কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত একটি সরকারি কলেজ। এটি কুমিল্লার সবচেয়ে পুরাতন ও বিখ্যাত কলেজ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঠিকাদারি পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং শিক্ষা-অনুরাগী ছিলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। তার স্মৃতি রক্ষার্থে ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমেডিয়েট শাখায় প্রধান ফটকে একটি সাদা রঙের ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের নাম সত্যেন্দ্রনাথ বসু যিনি এই কলেজের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে সুদীর্ঘ ৩ দশক অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কলেজটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ | |
ধরন | সরকারি কলেজ |
---|---|
স্থাপিত | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৮৯৯ |
অধিভুক্তি | কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় |
অধ্যক্ষ | ড. আবু জাফর খান |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | ২০০ (প্রায়) |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ৩০০ (সম্ভাব্য) |
শিক্ষার্থী | ৩৫.০০০ (প্রায়) |
অবস্থান | , ২৩°২৭′৩৫″ উত্তর ৯১°১০′৫৬″ পূর্ব / ২৩.৪৫৯৮১৪° উত্তর ৯১.১৮২২৮৬° পূর্ব |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস
সম্পাদনাকুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ অবিভক্ত কুমিল্লা জেলা তথা চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় ১৮৮৬ সালে "রায় এন্ট্রান্স ইস্কুল" নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৮ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার "জুবিলি জয়ন্তী" স্মারক চিহ্ন স্বরূপ এটিকে ভিক্টোরিয়া স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়। পরবর্তীকালে ১৮৯৯ সালে তা পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ও ভিক্টোরিয়া কলেজ নাম ধারণ করে। একই বছর এই কলেজটি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে গণ্য হয়। ১৯০২ সালে এক প্রচন্ড অগ্নিকান্ডের ফলে এই কলেজটি সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত হয়। কিছু কাল পরেই প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক এর পুননির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়। ১৮৯৯ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ একটি টালির ঘর দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে অনেকের আর্থানুকূল্যে বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক শাখার অধ্যক্ষের চেম্বার, অফিসকক্ষ, লাইব্রেরী ও অধ্যাপক মিলনায়তনটি নির্মিত হয়। ১৯০৪ সালে একটি ট্রাস্ট ডিডের মাধ্যমে স্কুল ও কলেজটিকে পৃথক করা হয়। এ সময়ে কলেজে একটি পরিচালনা পর্ষদও ছিল। এই পরিচালনা পর্ষদ ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কলেজ অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠাতা আনন্দচন্দ্র রায়ের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল। আনন্দচন্দ্র রায় ছিলেন এই পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সম্পাদক। ১৯০৪ সালের টাস্ট ডিডে মূলত শ্রী আনন্দচন্দ্র রায়কে কলেজ গভর্নিং বডির আজীবন সম্পাদক রাখার স্বপক্ষে একটি রায় ঘোষণা করে হয়। ১৮৯৯ সাল থেকেই কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এ সময়ে এই কলেজে এফ এ স্ট্যান্ডার্ড চালু হয়। এর কিছুকাল পরেই চালু হয় আইএ স্ট্যান্ডার্ড। ১৯০৪ সালের পূর্বে এই কলেজে অন্য কোন বিভাগ বা স্নাতক শ্রেণী চালু করা সম্ভব ছিল না। ১৯১৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯১৮ সালের দিকেই কেবল কলেজের নতুন ভবনটি নির্মিত হয় এবং ঐ বছরই স্নাতক শ্রেণী খোলার জন্য কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি আসে। বিজ্ঞান বিষয়ক আইএসসি অধিভুক্তি আসে ১৯২৪ সালে। এই কলেজে বিশ দশকের (১৯২৫) মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে দেশ বিভাগ (১৯৪৭) পর্যন্ত ইংরেজি, গণিত, সংস্কৃত, রাজনীতি বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও আরবী বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। তখন অনার্স কোর্স ছিল দুই বছর ব্যাপী। পাস কোর্সও তাই। এমএ কোর্সও দুই বছর পড়ানো হতো। ১৯৪২ সালে এ কলেজে বিএসসি কোর্স চালু হয়। এবং ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে বিকম কোর্স শুরু হয়। এর কিছুকাল আগে থেকেই অর্থাৎ, ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে এখানে আইকম কোর্স চালু ছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শাখায় বিভক্ত হয়।
