বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড

ইংরেজ জলদস্যু

ক্যাপ্টেন বেঞ্জামিন হর্নিগোল্ড (মৃত্যু: ১৭১৯) ছিলেন ১৮-শতাব্দীর একজন ইংরেজ জলদস্যু। তিনি জলদস্যু পেশায় ১৭১৫ থেকে ১৭১৮ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এরপর তিনি জলদস্যুতা পেশা ছেড়ে বাহামাস কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রাইভেটিয়ার হিসেবে যোগ দেন এবং তার সাবেক সঙ্গীদের ধরার জন্য জীবন অতিবাহিত করেন। ১৭১৯ সালে তাকে বহনকারী জাহাজটি ঝড়ের কবলে পড়ে ধংস্ব হয়ে গেলে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

প্রারম্ভিক কর্মজীবন

সম্পাদনা

হর্নিগোল্ডের প্রারম্ভিক জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না, তবে খুব সম্ভবত তিনি ইংল্যান্ডের নরফোকে জন্মগ্রহণ করেন এবং যদি তাই হয় তাহলে তিনি সম্ভবত প্রথম সমুদ্রে যাত্রা করেন যার হোম পোর্ট ছিল কিংস’স লেন বা গ্রেট আর্মাউথ।[] তার প্রথম জলদস্যুতা সম্পর্কে নথি পত্রে ১৭১৩-১৭১৪ এর শীতকালের কথা উল্লেখ রয়েছে। তখন তিনি নিউ প্রোভিডেন্স ও এর রাজধানী নাসাউএ বণিক জাহাজে নিয়োগ পেয়েছিলেন।[] ১৭১৭ সালের দিকে হর্নিগোল্ড একটি স্লোপ (ছোট জাহাজ) সংগ্রহ করেন ও ৩০ জন বন্দুকধারীর একটি দল গঠন করে এর নেতৃত্ব দেন। তিনি তার স্লোপের নাম নির্ধারন করেন রেঞ্জার[]

সেসময় হর্নিগোল্ডের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ছিলেন আরেক কুখ্যাত জলদস্যু এডওয়ার্ড টীচ, যিনি পরবর্তীতে ব্ল্যাকবিয়ার্ড নামে পরিচিতি পান।[] যখন হর্নিগোল্ড রেঞ্জারের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তখন তিনি তার পুরোনো স্লোপের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব ব্ল্যাকবিয়ার্ডের কাছে হস্তান্তর করেন। ১৭১৭ সালের বসন্তে এই দুই জলদস্যু মিলে তিনটি বাণিজ্য জাহাজ আটক করেন যার মধ্যে একটি ১২০ ব্যারেল ময়দার বস্তা নিয়ে হাভানার দিকে যাচ্ছিল, আরএকটি বার্মোডার স্লোপ ছিল যাতে স্পিরিঠের কার্গো ছিল এবং শেষটি ছিল একটি পর্তুগীজ জাহাজ যা মাদিরা থেকে সাদা ওয়াইনের কার্গো নিয়ে যাত্রা করেছিল।[]

১৭১৭ সালের মার্চে হর্নিগোল্ড দক্ষিণ ক্যারোলিনার সরকার কর্তৃক জলদস্যু নিধনের জন্য বাহামাস প্রেরিত একটি সশস্ত্র বণিক জাহাজ আক্রমণ করেন। বণিকেরা সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং এর ক্যাপ্টেন পরবর্তীকালে বলেন, হর্নিগোল্ড তার বহরে ৫টি ভেসেল যুক্ত করেছে এবং তার দলে প্রায় ৩৫০ জন জলদস্যু রয়েছে।[] হর্নিগোল্ড হন্ডোরাসের উপকূলে একটি জাহাজ দখল করেন কিন্তু জাহাজের যাত্রীরা পরবর্তীতে বলেছিলেন, জলদস্যুরা তাদের টুপি নিয়েছিল এছাড়া তাদের আর কোন নির্যাতন করে নি।[]

অবসর ও ক্ষমা

সম্পাদনা

হর্নিগোল্ড তার জলদস্যু জীবনে ব্রিশি পতাকা সংবলিত জাহাজে আক্রমণের ব্যাপারে সতর্ক ছিলেন, এরকমও কথা প্রচলিত রয়েছে যে, তিনি স্প্যানিশ ও ব্রিটিশ যুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডের শত্রু জাহাজের বিরুদ্ধে প্রাইভেটারিং এর কাজ করতেন।[] কিন্তু তার এই ব্রিটিশপ্রীতি তার অনুসারীদের পছন্দ ছিল না এবং ১৭১৭ সালে তার অনুসারীদের মধ্যে একটি ভোটগ্রহণ হয় ও তাতে সিদ্ধান্ত হয় যে কোন জাহাজ আক্রমণের। হর্নিগোল্ড এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন এবং ক্যাপ্টেনের পদ থেকে অপসারিত হন।[]

