মুসাকা বেগুন ও আলু দিয়ে তৈরি একটি খাবার যাতে সাধারণত মাংসের কিমা যোগ করে রান্না করা হয়। এটি বলকান, মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় খাবার।

মুসাকা
মিশরীয় গ্রীস মুসাকা
উৎপত্তিস্থলমিশর, গ্রীস, মধ্যপ্রাচ্য
অঞ্চল বা রাজ্যবলকান ও মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল
প্রধান উপকরণবেগুন, আলু, গোরুর মাংসের কিমা

নাম এবং ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

ধারণা করা হয় মুসাকাএই কথাটি গ্রীক শব্দ মুসাকাস্ (μουσακάς) এবং অন্যান্য বলকান ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় এসেছে। এইসকল শব্দ আবার উসমানীয় তুর্কি ভাষা থেকে ধার করা হয়েছে। যার ফলে বলা যায় যে প্রকৃতপক্ষে এটির উৎপত্তি হল আরবি মুসাক্কা শব্দ থেকে যার অর্থ ঠান্ডা। শব্দটি প্রথম ১৮৬২ সালে ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা শুরু হয়।[১]

প্রস্তুতি সম্পাদনা

গ্রীস সম্পাদনা

 
গ্রীসের একটি ট্যাভেরনায় মুসাকা এবং গ্রীক সালাদ

মুসাকার বেশিরভাগ রন্ধনপ্রনালীতে মূলত সুগন্ধিত অবার্গিন (বেগুন) এবং টমেটোর ব্যবহার হয়। সাধারণত ভেড়ার মাংসের কিমা এতে যোগ করা হয়। মুসাকার গ্রীক সংস্করণে মাংস এবং বেগুনের একটি স্তর থাকে যার উপরে বেক্যামেল (সাদা) সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

মুসাকার আধুনিক গ্রীক সংস্করণটি ১৯২০-এর দশকে ফরাসি রন্ধন প্রনালীতে প্রশিক্ষিত গ্রীক রাধুনী নিকোলাওস সেলেমেন্টেস প্রস্তুত করেছিলেন।[২][৩] তার তৈরি মুসাকায় তিনটি প্রধান স্তর রয়েছে। প্রতিটি স্তরের উপাদানকে আগে আলাদাভাবে রান্না করা হয় ও পরে বেকিংয়ের জন্য একত্রিত করা হয়। নিচের স্তর প্রস্তুত করতে কাটা বেগুনের নীচের অংশ অলিভ অয়েলে হাল্কা ভাজা করা হয়। মাঝখানের স্তরটির জন্য ভেড়ার মাংসকে কাটা টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি সব্জী এবং মশলা, দারুচিনি এবং কালো মরিচ ইত্যাদি মশলা দিয়ে রান্না করা হয়। সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকে সাদা বেচেমেল সস বা সুস্বাদু কাস্টার্ড।[৪]

মুসাকার রন্ধন প্রনালীতে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। কখনও কখনও খাবারের উপরে সস না ঢেলেই এতে পরিবেশন করা হয়। কখনও কখনও এতে বেগুনের টুকরো ছাড়াও অন্যান্য সবজির ব্যবহার হয় যেমন, স্যুইড জুচিনি (কোর্গেট) -এর টুকরো, আংশিক ভাজা আলুর টুকরো বা ভাজা মাশরুম। সেলেমেন্দেস -এর রান্নার বইতে মুসাকার একটি ভেগান সংস্করণ রয়েছে, যেটিতে মাংস বা দুগ্ধজাত দ্রব্য কিছুই ব্যবহার হয়না শুধু সবজির মধ্যে বেগুন (মাংসের পরিবর্তে বেগুন ব্যবহার করা হয়), টমেটো সস এবং পাউরুটির টুকড়ো বা ব্রেড ক্রাম্ব ব্যবহার হয়।[৪]

মুসাকার আরেকটি বিকল্প রন্ধন প্রনালীতে গোটা ছোট ছোট বেগুনের মধ্যে মাংসের কিমা ভরে ভরাট করা হয় এবং তার উপর বেকমেল ছড়িয়ে দিয়ে বেক করা হয় বা ভাপানো হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ সম্পাদনা

 
উত্তর মেসিডোনিয়ায় প্রস্তুত আলু মুসাকা

আলবেনিয়া,[৫] বুলগেরিয়া,[৬] প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া,[৭][৮][৯] এবং রোমানিয়াতে বেগুন, শুয়োরের মাংস বা গরুর মাংসের কিমার পরিবর্তে আলু ব্যবহার করা হয় এবং উপরের স্তরটিতে সাধারণত দুধ বা দই মেশানো হয়। এই সংস্করণে কখনো কাঁচা ডিম বা কখনও কখনও অল্প পরিমাণে ময়দা যোগ করা হয়। এর একটি স্থানীয় ত্রিস্তরীয় সংস্করণও রয়েছে যাতে নীচের স্তরটি শুয়োরের মাংস এবং গরুর মাংস, মাঝের স্তর আলুর টুকরো এবং উপরের স্তর সাধারণত একটি কাস্টার্ড দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। প্রতিটি স্তর আলাদা আলাদা রান্না করা হয় এবং একটি প্যানে একত্রিত করে স্তরে স্তরে সাজানো হয়। উপরে স্তরে বাদামী রং না হওয়া পর্যন্ত বেক করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Oxford English Dictionary 3rd ed., March 2003 s.v. (subscription)
  2. Aglaia Kremezi, "Nikolas Tselementes", Cooks and Other People, Proceedings of the Oxford Symposium on Food and Cookery, p. 167: "before Tselementes there was no moussaka, as we know it today"
  3. Kremezi, Aglaia (১৩ জুলাই ২০১০)। "'Classic' Greek Cuisine: Not So Classic"The Atlantic। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০১৭ 
  4. Νικόλαος Τσελεμεντές, Οδηγός μαγειρικής και ζαχαροπλαστικής, 1930
  5. Mark Zanger (জানুয়ারি ২০০১)। The American Ethnic Cookbook for Students। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 978-1-57356-345-1 
  6. Leslie Strnadel; Patrick Erdley (জানুয়ারি ২০১২)। Bulgaria (Other Places Travel Guide)। Other Places Publishing। পৃষ্ঠা 55। আইএসবিএন 978-0-9822619-9-6 
  7. The Balkan Cookbook। Pelican Publishing Company। পৃষ্ঠা 121। আইএসবিএন 978-1-4556-0057-1 
  8. Liliana Pavicic; Gordana Pirker-Mosher (১ জানুয়ারি ২০০৭)। Best of Croatian Cooking। Hippocrene Books। পৃষ্ঠা 132। আইএসবিএন 978-0-7818-1203-0 
  9. Avani Burdett। Delicatessen Cookbook – Burdett's Delicatessen Recipes: How to make and sell Continental & World Cuisine foods। Springwood emedia। পৃষ্ঠা 113। আইএসবিএন 978-1-4761-4462-7