ভাইরাসঘটিত রোগ

ভাইরাস নামক জীবাণুর সংক্রমণের ফলে মানুষ, প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহে উদ্ভূত রোগব্যাধি

ভাইরাস নামক এক ধরনের রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু (কারও কারও মতে নির্জীব কণিকা) মানবদেহকে আক্রমণ করে দেহে যেসব রোগের সৃষ্টি করে, তাদেরকে ভাইরাসঘটিত রোগ বা ভাইরাসজনিত রোগ বলে। ভাইরাস আক্রমণ করে দেহে প্রবেশ করতে সফল হলে বলা হয়, ভাইরাসের সংক্রমণ (ইনফেকশন) হয়েছে। সব ভাইরাসই পরজীবী। তারা কেবলমাত্র জীবন্ত কোষের ভেতরে প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারে। ভাইরাস যে জীবন্ত কোষের ভেতরে বাস করে, তাকে পোষক কোষ বলে। ভাইরাস আকারে ব্যাকটেরিয়া কোষের চেয়ে অনেক ছোট হয়; এদের বেশির ভাগের আকার ০.০১ মাইক্রোমিটার থেকে ০.১ মাইক্রোমিটার ব্যাসার্ধের হয় (১ মাইক্রোমিটার ১ মিটারের ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ)। খুবই কম সংখ্যক ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া কোষকে আক্রমণ করে। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী এবং বহু উদ্ভিদেরও ভাইরাসঘটিত রোগ হয়।

বিভিন্ন প্রকার ভাইরাসের সাইজ

গঠন প্রকৃতি সম্পাদনা

ভাইরাসের কোনও প্রজাতি হয় না, কারণ ভাইরাস কোষ দিয়ে তৈরি নয়। এজন্য বলা হয় যে, বিভিন্ন "প্রকারের" ভাইরাস হয়। একটি ভাইরাসের কণা গাঠনিকভাবে খুবই সরল। এর কোনও কোষকেন্দ্র (নিউক্লিয়াস) বা কোষমাতৃকা (সাইটোপ্লাজম) থাকে না। ভাইরাসে মূলত একটি বংশগতিমূলক উপাদান দিয়ে তৈরি মজ্জা থাকে, যাকে ঘিরে প্রোটিনের আবরণ থাকে। এই বংশগতিমূলক উপাদানটি ডিএনএ (ডিরাইবোনিউক্লিয়িক অ্যাসিড) কিংবা আরএনএ (রাইবোনিউক্লিয়িক অ্যাসিড) হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই এই বংশগতিমূলক উপাদানগুলিতে খুবই অল্প সংখ্যক কিছু বংশাণু (জিন) থাকে, কিন্তু তা দিয়েই ভাইরাস পোষক কোষের ভেতরে প্রজনন ও বংশবিস্তার করতে পারে। কখনও কখনও পোষককোষের ভেতরে ভাইরাসের কণাকে ঘিরে একটি পর্দার আবরণ থাকতে পারে, কিন্তু ভাইরাস নিজে এটি তৈরি করে না, বরং এটি ভাইরাস পোষককোষের পৃষ্ঠতলীয় আবরণ থেকে "চুরি" করে থাকে।

বংশ বিস্তার সম্পাদনা

ভাইরাসের কোনও খাদ্যগ্রহণ, শ্বসন, রেচন বা নড়াচড়া করে না, এদের কোনও বৃদ্ধি হয় না কিংবা পরিবেশের সাথে কোনও সাড়া বা সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখায় না। ভাইরাস তাই প্রজনন ছাড়া জীবদের অন্য কোনও স্বাভাবিক ধর্ম প্রদর্শন করে না; এমনকি নিজে নয়, বরং পরজীবী হয়েই ভাইরাসকে প্রজনন করতে হয়। এজন্য কিছু কিছু বিজ্ঞানী ভাইরাসকে জীব ও নির্জীব রাসায়নিক পদার্থের মাঝামাঝি কোনও কিছু হিসেবে গণ্য করেন।

ভাইরাস পোষক কোষে অনুপ্রবেশ করার পর কোষটির বিপাকীয় ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে ফেলে এবং সেই কোষের বংশগতিমূলক সরঞ্জাম অংশটি দখলে নিয়ে নেয় এবং সেটিকে ব্যবহার করে আরও ভাইরাস কণা বানাতে থাকে। এভাবে অনেক ভাইরাস কণা উৎপাদিত হবার পরে পোষক কোষটির মৃত্যু ঘটে এবং ভাইরাসগুলি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে যাতে অন্য আরও কোষকে আক্রমণ করতে পারে। এভাবে ভাইরাস মানবদেহে অনেক রোগব্যাধির সৃষ্টি করতে পারে। যেমন সর্দিকাশি বা ঠান্ডা লাগা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, কর্ণমূলপ্রদাহ (মাম্পস), জার্মান হাম (রুবেলা), ইত্যাদি। তবে ভাইরাসের প্রজনন প্রক্রিয়াটি চিরকাল চলতে থাকে না। সাধারণত মানবদেহের অনাক্রম্যতন্ত্র (প্রতিরক্ষাতন্ত্র) ভাইরাসটিকে ধ্বংস করে ফেলে এবং রোগী সেরে ওঠে। তবে কখনও কখনও অনাক্রম্যতন্ত্র ভাইরাসকে যথেষ্ট দ্রুত ধ্বংস করতে পারে না, এবং দেহের স্থায়ী ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কিছু কিছু ভাইরাস সংক্রমণে ভাইরাস অনাক্রম্যতন্ত্রের কোষগুলিকেই আক্রমণ করতে পারে। যেমন এইচআইভি ভাইরাস (মানব প্রতিরক্ষা অভাব সৃষ্টিকারী ভাইরাস) যার শেষ পরিণাম হিসেবে এইডস (অর্জিত প্রতিরক্ষা অভাবজনিত রোগলক্ষণসমষ্টি) নামক প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে।[১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ভাইরাস"onushilon.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৬