ব্রজসুন্দর মিত্র
ব্রজসুন্দর মিত্র (২৪ মার্চ ১২২৭ - ৩ সেপ্টেম্বর ১২৮২ বঙ্গাব্দ) একজন বাঙালি সমাজ সংস্কারক ও আমলা। তিনি পূর্ববঙ্গে (বাংলাদেশ) ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ও নানা জনহিতকর কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
ব্রজসুন্দর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছিল ভবানীপ্রসাদ মিত্র। ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের পাঠ সমাপ্ত করার পূর্বেই ঢাকা কমিশনার অফিসে কেরানীর পদে যোগ দিয়ে পদোন্নতি পান। ১৮৪৫ সালে ডেপুটি কালেক্টর ও ১৮৫১ তে আবগারি কালেকটরের পদ পেয়েছিলেন।[১]
সমাজ সংস্কারসম্পাদনা
১৮৪৭ সালে ব্রজসুন্দর ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ঢাকা ব্রাহ্মসমাজ গঠন তার কৃতিত্ব। তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা পাঠ করার পর ব্রাহ্মধর্ম সম্পর্কে আগ্রহ জন্মায়।[২] তরুনদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিস্তার, প্রগতিশীল কাজকর্মে উৎসাহ প্রদান করতেন তিনি। বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বিধবা বিবাহ প্রচলন হলে তিনি নিজের খরচে সেই সংবাদ ছাপিয়ে বিলি বণ্টন করতেন। নিজ বাড়িতে রামকুমার বসু, ভগবানচন্দ্র বসু (জগদীশ চন্দ্র বসুর পিতা)র সাহায্যে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ঢাকা প্রকাশ নামক সাপ্তাহিক পত্রিকা (ঢাকা শহরের প্রথম সংবাদপত্র) তার ছাপাখানা থেকেই বের হতো।[১][৩] কার্যসূত্রে তাকে কুমিল্লায় বদলি হতে হলে তিনি আরমানিটোলায় একটি বাড়ি ক্রয় করেন তার অবর্তমানে ব্রাহ্মসমাজের কাজকর্ম চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ১৮৬৩ সালে ব্রজসুন্দর, দীননাথ সেনের সহায়তায় ঢাকায় ব্রাহ্ম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। আরমানিটোলায় ব্রাহ্ম সমাজ অফিসের সামনে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর্থিক অসুবিধার কারণে স্কুলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিক্ষানুরাগী জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী। স্কুলটির নামকরণ করা হয় জগন্নাথ স্কুল। উনিশ শতকের সেই স্কুলই পরবর্তীতে জগন্নাথ কলেজ এবং বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আকারে বিস্তার লাভ করেছে।[৪] বহুবিবাহ রোধ, মদ্যপান, দুর্নীতি নিবারণ, স্ত্রী শিক্ষা বিস্তার ইত্যাদি কাজে তার বিশেষ অবদান আছে। বাংলাদেশে তরুন সমাজের মধ্যে ব্রাহ্মধর্মকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন ব্রজসুন্দর। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কাজে সন্তুষ্ট হন ও তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক তৈরী হয়। ব্রজসুন্দরের তৃতীয়া কন্যা উমাসুন্দরীর সাথে ঠাকুর জমিদারীর দেওয়ান প্রসন্ন কুমার বিশ্বাসের বিবাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। ঠাকুরবাড়ির নিয়ম মেনে ব্রাহ্মধর্ম মতে এই বিবাহ হয়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৭০।
- ↑ "তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা"। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৭।
- ↑ "ঢাকার প্রথম বাংলা পত্রিকা 'ঢাকাপ্রকাশ'"। amradhaka.com। ২৬ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৭।
- ↑ "আধুনিক ঢাকার উদ্ভব ও সংবাদপত্রের গোড়ার কথা"। ৬ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৭।