বড়োল্যান্ড সহিংসতা, ২০১৪
ভারতের উত্তর পূর্বে অবস্থিত আসাম রাজ্যের বোরোল্যান্ড প্রশাসনিক বিভাগে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১লা মে মধ্যরাত থেকে ৩রা মে অবধি বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিকভাবে হামলা ও হত্যাকাণ্ড চলতে থাকে৷ নির্দিষ্টভাবে হামলাকারীর আন্দাজ না করতে পারলেও ইংতি কথর সংবিজিতের নেতৃৃত্বে রাষ্ট্রীয় বোরোল্যান্ড গণতান্ত্রিক মোর্চা সংগঠনটিকে সন্দেহ করা হয়৷[২][৫] ২০১৪ আসাম নির্বাচনে রা.বো.গ.মো. কে নির্বাচিত না করা ছিলো এই হামলার মুল কারণ৷[৬]
২০১৪ বোরোল্যান্ড গণহত্যাকাণ্ড | |
---|---|
স্থান | বোরোল্যান্ড, আসাম ভারত |
তারিখ | ১৭ই থেকে ১৯শে বৈশাখ ১৪২১ বঙ্গাব্দ (১লা থেকে ৩রা মে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ) |
লক্ষ্য | বাঙালি মুসলমান |
ব্যবহৃত অস্ত্র | এ কে ৪৭[১] |
নিহত | ৩৩ জন নিরীহ ও ৩ জন হামলাকারী[২] |
সন্দেহভাজন হামলাকারী দল | রাষ্ট্রীয় বোরোল্যান্ড গণতান্ত্রিক মোর্চা[৩] |
কারণ | বোরো সদস্যদের নির্বাচিত না করার প্রতিঘাত[৪] |
পটভূমি
সম্পাদনাবোরো জনগোষ্ঠী হলো আসাম রাজ্যের আদিবাসী ও দেশজ জনজাতির মধ্যে একটি৷ আসামের ৩ কোটি জনসংখ্যার ৫ শতাংশ লোক এই জনজাতিভুক্ত৷ সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতই বিভিন্ন ছোটো বড়ো দেশজ বা বহিরাগত জনগোষ্ঠীর বিচরণক্ষেত্র৷ ২০১৪ সালে মে মাসের পরাস্থিতি কিছুটা এরকম ছিলো যে, ১২ই মে লোকসভা ভোটের শেষ পর্বের নির্বাচন ও তার ফলাফল প্রকাশ পাবে ১৬ই মে তারিখে৷[৭]
আক্রমণের ছক
সম্পাদনাপ্রথম পর্বে, ১লা মে ভারতীয় প্রমাণ সময় আনুমানিক রাত ৭:৩০ নাগাদ আসামের বাক্সা জেলার নরসিংহবাড়ি গ্রামে প্রথম বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করা হয় ও ৩ জন মহিলার মৃৃত্যুসহ আরো দুজন আহত হন৷ সূত্র অনুযায়ী হামলাকারীরা সাইকেল আরোহী ছিলেন৷
দ্বিতীয় পর্বে, পরের দিন ২রা মে তারিখে অপর একটি হামলাকারী দল কোকড়াঝাড় জেলার বালাপাড়া গ্রামে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়, ফলস্বরূপ ৭ জন প্রাণ হারান৷
তৃতীয় পর্বে, ঐ একই দিনের সন্ধ্যাবেলায় অন্য আরেকটি হামলাকারী দল বাক্সা জেলার মানস জাতীয় উদ্যানের নিকট ৩০ টি ঝুপড়িতে আগুন ধরায় ফলে ১২ জন মৃৃত্যুবরণ করেন৷[৪]
৩রা মে তেজপুর জঙ্গলের নিকট চারজন সন্দেহভাজন পুলিশের ওপর আক্রমণ করে৷ তৎক্ষণাৎ পুলিশের গুলিতে দুজন আহত হলেও বাকী দুজন পালিয়ে যায়৷ পরে ওদালগুরি জেলাতে পুলিশ আরো এক সন্দেহভাজনকে গুলি করে ও গ্রেনেড সহ বন্দুক উদ্ধারে সফল হয়৷[৭]
তদন্ত
সম্পাদনাপুলিশ প্রশাসন ৮ জন বনদপ্তররক্ষী সহ আরো ২২ জন সন্দেহভাজনকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে ও তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার করে৷[৭] আসাম সরকার তাদের রাষ্ট্রীয় তত্ত্বানুসন্ধান সংস্থা (এন.আই.এ) এর হাতে তাদের তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷[৮]
ঘটনা-পরবর্তী
সম্পাদনানিরাপত্তা বিষয়ক
সম্পাদনাহামলার নৃৃসংশতার কারণে কোকড়াঝাড় জেলার ডুরামারি ও দোতোমা অঞ্চলগুলি থেকে বহু মুসলিম তাদের ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ বোরোল্যান্ড ক্ষেত্রীয় পরিষদের প্রধান হাগ্রামা মোহিলারি ঐসকল মানুষকে আশ্বস্ত করেন ও তাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেন৷[৪] চিরাং জেলাতে ধরপাকর শুরু হয় ও কোকড়াঝাড় ও বাক্সা জেলাতে সন্দেহভাজন ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়৷[২]
কোকড়াঝাড় জেলা ও বাক্সা জেলাতে সেনা জওয়ানরা টহল দিতে থাকে৷ দশজন অতিরাক্ত সি.আর.পি.এফ. দুটি জেলাতে মোতায়েন করা হয়৷[৪] কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে ১৫ স্তম্ভের ১৫০০ জন সেনা নিয়োগ করা হয়৷[৯]
প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাতৎকালীন আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সম্পূর্ণ ব্যাবস্থাপনা করেন ও শীর্ষ আধিকারাকদের সাথে বৈঠক করেন৷ বিরোধী দলগুলি তরুন গগৈ সরকারকে দুর্নীতি নিবারণে ব্যার্থ বলে দোষারোপ করে৷[২] তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এই হত্যাকান্ডকে দেশদ্রোহীতা ও ভীরুতার বলে অভিহিত করেন৷[১০]
এন.ডি.এফ.বি. এর প্রকাশিত বক্তব্যে তারা এই আক্রমণের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহ নাকচ করে ও এটিকে বোরো জনগোষ্ঠীর সাথে বাঙালি মুসলমানদের বিরোধ সৃৃষ্টির জন্য আসাম সরকারের একটি ধূর্ত প্রয়াস বলে উল্লেখ করেন৷[৩][১১] মৃৃতদের পরিবার তাদের অন্যান্য সদস্যদের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করে আসাম সরকার সেই দাবি পুরণের প্রতিশ্রুতি দেয়৷[১২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Twenty-two Muslims killed in sectarian attacks in Assam"। Reuters। ২ মে ২০১৪। ১৫ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "30 killed in 36 hours by Bodo militants in Assam, curfew imposed"। Indian Express। ৩ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৪।
- ↑ ক খ "NDFB denies involvement in violence"। Business Standard। ৩ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "Rebels kill 23 in Assam for not voting for Bodos"। Times of India। ৩ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৪।
- ↑ "Assam live: 30, including children, killed in fresh attacks"। Firstpost। ৩ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৪।
- ↑ "Death toll up to 32 in Assam"। DNA। ৩ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৪।
- ↑ ক খ গ "Police kill 3 Assam sectarian violence suspects, arrest 8 forest guards"। Hindustan Times। ৪ মে ২০১৪। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯।
- ↑ "Assam Riots 2014: Assam Government hands over Case to NIA"। IANS। news.biharprabha.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৪।
- ↑ "Assam violence act of certain group cadres: Sushilkumar Shinde"। IANS। news.biharprabha.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৪।
- ↑ "Prime Minister condemns Assam attacks as toll rises to 28"। IANS। news.biharprabha.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৪।
- ↑ "NDFB denies involvement in violence"। DNA। ৪ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৪।
- ↑ "Locals in violence-hit Assam refuse to bury dead till Tarun Gogoi visits them"। DNA। ৪ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ মে ২০১৪।