১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে কলেজে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। পরে ১৯৭১-৭২ সালের দিকে একাউন্টিং, ব্যবস্থাপনা, রাজনীতি বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রভৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ১৯৬৪ সালের ২৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই চট্টগ্রাম বিভাগের সব কলেজ এর অধীনে চলে যায়। ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে এই কলেজে বাংলা ও অর্থনীতি বিষয়ে এমএ খোলা হয় এবং তা প্রায় এক বছরের মতো চালু ছিল। ১৯৮২ সালে এই কলেজে আইসিএমএ কোর্স চালু হয়। ১৯৫৮-৫৯ সালের দিকে এ কলেজে নাইট শিফট চালু হয়। তা ১৯৬৮ সালে ১লা মে নাগাদ চালু ছিল। ১৯৬৮ সালের পয়লা মে কলেজটি সরকারি হয়। এরপর থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন হয়ে কুমিল্লা সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ নামকরণ হয়। ১৯৮৪-৮৫ সাল থেকে কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হিসেবে মর্যাদা পায়। এরপর থেকে ডিগ্রি শাখা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। বর্তমানে কলেজে ২৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। এবং এগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ে চালু আছে মাস্টার্স কোর্স।
ভবন সমূহ
সম্পাদনা- কলা ভবন
- বিজ্ঞান ভবন-১
- বিজ্ঞান ভবন-২
- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভবন
- পাঠাগার ভবন
- ব্যবসায়িক ভবন-১
- ব্যবসায়িক ভবন-২
- নতুন ভবন বা পরীক্ষা ভবন
- অর্থনীতি ভবন
- প্রশাসনিক ভবন
- জিয়া অডিটোরিয়াম
- মসজিদ ভবন
- মিলেনিয়াম ভবন
আবাসিক হলসমূহ
সম্পাদনাছাত্রাবাস
সম্পাদনা- কবি কাজী নজরুল হল
- সোহরাওয়ার্দী হল
- ইসলামি হল
ছাত্রীনিবাস
সম্পাদনা- নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল
- শেরে বাংলা হল
- রবীন্দ্র হল
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনামহান মুক্তিযুদ্ধে ভিক্টোরিয়া কলেজের ৩৩৪ জন ছাত্র অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৩৫ জন মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন।[১]
অনুষদসমূহ
সম্পাদনাবর্তমানে এখানে ২৫ টি বিষয়ে অনার্স ও ২৩ টি বিষয়ে মাস্টার্স চালু আছে। ৪ টি অনুষদে স্নাতক (পাস) কোর্স চালু রয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে বর্তমানে ৪ টি অনুষদের অধীনে নিম্নোক্ত বিভাগ সমূহ রয়েছে।
অনুষদের নাম | বিভাগ সমূহ |
---|---|
কলা অনুষদ | বিএ বাংলা বিভাগ ইংরেজি বিভাগ আরবি ও ইসলামি শিক্ষা বিভাগ ইতিহাস বিভাগ ইসলামের ইতিহাস বিভাগ দর্শন বিভাগ সংস্কৃত বিভাগ |
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ | বিবিএস হিসাববিজ্ঞান বিভাগ ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ মার্কেটিং বিভাগ |
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ | বিএসএস রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ অর্থনীতি বিভাগ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ সমাজকর্ম বিভাগ |
বিজ্ঞান অনুষদ | বিএসসি পদার্থ বিভাগ রসায়ন বিভাগ গণিত বিভাগ পরিসংখ্যান বিভাগ প্রাণিবিদ্যা বিভাগ উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ নৃ-বিজ্ঞান মৃত্তিকা বিজ্ঞান |
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তনী
সম্পাদনা- সত্যেন্দ্রনাথ বসু, বাঙ্গালি পদার্থ বিজ্ঞানি। (শিক্ষক)
- ফরিদ উদ্দিন খাঁ, বাঙালি সাহিত্যিক ও প্রকাশক। এফএ (১৯১৫)
- শচীন দেববর্মণ, বাংলা ও হিন্দী গানের কিংবদন্তীতুল্য ও জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক , সুরকার , গায়ক ও লোকসঙ্গীত শিল্পী।
- শরাফত আলী - শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী
- জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী — বাঙালি সাহিত্যিক
- আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি।
- আ হ ম মুস্তফা কামাল, সংসদ সদস্য, কুমিল্লা-১০ ও সাবেক মন্ত্রী, অর্থ মন্ত্রণালয় (বাংলাদেশ) এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল এর সাবেক সভাপতি। এইচএসসি (১৯৬৪)
- আফজল খান- রাজনীতিবিদ ও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা
- সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বাংলাদেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি
- আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব (জ. ১৯৫৫)
- বিদ্যা সিনহা সাহা মীম, বাংলাদেশী মডেল ও অভিনেত্রী
- রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম), সংসদ সদস্য, (হাজিগঞ্জ-শাহরাস্তি) চাঁদপুর-০৫
- আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার, মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য, ২৫৪ নং (কুমিল্লা-০৬)
- আসিফ আকবর, সঙ্গীত শিল্পী ও অভিনেতা
- মুজিবুল হক মুজিব, সংসদ সদস্য ( কুমিল্লা ১১) সাবেক রেলপথ মন্ত্রী
- প্রাণ গোপাল দত্ত, সংসদ সদস্য (কুমিল্লা ৭)
- সন্তু লারমা, প্রেসিডেন্ট - পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি
- আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় মেয়র
অধ্যক্ষবৃন্দ
সম্পাদনাঅধ্যক্ষ | দায়িত্বকাল |
---|---|
সত্যেন্দ্রনাথ বসু | (?-১৯৪৭) |
আখতার হামিদ খান | ১৯৫০-৫৮ |
আব্দুর রশীদ | |
রুহুল আমিন ভুঁইয়া | (-২০২১) |
আবু জাফর খান | (২০২১-বর্তমান) |
সংগঠন
সম্পাদনাসাংস্কৃতিক
সম্পাদনাকলেজে রয়েছে বিএনসিসি (সেনা), বিএনসিসি (বিমান), রেড ক্রিসেন্ট, ভিক্টোরিয়া কলেজ বিতর্ক পরিষদ, ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার, রোভার স্কাউট, ক্যাম্পাস বার্তা, রক্তদাতা সংগঠন বাঁধন,পদার্থবিজ্ঞান সমিতি, রসায়ন সমিতি,বোটানী সোসাইটি,ম্যাথ অ্যাসোসিয়েশন, ক্যারিয়ার ক্লাব ও বিজ্ঞান ক্লাব। ভিক্টোরিয়া কলেজ সাংবাদিক সমিতি-কুভিকসাস।
চিত্রশালা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "চির অম্লান বাতিঘর: ভিক্টোরিয়া কলেজ দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৫ নভেম্বর ২০১৯।