হর্নিগোল্ডের অপর জাহাজের কমান্ডার হিসেবে দ্বায়িত্বে থাকা এডওয়ার্ড টীচ সম্ভবত এই বিদ্রোহের খবর জানত না যতক্ষণ পর্যন্ত না দুটি জাহাজ এক বছরের মধ্যে মিলিত হয়। এরপর দুজন জলদস্যুর দুটি ভিন্ পথে যাত্রা করেন। ব্ল্যাকবিয়ার্ড পুনরায় ক্যারিবীয় অঞ্চলের দিকে যাত্রা করেন ও হর্নিগোল্ড একটি স্লোপ ও কিছু ক্রু নিয়ে নিউ প্রোভিডেন্সে রয়ে যান। ডিসেম্বর ১৭১৭ সালে রাজা কর্তৃক জলদস্যুদের ক্ষমা করে দেওয়ার খবর পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত হর্নিগোল্ড নাসাউ-এর আশেপাশে জলদস্যুতা অব্যহত রাখেন। ক্ষমা করার খবর পৌঁছার পর তিনি ১৭১৮ সালের জানুয়ারিতে (পদটীকা: তখনো ইংরেজরা গ্রেগোরিয়ান পঞ্জিকা গ্রহণ করেনি, সুতরাং তাদের মতে এটি ছিল জানুয়ারি, ১৭১৭। নতুন বছর শুরু হত মার্চের দিকে।) জ্যামাইকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং সেখানকার গভর্নরের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমা পান। পরবর্তীতে সে বাহামাস সরকারের পক্সে জলদস্যু শিকারীতে পরিনত হন।[]

জলদস্যু শিকারী

সম্পাদনা

বাহামাসের গভর্নর উডস রজার হর্নিগোল্ডের ক্ষমরা আবেদন গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু তাকে প্রাইভেটিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেন। শর্ত ছিল, টীচসহ তার পুরোনো সঙ্গীদের আটক করে সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে। তিনি পরবর্তী ১৮ মাস স্টিডি বোনেটজ্যাক রেকহাম-এর খুঁজে বাহামাস চষে বেড়ান। ১৭১৮ সালে গভর্নর রজারস বাণিজ্য বোর্ডের কাছে লিখা এক পত্রে হর্নিগোল্ডকে তার পুরোনো সঙ্গীদের ধরিয়ে দিতে সাহায্য করার জন্য জলদস্যুর তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে বলেন।[১০]

মৃত্যু

সম্পাদনা

১৭১৯ সালের শেষের দিকে হর্নিগোল্ডের জাহাজ নিউ প্রোভিডেন্স ও মেক্সিকোর মাঝামাঝি কোন এক জায়গায় হারিকেনের কবলে পরে এবং তাদের জাহাজ একটি শৈলশ্রেণীর আঘাতে ধংস্ব হয়ে যায়। ক্যাপ্টেন চার্লস জনসন লিখিত অ্য জেনারেল হিস্টোরি অফ দ্য পাইরেটস গ্রন্থে বর্নিত আছে, আরেকজন বিখ্যাত জলদস্যু ক্যাপ্টেন হর্নিগোল্ড তার এই যাত্রায় একটি শৈলশ্রেণীর আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু তার পাঁচজন লোক জীবীত ফিরে এসেছিল।[১১] শৈলশ্রেণীর নির্দিষ্ট অবস্থান এখনো জানা যায়নি।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
সাধারণ
নির্দিষ্ট
  1. Konstam, Blackbeard:America's Most Notorious Pirate, p. 62
  2. Woodard, Colin (২০০৭)। The Republic of Pirates। Harcourt, Inc। পৃষ্ঠা 88–89। আইএসবিএন 978-0-15-603462-3। ৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৩ 
  3. Konstam, Blackbeard:America's Most Notorious Pirate, p. 63
  4. Letter from Cpt Mathew Musson to the Council of Trade and Plantations, July 5, 1717, cited in Konstam, Blackbeard: America's Most Notorious Pirate, p. 64
  5. Konstam, Blackbeard: America's Most Notorious Pirate, p. 64
  6. Earle, The Pirate Wars, p. 179
  7. Konstam, Blackbeard: America's Most Notorious Pirate, p. 66
  8. Konstam, Blackbeard: America's Most Notorious Pirate, p. 67
  9. Woodard, Colin (২০০৭)। The Republic of Pirates। Harcourt, Inc। পৃষ্ঠা 231–6, 284–86। আইএসবিএন 978-0-15-603462-3। ৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৩ 
  10. Konstam, Blackbeard: America's Most Notorious Pirate, p. 228
  11. Charles Johnson (1724), A General History of the Robberies and Murders of the Most Notorious Pyrates ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুলাই ২০০৯ তারিখে, a copy on the website of Eastern North Carolina Digital Library ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে, cited in Konstam, Blackbeard: America's Most Notorious Pirate, p. 231

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা