মালদ্বীপের সংস্কৃতি

মালদ্বীপের সংস্কৃতি বিভিন্ন উৎস থেকে গৃহীত, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ভারতের সংস্কৃতি।  নৃতাত্ত্বিক বিবেচনায় মালদ্বীপের জনগণ প্রধানত ইন্দো-আর্য গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।

মালদ্বীপের সংস্কৃতিতে অন্যদের প্রভাব সম্পাদনা

ভাষা সম্পাদনা

ধিবেহী ভাষা ইন্দো-ইরানি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত, এবং এ জন্য সিংহলি ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। এর ফলে উপমহাদেশের উত্তরাংশের প্রভাব রয়েছে মালদ্বীপের সংস্কৃতিতে। কিংবন্তী অনুসারে মালদ্বীপের প্রাচীন রাজারা মূলত উত্তর ভারতীয় ছিলেন।

বৌদ্ধ ধর্ম সম্পাদনা

এই প্রাচীন রাজারা সম্ভবত ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মালদ্বীপে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু এ বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। শ্রীলঙ্কায়ও অনুরূপ কিংবদন্তি প্রচলিত আছে, কিন্তু মালদ্বীপে বৌদ্ধ ধর্ম এবং রাজ পরিবার সিংহল দ্বীপ থেকে এসেছে প্রমাণ করা অসম্ভব, কেননা শ্রীলঙ্কার কোন কাহিনীকারই মালদ্বীপের কথা উল্লেখ করেন নি। এটা অসম্ভব যে, শ্রীলঙ্কার কোন একটি রাজবংশ তাদের রাজত্ব মালদ্বীপের কোন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত করার পরও শ্রীলঙ্কার প্রাচীন কাহিনীকাররা একবারও মালদ্বীপের কথা উল্লেখ করবেন না।

আরব সম্পাদনা

দ্বাদশ শতাব্দি থেকে মালদ্বীপের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আরবদের প্রভাব পড়তে থাকে। কেননা ঐ সময় সাধারণ মানুষ ব্যাপক হারে ইসলাম গ্রহণ করছিল, আর মালদ্বীপ আরবদের ভারত মহাসাগরে যাওয়ার পথে অবস্থিত।

আফ্রিকান সম্পাদনা

মালদ্বীপের সংস্কৃতিতে আফ্রিকান সংস্কৃতিরও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। অতীতে মালদ্বীপের রাজ পরিবারের সদস্যরা এবং অন্যান্য সম্ভ্রান্তজনেরা হজ্জ যাত্রার পর আরব থেকে ফেরার সময় আফ্রিকান দাসদের নিয়ে আসতেন, এদের মাধ্যমেই মুলত এ প্রভাব পড়ে। ফেরিদু, মালহোসসহ বিভিন্ন দ্বীপে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের উত্তর পুরুষদের পাওয়া যায়।[১]

সঙ্গীত ও নৃত্য সম্পাদনা

ভাষাগত দিক থেকে মালদ্বীপিরা ভারতের উত্তরাঞ্চলের সাথে সম্বন্ধ রাখে, কেননা তাদের ভাষার সাথে উত্তর ভারতের ভাষার সম্পর্ক আছে। প্রবীণ মালদ্বীপিরা হিন্দি সিনেমা দেখতে এবং হিন্দি গান শুনতে পছন্দ করেন। অনেক জনপ্রিয় মালদ্বীপি গানই হিন্দি গানের সুরের উপর ভিত্তি করে গাওয়া হয়। এর কারণ ভাষাগত সাদৃশ্য এবং গানের তাল লয়ের মিল। প্রকৃতপক্ষে মালদ্বীপিদের জন্য স্থানীয় গানের কথাকে হিন্দি গানের সাথে মিলিয়ে গাওয়া খুবই সহজ। বলিউডি গান মালদ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম, বিশেষত মোহাম্মদ রাফি, মুকেশ, লতা মঙ্গেশকর এবং আশা ভোঁসলের পুরোনো গানগুলো মালদ্বীপে খুবই জনপ্রিয়।  এ সব কারণে মালদ্বীপের বেশির ভাগ নৃত্য ও সঙ্গীত ভারতের কত্থক নৃত্য এবং হিন্দি গানের অনুকরণে পরিবেশন করা হয় অথবা এগুলো কত্থক ও হিন্দি দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে থাকে।

মালদ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র হলো বুলবুল, যা এক ধরনের আনুভূমিক একর্ডিওন। এই বাদ্যযন্ত্রটি ভক্তিমুলক গান যেমন মাউলুদ এবং মাধাহাতেও ব্যবহার করা হয়। বদু বেরু (এক ধরনের বড় ঢাক) নামক আরেক ধরনের বাদ্যযন্ত্র মালদ্বীপে ব্যবহৃত হয়, এটির আদি উৎস আফ্রিকায় বলে ধারণা করা হয়।

বিয়ে এবং তালাক সম্পাদনা

মালদ্বীপের সংস্কৃতি প্রাচীন দ্রাবিড় সংস্কৃতির শক্তিশালী মাতৃতান্ত্রিক পদ্ধতির অনেক কিছুই গ্রহণ করেছে। মালদ্বীপের সমাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বিবাহ বিচ্ছেদের উচ্চ হার, বাল্যবিবাহের কারণে এটি হয়ে থাকে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।  অন্যদের মতে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পর্কে ইসলামের উদার আইন এবং মালদ্বীপিদের অপেক্ষাকৃত শিথিল বৈবাহিক বন্ধনের কারণে হয়ে থাকে। শিথিল বৈবাহিক বন্ধনের পিছনের কারণ উন্নত কৃষিভিত্তিক সমাজের  ইতিহাসের অভাব।[২]

খাদ্যাভ্যাস সম্পাদনা

মালদ্বীপের খাদ্যাভ্যাস প্রণালী মুলত মাছকেন্দ্রিক, কেননা মৎস্য শিল্প মালদ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প। প্রতিদিনের খাবার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মাছ ও ভাত, খাদ্য তালিকায় মাছ প্রোটিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। মালদ্বীপে খুব সামান্য পরিমাণ সব্জি খাওয়া হয়, কেননা সব্জি চাষের পমির পরিমাণ সেখানে খুবই কম। পর্যটকদের রিসোর্টসমূহে পরিবেশিত অধিকাংশ খাবারেই আমদানীকৃত হয়ে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাংস খাওয়া হয়। পর্যটন রিসোর্টগুলো ছাড়া এলকোহল অনুমোদিত নয়।  এলকোহলের বদলে স্থানীয় রা  নামক এক ধরনের চোলাই মদ উৎপাদিত হয়। নিত্য প্রয়োজনী পণ্য যেমন চাল, চিনি, ময়দা ইত্যাদি আমদানি করা হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Xavier Romero-Frias, The Maldive Islanders, A Study of the Popular Culture of an Ancient Ocean Kingdom.
  2. Marcus, Anthony. 2012.
  • Divehiraajjege Jōgrafīge Vanavaru. Muhammadu Ibrahim Lutfee. G.Sōsanī. Male' 1999.
  • HCP Bell, The Maldive Islands, An account of the physical features, History, Inhabitants, Productions and Trade. Colombo 1883, আইএসবিএন ৮১-২০৬-১২২২-১
  • Xavier Romero-Frias, The Maldive Islanders, A Study of the Popular Culture of an Ancient Ocean Kingdom. Barcelona 1999, আইএসবিএন ৮৪-৭২৫৪-৮০১-৫
  • Divehi Tārīkhah Au Alikameh. Divehi Bahāi Tārikhah Khidmaiykurā Qaumī Markazu. Reprint 1958 edn. Male’ 1990.