ওয়ালিদায়ে সুলতান
ওয়ালিদায়ে সুলতান (উসমানীয় তুর্কি: والده سلطان, lit. "সুলতান মাতা", "matriarch sultana") ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত আনুষ্ঠানিক পদবি যা উসমানীয় সুলতানদের মায়েরা ধারণ করতেন। এই পদবি হাফসা সুলতান (মৃত্যু ১৫৩৪) প্রথম ব্যবহার করা শুরু করেন, যিনি ছিলেন সুলতান প্রথম সেলিমের স্ত্রী এবং সুলতান প্রথম সুলাইমানের মা। বস্তুত সুলাইমান সিংহাসনে বসার পর পূর্বোক্ত অনুরূপ পদবি মাহদ-ই আলিয়া ("cradle of the great") বিলুপ্ত করে ওয়ালিদায়ে সুলতান পদবি চালু করেন। সুলতানের প্রিয় স্ত্রী/উপপত্নীর জন্য হাসেকি সুলতান পদবি এবং রাজপরিবারের নারীদের নামের শেষে সুলতান পদবি ব্যবহারের প্রথাও একইসময় চালু করা হয়।[১]
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ওয়ালিদায়ে সুলতান | |
---|---|
প্রথম উসমানীয় ওয়ালিদায়ে সুলতান হাফসা সুলতানের ভাস্কর্য, মানিসা, তুরস্ক | |
সম্বোধনরীতি | মাননীয়া ওয়ালিদায়ে সুলতান |
বাসভবন | |
গঠন | ৩০ সেপ্টেম্বর ১৫২০ |
প্রথম | হাফসা সুলতান |
সর্বশেষ | পেরেস্তু কাদিন |
বিলুপ্ত | ১১ ডিসেম্বর ১৯০৪ |
উসমানীয় হারেমের নীতি অনুযায়ী হারেমের সর্বশক্তিশালী ও সর্ব ক্ষমতার অধিকারী হতেন ওয়ালিদায়ে সুলতান। গোটা হারেম তাদের নির্দেশেই পরিচালিত হতো। তাঁরা হাসেকি সুলতানদের যেকোনো আদেশ বা শাস্তিও দিতে পারতেন।
সাধারণত সিংহাসনে আসীন কোন সুলতানের জীবিত মায়েরা এই উপাধি ব্যবহারের সুযোগ পান। পুত্র সিংহাসনে বসার পূর্বে যাঁরা মারা যান, তাঁরা কখনোই ওয়ালিদায়ে সুলতান হিসেবে পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন না। ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে কোন কোন সুলতানের দাদী বা সৎ মা এই পদবি ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিলেন। ইউরোপে দ্য কুইন মাদার এবং ভারতবর্ষে রাজমাতা হল ওয়ালিদায়ে সুলতানের অনুরূপ পদবি।
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসে শক্তিশালী ও সুপরিচিত ওয়ালিদায়ে সুলতান ছিলেন নুরবানু সুলতান,[২] সাফিয়ে সুলতান, কোসেম সুলতান এবং তুরহান সুলতান।
ওয়ালিদায়ে সুলতানদের তালিকা
সম্পাদনাএই তালিকা সকল উসমানীয় সুলতানের মাকে অন্তর্ভুক্ত করে না। তাঁদের নামই এখানে আছে যারা "ওয়ালিদায়ে সুলতান" পদবি ব্যবহার করেছিলেন। প্রায় সকল ক্ষেত্রে ওয়ালিদায়ে সুলতানরা উসমানীয় সুলতানদের জননীই ছিলেন। যেসব মা তাঁদের সন্তানদের সিংহাসনে বসার পূর্বেই মারা যান তাঁরা কখনোই এই পদবি ধারণ করেননি; যেমন-হুররাম সুলতান, মুয়াজ্জেজ সুলতান, মিহরিশাহ কাদিন, সেরমি কাদিন, তিরিমুজগান কাদিন, গুলকেমেল কাদিন, এবং গুলুস্তু হানিম। কয়েকটি ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে, সুলতানের দাদী এবং সৎ মা "ওয়ালিদায়ে সুলতান" পদবি ধারণ করেছেন, যেমন- কোসেম সুলতান (দাদী হিসেবে) এবং পেরেস্তু কাদিন (সৎ মা হিসেবে)।
