মুন্সী মহম্মদ কাসেম
মুন্সী মহম্মদ কাসেম (অথবা মুনশী মুহম্মদ কাশেম) একজন বাঙালি গায়ক এবং গ্রামোফোন কণ্ঠশিল্পী। তিনি কে. মল্লিক নামে বেশি পরিচিত এবং এই নামে গান রেকর্ড করতেন। শিল্পী ১২৯৫ বঙ্গাব্দের ১২ জ্যৈষ্ঠ ( ১৮৮৮ খ্রি.) বর্ধমান এর কুসুম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুনশী মুহম্মদ ইসমাইল।[১]
মুন্সী মহম্মদ কাসেম | |
---|---|
জন্ম | মুন্সী মহম্মদ কাসেম ১২৯৫ বঙ্গাব্দের ১২ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | ১৩৬৬ বঙ্গাব্দ |
অন্যান্য নাম | কে. মল্লিক |
পেশা |
|
জীবনের প্রথমভাগসম্পাদনা
জীবিকা অর্জনে তিনি প্রথমে কলকাতায় আসেন এবং পরে কানপুর এ র্যালি ব্রাদার্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। কানপুর থাকার সময় তিনি সংগীতজ্ঞ আবদুল হাই হাকিম এর কাছে সংগীত শিক্ষা লাভ করেন।[২]
সংগীত জীবনসম্পাদনা
কলকাতার জার্মান রেকর্ড কোম্পানি বেকার প্রথম মহাম্মদ কসেমের গান রেকর্ড করে। বারোটি শ্যামাসংগীত রেকর্ড এর মাধ্যমে তিনি গ্রামোফোন শিল্পীরূপে আত্মপ্রকাশ করেন। মুসলিম গায়কের কণ্ঠে শ্যামাসংগীত শ্রোতার আদর পাবে না চিন্তা করে রেকর্ড কোম্পানির গোরাচাঁদ এবং শান্তি মল্লিক শিল্পীর প্রকৃত নাম প্রচ্ছন্ন রেখে কে. মল্লিক নাম দিয়ে গানের রেকর্ড প্রকাশ করেন। এভাবে তিনি কে. মল্লিক নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
১৯০৯-১৯১০ খ্রি. থেকে ১৯৪০ খ্রি. পর্যন্ত তিনি প্রচুর সংখ্যক গান রেকর্ড করেন। তার গান এত জনপ্রিয় ছিল যে, অধিকাংশ গানের রেকর্ড ৩০-৪০ হাজার কপি পর্যন্ত বিক্রি হয়। বিখ্যাত হওয়ার পর আরেকটি বিদেশি রেকর্ড কোম্পানি ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ তার গান রেকর্ড করে। তিনি ‘পণ্ডিত শঙ্কর মিশ্র’ নামে হিন্দি গানও রেকর্ড করেন।
কে. মল্লিক নামে রেকর্ডকৃত তার গাওয়া হিন্দু ধর্মীয় সংগীত, বিশেষত শ্যামাসংগীত প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলায় ইসলামি গান লিখতে শুরু করলে তিনিও ইসলামি গান গাইতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি শিল্পী আব্বাসউদ্দিন আহমদ কে অনুরোধ করেন, নজরুলকে তার জন্য ইসলামি গান লিখে দিতে প্ররোচিত করতে। কিন্তু কে. মল্লিক ইসলামি গান রেকর্ড করলে তার শ্যামাসংগীত বিক্রি কমে যাবে আশঙ্কা করে কাজী নজরুল ইসলাম এবং গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সেল ইনচার্জ ভগবতী ভট্টাচার্য তাতে রাজি হন নি। ভগবতীবাবুর মৃত্যুর পর দায়িত্বে আসেন শ্রীহেমচন্দ্র সোম। তার সম্মতিতে নজরুল শিল্পীর জন্য ইসলামি গান লিখেন এবং ‘মুন্সী মহাম্মদ কাসেম’ নামেই তা রেকর্ড করা হয়।[৩]
রেকর্ডকৃত গানসম্পাদনা
মুন্সী মহাম্মদ কাসেম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ সেন প্রমুখের গান, শ্যামাসংগীত, আগমনী গান, ইসলামি গান প্রভৃতি রেকর্ড করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার মাথা নত করে দাও হে’, অতুলপ্রসাদের ‘বঁধু এমন বাদলে তুমি কোথায়’ এবং নজরুলের ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে দিসনে আজি দোল’ গানগুলি রেকর্ড হলে সুধীমহলে প্রচণ্ড আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
সমসাময়িক প্রভাবসম্পাদনা
প্রখ্যাত নজরুলসঙ্গীত শিল্পী আঙ্গুরবালা ছিলেন কে মল্লিকের সমসাময়িক এবং নজরুল ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কে মল্লিক এক সময় ঝরিয়ার রাজবাড়ির সভাগায়ক ছিলেন। ওই সময় কমলা ঝরিয়া তার অনুপ্রেরণায় কলকাতা আসেন এবং কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। [৪]
শেষজীবনসম্পাদনা
গায়ক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার রেকর্ড থেকে গ্রামোফোন কোম্পানি প্রচুর টাকা উপার্জন করলেও তার দারিদ্র্য ঘোচে নি। শেষজীবনে তিনি নিজের গ্রামে ফিরে আসেন এবং স্থানীয় কৃষকদের সংগীত শিক্ষা দিতেন। এই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ১৩৬৬ বঙ্গাব্দে (১৯৫৯ খ্রি.) পরলোকগমন করেন।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ সংগীতসাধক অভিধান, বাংলা একাডেমী
- ↑ http://bn.banglapedia.org/index.php?title=মল্লিক,_কে
- ↑ নজরুল গীতি প্রসঙ্গ, করুণাময় গোস্বামী, বাংলা একাডেমী
- ↑ "Banglapedia"।