মায়সালুনের যুদ্ধ

মায়সালুনের যুদ্ধ (আরবি : معركة ميسلون) রাজতন্ত্র শাসিত সিরিয়াফ্রান্সের মধ্যে সংঘটিত হয়। একে মায়সালুন পাসের যুদ্ধও বলা হয়। ১৯২০ সালের ২৩ জুলাই দামেস্কের ১২ মাইল পশ্চিমে লেবাননের সীমান্তের কাছে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে সুসজ্জিত ফরাসি বাহিনী আরব বাহিনীকে পরাজিত করে।

মায়সালুনের যুদ্ধ
معركة ميسلون
মূল যুদ্ধ: ফরাসি-সিরিয়ান যুদ্ধ

হেনরি গোরাড মায়সালুনে ফরাসি সেনাদেরকে পরিদর্শন করছেন
তারিখ২৩ জুলাই ১৯২০
অবস্থান
মায়সালুন পাস, এন্টি-লেবানন পর্বতমালা (সিরিয়া)
ফলাফল ফরাসিদের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ
ফ্রান্স ফ্রান্স সিরিয়া
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
ফ্রান্স হেনরি গোরাড ইউসুফ আল-আজমা 
শক্তি
ট্যাঙ্ক ও বিমান দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত ৯,০০০ সৈনিক[১] প্রায় ৩,০০০ জন [১] (পুরনো হালকা অস্ত্র)
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
৪২ জন মৃত[১] এবং ১৫৪ জন আহত ৪০০ জনেরও অধিক মৃত[১]

পটভূমি সম্পাদনা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ব্রিটিশরা মধ্যপ্রাচ্যে অটোমানদের পরাজিত করে। ১৯১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারা দামেস্ক দখন করে নেয়। ১৯২০ সালের ৮ মার্চ ফয়সাল বিন হুসাইনকে রাজা হিসেবে সিরিয়ার স্বাধীন রাজতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই একতরফা সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ ও ফরাসিরা প্রত্যাখ্যান করে। মধ্যপ্রাচ্যের মেন্ডেট নিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য ১৯২০ সালের এপ্রিলে মিত্রশক্তি কর্তৃক সান রেমো সম্মেলন আহ্বান করা হয়। ফয়সাল ও তার সমর্থকরা এই সম্মেলনকে প্রত্যাখ্যান করেন। কয়েকমাসের ভঙ্গুর অবস্থা ও ফরাসিদের সাথে করা ফয়সালের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ফরাসি সেনাপ্রধান জেনারেল হেনরি গোরাড ১৯২০ সালের ১৪ জুলাই ফয়সালকে হয় আত্মসমর্পণ নাহয় যুদ্ধের আল্টিমেটাম দেন।[২]:২১৫ ব্রিটিশ সাহায্য না থাকায় ও ফরাসিদের বিরোধীতার ভবিষ্যত শুন্য বুঝতে পারে রাজা ফয়সাল সেদিনই ফরাসিদের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।

যুদ্ধ সম্পাদনা

জেনারেল মারিয়ানো গোয়েবেটের অধীন ফরাসি ২৪তম ডিভিশনকে জেনারেল গোরাড বৈরুত থেকে দামেস্কের দিকে যাত্রার নির্দেশ দেন। মুসলিম শাসিত সিরিয়া রাজতন্ত্রে যোগ দিতে অনিচ্ছুক কিছু মেরোনাইট লেবানিজ ফরাসিদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

ফয়সালের যুদ্ধমন্ত্রী ও চীফ অব স্টাফ ইউসুফ আল-আজমা তার নির্দেশ অমান্য করেন ও একটি ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে ফরাসিদের বিরুদ্ধে মায়সালুনের দিকে অগ্রসর হন। তিনি দামেস্ক থেকে এদেরকে নিয়ে যাত্রা করেন। তার দলে নবগঠিত সেনাবাহিনীর কয়েকশ নিয়মিত সৈনিক এবং সেইসাথে কিছু জরুরি তলব করা স্বেচ্ছাসেবক নাগরিক ছিল। ফলে এটি একটি আত্মঘাতি অভিযান হয়ে উঠে।

জেনারেল গোয়েবেটের অধীন ফরাসি সৈন্যবাহিনী সহজে সিরিয়ানদের পরাজিত করে। ইউসুফ আল-আজমা যুদ্ধে নিহত হন। যুদ্ধের পর জেনারেল গোরাড জেনারেল গোয়েবেটকে নিয়ে বলেন:

GENERAL ORDER No. 22

Aley, 24 July 1920

"The General is deeply happy to address his congratulations to General Goybet and his valiant troops: 415th of line, 2nd Algerian sharpshooters, 11th and 10th Senegalese sharpshooters, light-infantry-men of Africa, Moroccan trooper regiment, batteries of African groups, batteries of 155, 314, company of tanks, bombardment groups and squadrons who in the hard fight of 24 of July, have broken the resistance of the enemy who defied us for 8 months.
"They have engraved a glorious page in the history of our country." - General Gouraud

পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পাদনা

যুদ্ধের পরদিন জেনারেল গোয়েবেটের সৈন্যরা অল্প সময়ের মধ্যে দামেস্ক দখল করে নেয়। ফয়সালের সৈন্যরা হয় পালিয়ে যায় নাহয় ফরাসিদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়। সর্বশেষ লড়াইরত আরবদের দলটি দামেস্কেই অবস্থান করছিল। তারা দ্রুত পরাজিত হয়। একদিন পর আলাউদ্দিন আল-তারুবির নেতৃতাধীন একটি ফরাসিপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।[২] ১৯২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেনারেল গোরাড সিরিয়াকে নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে ফরাসি মেন্ডেটপ্রাপ্ত এলাকাকে বেশ কিছু ক্ষুদ্র এলাকায় বিভক্ত করেন।

ফরাসিরা ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৩ এ অনুমোদিতভাবে সিরিয়া ও লেবাননের মেন্ডেট পায়। সিরিয়ায় ফরাসি আধিপত্য ফরাসি উপনিবেশবাদের নতুন দিগন্ত উম্মোচন করে। সেই সাথে উত্তর সিরিয়া ও দামেস্কে বিদ্রোহ তৎপরতার জন্ম দেয়। গোরাডের ব্যাপারে জনশ্রুতি আছে যে তিনি সালাহউদ্দিন আইয়ুবির সমাধিতে লাথি মারেন ও বলেন, “সালাদিন জেগে উঠো। আমরা ফিরে এসেছি। এখানে আমার উপস্থিতি ক্রিসেন্টের উপর ক্রসের পবিত্র বিজয় নির্দেশ করে”।[৩]

ইউসুফ আল-আজমাকে সিরিয়ার স্বাধীনতার জন্য শহীদ ব্যক্তি হিসেবে আজও স্মরণ করা হয়। দামেস্কের অন্যতম বৃহত্তম একটি চত্বরে তার ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. David Murphy: The Arab Revolt 1916-18: Lawrence Sets Arabia Ablaze, Osprey Publishing, 2008, আইএসবিএন ১-৮৪৬০৩-৩৩৯-X, page 83[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ].
  2. Eliezer Tauber. The Formation of Modern Syria and Iraq. Frank Cass and Co. Ltd. Portland, Oregon. 1995.
  3. Meyer, Karl Ernest; Brysac, Shareen Blair (২০০৮)। Kingmakers: The Invention of the Modern Middle East। W. W. Norton & Company। পৃষ্ঠা 359। আইএসবিএন 9780393061994 

আরও দেখুন সম্পাদনা

  • Sami M. Moubayed, The Politics of Damascus 1920–1946. Urban Notables and the French Mandate (Dar Tlass, 1999)
  • M. Shakir, Islamic History