নাম | জন্মগত নাম | জাতিগত পরিচায় | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব শেষ | মৃত্যু | সুলতান |
---|---|---|---|---|---|---|
হাফসা সুলতান حفصه سلطان |
ক্রিমিয়ার খান মেনলি গিরাইয়ের কন্যা[৩][৪] | ৩০ সেপ্টেম্বর ১৫২০ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
১৯ মার্চ ১৫৩৪ | প্রথম সুলাইমান (পুত্র) | ||
নুরবানু সুলতান نور بانو سلطان |
সেসিলিয়া ভেনিয়ার-বাফো[৫] অথবা রেচেল [৬] |
ভেনেশিয়ান অথবা ইহুদি | ১৫ সেপ্টেম্বর ১৫৭৪ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
৭ ডিসেম্বর ১৫৮৩ | তৃতীয় মুরাদ (পুত্র) | |
সাফিয়ে সুলতান صفیه سلطان |
সোফিয়া | আলবেনিয়ান | ১৫ জানুয়ারি ১৫৯৫ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
২২ ডিসেম্বর ১৬০৩ পুত্রের মৃত্যু |
১০ নভেম্বর ১৬১৮ | সুলতান তৃতীয় মুহাম্মদ (পুত্র) |
হানদান সুলতান خندان سلطان |
হেলেনা[৭] | বসনিয়ান [৭] | ২২ ডিসেম্বর ১৬০৩ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
৯ নভেম্বর ১৬০৫ | প্রথম আহমেদ (পুত্র) | |
হালিমা সুলতান[৮] حلیمه سلطان |
আবজাখ | ২২ নভেম্বর ১৬১৭ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ (প্রথম মেয়াদ) |
২৬ ফেব্রুয়ারি ১৬১৮ পুত্রকে সিংহাসন হতে অপসারণ (প্রথম মেয়াদ) |
১৬২৩ | প্রথম মুস্তাফা (পুত্র) | |
১৯ মে ১৯২২ পুত্রের দ্বিতীয়বার সিংহাসনারোহণ (দ্বিতীয় মেয়াদ) |
১০ সেপ্টেম্বর ১৬২৩ পুত্রকে সিংহাসন পুনরায় হতে অপসারণ (দ্বিতীয় মেয়াদ) | |||||
কোসেম সুলতান ماه پیکر كوسم سلطان |
আনাস্তাসিয়া | গ্রিক জন্ম: তিনোস দ্বীপ ভেনিস প্রজাতন্ত্র |
১০ সেপ্টেম্বর ১৬২৩ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
২ সেপ্টেম্বর ১৬৫১ (হত্যাকাণ্ড) |
চতুর্থ মুরাদ (পুত্র) ইব্রাহিম (পুত্র) চতুর্থ মুহাম্মদ (নাতি) | |
তুরহান সুলতান
ترخان خدیجه سلطان |
নাদিয়া | রুথেনিয়ান | ২ সেপ্টেম্বর ১৬৫১ শাশুড়ির মৃত্যু |
৪ আগস্ট ১৬৮৩ | চতুর্থ মুহাম্মদ (পুত্র) | |
আসুব সুলতান
آشوب سلطان |
ক্যাটারিনা[৭] | সার্বিয়ান[৭] | ৮ নভেম্বর ১৬৮৭ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
৪ ডিসেম্বর ১৬৮৯ | দ্বিতীয় সুলাইমান (পুত্র) | |
গুলনুস সুলতান
گلنوش سلطان |
এভমানিয়া ভোরিয়া | গ্রিক | ৬ ফেব্রুয়ারি ১৬৯৫ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
৬ নভেম্বর ১৭১৫ | দ্বিতীয় মুস্তাফা (পুত্র) তৃতীয় আহমেদ (পুত্র) | |
সালিহা সুলতান
صالحه سلطان |
Aleksandra[৭] | গ্রিক [৭] | ২০ সেপ্টেম্বর ১৭৩০ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
২১ সেপ্টেম্বর ১৭৩৯ | প্রথম মাহমুদ (পুত্র) | |
সেহসুভার সুলতান
شهسوار سلطان |
মারিয়া | রাশিয়ান[৭] | ১৩ ডিসেম্বর ১৭৫৪ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
এপ্রিল ১৭৫৬ | তৃতীয় উসমান (পুত্র) | |
মিহরিশাহ সুলতান
مهر شاه سلطان |
এগনেস | জর্জিয়ান অর্থোডক্স যাজকের কন্যা[৯] | ৭ এপ্রিল ১৭৮৯ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
