বুধের প্রকল্পিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ

বুধের প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল বুধ গ্রহকে প্রদক্ষিণকারী একটি প্রকল্পিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ, যা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে অল্পকালের জন্য মনে করা হয়েছিল বুধের একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায় সেটি প্রকৃতপক্ষে ৩২ ক্রেটারিস নামে একটি তারা; তথ্যের ভুল ব্যাখ্যার কারণে সেটিকে বুধের উপগ্রহ মনে করা হয়েছিল।[১] বুধের কোনও উপগ্রহ থাকলে পৃথিবী থেকে সেটিকে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। কারণ, বুধ সূর্যের অপেক্ষাকৃত নিকটে অবস্থিত।[২] উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৯৫ সালের আগে অবলোহিত বর্ণালিতে বুধকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।[২] নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বুধকে প্রদক্ষিণ করেছে। এই মহাকাশযান বুধের কোনও উপগ্রহ শনাক্ত করেনি।[৩][৪] বুধের ক্ষুদ্র হিল গোলক এই গ্রহের কোনও প্রাকৃতিক উপগ্রহের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।[৫]

মেরিনার ১০ অভিযান সম্পাদনা

খুবই অল্প সময়ের জন্য বুধের একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ২৭ মার্চ, মেরিনার ১০-এর বুধ ফ্লাইবাই শুরু হওয়ার দুই দিন আগে, যন্ত্রপাতিতে বুধের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অতিবেগুনি বিকিরণ ধরা পড়ে থাকে। একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর কথায় “[এই বিকিরণের] সেখানে থাকার কথাই নয়।” [১] পরের দিনই বিকিরণটি অদৃশ্য হয়ে যায়; কিন্তু তিন দিন পরে আবার পুনরাবির্ভূত হয়। আপাত দৃষ্টিতে এটির উৎস ছিল বুধ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি বস্তু।[১] কোনও কোনও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এটিকে একটি তারা মনে করেন। কিন্তু অন্যান্যরা বলেন যে এটি নিশ্চয়ই একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ। তাঁরা বলেন যে, বিকিরণের উৎস কেবলমাত্র দু’টি ভিন্ন দিকেই ছিল তাই নয়, সেই সঙ্গে তাঁরা এও বিশ্বাস করতেন যে এত পরিমাণে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিকিরণ অত্যন্ত দূরবর্তী আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম ভেদ করে আসতে পারে না।[১] বস্তুটির গতি ৪ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড (২.৫ mi/s) বলে গণনা করা হলে এটি যে একটি উপগ্রহ সে বিষয়ে মত দৃঢ় হয়। কারণ এই গতি ছিল একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহের প্রত্যাশিত গতি।[১]

৩১ ক্রেটারিস সম্পাদনা

 
৩১ ক্রেটারিস সম্ভবত একটি গ্রস্থ যুগ্ম তারা।[৬]

১৯৭৪ সালে একটি “প্রাকৃতিক উপগ্রহ”কে বুধ থেকে দূরে সরে যেতে দেখা যায়। পরে এটি চিহ্নিত হয় বুধের প্রেক্ষাপটে অবস্থিত ৩২ ক্রেটারিস নামে তারা হিসেবে। ৩১ ক্রেটারিস হল একটি বর্ণালিগত যুগ্ম তারা, যার পর্যায়কাল ২.৯ দিন। ১৯৭৪ সালে বুধের কাছে যে অতিবেগুনি বিকিরণের উৎসটি শনাক্ত করা হয়েছিল, সেটির উৎস সম্ভবত এই তারাটিই।[৬] ১৯৭৪ সালে ‘বুধের প্রাকৃতিক উপগ্রহ’-সংক্রান্ত ভ্রান্ত চিহ্নিতকরণটি থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের সূচনা ঘটে: আগে মনে করা হয় যে অতিবেগুনি বিকিরণকে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যম সম্পূর্ণত শোষণ করে নেয়, কিন্তু এই আবিষ্কারের ফলে সেই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়।

মেসেঞ্জার অভিযান সম্পাদনা

২০১২ সালে একটি এপ্রিল ফুল রসিকতায় নাসা ঘোষণা করে যে, মেসেঞ্জার মহাকাশযানটি সম্ভবত বুধকে প্রদক্ষিণকারী একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ আবিষ্কার করেছে। নাসা রসিকতা করেই উপগ্রহটির নামকরণ করে “ক্যাডুসিয়াস” (রোমান দেবতা মারকিউরির হাতের দণ্ড ক্যাডুসিয়াসের নামানুসারে)।[৭] মেসেঞ্জার অভিযানের সময় ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মহাকাশযানটি বুধের প্রাকৃতিক উপগ্রহের অনুসন্ধান চালায় এবং তারপর নিশ্চিতভাবে জানায় যে বুধের কোনও প্রাকৃতিক উপগ্রহ নেই।[৮]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mercury's Moon. "Hypothetical Planets". Paul Schlyter. 2009.
  2. Malcolm W. Browne - An Airborne Telescope Risks a Look At Mercury (1995) - The New York Times
  3. "MESSENGER Provides New Look at Mercury's Landscape, Metallic Core, and Polar Shadows" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Johns Hopkins University। মার্চ ২১, ২০১২। মে ১৩, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২২ 
  4. A lot of moons or no moons at all? NASA. 5 November 2015.
  5. "Q & A: Why doesn't Mercury have any moons?"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-০৮ 
  6. Stratford, R.L. (অক্টোবর ১৯৮০)। "31 Crateris reexamined"। The Observatory100: 168। বিবকোড:1980Obs...100..168S  (HD 104337 near 11 58 17.515 -19 22 50.18)
  7. NASA - Featured Image ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ আগস্ট ২০২০ তারিখে (Note inset seems to show 243 Ida)
  8. MESSENGER to Capture Images of Earth and Moon During Search for Satellites of Mercury (2013) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০৭-২৫ তারিখে