘ওয়ারিশ’, বুধবার দর্পণ থিয়েটারের ‘আদাব’, বৃহস্পতিবার সিলেটের ‘আদিম পৃথিবীর আহ্বান’ নামক পথনাটক পরিবেশিত হবে৷[৬৭]
  • হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷[৬৮]
  • ড. ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে হামলাকারীর; সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কলিয়ারকাপন গ্রামের মানুষ৷[২৮]
  • ৬ তারিখ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি এক ঘণ্টার মানববন্ধনের আয়োজন করে৷ এই মানববন্ধনের সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই হামলায় আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত৷
  • ড. জাফর ইকবালের উপর হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে ৬ তারিখ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চেতনা ’৭১ মানববন্ধনের আয়োজন করে৷ এই মানববন্ধনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এই হামলায় বিএনপির ইন্ধন রয়েছে৷[৬৯][৭০]

তদন্ত

হত্যাচেষ্টায় জঙ্গিসংস্লিষ্টতা ও তদন্তের অগ্রগতি

হামলার দিন, ৩ তারিখ, শনিবার রাতেই পুলিশ শহরতলির শেখপাড়া থেকে আটক করে ফয়জুল হাসানের মামা ফয়জুর রহমানকে৷ একই রাতে র‍্যাব মঈন কম্পিউটারের মালিক মঈনুল হক মঈনকে আটক করে (যেখানে ফয়জুল হাসান কাজ করত)৷ তাকে আটকের সময় দোকান থেকে র‍্যাব সদস্যরা কম্পিউটার জব্দ করে নিয়ে যান৷ রোববার ভোরে ফয়জুলের গ্রামের বাড়ি থেকে তার চাচা আবদুল কাহারকে আটক করা হয়৷ তাছাড়া আরও একজনকে আটকের কথা জানাজানি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তার নাম জানানো হয়নি৷ শনিবার ঘটনার পর আটক ফয়জুলকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ পরে তাকে জালালাবাদ সেনানিবাসে নেয়া হয়৷ রোববার তাকে পুলিশ প্রহরায় ফের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়৷ এখন সে এই হাসপাতালের ২৭নং কেবিনে চিকিৎসাধীন আছে৷[১৫]

চার তারিখ, রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে ফয়জুল হাসানের নাম উল্লেখসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে এসএমপির জালালাবাদ থানায় মামলাটি দায়ের করেন৷ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় জঙ্গি সদস্যরা জড়িত বলে নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা৷ তবে জঙ্গিদের কোন গ্রুপ এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি৷ এ ঘটনায় হামলাকারী ফয়জুল ছাড়া আরও চারজনকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিন (র‍্যাব)৷[১৫]

পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হামলার আগে ঘটনাস্থলে জাফর ইকবালের পেছনে তিনজন লোক দাঁড়িয়েছিল৷ এদের মধ্যে কালো গেঞ্জি পরিহিত যুবকের নাম ফয়জুল হাসান৷ তিনি ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি শিকার করেন৷ পুলিস হেফাজতে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়৷ সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে বলা হয়, ফয়জুল হাসানের পাশেরই সাদা-কালো গেঞ্জি ও জিন্সের প্যান্ট পরে অপর এক যুবক দাঁড়িয়েছিল৷ তাছাড়া জাফর ইকবালের পাশে আরও দু’জন অজ্ঞাত যুবক ছিল৷ পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জানান, ‘পুলিশ সেই ছবি দেখে ওই তিন যুবকের পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সন্দেহজনক যুবকদের খুঁজে বের করতে স্থানীয় পুলিশকে পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে৷ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আলাদাভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷’[১৫]

পুলিশ হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করে এবং ছুরি এবং হামলার ধরন দেখে পুলিশ জানায়, তারা পুরোপুরি নিশ্চিত যে, এটি একটি জঙ্গি হামলা৷ এ অবস্থায় আইজিপি জঙ্গিদের ঘিরে তদন্ত এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন৷ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ সদর দফতর থেকে একটি টিম সিলেটে পাঠানো হয়৷ অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা সদর দফতর থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে৷ এছাড়া কাউন্টার টোরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা ঢাকা থেকে সিলেটে গিয়েছেন৷ ঘটনার সময় ওই এলাকায় যত মোবাইল ফোন চালু ছিল, সেগুলোকে প্রযুক্তির আওতায় এনে তদন্তকাজ শুরু করা হয়েছে৷ পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিও দৃশ্য ধারণা করেছে কিনা, তা বের করার চেষ্টা চলছে৷[১৫]

সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থানীয় বিভিন্ন ইউনিটের পাশাপাশি ঢাকা থেকে একাধিক টিম ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ করছে৷ দু’জন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে সিটিটিসির ১০ সদস্যের একটি টিম এখন সিলেটে অবস্থান করছে৷ এটা যে একটি জঙ্গি হামলা তা আমরা নিশ্চিত৷ তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, সেলফ মোটিভেটেড কোনো জঙ্গি নাকি অন্য কোনো গ্রুপ এটি করেছে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারিনি৷...হামলার পরপরই হামলাকারী ফয়জুল গণপিটুনির শিকার হয়৷ প্রাথমিকভাবে যতটুকু কথা বলেছে, তাতে মনে হয় সে একাই ছিল৷ তবে আমরা নিশ্চিত নই, ঘটনাস্থলে হামলাকারী কয়জন ছিল৷ ফয়জুলের সঙ্গে কোন জঙ্গি সংগঠনের লিংক আছে, তা খুঁজে বের করতে সিটিটিসির সদস্যরা কাজ করছেন৷’[১৫]

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই জাফর ইকবাল ছিলেন জঙ্গিদের টার্গেট৷ রহস্য উদ্ঘাটনে ফয়জুলকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ তদন্তের স্বার্থে এখনই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না৷’[১৫]

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি

জাফর ইকবালের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় পুলিশ নিয়োজিত থাকার পরও কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা৷ এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের আইজি৷[১৫]

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জাফর ইকবাল হামলার আশঙ্কার মধ্যে থাকলেও ঘটনার সময় দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন না৷ যারা ছিলেন তারা মোবাইল ফোনে গেমস খেলছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ঘটনার পর বেশ দেরি করে সেখানে পুলিশ কর্মকর্তারা গিয়েছেন৷ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এমনকি যখন কোনো কর্মকর্তা সেখানে যান তার ৭-৮ মিনিট আগে গেলে সন্দেহজনক আরও একাধিক যুবককে গ্রেফতার করা যেত৷ একজন এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা গেলেও হতো৷’[১৫]

পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘পুলিশের দায়িত্বহীনতার বিষয়টিকে গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ বিষয়টি নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি৷ হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছি... পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’[১৫]

ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অধ্যাপক জাফর ইকবাল যেখানে বসে ছিলেন, হামলাকারী ফয়জুর তার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৷ ফুটেজে দেখায় যায়, পেছনে যে তিন কনস্টেবলকে দেখা যাচ্ছে, তারা হলেন ইব্রাহিম, সুমন সূত্রধর ও নূরুল৷ ইব্রাহিম জাফর ইকবালের কিছুটা কাছাকাছি ছিলেন, হামলা শুরু হলেই তিনি টের পেয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, এতে তিনি আহত হন৷ তার প্রতিরোধের মুখে হামলাকারী ফয়জুর ধরা পড়েন৷ তবে সুমন সূত্রধর ও নূরুল মোবাইল ফোনে মগ্ন থাকতে দেখা যায়৷[]

তথ্যসূত্র

  1. "জাফর ইকবালের উপর হামলাকারী ফয়জুরের বাড়িতে তল্লাশি"যুগান্তর। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  2. "শিকড় অনেক গভীরে ॥ জাফর ইকবাল হত্যাচেষ্টা"দৈনিক জনকণ্ঠ। ৫ মার্চ ২০১৮। ১১ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  3. "জাফর ইকবালের ওপর কার এত আক্রোশ?"। দৈনিক সুপ্রভাত। ৪ মার্চ ২০১৮। ৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  4. "জাফর ইকবালকে প্রাণনাশের যত হুমকি"। দৈনিক আমাদের সময়। ৪ মার্চ ২০১৮। ৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  5. "অধ্যাপক জাফর ইকবালকে প্রাণনাশের যতো হুমকি"দৈনিক ইত্তেফাক। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  6. "bloger, minister, teachers threatened with death"। bdnews24। ১২ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  7. "জাফর ইকবাল ফোনে স্ত্রীকে হামলার খবর জানান"মানবজমিন। ৫ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  8. "It bears hallmarks of Ansar al Islam"ডেইলি স্টার। ৫ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  9. "অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত"ইত্তেফাক। ৩ মার্চ ২০১৮। ৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  10. "ড. জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত"যুগান্তর। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  11. "অধ্যাপক জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত"প্রথম আলো। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  12. "প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার পথে জাফর ইকবাল"ইত্তেফাক। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  13. "জাফর ইকবালের মাথায় আঘাত"bdnews24। ৪ মার্চ ২০১৮। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  14. "জাফর ইকবালকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  15. "জঙ্গি হামলা ধরেই তদন্ত"যুগান্তর। ৫ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮ 
  16. "কে এই হামলাকারী"প্রথম আলো। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  17. "হামলাকারীর মামা আটক"সিলেট টুডে। ৩ মার্চ ২০১৮। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  18. "হামলাকারীর বাড়িতে অভিযান শেষ: মামা আটক, বইপত্র-ল্যাপটপ-সিডি জব্দ"বাংলা ট্রিবিউন। ৪ মার্চ ২০১৮। ৬ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  19. "হামলাকারীর মামা আটক"সিলেট টুডে। ৩ মার্চ ২০১৮। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  20. "হামলাকারীর মামা ফজলুর রহমান আটক"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  21. "হামলাকারীর মামা আটক ফজলু কৃষকলীগ নেতা"মানবজমিন। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  22. "সিলেটে আটক কৃষক লীগ নেতা কে এই ফজলু?"। ৪ মার্চ ২০১৮। ৬ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  23. "ফয়জুলের বাবা-মা আটক"যুগান্তর। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  24. "জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই তাকে মেরেছি"banglatribune। ৩ মার্চ ২০১৮। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  25. "হামলাকারী ফয়জুল জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী-র‍্যাব"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  26. "ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র প্রস্তুত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-১৭ 
  27. "জাফর ইকবালের উপর হামলায় আটক ১"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  28. "সালাফি মতবাদে উদ্বুদ্ধ ফয়জুলের পরিবার"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  29. "ভূতের বাচ্চা সোলায়মান নাটকে স্বচ্ছ"champs21। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  30. "ভূতের বাচ্চা সোলায়ময়ান"গুডরিডস। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  31. "থেমে নেই জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণা"দৈনিক শিক্ষা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  32. "হগক"। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  33. "জাফর ইকবালের ভূতের বাচ্চা সোলায়মান"বাংলাকথা। ৭ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  34. "ভূতের বাচ্চা জাফর ইকবাল"কওমীকন্ঠ। ১৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  35. "জাফর ইকবালের বই প্রসঙ্গে যা বললেন তসলিমা"ঢাকাটাইমস২৪। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  36. "ভূতের বাচ্চা সোলায়মান ও কিছু কথা"। রেড টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  37. "বঙ্গবন্ধুর নামে এতিমখানার চাঁদা তুলছেন জামায়াত নেতা"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  38. "শেরপুরে একজন প্রশ্নফাসঁকারী আটক"প্রিয়.কম। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৮ 
  39. "আই অ্যাম অলরাইট তোমরা উত্তেজিত হয়ো না"প্রথম আলো। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  40. "ছেলেটা কই, ওরে তোমরা মারধোর কোরো না"সিলেট টুডে। ৩ মার্চ ২০১৮। ৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  41. "আমাকে ঘুমের ঔষুধ দিন"সিলেটটুডে। ৪ মার্চ ২০১৮। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  42. "কাউকে দোষারোপ করতে চাই না"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  43. "জাফর ইকবালদের সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক"ডয়েচে ভেলে। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  44. "Response to the attack on my father"ইয়েশিম ইকবাল। ১২ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  45. "মানুষ চিন্তা করে চাঁদে যাওয়ার, আমরা চিন্তা করি, কে আস্তিক, কে নাস্তিক"ডয়েচে ভেলে। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৮ 
  46. জাফর, ইকবাল (১২ জানুয়ারি ২০১৯)। অবিশ্বাস্য সুন্দর পৃথিবী। কাকলী। পৃষ্ঠা ৯৭–১০৪। আইএসবিএন 9789849310587 
  47. "জাফর অকবালের উপর আক্রমণে প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা"প্রথম আলো। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  48. "আমরা ক্ষুদ্ধ ও উদ্বিগ্ন"সিলেট টুডে। ৪ মার্চ ২০১৮। ৫ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  49. "জাফর ইকবালের উপর হামলার ঘটনায় বিনপির নিন্দা"সিলেট টুডে। ৩ মার্চ ২০১৮। ৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  50. "সিপিবি বাসদের নিন্দা"বিডিনিউজ ২৪। ৩ মার্চ ২০১৮। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  51. "জাফর ইকবালের ওপর হামলা বিআইজেএফের নিন্দা"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  52. "ধর্মান্ধরাই ড.জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  53. "জাফর ইকবালকে দেখে এলেন প্রধানমন্ত্রী"প্রথম আলো। ৫ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  54. "জাফর ইকবালের উপর হামলা অশুভ ইঙ্গিয় বিএনপি"প্রথম আলো। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  55. "হামলার প্রতিবাদে ময়মংসিংহে বিক্ষোভ"ইত্তেফাক। ৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৮ 
  56. "শাহবাগে মিছিল প্রতিবাদ সমাবেশ"প্রথম আলো। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  57. "নগর গণজাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ"সিলেটটুডে। ৪ মার্চ ২০১৮। ৪ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  58. "নেত্রকোনায় বিক্ষোভ"বিডিনিউজ২৪। ৩ মার্চ ২০১৮। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  59. "চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ"বিডিনিউজ24। ৩ মার্চ ২০১৮। ২৭ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  60. "ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াতে বিক্ষোভ"বিডিনিউজ24। ৩ মার্চ ২০১৮। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১৮ 
  61. "জাফর ইকবালের উপর হামলা বিক্ষোভে উত্তাল শাবি ক্যাম্পাস"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  62. "শাবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাও"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  63. "জাফর ইকবালের উপর হামলায় নয়াদিল্লীতে বিক্ষোভ"প্রথম আলো। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৮ 
  64. "জাফর ইকবালের উপর হামলায় জর্জিয়ায় প্রতিবাদ"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  65. "জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে বেরোবিতে ক্লাস বর্জন কর্মসুচী"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮ 
  66. "জাফর ইকবালের উপর হামলায় জর্জিয়ায় প্রতিবাদ"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১৮ 
  67. "নাটক কার্টুনে প্রতিবাদ শাবি শিক্ষার্থীদের"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮ 
  68. "জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে কুয়েটে মানববন্ধন"যুগান্তর। ৪ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮ 
  69. "'জাফর ইকবালের উপর হামলাকারীদের ইন্ধন দিয়েছে বিএনপি'"বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৬ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  70. "বিএনপির ইন্ধনে জাফর ইকবালের ওপর হামলা : হাছান মাহমুদ"। ৬ মার্চ ২০১৮। ৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