মনু মুন্সী (সম্পূর্ণ নাম মনমোহন মুন্সী) (২ আগস্ট, ১৯২৪- ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯) ছিলেন একজন প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় শিল্পী যিনি 'মাদার অফ পার্ল আর্টিস্ট্রি'-এর জন্য বিশেষভাবে কৃতিত্বপ্রাপ্ত। তিনি ১৯২৪ সালের ২রা আগস্ট বাংলার চৌগাছি জমিদার পরিবারে (বর্তমানে বাংলাদেশের যশোরে) জন্মগ্রহণ করেন।[১][২][৩][৪]

মনু মুন্সী
মনু মুন্সী
জন্ম(১৯২৪-০৮-০২)২ আগস্ট ১৯২৪
মৃত্যু২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৯(2009-02-20) (বয়স ৮৪)
জাতীয়তাভারতীয়
আন্দোলনমাদার অফ পার্ল আর্টিস্ট্রি
দাম্পত্য সঙ্গীমায়া মুন্সী
সন্তান৩ পুত্র
পিতা-মাতাঅনুকূল চরণ মুন্সী, নির্মলা দেবী
আত্মীয়অন্নদা মুন্সী (অগ্রজ), প্রতীপ মুন্সী (খুরতুতো দাদা), কুমকুম মুন্সী (ভাইপো), ম্যান্টো মুন্সী (ভাইপো)
পরিবার মুন্সী পরিবার

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

মুন্সী ১৯২৪ সালের ২রা আগস্ট চৌগাছির (বর্তমানে বাংলাদেশের যশোরে) জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা অনুকূল চরণ মুন্সীকে এখনও ভারতে মাদার অফ পার্ল শিল্পকলার প্রথম রূপায়ক বলে মনে করা হয়। মুন্সী তাঁর পিতা এবং তাঁর দাদা শিল্পী অন্নদা মুন্সী (অনেকের মতে ভারতীয় বাণিজ্যিক শিল্পের জনক হিসাবে বিবেচিত) উভয়ের অনুপ্রেরণা নিয়ে পবিত্র শৈল্পিক পরিবেশে লালিতপালিত হয়েছিলেন।[৫] ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করার পর, অন্নদার ইচ্ছায় চালিত হয়ে, মুন্সী কলকাতার আর্ট স্কুল-এ যোগদানের আগে একজন শিক্ষানবিশ হিসেবে বিশিষ্ট শিল্পী প্রহ্লাদ কর্মকার-এর স্টুডিওতে যোগ দেন।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল 'মনমোহন মুন্সী'। কিন্তু, পরবর্তী কালে, বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় তাঁর নাম ছোটো করে রাখেন 'মনু'। পরে এই নামেই তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি অর্জন করেন।[৩]

বিবাহ সম্পাদনা

মুন্সী, মায়া মুন্সীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন যিনি হুগলির বসু পদবীর একটি পরিবারের সদস্য ছিলেন। মায়া, মুন্সীকে তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর সমস্ত শিল্পকর্ম চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন।

 
মনু মুন্সীর সাথে তাঁর স্ত্রী মায়া মুন্সী

কর্মজীবন সম্পাদনা

মুন্সী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন কোম্পানি জে. ওয়াল্টার থম্পসনে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন দাদা অন্নদা মুন্সী ও বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক রাজেন তরফদার-এর অনুপ্রেরণায়। পরে তিনি গভর্নমেন্ট আর্টস অ্যান্ড ক্রাফ্ট বোর্ডে যোগদান করেন, কিন্তু সেখান থেকে পদত্যাগ করার পরে, তিনি অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডিক্রাফ্ট বোর্ডে যোগ দেন যেখানে তিনি অবসর নেওয়ার আগে ৩০ বছর ধরে কাজ করেছিলেন।[৬]

কৃতিত্ব সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় 'গান্ধীজীর নোয়াখালী অভিযান' শিরোনামে তাঁর বিখ্যাত মাদার অফ পার্ল শিল্পকর্ম 'বাংলার চারু ও কারু শিল্পের' সেরা নিদর্শন হিসেবে আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন। তাঁর শিল্পকর্মের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে রয়েছেন সত্যজিৎ রায় , শিল্পী অন্নদা মুন্সী (তাঁর দাদা এবং ভারতীয় বাণিজ্যিক শিল্পের জনক), ডঃ বিধান চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার সুবোধ চন্দ্র রায়, শিল্পী সুভো ঠাকুর এবং আরও অনেক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। মাদার অফ পার্ল শিল্পকলার ক্ষেত্রে তাঁর কিংবদন্তি শিল্পকর্মগুলির মধ্যে একটি হল 'ইন্দিরা গান্ধী' যা এখনও বিশ্বের প্রধান প্ল্যাটফর্মে ভারতীয় চারুকলার প্রতিনিধিত্ব করার সর্বোচ্চ উদাহরণগুলির মধ্যে একটি। তিনি ধাতব প্লেট দিয়ে সুন্দরভাবে খোদাই করা বিভিন্ন শৈল্পিক ভঙ্গিতে রবিঠাকুরকে তুলে ধরার কৃতিত্ব রাখেন। [২]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০শে ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ তারিখে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগের সাথে লড়াই করার পরে কলকাতার দমদমের বেদিয়াপাড়ায় নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[৭][৮]

উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম সম্পাদনা

  • ইন্দিরা গান্ধী (মাদার অফ পার্ল আর্টিস্ট্রি)[৯]

তাঁর এই কাজ দেখে সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন,

"আমি শ্রীমতী গান্ধীর মাদার-অফ-পার্ল প্রতিকৃতি দেখেছি যা শ্রী মনু মুন্সী'র করা। আমি এটি চমৎকার মানের বলে মনে করি।"

[১]

  • গান্ধীজীর নোয়াখালী অভিযান (মাদার অফ পার্ল আর্টিস্ট্রি)[১০]
  • নুরজাহান (মাদার অফ পার্ল আর্টিস্ট্রি)[২]
  • রবিঠাকুর (ধাতব প্লেট খোদাই করা বিভিন্ন আকারে)[২]

পৃষ্ঠপোষক[২] সম্পাদনা

  • ব্যারিস্টার সুবোধ চন্দ্র রায়

সম্মাননা সম্পাদনা

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কারের জন্যে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যদিও সেই বছর চূড়ান্ত পুরস্কার প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। এ বিষয় নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলতেন, "অমন যখন তখন প্রচার শিল্প সৃষ্টিতে বাধা সৃষ্টি করে।"

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. শান্তনু ঘোষ। "মুন্সিয়ানায় চল্লিশ পুরুষ" প্রকাশক: দে'স পাবলিশিং
  2. "Artist Manu Munshi, Renowned Mother of Pearl Artist of India"। Calcutta, India: Wixsite.com। ফেব্রুয়ারি ৫, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টে ২২, ২০২২ 
  3. শান্তনু ঘোষ। "বিনোদনে পাইকপাড়া বেলগাছিয়া" প্রকাশক: দে'স পাবলিশিং
  4. Arthive। "মনু মুন্সী (ইংরেজিতে)" প্রকাশক: Arthive[১]
  5. আনন্দবাজার পত্রিকা। "মুন্সিয়ানা" প্রকাশক: আনন্দবাজার পত্রিকা
  6. যুগান্তর পত্রিকা। "তারের ভাস্কর্য" প্রকাশক: যুগান্তর পত্রিকা (১৯৯৬)
  7. গণশক্তি। "নীরবে মনু মুন্সী" প্রকাশক: গণশক্তি (২০০৯)
  8. সংবাদ প্রতিদিন। "প্রয়াত মনু মুন্সী" প্রকাশক: সংবাদ প্রতিদিন (২০০৯)
  9. আনন্দবাজার পত্রিকা। "এবার ইন্দিরাজী" প্রকাশক: আনন্দবাজার পত্রিকা
  10. আজকাল পত্রিকা। "তারের বুননে" প্রকাশক: আজকাল (১৯৯৬)