মকসুদুল্লাহ

বাঙ্গালী আলেমে দ্বীন

মকসুদুল্লাহ (১৮৮৩-১৯৬১) ছিলেন একজন বাঙ্গালী দেওবন্দী আলেমে দ্বীন যিনি তালগাছিয়া দরবার শরীফের পহেলা পীর হিসাবে মশহুর।[১][২] তিনি আশরাফ আলী থানবীর একজন খলিফা ছিলেন এবং বৃহত্তর বরিশালে বেশুমার কওমি মদারেস কায়েম করেছিলেন।[৩]

মওলানা হাফেজ

মকসুদুল্লাহ

পীর সাহেব তালগাছিয়া
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৮৮৩
মৃত্যু১৯৬১ (বয়স ৭৭–৭৮)
তালগাছিয়া, বাকেরগঞ্জ জেলা, পূর্ব পাকিস্তান
সমাধিস্থলতালগাছিয়া দরবার শরিফ
ধর্মইসলাম
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
শিক্ষাকচুয়া মাদ্রাসা
দারুল উলুম দেওবন্দ
শিক্ষকসাঈদ আহমদ বরিশালী
আলী আহমদ হাসনপুরী
তরিকাচিশতি
মুসলিম নেতা
এর শিষ্যআশরাফ আলী থানবী

পয়দা ও খান্দান সম্পাদনা

মকসুদুল্লাহ ১২৯০ বাংলা সনে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ঝালকাঠির তালগাছিয়া গাঁওয়ে একটি বাঙ্গালী মুসলিম গাজী খান্দানে পয়দা হন। তাঁর ওয়ালেদ, মৌলবী গাজী ছানাউল্লাহ, ১৩০৫ সালে হজ্জ থেকে ফিরে আসার সময় ইন্তেকাল করেন এবং তাই মাকসুদুল্লাহ বেশির ভাগই তাঁর ওয়ালেদা আমেনা খাঁতুন এবং তাঁর দাদা মৌলবী গাজী হিজরুল্লার দ্বারা বড় হন। [৪]

তালিম সম্পাদনা

মকসুদুল্লাহ অল্প বয়সেই হেফজ-ই-কোরআন খতম করেন। তার দাদা, মৌলবী গাজী হিজরুল্লাহ তারপর তাকে নিকটবর্তী কচুয়া মাদ্রাসায় নিয়ে যান যেখানে তিনি তাকে কালকিনির মশহুর আলেমে দ্বীন মাওলানা সাঈদ আহমদের অধীনে সোপর্দ করেন।[৪] কচুয়ায় পড়াশুনা খতম করার বাদে, মাওলানা সাঈদ আহমদ সাহেব মকসুদুল্লাহকে হিন্দুস্তান গিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসায় দাখিল হওয়ার হুকুম দেন। মকসুদুল্লাহ ১৩১৬ সালে দেওবন্দ চলে যান, যেখানে তিনি আরও তালিম হাসিল করার জন্য বেশ কয়েক সাল কাটান। তাঁর সময়ে দেওবন্দের অন্যান্য বরিশালি ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, মুহম্মদ ইয়াসীন, মনসুর আহমদ এবং ফজরুদ্দিন। মকসুদুল্লাহ আশরাফ আলী থানবীর শাগরেদ ও মুরীদ হন। থানভি বাদে তাকে হাসনপুরের আলী আহমদ হুজুরের অধীনে তালিম হাসিল করতে পাঠান। হাসনপুর এবং সহারনপুরে কিছু সময় তালিম নেয়ার বাদে, মকসুদুল্লাহ দেওবন্দে ফিরে আসেন যেখানে কিছু দিনের মধ্যে থানবীর কাছ থেকে চারটি তরিকায় খেলাফত লাভ করেন। [৫]

মোল্লাগিরি সম্পাদনা

মকসুদুল্লাহ ১৩২৬ সালে বাংলায় ফিরে আসেন। তিনি বহু বছর কচুয়া মাদ্রাসার মুহতামিম ছিলেন। এর বাদে তিনি তার গাঁও তালগাছিয়াতে মাদ্রাসা-ই-আশরফিয়া এমদাদিয়া কায়েম করেন, যা দরস-ই নিজামী নেসাবের উপর ভিত্তি করে। তিনি মাদ্রাসার পাশে বায়তুল মামূর মসজিদও কায়েম করেন। এরপর মকসুদুল্লাহ বরিশালে আরও অনেক মাদ্রাসা কায়েম করেন যেমন আশরফুল উলূম বরিশালে, লতাবুনিয়া মাদ্রাসা, কাইখালী মাদ্রাসা এবং ভান্ডারিয়ার পাইকখালী মকসূদুল উলূম মাদ্রাসা।[৪]

১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর চকবাজার জামে এবাদুল্লাহ মসজিদে সৈয়দ মাহমুদ মোস্তফার সভাপতিত্বে একটি নসীহ​ৎ মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। মজলিসে তালগাছিয়ার মকসুদুল্লাহসহ বৃহত্তর বরিশালের আকাবের উলামায়ে কেরাম হাজের ছিলেন যারা মাহমুদিয়া মাদ্রাসা কায়েমে মদদ করেছিলেন।

ইন্তেকাল সম্পাদনা

মকসুদুল্লাহ মারা যান এবং তাকে তালগাছিয়া দরবার শরীফে দাফন করা হয়। শহীদুল্লাহ আশরাফীর মতো তার আওলাদদের দ্বারা তিনি পীরের স্থলাভিষিক্ত হন। [৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। আইএসবিএন 112009250-7 
  2. "তালগাছিয়া ও হক্কোন নূর দরবার শরীফ, শৌলজালিয়া"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন 
  3. মোমতাজী, মুহম্মদ সেকান্দর; আব্দুল হক​, মোহম্মদ (১৯৬৫)। হায়াতে আশরাফ। আশরফুয়া কুতুবখানা। পৃষ্ঠা ২০৫।  zero width space character in |শেষাংশ2= at position 10 (সাহায্য)
  4. আব্দুর রশীদ (২০০১)। "তালগাছিয়ার পীরসাহেব মকসুদুল্লাহ (রহ.)"। এই সেই ঝালকাঠি। আল-ইসলাম পাব্লিকেশন্স। 
  5. হিফজুর রহমান কুমিল্লায়ী (২০১৮)। "الشيخ الفاضل مولانا مقصود الله بن المولوي غازي محمد ثناء الله بن المولوي غازي حجر الله" [Tশায়খে ফাজেল মকসুদুল্লাহ ইবনে মৌলবী গাজী মহম্মদ ছানাউল্লাহ ইবনে মৌলবী গাজী হিজরুল্লাহ]। كتاب البدور المضية في تراجم الحنفية (আরবি ভাষায়)। দারুস সালেহ। 
  6. "তালগাছিয়ার পীর ছাহেব হুজুরের ইন্তেকাল : বিএইচ হারুন এমপির শোক"Daily Inqilab