মীর কাসেম আলী
মীর কাসেম আলী (৩১ ডিসেম্বর ১৯৫২ - ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬) ছিলেন বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অন্যতম নেতা। ২০১৪ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।[১][৩] ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।[২]
মীর কাসেম আলী | |
---|---|
![]() মীর কাসেম আলী | |
জন্ম | ৩১ ডিসেম্বর ১৯৫২ |
মৃত্যু | ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ | (বয়স ৬৩)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | রাজনীতি |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী |
অপরাধের অভিযোগ | হত্যাসহ ১৪টি অভিযোগ[১] |
অপরাধের শাস্তি | ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যাকান্ড[২] |
দাম্পত্য সঙ্গী | খোন্দকার আয়েশা খাতুন |
জীবনীসম্পাদনা
পিতা তৈয়ব আলী ও মাতা রাবেয়া বেগমের দ্বিতীয় সন্তান মীর কাসেম আলী ১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] মীর কাশেম আলী প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বরিশালে অবস্থিত আদর্শ বিদ্যালয়ে ১৯৫৮-১৯৬২ সাল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৩-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ফরিদপুর জেলা স্কুলে লেখাপড়া করে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭-১৯৬৮ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে লেখাপড়া করে ১৯৬৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ১৯৬৯-১৯৭০ শিক্ষাবর্ষে বিএসসি অনার্স প্রথম বর্ষে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স প্রথম বর্ষের লেখাপড়া স্থগিত করেন। অতঃপর ১৯৭১-১৯৭২ শিক্ষাবর্ষের বিএ পাস কোর্সে সাবেক আদর্শ কলেজ বর্তমানে আইডিয়াল কলেজ, ৬৫ সেন্ট্রাল রোড ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে অধ্যয়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৭৩ সালের বিএ (পাশ) পরীক্ষা (১৯৭৪ সালে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়)। উক্ত পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালের এমএ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মে-জুন ১৯৭৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে এবং ১৯৭৫ সালে এমএ ফাইনাল পরীক্ষা (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর/১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত হয়)। উক্ত পরীক্ষায় অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।[৫]
ব্যবসায় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকাসম্পাদনা
মীর কাসেম আলী ইসলামী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক ছিলেন।[৬][৭] তিনি দিগন্ত মিডিয়া গ্রুপেরও চেয়ারম্যান ছিলেন যেটি দৈনিক নয়া দিগন্ত এবং দিগন্ত টেলিভিশন পরিচালনা করে। এছাড়াও তিনি ইবনে সিনা ট্রাস্ট এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।[৮] তিনি ১৯৬২ সালে সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও দাতব্য সংগঠন ‘রাবেতা আল-আলম আল ইসলামী’ এর এদেশীয় পরিচালক ছিলেন।[৯][১০] এসবের বাইরে তিনি ‘ইন্ড্রাস্টিয়ালিস্ট অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, কেয়ারি লিমিটেড, ফুয়াদ আল খতিব, আল্লামা ইকবাল সংসদ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর স্ট্রেটেজি ও পিস স্টাডিস সহ দেশে-বিদেশে মোট ৪০টি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।[১১][১২]
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসম্পাদনা
এই অনুচ্ছেদটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
১৯৭১ সালে মীর কাসেম চট্টগ্রাম কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। সাথে সাথে তিনি চট্টগ্রাম ছাত্র সংঘেরও সভাপতি ছিলেন। একই বছরের ৬ই নভেম্বর তিনি পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রাদেশিক কার্যনির্বাহী কমিটিতে যুক্ত হন। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় আধা-সামরিক বাহিনী আলবদর। যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করত ও বাঙালি স্বাধীনতাকামীদের উপর নির্যাতন করত। মীর কাসেম ছিলেন সেসময়কার আলবদরের তৃতীয় প্রধান ব্যক্তি। যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম আলবদর শাখা আন্দরকিল্লার মহামায়া ভবনটি একটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে দখল করে ও নাম পরিবর্তন করে ডালিম হোটেল নামকরণ করা হয়। সেসময় ডালিম হোটেল নামের এই ভবনটি ইন্টারোগেশন ও ডিটেনশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হতো। মীর কাসেমের বিচারের সময় মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও সাইদ মোহাম্মদ ইমরান সাক্ষ্য দেন যে, এটি মূলত মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের জন্য নির্যাতন কেন্দ্র ও জেলখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর সদস্য জসিম, তনু ও রঞ্জিত দাশ এখানে নিহত হন বলেও সাক্ষ্যে উঠে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে মীর কাসেম যখন ভবনটিতে আসতেন তখন পাহারাদাররা বলতো, !মীর কাসেম এসেছে, কমান্ডার এসেছে”।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ "মীর কাসেম আলীর ফাঁসির আদেশ"। onlinekhobor.com। ৬ জুন ২০১৬। ৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ "মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর"। www.shokalerkhobor24.com। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ "মীর কাসেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি"। বিডিনিউজ২৪.কম। ৬ জুন ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Star Online Report। "War trial: Mir Quasem verdict Sunday"। thedailystar.net। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "দৈনিক জনকন্ঠ || কে এই মীর কাশেম"। দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১।
- ↑ "কে এই মীর কাসেম"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩০।
- ↑ আব্দুল্লাহ, শেখ; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "এখনো ইসলামী ব্যাংকের লাখ শেয়ার মীর কাসেমের নামে"। bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩০।
- ↑ "দৈনিক জনকন্ঠ || কে এই মীর কাশেম"। দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১।
- ↑ Staff Correspondent। "War crimes verdict on Mir Quasem Ali Sunday"। bdnews24.com। bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব। "মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল, আদেশ ২৬ মে"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১।
- ↑ "জামায়াতে ইসলামীতে মীর কাসেমের গুরুত্ব"। BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২১।
- ↑ Star Online Report। "War trial: Mir Quasem verdict Sunday"। thedailystar.net। The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১৬।