১৬ অক্টোবর ১৮০৫ | তৃতীয় সেলিম (পুত্র) | |
সিনেপারভার সুলতান
سینه پرور سلطان |
সোনিয়া | বুলগেরিয়ান | ২৯ মে ১৮০৭ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
২৮ জুলাই ১৮০৮ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
১১ ডিসেম্বর ১৮২৮ | চতুর্থ মুস্তাফা (পুত্র)[১০] |
নাকসিদিল সুলতান
نقش دل سلطان |
এইমি | ফ্রেঞ্চ | ১৮ জুলাই ১৮০৮ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
২২ আগস্ট ১৮১৭ | দ্বিতীয় মাহমুদ (পুত্র) | |
বেযমিয়ালেম সুলতান
بزم عالم سلطان |
সুযি | জর্জিয়ান | ২ জুলাই ১৮৩৯ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
২ মে ১৮৫৩ | প্রথম আবদুল মাজিদ (পুত্র) | |
পারতেভনিয়াল সুলতান
پرتو نهال سلطان |
হাসনা | রোমানিয়ান | ২৫ জুন ১৮৬১ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
৩০ মে ১৮৭৬ পুত্রকে সিংহাসন হতে অপসারণ |
৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৩ | আব্দুল আজিজ (পুত্র) |
সেভকেফজা কাদিন شوق افزا سلطان |
ভিলমা | জর্জিয়ান | ৩০ মে ১৮৭৬ পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
৩১ আগস্ট পুত্রকে সিংহাসন হতে অপসারণ |
১৭ সেপ্টেম্বর ১৮৮৯ | পঞ্চম মুরাদ (পুত্র) |
পেরেস্তু কাদিন رحيمه پرستو سلطان |
সিরকাসিয়ান | ৩১ আগস্ট ১৮৭৬ সৎ-পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ |
১১ ডিসেম্বর ১৯০৪ | দ্বিতীয় আবদুল হামিদ (সৎ পুত্র)[১১][১২] |
ব্যতিক্রম
সম্পাদনাসাধারণত শাসনরত সুলতানের জীবিত জননী ওয়ালিদায়ে সুলতান হলেও এমন উদাহরণও আছে, যেখানে পুত্র সিংহাসনে আসীন অবস্থায় জীবিত থাকা সত্বেও কোন নারী এই পদবি ধারণ করেননি।
নাম | জন্মগত নাম ও জাতীয়তা | যেসময়ে ওয়ালিদায়ে সুলতান থাকার কথা ছিল | পুত্র | মন্তব্য |
---|---|---|---|---|
মাহফিরোজ সুলতান | ইউডক্সিয়া | ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৬১৮ (পুত্রের সিংহাসনে আরোহণ) – ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৬২০ (নিজের মৃত্যু) | দ্বিতীয় উসমান | উসমানীয় রাজপরিবারের নারীদের ভাতা প্রদানের রেজিস্ট্রারে দেখা যায়, দ্বিতীয় উসমানের শাসনামলে কোন ওয়ালিদায়ে সুলতান ছিলেন না। সম্ভবত, মাহফিরোজ দ্বিতীয় উসমান সিংহাসনে বসার পূর্বে প্রথম আহমেদের বিরাগভাজন হয়ে প্রাসাদ থেকে বহিষ্কৃত হন এবং পরবর্তীতে কখনোই তার মর্যাদা ফিরে পাননি। এর সত্যতা নিশ্চিত করে দুটি বিষয়- পরবর্তী জীবনে প্রাসাদে তার অনুপস্থিতি এবং জীবনসঙ্গী প্রথম আহমেদের সমাধির পাশে সমাধির পরিবর্তে আইয়ুব সুলতান মসজিদে তাঁর সমাধি।
ভেনেশীয় রাজদূত কন্তারিনি রিপোর্ট করেছিলেন যে, ১৬১২ সালে সুলতান প্রথম আহমেদ এক নারীকে কোসেমের সাথে ঝামেলা করার কারণে প্রাসাদ থেকে বহিষ্কারের শাস্তি দেন, খুব সম্ভবত সেই নারী ছিলেন মাহফিরোজ।[২] |
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
