ভুটানে কৃষি

(ভুটানের কৃষি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ভুটানে কৃষির প্রভাবশালী ভূমিকা রয়েছে দেশটির অর্থনীতিতে২০০০ সালে, কৃষিক্ষেত্র ভুটানের জিডিপির ৩৫.৯% ছিল।[১] জিডিপিতে কৃষিক্ষেত্র ১৯৮৫ সালে প্রায় ৫৫% থেকে কমে ২০০৩ সালে ৩৩% এ দাঁড়িয়েছে। এ সত্ত্বেও, কৃষিকার্য ভুটানের জনগণের জীবিকা নির্বাহের প্রাথমিক উৎস হিসাবে রয়ে গেছে।[২]

পারোর আবাদি জমি

ভুটানে কৃষির প্রকৃতি সম্পাদনা

ভুটানের জনসংখ্যার প্রায় ৮০% কৃষিতে জড়িত।[৩] দেশের উপার্জনকারী ৯৫% মহিলাই কৃষিক্ষেত্রে জড়িত।[৪] এই হিমালয়ান জাতির বেশিরভাগ গ্রাম্য জনগোষ্ঠীও কৃষি খাতে নিযুক্ত রয়েছে।[৫] কৃষি শ্রম-নির্ভর প্রকৃতির এবং তুলনামূলক কম ঘনত্বের চাষাবাদ হওয়ায় দেশটির কৃষিক্ষেত্র বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশটির বেশিরভাগ কৃষকই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক।[২]

কৃষিজমি সম্পাদনা

দেশের কৃষিজমির মধ্যে, আনুমানিক ২১% হল জলাভূমি (সেচ সুবিধাসম্পন্ন), প্রায় ৪৩% শুকনো জমি (বৃষ্টিপাত যেখানে পানির উৎস), প্রায় ২৭% পরিবর্তীত চাষাবাদের জন্য ব্যবহৃত হয়, ৩% বনায়ন এবং ১% রান্নাঘরের সাথে সম্পর্কিত বাগান[২]

উৎপাদিত ফসল সম্পাদনা

ভুটানের প্রধান দুটি ফসল হল ভুট্টা এবং ধান। ভুট্টার উৎপাদন মোট উৎপাদিত দেশীয় শস্যের ৪৯% এবং ধানের পরিমাণ ৪৩%। ধান ভুটানের প্রধান ফসল। দেশের কৃষিতে গম এবং অন্যান্য ছোট ছোট শস্যের ফসলের চাষাবাদ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[১] যেসব অঞ্চলে সেচ-সুবিধা পাওয়া যায় সেখানে ধানই প্রাথমিকভাবে উৎপাদিত ফসল। ধান ছাড়াও অন্যান্য ফসলের মধ্যে রয়েছে গম, বার্লি, তেলের বীজ, আলু এবং বিভিন্ন শাক-সবজিভুট্টা মূলত দেশটির নিম্নাঞ্চলে চাষ করা হয়।[৬] ভুটানে বনাঞ্চল উর্বরতা বৃদ্ধি, পশুপালন এবং জৈব পদার্থের উৎস হিসাবে কাজ করে। কৃষিকাজের জন্য জলের প্রাপ্যতা নিয়ন্ত্রণের জন্যও দেশটির বনভূমি ভূমিকা রাখে।[৭]

লক্ষ্যমাত্রা ও অগ্রগতি সম্পাদনা

ভুটানের কৃষিক্ষেত্রের প্রাথমিক লক্ষ্য হল গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ানো, স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি এবং কৃষিজমির প্রতি ইউনিটে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। সেচ সমস্যা,[৬] রুক্ষ অঞ্চল, মাটির নিম্নমান এবং আবাদযোগ্য জমির সীমিত সংখ্যার কারণে ভুটানে কৃষিকাজ বাধাগ্রস্ত হয়।[৩] তবে বেশ কয়েকটি সুবিধা কৃষির বিকাশে অবদান রেখেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন শস্যের বীজ, তেলের বীজ এবং উদ্ভিজ্জ বীজের উন্নত গুণমান, সার ব্যবহার, যান্ত্রিকীকরণ প্রক্রিয়া এবং প্রশিক্ষিত কৃষি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি অন্তর্ভুক্ত।[৬] ভুটানের কৃষি খাত বিশেষত নিম্নলিখিত প্রকল্পগুলিতে উন্নয়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে:

  • পারো ভ্যালি উন্নয়ন প্রকল্প
  • গাইলিগফুগ উন্নয়ন প্রকল্প
  • পুনাখা-ওয়াংদি উপত্যকা উন্নয়ন প্রকল্প
  • তাশিগং-মোঙ্গার অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প
  • চিরং পার্বত্য সেচ উন্নয়ন প্রকল্প।[৬]

আপেল, কমলা এবং এলাচের মতো ফসলের উৎপাদন বেড়েছে এবং চাষাবাদ লাভজনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে বাগানের আবাদ দ্বারা স্থানান্তরিত চাষাবাদ পদ্ধতির প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। কৃষিবিদগণ আশা করছেন এর মাধ্যমে নগদ ফসলের চাষ বাড়বে।[৬]

২০১৩ সালে দেশটির সরকার ঘোষণা করে যে, ভুটান ‘‘শতভাগ জৈব কৃষি’’ সম্বলিত বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠবে[৮] এবং এর জন্য দেশটির সরকার একটি কার্যক্রম শুরু করে। এই কর্মসূচিটি আন্তর্জাতিক জৈব কৃষি আন্দোলন ফেডারেশন (আইএফওএএম) দ্বারা সমর্থিত হয়েছে।[৯]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Suresh Chandra Babu, Ashok Gulati (২০০৫)। Economic Reforms And Food Security: The Impact Of Trade And Technology in South Asia। Haworth Press। পৃষ্ঠা 329। আইএসবিএন 1-56022-257-3 
  2. Small Farmers and the Food System in Bhutan[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. The DOHA Development Agenda। United Nations Publications। ২০০৪। পৃষ্ঠা 201। আইএসবিএন 92-1-120338-4 
  4. Jennifer Kitts, Janet Hatcher Roberts (১৯৯৬)। The Health Gap: Beyond Pregnancy and Reproduction । International Development Research Centre (Canada)। পৃষ্ঠা 97আইএসবিএন 0-88936-772-8 
  5. Catherine Mears, Helen Young (১৯৯৮)। Acceptability and Use of Cereal-based Foods in Refugee Camps। Oxfam। পৃষ্ঠা 49। আইএসবিএন 0-85598-402-3 
  6. Ramakant, Ramesh Chandra Misra (১৯৯৬)। Bhutan: Society and Polity। Indus Publishing। পৃষ্ঠা 149আইএসবিএন 81-7387-044-6 
  7. Stephen R. Tyler (২০০৬)। Communities, Livelihoods and Natural Resources: Action Research and Policy Change in Asia। International Development Research Centre (Canada)। পৃষ্ঠা 193–4। আইএসবিএন 1-55250-230-9 
  8. "Bhutan set to plough lone furrow as world's first wholly organic country"The Guardian online। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ 
  9. "Presentation on Science Based High Yielding Organic Agriculture by IFOAM"Bhutan Minister for Agriculture and Forests। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা