মোমতাজ আলী খান

একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি
(মমতাজ আলী খান থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মোমতাজ আলী খান (১ আগস্ট, ১৯১৫ - ৩১ আগস্ট, ১৯৯০) ছিলেন বাংলাদেশের একজন লোক সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার।[২] লোক সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক লাভ করেন।[৩]

মোমতাজ আলী খান
জন্ম(১৯১৫-০৮-০১)১ আগস্ট ১৯১৫[১]
সিঙ্গাইর, মানিকগঞ্জ, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু৩১ আগস্ট ১৯৯০(1990-08-31) (বয়স ৭৫)
ঢাকা, বাংলাদেশ
ধরনলোক সঙ্গীত
পেশাসঙ্গীতশিল্পী, সুরকার
বাদ্যযন্ত্রদোতারা, সরোদ
কার্যকাল১৯৩১-১৯৯০

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মোমতাজ আলী ১৯১৫ সালের ১ আগস্ট তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারত অধীনস্থ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার ইরতা কাশিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আফসার আলী খান এবং মাতা বেদৌরা খান। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখান পদ্মভূষণ বিজয়ী ওস্তাদ নিসার হোসেন খানের নিকট পাঁচ বছর গানের তালিম নেন। পরে তিন বছর তিনি ওস্তাদ জমির উদ্দিন খানের কাছে খেয়াল, ঠুমরী ও গজলের তালিম নেন। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি তিনি দোতারাসহ লোক সঙ্গীতের চর্চা করতেন।[৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

মোমতাজ আলী ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তার সহায়তায় কলকাতার সং পাবলিসিটি ডিপার্টমেন্টে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৩২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে তার কণ্ঠে "ওরে শ্যাম কেলে সোনা" এবং "আমি যমুনাতে যাই বন্ধু" গান দুটি প্রকাশ করার পর তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ফলে তিনি প্রথমে অল ইন্ডিয়া রেডিও ও পরে ১৯৩৩ সালে কলকাতা বেতারের সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হন।[৩] ১৯৩৪ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানে মোমতাজ শান্তিনিকেতনে যান। কবিগুরু তার ভাটিয়ালী, মুর্শিদী, দেহতত্ত্ব ও বিচ্ছেদী গান শুনে মুগ্ধ হন। একই বছর কলকতা বেতারের সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে কবি জসীম উদ্‌দীন ও কাশেম মল্লিকের সাথে পরিচিত হন। কাশেম মল্লিকের মাধ্যমে মোমতাজ আলীর কাজী নজরুল ইসলামের সাথে তার পরিচয় ঘটে। নজরুল তাকে দিয়ে দুটি ইসলামী গানের রেকর্ড করান। ১৯৩৫ সালে ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তার নিকট দুই বছর সরোদে তালিম নেন।[৪]

মোমতাজ কয়েকটি চলচ্চিত্রে গায়ক, গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। ১৯৩৩ সালে অভিযাত্রী চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেন। পরবর্তীতে মধুচন্দ্রিমা, অশ্রু দিশারী, কলঙ্ক চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দেন। এছাড়া আকাশ আর মাটি, সাত ভাই চম্পা, বেদের মেয়ে, অরুন বরুন কিরন মালা, রূপবান, জোয়ার ভাটা, যে নদী মরু পথে, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, দয়াল মুর্শিদ, অনেক দিন আগে, একমুঠো ভাত, লালন ফকির (১৯৭২), নিমাই সন্ন্যাসী (১৯৭২) চলচ্চিত্রে তার রচিত গান ব্যবহৃত হয়। তার রচিত "গুন গুন গান গাহিয়া" গানটি ১৯৭৫ সালে খান আতাউর রহমান নির্মিত সুজন সখী চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়।[৫]

১৯৪৬ সালে মোমতাজ কলকাতা ছেড়ে ঢাকা চলে আসেন এবং ঢাকা বেতারের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে তিনি সাউথ ইস্ট এশিয়ান সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম হন। ১৯৬৫ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির আর্টস একাডেমিতে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মোমতাজ আলী সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার রচিত "বাংলা মায়ের রাখাল ছেলে", "বাংলাদেশের মাটি ওগো" গানগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা যোগায়।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মোমতাজ আলী ১৯৪৩ সালে উপমহাদেশের একমাত্র নারী বাদক ও শিল্পী কাজল খানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এসরাজ বাদক কাজল খান ছিলেন ওস্তাদ ফুলঝুরি খানের ছাত্রী।[৪] তাদের ছয় কন্যা সকলেই সঙ্গীতশিল্পী।[৩] তাদের মধ্যে সত্তর ও আশির দশকে দেশীয় পপ সঙ্গীতের ধারায় অগ্রগামী পিলু মমতাজ বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।[৬][৭]

মৃত্যু সম্পাদনা

মোমতাজ আলী ১৯৯০ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

সম্মাননা সম্পাদনা

  • লোকসঙ্গীতে অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক
  • ১৯৬২ সালে সাউথ ইস্ট এশিয়ান মিউজিক কনটেস্টে প্রথম স্থান।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "লোকসুরে ওস্তাদ মোমতাজ আলী খানকে স্মরণ"দৈনিক ইত্তেফাক। ৪ আগস্ট ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "মোমতাজ আলী খান স্মরণে"দৈনিক ইত্তেফাক। ১ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "খান, মোমতাজ আলী"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  4. "ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি"দৈনিক জনকণ্ঠ। ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  5. শীল, নারায়ণ চন্দ্র (৩১ আগস্ট ২০১৩)। "ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান :জীবন ও কর্ম"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  6. "পিলু মমতাজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে 'ছিলে কোন দিন'"দৈনিক প্রথম আলো। ২৬ মে ২০১২। ২০১৯-০৬-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 
  7. "Pop Sensation of Yesteryears Pilu Momtaz Passes Away"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা