মহজমপুর শাহী মসজিদ

বাংলাদেশের মসজিদ

মহজমপুর শাহী মসজিদ মধ্যযুগীয় ছয় গম্বুজবিশিষ্ট একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত যে স্থানটি সুলতানী শাসনামলে বাংলার রাজধানী ছিল।

মহজমপুর শাহী মসজিদ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিইসলাম
জেলানারায়ণগঞ্জ
যাজকীয় বা
সাংগঠনিক অবস্থা
সক্রিয়
অবস্থান
অবস্থানমহজমপুর সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীদেশীয়-সুলতানি
সম্পূর্ণ হয়১৪৩২ / ১৪৩৬
বিনির্দেশ
দৈর্ঘ্য১২.৯২ মি
প্রস্থ৯.৩ মি
মিনার৬টি
উপাদানসমূহইট

অবস্থান সম্পাদনা

মসজিদটি নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও জেলার জামপুর ইউনিয়নের মহজমপুর/মজমপুর (পূর্বে মুয়াজ্জমপুর) গ্রামে অবস্থিত। ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এ মসজিদটি অবস্থিত।

ইতিহাস সম্পাদনা

এখানে প্রাপ্ত শিলালিপি অনুসারে ৮৩৬-৮৩৯ হিজরি বা ১৪৩২-১৪৩৬-এর মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ শামসউদ্দিন আহমাদ শাহ-এর শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত।[১] শিলালিপিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও এর কিছু অংশের পাঠোদ্ধার করা হয়। এর নির্মাণকারী হিসেবে সেখানে ফিরুজ খান এবং আলি মুসার নাম লেখা রয়েছে।

স্থাপত্য বিবরণ সম্পাদনা

সুলতানি আমলের মসজিদটি বিভিন্ন পর্যায়ের সংস্কারের পর এখনও টিকে আছে। বর্তমান কালের একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে এ মসজিদের সংস্কার করে। বর্তমানে মসজিদটির আয়তন প্রায় ১২.৯২ মিটার * ৯.৩ মিটার [২]। এটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের ৩ আইল, ২ টি বে আছে। মসজিদের মোট ৬ টি গম্বুজ।

মসজিদের অভ্যন্তরের মাপ ৯.৩ মিটার * ৬.৮ মিটার। দেয়াল ১.৮ মিটার পুরু। পূর্ব দেয়ালে ৩ টি খিলানবিশিষ্ট দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ১ টি করে অনুরূপ দরজা আছে। পশ্চিম দেয়ালে কেন্দ্রীয় মিহরাবে কালো পাথরের স্তম্ভ এবং ঘণ্টা ও শিকলসহ অন্যান্য কারুকাজ শোভিত । ভিতরের ২ টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর মসজিদের ৬ টি গম্বুজ নির্মিত।

মসজিদে ব্যবহৃত ইটের মাপ ৭”*৭”*১.৫” ইঞ্চি। কেন্দ্রীয় মিহরাবের পিছনের দেয়ালে যেসব পোড়ামাটির ফলক ছিল তার অধিকাংশই এখন ও টিকে আছে।

মসজিদের গায়ে একটি শিলালিপি ছিল। শিলালিপিটি ভেঙ্গে গেলেও কিছু অংশ পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। শিলালিপি অনুসারে মসজিদটি সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ এর পুত্র সুলতান শামসউদ্দিন আহমাদ শাহ এর শাসনামলে ফিরোজ/ ফিরুজ খান নামে জনৈক ব্যক্তি নির্মাণ করেন।[৩]

মাযার সম্পাদনা

মসজিদের পাশে শাহ আলমের সমাধি রয়েছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা অভিমত প্রকাশ করেছে। তবে ঐতিহাসিকভাবে জানা যায় যে, এটি শাহ লংগরের সমাধি। তবে এ স্থানে আরো অনেকগুলো পাকা বাঁধানো রয়েছে যেগুলোর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হইয়া যায় নি। শাহ লঙ্গরের মাযারটি মসজিদের দক্ষিণে অবস্থিত। এটি এক তলা ভবনের অভ্যন্তরে নির্মিত। জনশ্রুতি অনুসারে শাহ লঙ্গর ছিলেন বাগদাদের এক শাহজাদা। সংসারের প্রতি অনাসক্তি হেতু তিনি দেশে ভ্রমণ করতে করতে এখানে বসবাস শুরু করেন এবং এখানেই মৃত্যুমুখে পতিত হন। তাকে এখানে সমাহিত করা হয়েছে।[৪]

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. এবিএম হুসাইন, ১৯৯৭, সোনারগাঁও- পানাম: আ সার্ভে অফ হিস্টোরিক্যাল মনুমেন্ট অ্যান্ড সাইটস ইন বাংলাদেশ এসএইচএমএসবি ০৩, ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, পাতা ৬৪।
  2. আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, ২০০৭, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা -৪৯৮
  3. আব্দুল করিম, ১৯৯২, কর্পাস অফ দ্য আরবি অ্যান্ড ফার্সি শিলালিপি অফ বেঙ্গল, ঢাকা, এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা-১১১
  4. আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, ২০০৭, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, ঢাকা, দিব্যপ্রকাশ, পৃষ্ঠা -৪৯৯

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা