মানিক চৌধুরী

স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তি

কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী (২০ ডিসেম্বর ১৯৩৩ - ১০ জানুয়ারি ১৯৯১)[২] হলেন একজন প্রখ্যাত বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি ২০১৫ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।[১]

মানিক চৌধুরী
জন্ম২০ ডিসেম্বর ১৯৩৩
মৃত্যু১০ জানুয়ারি ১৯৯১
ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণমুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার[১] (২০১৫)

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা সৈনিক প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর ৮৭ তম জন্মবাষির্কীতে গত ২০ ডিসেম্বর ২০২০ইং উন্মুক্ত হয়েছে ‘হবিগঞ্জ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও মানিক চৌধুরী পাঠাগার’। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি ও কমান্ড্যান্ট কন্যা আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর নিরলস প্রচেষ্টার এক স্বপ্ন বাস্তবায়ন । এই ভবনটি কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর নিজস্ব ভূমির  উপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ।

এতে থাকছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৩২৭ টি স্মারক। জাদুঘর ভবনের নকশা করেন মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি নূরুল করিম দিলু। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ এই ভবণ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন মানিক চৌধুরীর স্ত্রী বেগম রোকেয়া চৌধুরী। পাঁচতলা বিশিষ্ট জাদুুঘর ও পাঠাগারের ভবণ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ণ করে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

ভবনে দোতলায় আছে কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীর নামে একটি অত্যাধুনিক পাঠাগার। এতে রয়েছে দেশ বিদেশের বরেণ্য লেখকের বই। সপ্তাহের শুক্রবার, শনিবার ও মঙ্গলবার খোলা থাকে এ পাঠাগার । দৃষ্টিনন্দন ও কল্যাণমুখী এ পাঠাগার স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত বাতিঘর হিসেবে সমাদৃত ।


অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের স্পষ্ট নিদর্শন স্বরূপ এ পাঠাগার ধারণ করছে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থাদি।

এর পরিচালক পরিষদ সদস্য ও বাস্তবায়নকারীর (আমাতুল কিবরিয়া কেয়া) সমাজ কল্যাণের যে অভিলাষ তা পূরণে পাঠাগারটি ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন সেবা কার্যক্রমও চালায়।

(তথ্য সংগ্রহ : ধীমান চন্দ্র দাশ, শিক্ষার্থী সদস্য, মানিক চৌধুরী জাদুঘর ও পাঠাগার )

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি সম্পাদনা

তিনি ১৯৩৩ সালের ২০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার সন্তান এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী সংসদ সদস্য হিসাবে হবিগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন।[৩]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

বৃহত্তর সিলেটে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি; মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে সরাসরি অংশগ্রহণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদেরও সংগঠিত করেন তিনি।[৪]

“কমান্ড্যান্ট” উপাধী লাভ সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে অস্ত্রের প্রয়োজন তার নেতৃত্বে হবিগঞ্জ সরকারি অস্ত্রাগার লুট করা হয় এবং এপ্রিলের প্রথম দিকে সরাসরি অংশ নেন সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী ও বড় যুদ্ধ হিসাবে পরিচিত শেরপুর-সাদিপুর যুদ্ধে।[৫] সম্মুখ সমরে অংশ নেয়ার পাশাপাশি ৩ নং ও ৪ নং সেক্টরে সৈন্য, অস্ত্র, খাদ্য সরবরাহসহ ভারতের খাৈয়াই ও কৈলাশহরের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পালন করায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল এম. এ. রব তাকে সিভিলিয়ান হওয়া সত্ত্বেও “কমান্ড্যান্ট” উপাধিতে ভূষিত করেন।[৬]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে হবিগঞ্জ থেকে এম.এন.এ. এবং ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন সিলেট-১৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৭] ১৭ জুলাই ১৯৭৫ সালে তিনি বাকশাল সরকারের হবিগঞ্জ মহকুমার গভর্নর নিযুক্ত হন।[৮] তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদের জন্য মানিক চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে চার বছর কারারুদ্ধ করে রাখা হয়।[৪]

মৃত্যু সম্পাদনা

তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে যথাযথ চিকিৎসা, এমনকি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পিজি হাসপাতালে কোনো ওয়ার্ডে একটি সিট বরাদ্দ পাননি।[২] এমতাবস্থায় ১৯৯১ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

পুরস্কার ও সম্মননা সম্পাদনা

“শ্যামল” প্রকল্পের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নিকট থেকে “বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক” গ্রহণ করেন।[৮]

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে[৪] অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ২০১৫ সালের “মরণোত্তর” স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তালিকা"মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ 
  2. "আমার বাবা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী"দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইন। ৯ জানুয়ারী ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ 
  3. "'কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী মাটি ও মানুষের'"দৈনিক সিলেট অনলাইন। ৩ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "স্বাধীনতা পদক পেলেন সাতজন"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম অনলাইন। ২৫ মার্চ ২০১৫। ২৪ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ 
  5. "মানিক চৌধুরী একমাত্র সিভিলিয়ান কমান্ড্যান্ট মুক্তিযোদ্ধা"দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইন। ১০ জানুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ 
  6. "গণমানুষের রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী"দৈনিক জনকন্ঠ অনলাইন। ১০ জানুয়ারী ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "১ম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত মাননীয় সংসদ-সদস্যদের নামের তালিকা" (পিডিএফ)জাতীয় সংসদবাংলাদেশ সরকার। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  8. "কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী শনিবার"উনাইটেডনিউজ২৪ডটকম অনলাইন। ৯ জানুয়ারী ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা