সম্পাদনা

বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু'টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে বেশ কিছুদিন ধরে - যা সহিংস রূপ নিয়েছে শনিবারের সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে । এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে আছেন তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা ভারতীয় মোহাম্মদ সাদ কান্দালভি।

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

এ বিরোধ এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে। ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলীগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে - যখন তাদের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর পর এ বছর জুলাই মাসে ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী'র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয় । এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকার মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় - দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেয়া হবে না। তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির এসব চিন্তাভাবনা নিয়ে তাবলীগ জামাতের দু'টি গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের প্রভাব গত ইজতেমাতেও পড়েছিল।[১]

কান্দালভি তাবলীগ জামাতে কিছু সংস্কারের কথা বলছেন যা এই আন্দোলনে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে। কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী, এবং আহলে সুন্নাত ওয়া'ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।[২] গত বছর মি. কান্দালভি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরোধী পক্ষের প্রতিবাদের মুখে তিনি ঢাকায় তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় কাকরাইল মসজিদ অবস্থান করে সেখান থেকেই দিল্লী ফেরত যান। তার পক্ষের অংশ ১১ই জানুয়ারি থেকে টঙ্গীতে ইজতেমার তারিখ ঠিক করেছিল। আর বিরোধী অংশ ১৮ই জানুয়ারি থেকে সময় নির্ধারণ করেছিল।[২]

কিছুদিন ধরেই তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির কিছু মন্তব্য ও তার মতবাদকে ঘিরে বিতর্ক চলছিলো। সে নিয়ে বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এমনকি ঢাকার টঙ্গীতে এবার বিশ্ব ইজতেমা করার বিষয়টিও সংকটে পড়েছে। এই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এবারের ইজতেমা আয়োজন স্থগিত করে দিয়েছে সরকার। বিভক্তি মেটাতে দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে কমিটি করা হয়। এ বছরের শুরুর দিকেও একবার তাবলীগ জামাতের একাংশের কর্মীরা ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছিল।[৩]

সংঘর্ষ সম্পাদনা

ভোর থেকেই দু পক্ষের অনুসারীরা পৃথকভাবে জড়ো হতে থাকে। টঙ্গীর ইজতেমা এলাকা ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।[৩]

মীমাংসা সম্পাদনা

আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাবলীগ জামাতের কোন্দল মেটাতে দুই পক্ষের ছয়জন প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি ভারতে গিয়ে তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে আলোচনা করে সমাধান করবে বলে মি: খান আশা প্রকাশ করেছেন। "সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই তাবলীগ জামাত দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই এই ভাগাভাগির মধ্যে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি, তাদের একসাথে করে তাবরীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা পূর্বের ন্যায় করার জন্য। সেজন্য ছয় সদস্যের একটা টিম করা হয়েছে। এরা ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় যাবে, সেখানে আলেম ওলামা এবং তাবলীগের নেতাদের সাথে আলোচনা করবে এবং বিতর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধানে আসবে। এরপর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তারা ইজতেমা করবে" - বিবিসি বাংলাকে বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে এই সময়ে ইজতেমা না করার সিদ্ধান্ত হয়। বিভক্তি মেটাতে বাংলাদেশের সরকার দুই পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবং তাবলীগ জামাতের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব ইজতেমা পিছানো হয়েছে।[২]

  1. কল্লোল, কাদির (১ ডিসেম্বর ২০১৮)। "বিশ্ব ইজতেমা: তাবলীগ জামাতে দু'গ্রুপের দ্বন্দ্বের আসল কারণটা কী?"বিবিসি বাংলা 
  2. কল্লোল, কাদির (১৬ নভেম্বর ২০১৮)। "নির্বাচন আর কান্দালভি বিতর্কে পিছিয়ে গেল বিশ্ব ইজতেমা"বিবিসি বাংলা 
  3. "বিশ্ব ইজতেমা: টঙ্গীতে তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষে সংঘর্ষ"বিবিসি বাংলা। ১ ডিসেম্বর ২০১৮।