মহেশ ভাট

ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক

মহেশ ভাট (জন্ম: ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮) হলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। তিনি মূলত হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করে থাকেন। তার কর্মজীবনের শুরুর দিকের দুটি সমাদৃত চলচ্চিত্র হল অর্থ (১৯৮২) ও সারাংশ (১৯৮৪)। এই দুটি কাজের জন্য তিনি যথাক্রমে শ্রেষ্ঠ সংলাপ বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারশ্রেষ্ঠ কাহিনি বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। সারাংশ চলচ্চিত্রটি ১৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল।[] এটি ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য নিবেদন করা হয়েছিল। তার পরিচালিত প্রথম বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র ছিল ১৯৮৬ সালের নাম। তিনি ১৯৮৭ সালে বিশেষ ফিল্মসের ব্যানারে কবজা চলচ্চিত্র দিয়ে তার ভাই মুকেশ ভাটের সাথে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

মহেশ ভাট
২০১১ সালে ভাট
জন্ম (1948-09-20) ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ (বয়স ৭৬)[]
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাচলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার
দাম্পত্য সঙ্গীকিরণ ভাট (উরফে লরেন ব্রাইট) (বি. ১৯৭০)
সোনি রাজদান (বি. ১৯৮৬)
সন্তানপূজা ভাট (জ. ১৯৭২)
রাহুল ভাট (জ. ১৯৮২)
শাহিন ভাট (জ. ১৯৮৮)
আলিয়া ভাট (জ. ১৯৯৩)
পিতা-মাতানানাভাই ভাট
শিরিন মোহাম্মদ আলী
আত্মীয়দেখুন ভাট পরিবার

১৯৯০-এর দশক ভাট স্যার (১৯৯৩) চলচ্চিত্র পরিচালনা করে সমাদৃত হন। এছাড়া তার গুমরাহ (১৯৯৩) ও ক্রিমিনাল (১৯৯৪) চলচ্চিত্র দুটি ব্যবসাসফল হয়। ১৯৯৪ সালে তিনি হাম হ্যায় রাহি প্যায়ার কে (১৯৯৩) চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিশেষ জুরি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি আত্মজীবনীমূলক জখম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে নার্গিস দত্ত পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সমকালীন কয়েকটি চলচ্চিত্রও প্রযোজন করেন, সেগুলো হল জিস্‌ম (২০০৩), মার্ডার (২০০৪), ওহ লামহে... (২০০৬)।[] তিনি তার ভাই মুকেশ ভাটের সাথে চলচ্চিত্র প্রযোজনা কোম্পানি বিশেষ ফিল্মসের সহ-মালিক।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

মহেশ ভাট ১৯৪৮ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর পাকিস্তান লাহোর রাজ্য লাহোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নানাভাই ভাট এবং মাতা শিরিন মোহাম্মদ আলী।[] নানাভাই ছিলেন হিন্দু নগর ব্রাহ্মণ,[] এবং শিরিন ছিলেন গুজরাতি মুসলমান।[][] মহেশের ছোট ভাই মুকেশ ভাট একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক।[]

ভাট মাতুঙ্গার ডন বস্কো হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্কুলে থাকাকালীনই তিনি অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন কাজ করতেন এবং বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন তৈরি করতেন। তিনি পরিচয়সূত্রে চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ খোসলার সাথে পরিচিত হন। ভাট তখন থেকে খোসলার সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি তার প্রথম স্ত্রী কিরণকে (জন্ম লরেইন ব্রাইট) বিয়ে করেন। তাদের প্রণয়ের গল্প তার আশিকি চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা। ভাট ও কিরণের দুই সন্তান রয়েছে, তারা হলেন পূজা ভাটরাহুল ভাট। তার কর্মজীবনের শুরুর দিকের জটিলতার কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ভাট পরে অভিনেত্রী সোনি রাজদানের প্রেমে পড়েন এবং তাকে বিয়ে করেন।[] ভাট ও সনির দুই কন্যা সন্তান রয়েছে, তারা হলেন শাহিন ভাট ও আলিয়া ভাট

কর্মজীবন

সম্পাদনা

২৬ বছর বয়সে ভাট মঞ্জিলেঁ অউর ভি হ্যাঁয় (১৯৭৪) চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭৯ সালে শাবানা আজমিবিনোদ খান্না অভিনীত তার লহু কে দো রঙ চলচ্চিত্রটি দুটি বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করে। হেলেন তার প্রথম শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং মধুকর শিন্দে শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনা পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে গড়পড়তার উপরে ব্যবসা করে।[] তিনি ১৯৮২ সালের অর্থ চলচ্চিত্র দিয়ে বিপুল সমাদৃত হন ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। তার পরবর্তী চলচ্চিত্র সারাংশ তাকে আরও খ্যাতি এনে দেয় এবং তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনি বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রটি ১৪তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল,[] এবং এটি ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য নিবেদন করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সহনি, অনুভা (১৮ জানুয়ারি ২০০৩)। "The Saraansh of Mahesh Bhatt's life"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  2. "14th Moscow International Film Festival (1985)"এমআইএফএফ (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  3. "My wife and my audience, both took time to understand me: Emraan Hashmi" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  4. "Mukesh Bhatt tours riot-ravaged Ahmedabad"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। আহমেদাবাদ। ২২ এপ্রিল ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  5. "I have great reverence for women: Mahesh Bhatt"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ জানুয়ারি ২০১৪। ২০১৪-০২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  6. "Box Office 1979" (ইংরেজি ভাষায়)। বক্স অফিস ইন্ডিয়া। ২০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা