মল্লিকার্জুন মন্দির

দক্ষিণ ভারতের হিন্দু মন্দির
(মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির হল দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের শ্রীশৈলমে অবস্থিত একটি শিবমন্দির। এটি শিবের পবিত্রতম বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরের অন্যতম।[১] মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির ২৭৫টি পাদল পেত্রা স্থলমের অন্যতম মন্দিরও বটে।

মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দির
শ্রীশৈলম দেবস্থানমের প্রবেশদ্বার
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
অবস্থান
অবস্থানশ্রীশৈলম
রাজ্যঅন্ধ্রপ্রদেশ
দেশভারত

জ্যোতির্লিঙ্গ সম্পাদনা

শিব মহাপুরাণ অনুসারে, একবার সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা ও রক্ষাকর্তা বিষ্ণুর মধ্যে তাঁদের মধ্যে জগতে কে শ্রেষ্ঠ তা নিয়ে তর্ক বেধেছিল।[২] তাঁদের পরীক্ষা করার জন্য শিব ত্রিভুবনকে একটি অনন্ত আলোর লিঙ্গ বা জ্যোতির্লিঙ্গ দ্বারা বিভক্ত করেছিলেন। বিষ্ণু ও ব্রহ্মা দুই দিকে সেই লিঙ্গের উৎস খুঁজতে বের হন। ব্রহ্মা মিথ্যা বলেন যে তিনি জ্যোতির্লিঙ্গের অন্ত খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু বিষ্ণু পরাজয় স্বীকার করে নেন। শিব দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হয়ে ব্রহ্মাকে শাপ দেন যে কোনো অনুষ্ঠানে তাঁর স্থান থাকবে না। অন্যদিকে তিনি বিষ্ণুকে আশীর্বাদ করেন যে বিষ্ণু প্রলয়কাল অবধি পূজিত হবেন। জ্যোতির্লিঙ্গ হল সর্বোচ্চ অখণ্ড সত্য, যাতে শিব আংশিকভাবে আবির্ভূত হন। জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরগুলি সেইখানেই গড়ে উঠেছে যেখানে শিব আলোর অগ্নিময় লিঙ্গরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন।[৩][৪] প্রথমদিকে মনে করা হত জ্যোতির্লিঙ্গের সংখ্যা ৬৪। এর মধ্যে ১২টিকে পবিত্রতম বলে গণ্য করা হয়।[২] প্রত্যেকটি জ্যোতির্লিঙ্গের পৃথক পৃথক নাম আছে। এগুলিকে শিবের বিভিন্ন রূপভেদ মনে করা হয়।[৫] প্রত্যেক মন্দিরেই শিবলিঙ্গ শিবের অনন্ত প্রকৃতির প্রতীক আদি ও অন্তহীন স্তম্ভের প্রতিনিধিত্ব করে।[৫][৬][৭] বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ হল গুজরাতের সোমনাথদ্বারকার নাগেশ্বর মন্দির, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন, মধ্যপ্রদেশের মহাকালেশ্বর (উজ্জয়িনী) ও ওঙ্কারেশ্বর, হিমালয়ে কেদারনাথ, মহারাষ্ট্রে ভীমশঙ্কর মন্দির, ঘৃষ্মেশ্বরত্র্যম্বকেশ্বর মন্দির, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির, ঝাড়খণ্ডে বৈদ্যনাথ মন্দির এবং তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে রামনাথস্বামী মন্দির[২][৮]

পৌরাণিক উপাখ্যান সম্পাদনা

শিবপার্বতী তাঁদের দুই ছেলে গণেশকার্তিকের জন্য উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছিলেন। কার্তিক সেই সময় তর্ক জুড়েছিলেন কে আগে বিয়ে করবেন সেই নিয়ে। শিব বলেন, যে আগে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসতে পারবে তারই আগে বিয়ে হবে। কার্তিক তাঁর বাহনে চেপে বিশ্ব প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়েন। গণেশ শিব ও পার্বতীকেই সাত বার প্রদক্ষিণ করেন। কারণ, শাস্ত্রমতে নিজের পিতামাতাকে প্রদক্ষিণ করলে ভূপ্রদক্ষিণ করা হয়। শিব বুদ্ধি, সিদ্ধি ও ঋদ্ধির সঙ্গে গণেশের বিয়ে দেন। কার্তিক ফিরে এসব দেখে রেগে গিয়ে ক্রৌঞ্চ পর্বতে কুমারব্রহ্মচারী নামে বাস করতে চলে যান। শিব কার্তিককে শান্ত করতে আসেন। তা দেখে তিনি অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেবতাদের অনুরোধে তিনি কাছাকাছিই থেকে যান। শিব ও পার্বতী যেখানে ছিলেন সেই জায়গাটি শ্রীশৈলম নামে পরিচিত হয়। শিব অমাবস্যায় ও পার্বতী পূর্ণিমায় কার্তিককে দেখতে আসতেন। মন্দিরটি পূর্বমুখী। কেন্দ্রীয় মণ্ডপে অনেকগুলি স্তম্ভ এবং নন্দীকেশ্বরের একটি বিরাট মূর্তি আছে। শিবরাত্রি এই মন্দিরের প্রধান উৎসব। অতপর কিছুকাল পরে দেবী পার্বতী নিজের পুত্র গণেশ কে বলেন কার্তিক তাকে ত্যাগ করার জন্য তিনি খুব কষ্টে আছেন আড়ালে থেকে সব কথা শুনে কার্তিক তার মায়ের কাছে ফিরে যান। এবং কৈলাসে ফিরে যান ও দেবী ষষ্ঠী কে বিবাহ করেন।

শক্তিপীঠ সম্পাদনা

 
সতীর দেহাবশেষ নিয়ে শিব।

শ্রীশৈলমের মল্লিকার্জুন মন্দির ১৮টি মহাশক্তিপীঠের একটি। পুরাণে দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের গল্প পাওয়া যায়। কথিত আছে মল্লিকার্জুনে সতীর উপরোষ্ঠ পড়েছিল।[৯][১০][১১]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০১৫ 
  2. R. 2003, pp. 92-95
  3. Eck 1999, p. 107
  4. See: Gwynne 2008, Section on Char Dham
  5. Lochtefeld 2002, pp. 324-325
  6. Harding 1998, pp. 158-158
  7. Vivekananda Vol. 4
  8. Chaturvedi 2006, pp. 58-72
  9. (Translator), F. Max Muller (জুন ১, ২০০৪)। The Upanishads, Vol I। Kessinger Publishing, LLC। আইএসবিএন 1419186418 
  10. (Translator), F. Max Muller (জুলাই ২৬, ২০০৪)। The Upanishads Part II: The Sacred Books of the East Part Fifteen। Kessinger Publishing, LLC। আইএসবিএন 1417930160 
  11. "Kottiyoor Devaswam Temple Administration Portal"http://kottiyoordevaswom.com/। Kottiyoor Devaswam। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৩  |কর্ম= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা