মিশরের ফাওযিয়া ফুয়াদ

ইরানের রাণী সঙ্গী

মিশরের ফাওযিয়া ফুয়াদ (আরবি: الأميرة فوزية فؤاد; ফার্সি: شاهدخت فوزیه فؤاد; ৫ নভেম্বর ১৯২১ – ২ জুলাই ২০১৩), ইরানের মুলুক ফাউযিয়া নামেও পরিচিত, ছিলেন মিশরীয় রাজকন্যা যিনি ইরানের সর্বশেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির স্ত্রী হিসেবে পরর্বতীতে ইরানের রানী হয়েছিলেন।

ফাওযিয়া ফুয়াদ
ইরানের মুলুক ফাওযিয়া
ইরানের রানী সঙ্গী
কার্যকাল১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ – ১৭ নভেম্বর ১৯৪৮
পূর্বসূরিতাজ উল-মুলক
উত্তরসূরিসোরায়া এসফানদিয়ারি-বখতিয়ারি
জন্ম(১৯২১-১১-০৫)৫ নভেম্বর ১৯২১
রাশ-এল-টিন প্রাসাদ, আলেকজান্দ্রিয়া, মিশরের সুলতানতে
মৃত্যু২ জুলাই ২০১৩(2013-07-02) (বয়স ৯১)
আলেকজান্দ্রিয়া, মিশর
সমাধি৩ জুলাই ২০১৩
দাম্পত্য সঙ্গীমোহাম্মদ রেজা পাহলভি (বি. ১৯৩৯; বিচ্ছেদ. ১৯৪৮)
ইসমাইল চিরিন (বি. ১৯৪৯; মৃ. ১৯৯৪)
বংশধর
পূর্ণ নাম
রাজবংশ
পিতামিশরের প্রথম ফুয়াদ
মাতানাজলি সাবরি
মিশর ও ইরানের রাজকন্যা ফৌযিয়া
এর রীতি
উদ্ধৃতিকরণের রীতিতার রাজকীয় মহিমা
কথ্যরীতিআপনার রাজকীয় মহিমা

রাজকন্যা ফাওযিয়া ছিলেন মিশরের ইসমাইলের সপ্তম পুত্র প্রথম ফুয়াদের কন্যা। ফাওযিয়া মূলত মুহাম্মদ আলি রাজবংশ থেকে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।[১][২] ১৯৪৯ সালে সার্কাসিয়ান বংশোদ্ভূত একজন মিশরীয় কূটনীতিক কার্নেল ইসমাইল চিরিনের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি ফাউজিয়া চিরিন (বা শিরিন) নামেও পরিচিত ছিলেন। ১৯৫২ সালের মিশরীয় বিপ্লবের পর, তার রাজকীয় উপাধি মিশরীয় সরকার কর্তৃক আর স্বীকৃত ছিল না। ২০১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, তিনি মিশরে বসবাসরত মোহাম্মদ আলি রাজবংশের প্রাচীনতম সদস্য ছিলেন। বিপ্লবের পর তার ভাতিজা ফুয়াদ, যিনি মিশরের ও সুদান ঘোষিত রাজা দ্বিতীয় ফুয়াদ সুইজারল্যান্ড.সিএক্সএক্স-তে বসবাস করতেন।

জীবন সম্পাদনা

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

ফাওযিয়া ১৯২১ সালের ৫ নভেম্বর মিশরের সুলতানতে আলেকজান্দ্রিয়ায় রাশ-এল-টিন প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মিশর ও সুদানের সুলতান প্রথম ফুয়াদ এবং পরর্বতীতে মিশরের রাজা প্রথম ফুয়াদ এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাজলি সাবরির জ্যেষ্ঠ কন্যা।[৩] রাজকন্যা ফাওযিয়া ফুয়াদ ছিলেন আলবেনি, তুর্কি, ফরাসি এবং সার্কাসিয় বংশের অধিবাসী।[৪] ফাওযিয়ার পিতামহ ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত মেজর জেনারেল মুহাম্মদ শরিফ পাশা যিনি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৫] তার মহান পিতামহের একজন ছিলেন সুলেইমান পাশা, একজন ফরাসি সেনা কর্মকর্তা, যিনি নেপোলিয়নের অধীনে কাজ করেছিলেন এবং ইসলামে রূপান্তরিত হয়েছিলেন।

তার বোন ফাইজা, ফাইকাফাতিয়া এবং ভাই ফারুকের পাশাপাশি[৬] রাজকন্যা শ্বিকার খানুম এফেন্দিয়ের সাথে তার বাবার পূর্ব বিবাহসূত্রে তার আরেক বোন ছিল। রাজকন্যা ফাওযিয়া সুইজারল্যান্ডে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন[৩] এবং তার স্থানীয় আরবি ছাড়াও ইংরেজিফরাসি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।[৭]

তার সৌন্দর্য প্রায়ই চলচ্চিত্র তারকা হেডি লেমারভিভিয়েন লের সাথে তুলনা করা হয়।[৮]

পরবর্তী জীবন সম্পাদনা

 
১৯৪০-এর দশকের শেষে ইসমাইল চিরিনের সাথে ফাওযিয়া

১৯৪৯ সালের ২৮ মার্চ, কায়রোতে কুববা প্রাসাদে, ফাওযিয়া কর্নেল ইসমাইল চিরিনকে (বা শিরিন) (১৯১৯-১৯৯৪) বিয়ে করেছিলেন, যিনি ছিলেন হুসেন চেরাইন বীর এবং তার স্ত্রী এইচএইচ রাজকন্যা আমিন বিহরুজ খানুম এফেন্ডিয়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র।[৯][১০] চিরিন ট্রিনিটি কলেজ, ক্যামব্রিজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলেন এবং একসময় মিশরীয় যুদ্ধ ও নৌবাহিনীর মন্ত্রী হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন। বিয়ের পর তারা কায়রোর মাডিতে ফাওযিয়ার মালিকানাধীন একটি এস্টেটে বসবাস করত।[১০][১১] তারা স্মুহা, আলেকজান্দ্রিয়ায় একটি ভিলাতেও কিছুকাল বসবাস করেছিল।[১২] প্রথম বিবাহের বিচ্ছেদের পর, ফাওযিয়া প্রথম প্রেমের জন্য বিয়ে করেছিলেন এবং তিনি ইরানের শাহের চেয়ে কার্নেল চিরিনের সাথে বিয়ে করা অনেক সুখী বলে বর্ণনা করেছিলেন।[১৩]

তাদের দুই সন্তানের এক মেয়ে এবং এক পুত্র:[১৪]

  • নাদিয়া চিরিন (১৯ ডিসেম্বর ১৯৫০, কায়রো[১৫] – অক্টোবর ২০০৯)। তিনি মিশরীয় অভিনেতা ইউসুফ শাবানকে প্রথম বিয়ে করেছিলেন এবং দুজনই তালাকপ্রাপ্ত হন[১২] এবং দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন মুস্তাফা রশিদের সাথে। দুটি দাম্পত্যজীবনে একজন করে তার দুই মেয়ে ছিল:
    • সিনাই শাবান (জন্ম: অক্টোবর ১৯৭৩)[১২]
    • ফাওযিয়া রশিদ
  • হুসেইন চিরিন (জন্ম: ১৯৫৫, গিজা)

১৯৫২ সালের বিপ্লবে রাজা ফারুকের উৎখাতের পর ফাওযিয়া মিশরে বসবাস করেছিলেন।[১৬] জানুয়ারী ২০০৫ সালে রাজকন্যা ফাওযিয়ার মৃত্যুর ভুল প্রতিবেদন করা হয়েছিল। সাংবাদিকরা তাকে তার ভাতিজা, রাজকন্যা ফাওযিয়া ফারুক (১৯৪০-২০০৫) ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, যিনি ছিলেন রাজা ফারুকের তিন কন্যাদের একজন। তার পরবর্তী জীবনে, ফাওযিয়া মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে বসবাস করতেন, যেখানে তিনি ২১ জুলাই ২০১৩ সালে ৯১ বছর বয়সে মারা যান।[৩][১৭] ৩ জুলাই কায়রোতে সাঈদ নাফিস মসজিদে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।[১৮] তাকে কায়রোতে তার দ্বিতীয় স্বামী চিরিনের সমাধির পাশে সমাধিস্থ করা হয়ে।[১৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. In the house of Muhammad Ali: a family album, 1805–1952 By Hassan Hassan
  2. "Tale of 1001 Royal Egyptian Nights, Princess Fawzia of Egypt once Queen of Iran"। Travel in style। ৩০ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১২ 
  3. "Princess Fawzia Fuad of Egypt"The Telegraph। ৫ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৩ 
  4. Montgomery-Massingberd, Hugh, সম্পাদক (১৯৮০)। "The French Ancestry of King Farouk of Egypt"। Burke's Royal Families of the World। Volume II: Africa & the Middle East। London: Burke's Peerage। পৃষ্ঠা 287। আইএসবিএন 978-0-85011-029-6ওসিএলসি 18496936 
  5. Goldschmidt, Arthur (২০০০)। Biographical dictionary of modern Egypt। Lynne Rienner Publishers। পৃষ্ঠা 191আইএসবিএন 1-55587-229-8 
  6. "Nazli"A Bit of History। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৩ 
  7. "Colorful Fetes Mark Royal Wedding that will Link Egypt and Persian"The Meriden Daily Journal। ১৩ মার্চ ১৯৩৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৩ 
  8. Hansen, Suzy (২১ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Queen Fawzia"The New York Times Magazine। New York: Arthur Ochs Sulzberger Jr.। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  9. "Princess Fawzia engaged"The Indian Expree। ২৮ মার্চ ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  10. "Princess Fawzia weds diplomat"Meriden Record। ২৯ মার্চ ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৩ 
  11. "Maadi's Ottomans"Egy। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩ 
  12. Sami, Soheir (৪–১০ জুন ১৯৯৮)। "Profile: Youssef Shaaban"Al Ahram Weekly (380)। ২২ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩ 
  13. Stadiem, William Too Rich, New York: Harper Collins, 1991 p. 290.
  14. "Shah's ex-wives keep low profiles in Egypt, Europe"The Palm Beach Post। AP। ২৮ জুলাই ১৯৮০। ১৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১২ 
  15. "Girl is born to Princess Fawzia"Pittsburgh Post Gazette। Cairo। AP। ২০ ডিসেম্বর ১৯৫০। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  16. "Shah's first wife Princess Fawzia dies in Egypt"Dawn। ৩ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৩ 
  17. "Princess Fawzia, Shah's first wife, dies in Egypt"Reuters। ৫ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৮ 
  18. "Death of Princess Fawzia"Alroeya News। ২ জুলাই ২০১৩। ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১৩ 
  19. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; rym8july নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

মিশরের ফাওযিয়া ফুয়াদ
জন্ম: ৫ নভেম্বর ১৯২১ মৃত্যু: ২ জুলাই ২০১৩
Iranian royalty
পূর্বসূরী
তাজ উল-মুলক
ইরানের রানী সঙ্গী
১৯৪১–১৯৪৮
শূন্য
Title next held by
সোরায়া এসফানদিয়ারি-বখতিয়ারি