তোপকাপি প্রাসাদে ওয়ালিদায়ে সুলতানের কামরায় ডামির মাধ্যমে ওয়ালিদায়ে সুলতান ও তাঁর সহচরদের জীবনধারার কৃত্রিম দৃশ্যায়ন
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Davis, Fanny (১৯৮৬)। "The Valide"। The Ottoman Lady: A Social History from 1718 to 1918। আইএসবিএন 0-313-24811-7।
- ↑ ক খ Peirce, Leslie P. (১৯৯৩)। The Imperial Harem: Women and Sovereignty in the Ottoman Empire (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-508677-5।
- ↑ Kasaba, Reşat। A moveable empire: Ottoman nomads, migrants, and refugees। University of Washington Press। পৃষ্ঠা 44। আইএসবিএন 978-0-295-80149-0।
Hafsa Sultan, the daughter of the Crimean ruler Mengli Giray Khan.
- ↑ Peter G. Bietenholz; Thomas Brian Deutscher (২০০৩)। Contemporaries of Erasmus: A Biographical Register of the Renaissance and Reformation, Volumes 1-3। University of Toronto Press। পৃষ্ঠা 298। আইএসবিএন 978-0-802-08577-1।
Suleiman i (Solymannus), known in the West as Suleiman the Magnificent, was the son of *Selim i and Hafsa Sultan, the daughter of Mengli Giray
- ↑ Godfrey Goodwin, The Private World of Ottoman Women, Saqi Book, আইএসবিএন ০-৮৬৩৫৬-৭৪৫-২, আইএসবিএন ৩-৬৩১-৩৬৮০৮-৯, 2001. page 128
- ↑ Valeria Heuberger, Geneviève Humbert, Geneviève Humbert-Knitel, Elisabeth Vyslonzil (ed.), Cultures in Colors, page 68. আইএসবিএন ৩-৬৩১-৩৬৮০৮-৯, 2001
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ A. D. Alderson, The Structure of the Ottoman Dynasty, Oxford: Clarendon, 1956, p.83
- ↑ According to Yavuz Bahadıroğlu, Resimli Osmanlı Tarihi, Nesil Yayınları (Ottoman History with Illustrations, Nesil Publications), 15th Ed., 2009, page 245, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৭৫-২৬৯-২৯৯-২, Mustafa I's mother is হানদান সুলতান.
- ↑ Y. İzzettin Barış (২০০২)। Osmanlı padişahlarının yaşamlarından kesitler, hastalıkları ve ölüm sebepleri। Bilimsel Tıp Yayınevi। পৃষ্ঠা 184। আইএসবিএন 978-975-6986-17-2।
Selim'in annesi olan Mihrişah, Gürcistan'dan kaçırılan bir papazın kızıydı
- ↑ Yavuz Bahadıroğlu, Resimli Osmanlı Tarihi, Nesil Yayınları (Ottoman History with Illustrations, Nesil Publications), 15th Ed., 2009, page 387 & 395, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৭৫-২৬৯-২৯৯-২
- ↑ Brookes, Douglass Scott, The Concubine, the Princess, and the Teacher, p.287. University of Texas Press, 2008. আইএসবিএন ০-২৯২-৭১৮৪২-X
- ↑ "Sultan II. Abdülhamid Han"। Republic of Turkey Ministry of Culture and Tourism। ২০১২-০৪-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-০৬।