ভারতে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস

বৌদ্ধধর্ম বিশ্বের একটি প্রধান ধর্ম। প্রাচীন মগধ রাজ্যে (অধুনা ভারতের বিহার রাজ্য) এই ধর্মের উত্থান ঘটেছিল। এই ধর্মের ভিত্তি গৌতম সিদ্ধার্থের শিক্ষা।[note ১] গৌতম সিদ্ধার্থকে ‘বুদ্ধ’ (‘বোধিপ্রাপ্ত’[৩]) বলা হয়। বুদ্ধের জীবদ্দশাতেই বৌদ্ধধর্ম মগধের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল।

ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান মহাবোধি মন্দির। এটি গৌতম বুদ্ধের জীবনের সঙ্গে যুক্ত চারটি প্রধান তীর্থস্থানের একটি। মহাবোধি মন্দির বুদ্ধের বোধিলাভের স্থানে নির্মিত। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোক এই স্থানে প্রথম মন্দিরটি নির্মাণ করেন। বর্তমান মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ৫ম বা ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। ভারতের যে প্রাচীনতম সম্পূর্ণ ইঁটের তৈরি বৌদ্ধ মন্দিরগুলি গুপ্তযুগের শেষ ভাগ থেকে আজও বিদ্যমান রয়েছে, এই মন্দিরটি সেগুলির অন্যতম।[১]
সংস্কারের আগে বোধগয়ার মহাবোধি মন্দির, ১৭৮০-এর দশকের চিত্র।
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের বিশাখাপত্তনম জেলার অনকপল্লির কাছে বোজ্জনকোন্ডায় প্রস্তরে খোদিত বুদ্ধমূর্তি।
সারনাথের ধামেখ স্তুপ স্মারক স্থলের কাছে প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ।
ইলোরা গুহাসমূহে বৌদ্ধ গুহাগুলির একটিতে ভক্তেরা পূজা করছেন।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে বৌদ্ধ সমাজ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই শাখাদুটি ছিল মহাসাংঘিকস্থবিরবাদ। এই দুই শাখাই সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অসংখ্য উপশাখায় বিভক্ত হয়ে যায়।[৪] আধুনিক কালে, বৌদ্ধধর্মের দুটি প্রধান শাখার অস্তিত্ব রয়েছে। এদুটি হল শ্রীলঙ্কাদক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় থেরবাদ এবং হিমালয়পূর্ব এশিয়ায় মহাযান

গুপ্তযুগের (খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দীর) পর থেকে একটি স্বতন্ত্র ও সুসংহত ধর্ম হিসেবে বৌদ্ধধর্মের প্রভাব কমে আসতে শুরু করে। ১৩শ শতাব্দী নাগাদ এই ধর্ম তার উৎসভূমি থেকে অবলুপ্ত হয়। তবে বৌদ্ধধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাপ রেখে যায়। হিমালয়ের সিক্কিম, লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ, দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চল (পশ্চিমবঙ্গ) এবং হিমাচল প্রদেশের উত্তর অঞ্চলে লাহুল এবং স্পিতি জেলায় বৌদ্ধধর্ম এখনও সর্বাধিক প্রচলিত ধর্মমত। মহাযান বৌদ্ধধর্মের উৎসভূমি অন্ধ্রপ্রদেশেও বৌদ্ধধর্মের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।[৫] বিগত শতাব্দীতে বহু ভারতীয় বুদ্ধিজীবীর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ, বৌদ্ধ তিব্বতি শরণার্থীদের এদেশে আশ্রয় গ্রহণ এবং অসংখ্য হিন্দু দলিতের বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরণের ফলে ভারতে আবার বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটছে।[৬] ভারতের ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে, এই দেশে বৌদ্ধ জনসংখ্যার হার ০.৮%। প্রায় ৭৯ লক্ষ ৫০ হাজার বৌদ্ধ এদেশে বাস করেন।[৭]

