মহেশ্বরী, হল একটি হিন্দু বর্ণ যাদের উৎপত্তি বর্তমান ভারতের রাজস্থানে। [] তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা হচ্ছে বাণিজ্য এবং তারা বিস্তীর্ণ বানিয়া পেশাভিত্তিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে খান্ডেলওয়াল, আগরওয়াল এবং ওসওয়ালদের মতো বর্ণেরও অন্তর্ভুক্ত । রাজস্থানের বানিয়ারা প্রায়ই মাড়োয়ারি নামে অথবা মহাজন নামে পরিচিত হয়, যা এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা বেশি ব্যবহার করে কারণ "বানিয়া" শব্দটি বেশিরভাগ সময় সামাজিকভাবে নীচু সম্প্রদায়ের মানুষদের অভিহিত করে যা মাহেশ্বরীদের জন্য অপমানজনক।[][] গুজরাত রাজ্যে মেঘওয়ার লোকদের একটি সম্প্রদায় রয়েছে যারা মাঝেমধ্যে মহেশ্বরী নামটি ব্যবহার করেন তবে এই লোকেরা দলিত, বানিয়াদের সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এরা দেবতা শিবের প্রতি তাদের ভক্তিকে বোঝানোর জন্য নামটি গ্রহণ করেন। []

মহেশ্বরীরা নিজেদের রাজপুত বংশ বলে দাবি করেন। [] কে কে বিড়লা, একজন শিল্পপতি, যার পরিবার মহেশ্বরী গোত্রীয়, [] এই সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্য বা উৎসের কথা বলেছেন। এতে বলা হয়েছে যে ,বর্তমান রাজস্থানের ক্ষত্রিয় বর্ণের ৭২ টি গোষ্ঠী অষ্টম শতাব্দীতে বৈষ্ণব ধর্ম ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। শিবের, যার নাম মহেশ, এর প্রতি তাদের নিষ্ঠার দ্বারা এটি করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে, তারা মহেশ্বরী নাম গ্রহণ করেছিলেন এবং এইভাবে ৭২ টি স্বতন্ত্র পারিবারিক রেখা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা আজ অবধি ছোট, আঁটসাঁট মহেশ্বরী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্যমান। এই পারিবারিক রেখা, যা খাপ নামেও পরিচিত, ঐতিহ্যগতভাবে অসবর্ণ বিবাহ অনুশীলন ও বৈষ্ণব ধর্ম অনুসরণ করে। মহেশ্বরী সম্প্রদায়ের কিছু পদবী হল-বিড়লিয়িয়ানি, কাবরা, পাচিশয, ছন্দক, বহেটি, মওলাসারিয়া ইত্যাদি।

১৯৩৩ সালে শিবকরন রামরতন দারক লিপিবদ্ধ করেছেন, এবং পরবর্তীকালে লরেন্স বাব-এর মতো আধুনিক পণ্ডিতদের দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে মহেশ্বরীদের ভিন্ন উৎপত্তির কথা, যার একটি বৈকল্পিক কল্পকাহিনী রয়েছে। এই সংস্করণে,৭২ জন রাজপুত একজন রাজপুত্রকে কিছু সাধক দ্বারা প্রদত্ত বলিদানকে ব্যাহত করার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন, ফলে ঐ সাধকরা রাজপুতদের পাথর হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছিলেন। শিবই তাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন, তাদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং এভাবেই তাদের শিবভক্তির অনুপ্রেরণা জাগিয়েছিলেন। []

ব্রিটিশদের ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক ও বাণিজ্য বিস্তার রাজস্থানের মারোয়ারি জনগণকে তাদের ব্যবসায়িক আগ্রহ এবং ভৌগোলিক প্রভাবকে প্রসারিত করতে উৎসাহিত করেছিলো।[] বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ডেকান মালভূমিতে চলে আসা মারোয়ারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে মহেশ্বরীরা ছিলেন, যেখানে আফিমের বাণিজ্য ছিল সুবিস্তৃত[] ১৮৫০ সালের মধ্যে তারা হায়দরাবাদ রাজ্যে ব্যাংকার হিসাবে উপস্থিত ছিল [১০] এবং শতাব্দীর শেষ চতুর্থাংশে বোম্বাইয়ের তুলা বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। বিংশ শতাব্দীতে কিছু মহেশ্বরী পরিবার যেমন বিড়লারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা থেকে সঞ্চিত সম্পদকে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যবহার করেছিল।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. The Birla family were outcaste by the community in 1922 when one of their number broke the caste marriage rules.[]

উদ্ধৃতিসমূহ

  1. Hardgrove, Anne (আগস্ট ১৯৯৯)। "Sati Worship and Marwari Public Identity in India": 723–752। জেস্টোর 2659117 
  2. Ellis, Christine M. Cottam (১৯৯১)। "Jain merchant castes of Rajasthan"। The Assembly of Listeners: Jains in Society। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 83–84। আইএসবিএন 978-0-52136-505-5 
  3. Schrader, Heiko (১৯৯৭)। Changing Financial Landscapes in India and Indonesia: Sociological Aspects of Monetization and Market Integration। LIT Verlag Münster। পৃষ্ঠা 130। আইএসবিএন 978-3-82582-641-3 
  4. Thontya, Mohan Devraj; Mallison, Françoise (২০১০)। "Some Ginans Common to Barmati Panthi and Satpanthi Traditions"। Gināns: Texts and Contexts: Essays on Ismaili Hymns from South Asia in Honour of Zawahir Moir (Revised সংস্করণ)। Primus Books। পৃষ্ঠা 55। আইএসবিএন 978-8-19089-187-5 
  5. Debnath, Debashis (১৯৯৫)। "Hierarchies Within Hierarchy: Some Observations on Caste System in Rajasthan": 23–30। জেস্টোর 41919761 
  6. Weinberger-Thomas, Catherine (১৯৯৯) [1996]। Ashes of Immortality: Widow-Burning in India (Translated সংস্করণ)। University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 177। আইএসবিএন 978-0-22688-568-1 
  7. Babb, Lawrence A. (২০০২)। "Violence and construction of trading-caste identity"। Multiple histories: culture and society in the study of Rajasthan। Rawat। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 978-8-17033-720-1 
  8. Calangutcar, Archana (২০১২)। "Marwaris in the Cotton Trade of Mumbai: Collaboration and Conflict (circa: 1850-1950": 658–667। জেস্টোর 44156261 
  9. Moorthi, Sulochana Krishna (২০০১)। "Imperial Trade and 'Indigenous Mercantile World' in Western India with Special Reference to Opium": 436–441। জেস্টোর 44155786 
  10. Leonard, Karen Isaksen (২০১১)। "Family Firms in Hyderabad: Gujarati, Goswami, and Marwari Patterns of Adoption, Marriage, and Inheritance": 827–854। জেস্টোর 41241866 

আরও পড়া

সম্পাদনা
  • Devra, G. S. L. (১৯৯৭)। "Land Control and Agrarian Mercantile Classes in Western Rajasthan c. 1650-1700": 371–381। জেস্টোর 44143928 
  • Pache, Veronique (১৯৯৮)। "Marriage Fairs among Maheshwaris: A New Matrimonial Strategy": 970–975। জেস্টোর 4406701