মঙ্গল গ্রহের মাটি
মঙ্গল গ্রহের মাটি বলতে মঙ্গল গ্রহে উপরিভাগে প্রাপ্ত সূক্ষ রেগলিথকে বোঝায় ৷ মঙ্গল গ্রহের বিভিন্ন স্থানে এর মাটির বৈশিষ্ট্য ও গাঠনিক উপাদানের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় ৷ এমনকি পারক্লোরেটের উপস্থিতির কারণে উৎপন্ন বিষক্রিয়ার প্রভাব গ্রহের বিভিন্ন স্থানে আলাদা ৷ মার্স স্যাম্পল রিটার্ন মিশন পরিচালনার পূর্বে পৃথিবীতে মঙ্গল গ্রহের কোনো স্যাম্পল নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি ৷ তবে পূর্বে মঙ্গল রোভার ও মঙ্গল অরবিটার গ্রহের মাটি নিয়ে গবেষণা করেছিল ৷পৃথিবীতে "মাটি" র সাথে জৈব পদার্থ যুক্ত থাকে ৷[১] তাছাড়াও প্লানেটরি বিজ্ঞানীরা পাথরের সাথে মাটির পার্থক্য করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করেছেন ৷ [২] ১০ সে.মি কিংবা তার চেয়ে বড় আকৃতির উচ্চতাপীয় জড়তা সম্পন্ন, ইনফ্রারেড থার্মাল ম্যাপিং ডাটা অনুযায়ী এরিয়াল ফ্রাকশন সম্পন্ন এবং বাতাসের প্রবাহে অচল ও স্থির পদার্থকে পাথর হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন বিজ্ঞানীরা ৷ তাছাড়া, ওয়েন্টওথ স্কেল অনুযায়ী পাথরের নির্দিষ্ট আকৃতি নির্ধারণ করা আছে ৷মঙ্গল গ্রহের ধূলা মূলত গ্রহের মাটির চেয়ে বেশি সূক্ষ ও এর কণার ব্যাস ৩০ মাইক্রোমিটার থেকে কম হয়ে থাকে ৷
বিষক্রিয়া
সম্পাদনামঙ্গলের মাটি সাধারণ বিষাক্ত ৷ ক্লোরিন যুক্ত পারক্লোরেটের উপস্থিতির কারণে মাটি বিষক্রিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় ৷ মার্স রোভার সোজোনার সর্বপ্রথম মঙ্গলের মাটিতে ক্লোরিনের উপস্থিতি আবিষ্কার করে ৷ পরবর্তীতে অন্যান্য রোবোটিক মঙ্গলযানগুলো ক্লোরিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করে ৷ মার্স ওডিসি মাটিতে পারক্লোরেটের উপস্থিতি নির্ণয় করেছে ৷ নাসার ফিনিক্স ল্যান্ডার মঙ্গলের মাটিতে প্রথম ক্লোরিন সম্পন্ন যৌগ, ক্যালসিয়াম পারক্লোরেট, নির্ণয় করে ৷ মাটিতে যৌগের পরিমাণ ছিল ০.৫ শতাংশ, যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর ৷ [৩] তাছাড়াও এটা উদ্ভিদের জীবনধারণের জন্য ক্ষতিকর ৷ [৪] একটি গবেষণায় দেখা যায় যে ০.৫ গ্রাম / লিটার পরিমাণ পারক্লোরেটের প্রভাবে যা ঘটতে পারে:
- গাছের পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ নষ্ট হওয়া
- উদ্ভিদের মূলে জারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া
- পাতার আকৃতি ছোট হওয়া
- পাতায় পারক্লোরেটের শোষণ বৃদ্ধি পাওয়া
একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয় যে, কচুড়িপানা জাতীয় উদ্ভিদ পারক্লোরেট প্রতিরোধী এবং পরিবেশ থেকে বিষক্রিয়া দূর করতে সাহায্য করে ৷[৪] তাছাড়া বেশকিছু ব্যাকটেরিয়া পারক্লোরেট দূর করতে পারে ৷ তবে উচ্চমাত্রার আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্নি মঙ্গল গ্রহের মাটিতে অবস্থিত রাষায়ণিক বন্ধন ভাঙ্গতে পারে এবং নতুন যৌগের সৃষ্টি করতে পারে যা প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর এবং বিষাক্ত ৷
ধূলার ক্ষতিকর প্রভাব
সম্পাদনানাসা জানায় যে মঙ্গলের ধূলা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ৷ ২০০২ সালের একটি গবেষণায় মঙ্গলের ধূলাকে বিপদজ্জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং ওলিভাইন, পাইরোজেন এবং ফেল্ডস্পারের মত সিলিকেটের উপস্থিতি প্রমাণিত হয় ৷ গবেষণা থেকে আরও জানা যায় যে এসকল ধূলা পানির সাথে বিক্রিয়া করে উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল যৌগ তৈরী করে যা কোয়ার্টজ খনিতে উৎপন্ন হয় এবং এটি খনিতে কর্মরত মানুষের ফুসফুসের অসূখ কারণ হতে পারে ৷ এটি চাঁদের ধূলা থেকেও বেশি ক্ষতিকর ৷ [৫]
পর্যবেক্ষণ
সম্পাদনামঙ্গল গ্রহের বিশাল অংশ ধূলা বালি দ্বারা বিস্তৃত ও বড় পাথর ও নুড়ি পাথরে পরিপূর্ণ ৷ অধিক ধূলাবালি থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হয় ৷ ধূলিকণা এতই সূক্ষ যে এটি পরিবেশের সাথে মিশে থাকায় মঙ্গল গ্রহের আকাশের রং লালচে দেখা যায় ৷ এটা মনে করা হয় যে মঙ্গলের নিরক্ষীয় রেখা এবং উচ্চ অংক্ষাংশ বরাবর বিপুল পরিমাণে পানি এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বরফ আকারে সংরক্ষিত আছে ৷ [৮][৯] ২০০৮ সালের জুনে, ফিনিক্স ল্যান্ডার থেকে তথ্য পাওয়া যায় যে, মঙ্গলের মাটি কিছুটা ক্ষারীয় এবং মাটিতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্লোরাইডের মত গুরুত্ব পুষ্টি উপাদান পাওয়া গিয়েছে যা পৃথিবীতে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ৷ বিজ্ঞানীরা মঙ্গলের উত্তর মেরুর মাটির সাথে পৃথিবীতে বাগানের মাটির তুলনা করেছেন এবং উদ্ভিদ বৃদ্ধির জন্য উপযোগী হিসেবে ধারণা করেছেন ৷
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Certini, Giacomo; Ugolini, Fiorenzo C. (২০১৩)। "An updated, expanded, universal definition of soil"। Geoderma। 192: 378–379। ডিওআই:10.1016/j.geoderma.2012.07.008। বিবকোড:2013Geode.192..378C।
- ↑ Karunatillake, Suniti; Keller, John M.; Squyres, Steven W.; Boynton, William V.; Brückner, Johannes; Janes, Daniel M.; Gasnault, Olivier; Newsom, Horton E. (২০০৭)। "Chemical compositions at Mars landing sites subject to Mars Odyssey Gamma Ray Spectrometer constraints"। Journal of Geophysical Research। 112 (E8): E08S90। ডিওআই:10.1029/2006JE002859 । বিবকোড:2007JGRE..112.8S90K।
- ↑ "Toxic Mars: Astronauts Must Deal with Perchlorate on the Red Planet"। space.com। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ক খ He, H; Gao, H; Chen, G; Li, H; Lin, H; Shu, Z (১৫ মে ২০১৩)। "Effects of perchlorate on growth of four wetland plants and its accumulation in plant tissues"। Environmental Science and Pollution Research International। 20 (10): 7301–8। ডিওআই:10.1007/s11356-013-1744-4। পিএমআইডি 23673920।
- ↑ Hecht, Jeff (৯ মার্চ ২০০৭)। "Martian dust may be hazardous to your health"। New Scientist। 225 (Earth & Planetary Sciences Letters): 41। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ Brown, Dwayne; Webster, Guy; Neal-Jones, Nancy (ডিসেম্বর ৩, ২০১২)। "NASA Mars Rover Fully Analyzes First Martian Soil Samples"। NASA। আগস্ট ২৩, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৩, ২০১২।
- ↑ Chang, Ken (ডিসেম্বর ৩, ২০১২)। "Mars Rover Discovery Revealed"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৩, ২০১২।
- ↑ Mitrofanov, I. et 11 al.; Anfimov; Kozyrev; Litvak; Sanin; Tret'Yakov; Krylov; Shvetsov; Boynton; Shinohara; Hamara; Saunders (২০০৪)। "Mineralogy at Gusev crater from the Mössbauer spectrometer on the Spirit rover"। Science। 297 (5578): 78–81। ডিওআই:10.1126/science.1073616। পিএমআইডি 12040089। বিবকোড:2002Sci...297...78M।
- ↑ Horneck, G. (২০০৮)। "The microbial case for Mars and its implications for human expeditions to Mars"। Acta Astronautica। 63 (7–10): 1015–1024। ডিওআই:10.1016/j.actaastro.2007.12.002। বিবকোড:2008AcAau..63.1015H।