মিন্মিনি

ভারতীয় গায়িকা

মিন্মিনি (জন্ম পি. জে. রোজিলি, ১২ আগস্ট ১৯৭০) হলেন দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী। চলচ্চিত্রের সুরকার এ. আর. রহমানের প্রথম কাজ রোজা চলচ্চিত্রের ‘চিন্না চিন্না আসাই’ গানের জন্য তাকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা হয়, যেটি হিন্দিতে "ছোটি সি আশা" নামে ডাব করা হয়েছিল। যদিও তিনি কেরালার তবে তাঁর বেশিরভাগ স্মরণীয় গান তামিল ভাষায় গেয়েছেন, আর এর বেশিরভাগ গানই সুর করেছেন ইলাইয়ারাজা এবং এ. আর. রহমান। তার জনপ্রিয় মালায়ালাম গানের মধ্যে রয়েছে কিঝাক্কুনারুম পাকশীর "সৌপর্ণিকামৃত", "ওঞ্জল উড়ঙ্গি", এবং কুদুম্বসমেথামের "নীলারাভি"। তিনি এঙ্গা থাম্বি (১৯৯৩), কারুত্থাম্মা (১৯৯৪), এবং থেভার মাগান (১৯৯২) সহ চরচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানগুলিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। ২০১৫ সালে মিলি চলচ্চিত্রে "কানমনিয়ে" গানটি দিয়ে তিনি আবার গানের জগতে ফিরে এসেছেন।

মিন্মিনি
জন্মনামপি. জে. রোজিলি
জন্ম (1970-08-12) ১২ আগস্ট ১৯৭০ (বয়স ৫৩)
উদ্ভবকেজমাদু, আলুয়া, কেরালা, ভারত
ধরননেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী
পেশাগায়ক
কার্যকাল১৯৮৮–১৯৯৫, ২০০৫–বর্তমান

প্রথম জীবন সম্পাদনা

মিন্মিনি ১৯৭০ সালের ১২ আগস্ট পি. এ. জোসেফ এবং ত্রিজার ঘরে চতুর্থ কন্যা হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। মিন্মিনি স্কুলে পি. জে. রোজিলি নামে পরিচিত ছিল। তাকে আদর করে মিনি বলেও ডাকা হত। তাঁর বাবা পি. এ. জোসেফ শিল্প ও শিল্পী সম্পর্কে পাগল ছিলেন। কলাভবনের অর্কেস্ট্রা দিয়ে ৫ বছর বয়সে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়, তিনি ১০ বছর বয়সে পেশাদার গায়িকা হয়েছিলেন। ত্রিজা পেশাদার না হলেও গায়ক ছিলেন। মিনির বড় বোনেরা তাদের গ্রামের গির্জায় সমবেত গান গাইতো। তাদের অনুকরণ করে মিনিও গান করতে লাগল। তার বাবা তাকে গানের তাল এবং মাত্রা শিখিয়েছিলেন। এলুভার সেন্ট ফ্রান্সিস গার্লস হাই স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় বোনেরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল। কালাভবনের গানামেলা দলে বোনদের একজন জ্যানসি গেয়েছিলেন।

১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রীয় যুব উৎসব এবং ১৯৮৭ সালের বিশ্ববিদ্যালয় যুব উৎসবে হালকা সংগীতে প্রথম পুরস্কার সহ তিনি শৈশবকাল থেকেই গান গাওয়ার প্রতিযোগিতায় অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। ইতিমধ্যে তিনি কোচিন আর্টস অ্যান্ড কমিউনিকেশন (সিএসি) এ নিয়মিত গায়িকা হয়েছেন। প্রাক ডিগ্রির পরে, মিনি সংগীত বিষয়ে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ত্রিপুণিতুরার আরএলভি সংগীত একাডেমিতে ভর্তি হন। তবে অনেক স্টেজ প্রোগ্রাম এবং রেকর্ডিং থাকায় তিনি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারেননি।

কর্মজীবন সম্পাদনা

ভেনু নাগাভাল্লি পরিচালিত স্বাগাথাম (১৯৮৮) এর মাধ্যমে মিনির চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনি এতে তিনটি গান গেয়েছিলেন, আর এগুলোর সুর করেছেন রাজামনি। মীরা (১৯৯১) ছবির মাধ্যমে তামিল চলচ্চিত্র জগতের সাথ তাকে পরিচয় করিয়ে দেন ইলাইয়ারাজা। ইলাইয়ারাজা তার মিন্মিনি নামটি রেখেছিলেন, নামটি তামিলদের কাছে তাকে আরও আবেদনময় করে তুলেছিল। মিন্মিনির প্রথম তেলুগু ছবি হলো "আঠমবন্ধম" সঙ্গীত রচনা করেছেন মরাগাথামনি (কেরাবানি)।

তার বড় পরিবর্তনটি আসে ১৯৯২ সালে যখন রোজা ছবির জন্য "চিন্না চিন্না আসাই" গানটি গেয়েছিলেন। এ. আর. রহমানের সাথে গাওয়া গানটি উভয়কে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাইয়ে দেয়। সংগীত জগতে গানটি একটি নতুন ধারা স্থাপন করেছিল, গানটি তেলুগু এবং হিন্দিতে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল এবং মিন্মিনি সেগুলিও গেয়েছিলেন।

১৯৯৫ সালে পুতনাঞ্জাবেতেগারা চলচ্চিত্রের জন্য মিন্মিনি কিছু কন্নড় চলচ্চিত্রের গান গেয়েছেন। হামসলেখার রচনায় পুতনাঞ্জা চলচ্চিত্রে মনোর সাথে একটি বিখ্যাত দ্বৈত সংগীত রঙ্গেরো হোলি। একই ছবিতে তিনি মানো ও শ্যামলা জি ভাবে-এর সাথে পুতামল্লি পুতামল্লি গানটিতে গুনগুন করেছিলেন। তিনি সাধু কোকিলার সাথে বেতেগারা ছবিতে কাজ করেন, সেখানে তিনি মনোর সাথে মিদিদিড়ালু সাভিগানাসুগালু গানটি গেয়েছেন।

মিন্মিনি সাতটি ভিন্ন ভাষায় প্রায় ২,০০০ টি চলচ্চিত্রের গান গেয়েছেন, ভাষাগুলি হলো: মালয়ালম, তামিল, তেলুগু, হিন্দি, কন্নড়, ওড়িয়া এবং বাদাগা। তিনি মালয়ালমে জনসন, রাবীন্দ্রন, এস. পি. ভেঙ্কটেশ, বোম্বে রবি এবং মোহন সীতারার মতো সংগীত পরিচালকদের প্রিয় হয়ে ওঠেন। তার অনেক গান জনপ্রিয়তা পায়, যেমন "সৌপর্ণিকামৃত" (কিজাক্কুনারুম পাকশী), "ওওঞ্জাল উড়ঙ্গি", "নীলাড়াবিল" (কুদুম্বাসামেথাম), "কাক্কা পুচা" (পাপায়ুদে স্বন্থম অপুস), "পাথিরাবায়ি" (ভিয়েতনাম কলোনি), "স্বয়াম বরামাই" (পাইথ্রাকাম), "ভেল্লিথিঙ্কল" (মেলেপারাম্বিল আনভেদু), "অরুনি জিনমাকালে পেরু চোলামো" (গজল), "মুথে নিনে থেদি" ("মানাসাম ") এবং আরও অনেক।

২০১৫ সালে মিলি চলচ্চিত্রের জন্য তার "কানমনিয়ে" গানটি দিয়ে গোপী সুন্দর চলচ্চিত্র জগতে ফিরে এসেছিলেন। 'চিরকোদিনজা কিনাক্কল' চলচ্চিত্রের "নীলকুদমে" ২০১৫ সালের জনপ্রিয় গান হয়ে ওঠে।

পুরস্কার সম্পাদনা

তিনি অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন, তারমধ্যে কয়েকটি হলো: সিঙ্গাপুর স্টেট গভর্নমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্যশিল্পী বিভাগে তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, সিনেমা এক্সপ্রেস পুরস্কার, ফিল্ম ফ্যানস অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার (তেলুগু), কেরালার ফিল্ম চেম্বার পুরস্কার এবং সুমু পুরস্কার।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মিন্মিনি ১৯৯৫ সালে জয় ম্যাথিউ (কোরাট্টি) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। মিন্মিনী বর্তমানে দু'সন্তানের মা: অ্যালান জয় ম্যাথিউ এবং আন্না কীরথানা। ১৯৯৩ সালে লন্ডনে একটি মঞ্চ প্রদর্শনীতে মিন্মিনি তার কণ্ঠস্বর হারিয়েছেন। এমনকি তিনি কয়েক বছর কথা বলতেও পারেননি। তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে পরবর্তীতে তার কন্ঠস্বর ফিরে পান। স্বামীর উৎসাহে তিনি এখন সঙ্গীত শিল্পে ফিরে এসেছেন এবং কোচিনে জয়’স একাডেমি অফ পারফর্মিং আর্টস নামে একটি সংগীত স্কুলও শুরু করেছেন। বর্তমানে সাত বছর ধরে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। মিন্মিনি বলেন, "আমার কাছে যা কিছু আছে তা কেবলমাত্র আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া"।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা