ব্যবস্থা পরিচালনা বিজ্ঞান

ব্যবস্থা পরিচালনা বিজ্ঞান বা সাইবারনেটিক্‌স (ইংরেজি: Cybernetics) জ্ঞানের একটি আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র,[] যেখানে প্রাকৃতিক জীব বা জৈবিক ব্যবস্থা এবং মানবনির্মিত কৃত্রিম যন্ত্র, যান্ত্রিক ব্যবস্থা, ইলেকট্রনীয় ব্যবস্থা (যেমন পরিগণক যন্ত্র বা কম্পিউটার) ও যান্ত্রিক-ইলেকট্রনীয় মিশ্র ব্যবস্থা (যেমন যন্ত্রমানব বা রোবট), সামাজিক ব্যবস্থা (যেমন কোনও মনুষ্য প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন), ইত্যাদি সব ধরনের জটিল ব্যবস্থার তুলনামূলক অধ্যয়নের মাধ্যমে এ ধরনের ব্যবস্থার অভ্যন্তরে উপাদানগুলির মধ্যে কীভাবে আন্তঃক্রিয়া অর্থাৎ তথ্যের আদানপ্রদান বা যোগাযোগ সম্পাদিত হয়, এইসব তথ্য কীভাবে প্রক্রিয়াজাতসঞ্চিত হয় ও স্বয়ং-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াতে পুনর্নিবিষ্ট তথ্যের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থাটি কীভাবে নিজের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখে ও কোনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের অভিমুখে নিজেকে পরিচালিত করে, তার একটি সাধারণীকৃত গবেষণা করা হয়।[] ব্যবস্থা পরিচালনা বিজ্ঞানে জটিল ব্যবস্থাসমূহের একটি সাধারণ তত্ত্ব নির্মাণের চেষ্টা করা হয়, যেখানে এই জটিল ব্যবস্থাগুলি কী উপাদানে নির্মিত (যান্ত্রিক, ইলেকট্রনীয়, জৈব বা অন্য কিছু), তা মুখ্য নয়। এতে প্রাণী বা জীবদেহের মস্তিষ্ক (নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র) ও স্নায়ুতন্ত্র এবং কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনীয় স্বয়ংক্রিয় পুনর্নিবেশ চক্রভিত্তিক যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাদির কর্মপদ্ধতির মধ্যে তুলনা করা হয়। এই আন্তঃশাস্ত্রীয় গবেষণাতে গণিত, স্নায়ুশারীরবিজ্ঞান, যোগাযোগ তত্ত্ব, তথ্য তত্ত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বের ধারণা ও মূলনীতিগুলি প্রয়োগ করা হয়।

১৯৪০-এর দশকে মার্কিন গণিতবিদ নরবার্ট উইনার ও মেক্সিকীয় স্নায়ুশারীরবিজ্ঞানী আর্তুরো রোসেনব্লুয়েত ইংরেজিতে নতুন এই বিজ্ঞানটির নামকরণ করেন "সাইবারনেটিকস"। সাইবারনেটিক্‌স পরিভাষাটি গ্রিক "কিবেরনেতেস" (যার অর্থ "নৌকার মাঝি, কর্ণধার বা কাণ্ডারি") কথাটি থেকে এসেছে, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও পথনির্দেশনা ধারণা দুটির প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। যেসব কলাকৌশলের মাধ্যমে তথ্যকে কাঙ্ক্ষিত কাজে রূপায়িত করা যায়, সেগুলি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ব্যবস্থা পরিচালনা বিজ্ঞান বা সাইবারনেটিক্‌সের উদ্ভব হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ক্ষেত্রে ইলেকট্রনীয় মস্তিষ্ক ও স্বয়ংনিয়ন্ত্রিত যন্ত্র নিয়ে গবেষণা এই শাস্ত্রের জন্ম দেয়।

সামাজিক বিজ্ঞানগুলিতেও ব্যবস্থা পরিচালনা বিজ্ঞানে প্রয়োগ রয়েছে। এক্ষেত্রে জীবিত ও যান্ত্রিক সত্তার সমন্বয়ে গঠিত ও পুনর্নিবেশ চক্রবিশিষ্ট ব্যবস্থাদির অভ্যন্তরে উপাদানগুলির মধ্যবর্তী আন্তঃক্রিয়াসমূহ অধ্যয়ন করা হয়। একটি বিশেষ আগ্রহের বিষয় হল কীভাবে মানবসমাজ ব্যবস্থাসমূহের যান্ত্রিকীকরণ ও স্বয়ংক্রিয়করণের সাথে আন্তঃক্রিয়া সম্পাদন করে, তার অধ্যয়ন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Müller, Albert (২০০০)। "A Brief History of the BCL"Österreichische Zeitschrift für Geschichtswissenschaften11 (1): 9–30। ২২ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৮ 
  2. Wiener, Norbert (১৯৪৮)। Cybernetics: Or Control and Communication in the Animal and the Machine। Cambridge, Massachusetts: MIT Press। 

পরিভাষা

সম্পাদনা
  • অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা - homeostasis
  • আন্তঃক্রিয়া - interaction
  • আন্তঃশাস্ত্রীয় ক্ষেত্র - interdisciplinary field
  • ইলেকট্রনীয় ব্যবস্থা - electronic system
  • জটিল ব্যবস্থা - complex system
  • তুলনামূলক অধ্যয়ন - comparative study
  • নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা - control system
  • পুনর্নিবেশ - feedback
  • পুনর্নিবেশ চক্র - feedback loop
  • ব্যবস্থা পরিচালনা বিজ্ঞান - Cybernetics
  • যন্ত্র - machine
  • যন্ত্রমানব - robot
  • যান্ত্রিক ব্যবস্থা -mechanical system
  • যান্ত্রিকীকরণ - mechanization
  • সাধারণীকৃত গবেষণা - generalized study
  • স্বয়ংক্রিয়করণ - automation
  • স্বয়ং-নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া - self-control process, self-regulation process