সিদ্ধার্থ গৌতম সম্পাদনা

অধুনা নেপাল রাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলীয় সমভূমিতে অবস্থিত লুম্বিনীতে বুদ্ধের জন্ম হয়। তার পিতা ছিলেন কপিলাবস্তুর শাক্য রাজা শুদ্ধোধন। সন্ন্যাস গ্রহণ করে শমন প্রথানুসারে ধ্যানের মাধ্যমে বুদ্ধ মঝ্‌ঝিম পন্থা আবিষ্কার করেন। এই পন্থায় সন্ন্যাসের কঠোরতা ও অতি-সাধারণ জীবনযাত্রার মধ্যবর্তী একটি পন্থা প্রদর্শিত হয়। অধুনা ভারতের বিহার রাজ্যে বোধগয়াতে একটি পিপুল গাছের তলায় তিনি বোধিলাভ করেন। এই গাছটি এখন বোধিবৃক্ষ নামে পরিচিত। এরপর থেকে গৌতম ‘সম্যকম্বুদ্ধ’ (‘পরিপূর্ণ আত্ম-বোধিপ্রাপ্ত ব্যক্তি’) নামে পরিচিত হন। মগধের রাজা বিম্বিসার বুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বিম্বিসার বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং বহু বৌদ্ধ বিহার স্থাপনের অনুমতি দেন। এর ফলে মগধের সমগ্র অঞ্চল পরে ‘বিহার’ নামে পরিচিত হয়।[৮] উত্তর ভারতের বারাণসী শহরের কাছে মৃগদাবে বুদ্ধ তার পাঁচ জন সঙ্গীর কাছে প্রথম উপদেশ দানের মাধ্যমে ধর্মচক্র প্রবর্তন করেন। এই পাঁচ জনের সঙ্গে বুদ্ধ এর আগে বোধিলাভের জন্য তপস্যা করেছিলেন। তাদের নিয়েই বুদ্ধ প্রথম সংঘ স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে প্রথম ত্রিরত্ন (বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ) স্থাপনের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ হয়। কথিত আছে, জীবদ্দশায় অবশিষ্ট সময়ে বুদ্ধ উত্তর ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল ও অন্যান্য অঞ্চলে পর্যটন করে ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন। অধুনা ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের কুশীনগরে বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করেন।

আরও দেখুন সম্পাদনা

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. born as a prince of the ancient Kapilavastu kingdom now in Lumbini of Nepal),[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. UNESCO World Heritage Centre। "Mahabodhi Temple Complex at Bodh Gaya"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  2. Smith, Vincent A. (১৯১৪)। The Early History of India from 600 B.C. to the Muhammadan Conquest Including the Invasion of Alexander the Great (3rd সংস্করণ)। London: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 168–169। 
  3. Monier-Williams, Monier। Dictionary of Sanskrit। OUP। 
  4. Akira Hirakawa, Paul Groner, A history of Indian Buddhism: from Śākyamuni to early Mahāyāna. Reprint published by Motilal Banarsidass Publ., 1993, page 2.
  5. Guang Xing. The Concept of the Buddha: Its Evolution from Early Buddhism to the Trikaya Theory. 2004. pp. 65–66 "Several scholars have suggested that the Prajñāpāramitā probably developed among the Mahasamghikas in Southern India, in the Andhra country, on the Krsna River."
  6. The New York times guide to essential knowledge: a desk reference for the curious mind. Macmillan 2004, page 513.
  7. Peter Harvey, An Introduction to Buddhism: Teachings, History and Practices, p. 400. Cambridge University Press, 2012, আইএসবিএন ৯৭৮-০৫২১৮৫-৯৪২-৪
  8. India by Stanley Wolpert (Page 32)

আরও পড়ুন সম্পাদনা

Living Religions, seventh edition, by Mary Pat Fisher

  • Dutt, N. (1998). Buddhist Sects in India. New Delhi: Motilal Banarsidass.
  • Lamotte, E. (1976). History of Indian Buddhism. Paris: Peeters Press.

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা