বীরেন্দ্রনাথ সরকার (চলচ্চিত্র প্রযোজক)

ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক

বীরেন্দ্রনাথ সরকার (৫ জুলাই ১৯০১- ২৮ নভেম্বর ১৯৮০) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং কলকাতার নিউ থিয়েটার্সের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অনেক নতুন চলচ্চিত্র পরিচালককে সুযোগ দেন এবং তাঁদের মধ্যে অনেকই পরবর্তীকালে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন চলচ্চিত্র জগতে তার অবদানের জন্য ভারত সরকার ১৯৭০ সালে বীরেন্দ্রনাথ সরকারকে "দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার"[১] এবং ১৯৭২ সালে 'পদ্মভূষণ', ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার দিয়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছিল।[২][৩]

বি এন সরকার (বীরেন্দ্রনাথ সরকার)
জন্ম৫ জুলাই ১৯০১
মৃত্যু২৮ নভেম্বর ১৯৮০(১৯৮০-১১-২৮)
কলকাতা, ভারত
পেশাচলচ্চিত্র প্রযোজক

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ভাগলপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বি.এন.সরকার। তার পিতা ছিলেন তৎকালীন বাংলার অ্যাডভোকেট-জেনারেল, স্যার এন.এন.সরকার। কলকাতার হিন্দু স্কুলে পড়াশোনা শেষ করার পর, তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এবং ভারতে ফিরে আসার পর তাঁকে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে বলা হয়েছিল। এই প্রকল্পে কাজ করার ফলে তার চলচ্চিত্রের প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হয়েছিল এবং তিনি বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রের চিত্র প্রদর্শনের জন্য একটি চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করতে এগিয়ে এসেছিলেন। ১৯৩০ সালের ৩০ ডিসেম্বর, 'চিত্রা' নামক চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহটি কলকাতায়, সুভাষচন্দ্র বসুর হাত ধরে খোলা হয়েছিল এবং এরপরে হিন্দি চলচ্চিত্র চিত্র প্রদর্শনের জন্য নিউ সিনেমা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল।[৪] এরপর, বীরেন্দ্রনাথ সরকার দুটি নির্বাক চলচ্চিত্র তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পেশা সম্পাদনা

১৯৩১ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি, [উদ্ধৃতি প্রয়োজন] কলকাতায়, বি.এন.সরকার প্রতিষ্ঠা করেন নিউ থিয়েটার্স। তিনি তখনকার দিনের বিখ্যাত সব ব্যক্তিকে নিউ থিয়েটার্সে নিয়ে আসেন, যেমন পরিচালক প্রমথেশ চন্দ্র বরুয়া, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, দেবকী বোস, ধীরেন গাঙ্গুলি, বিমল রায় এবং ফনি মজুমদার। কে এল সায়গাল, পাহাড়ি সান্যাল, অমর মল্লিক, কানন দেবী, চন্দ্রাবতী দেবী, লীলা দেসাই এবং পৃথ্বীরাজ কাপুরের মতো অভিনেতারাও ছিলেন। হলিউড এবং ইউরোপে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন সম্পর্কে ভালভাবে অবগত, মুকুল বোস (সাউন্ড রেকর্ডিস্ট-ডিরেক্টর), ইউসুফ মুলজি (ক্যামেরাম্যান), নিতিন বোস (ক্যামেরাম্যান-ডিরেক্টর) এবং সুবোধ মিত্র (সম্পাদক) এর মতো প্রযুক্তিবিদরাও ছিলেন এবং তারা নিউ থিয়েটার স্টুডিও তে সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু প্রযুক্তি চালু করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। রাইচাঁদ বড়াল, তিমির বরন এবং পঙ্কজ মল্লিকের মতো সংগীত সুরকার ও গায়করাও নতুন থিয়েটারের প্রযোজনার সাথে যুক্ত ছিলেন।[৫] তিনি নিজে ১৯৪০ এর দশকের শেষদিকে বিএমপিএ-র সভাপতি ছিলেন।[৬]

নিউ থিয়েটার্স সম্পাদনা

নিউ থিয়েটারস কলকাতায় অবস্থিত একটি ভারতীয় চলচ্চিত্র স্টুডিও।[৭] ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ সালে, দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত প্রযোজক বীরেন্দ্রনাথ সরকার দ্বারা এই স্টুডিওটি কলকাতায় স্থাপিত হয়। এই সংস্থার মূলমন্ত্র ছিল "জীবতং জ্যোতিরেতু ছায়াম"। প্রেমাঙ্কুর আতর্থী দ্বারা নির্দেশিত দেনা পাওনা নামক বাংলা চলচ্চিত্রটি বাংলার প্রথম দীর্ঘ সবাক চলচ্চিত্র যা ১৯৩১ সালে নিউ থিয়েটার্স দ্বারা প্রযোজিত হয়েছিল। এই ছবির জন্য সংগীত পরিচালনা করেছিলেন বিখ্যাত সংগীতকার রাইচাঁদ বড়াল। কিরণময় রাহার কথা অনুযায়ী, "দেবকী বসুর নির্দেশনায় মুক্তিপ্রাপ্ত চণ্ডীদাস ছবির ফলে নিউ থিয়েটার্স প্রসিদ্ধি লাভ করে।[৮]:12–13 এর আগে এই স্টুডিও থেকে পাঁচটি সবাক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দেবদাস উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ১৯৩৫ সালে প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া অভিনীত ও তারই নির্দেশনায় দেবদাস ছবিটি নির্মিত হয়। এই ছবিটি অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

১৯৩৫ সালে, নীতীন বসু দ্বারা নির্মিত ভাগ্য চক্র নামক বাংলা ছায়াছবিতে ভারতে সর্বপ্রথম নেপথ্য গানের ব্যবহার করা হয়। কৃষ্ণচন্দ্র দে, পারুল ঘোষ ও সুপ্রভা সরকার এই ছবিতে গান করেন।[৯] এই ছবিটি ধুপ ছাঁও নামে হিন্দি ভাষায় পুনঃনির্মিত হয় এবং এটিই নেপথ্য গানসহ প্রথম হিন্দি ছায়াছবি।[১০] নিউ থিয়েটার্স প্রযোজিত ছবিগুলিতে, তারকা অভিনেত্রীদের মধ্যে প্রথম কানন দেবী বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। কুন্দন লাল সায়গল, কৃষ্ণচন্দ্র দে, পৃথ্বীরাজ কাপুর, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ী সান্যাল, বসন্ত চৌধুরীর মতন বেশ অনেকজন স্বনামধন্য অভিনেতারাও নিউ থিয়েটার্সের সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, প্রমথেশ বড়ুয়া, দেবকী বসু ও নীতীন বসু ইত্যাদি প্রসিদ্ধ চলচ্চিত্র নির্দেশক নিউ থিয়েটার্সের ছবিতে কাজ করেছেন। রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজ মল্লিকতিমির বরণের মতন উল্লেখযোগ্য সংগীতশিল্পীরাও এই স্টুডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "18th National Film Awards" (PDF)Directorate of Film Festivals। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  2. B.N. Sircar
  3. "Padma Awards Directory (1954–2013)" (পিডিএফ)Ministry of Home Affairs। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Gulzar; Nihalani, Govind; Chatterjee, Saibal, সম্পাদকগণ (২০০৩)। Encyclopaedia of Hindi Cinema। Popular Prakashan। পৃষ্ঠা 632। আইএসবিএন 978-81-7991-066-5 
  5. "B.N.Sircar Upperstall Profile"। ১ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১৯ 
  6. Bagiswar Jha : B.N. Sircar : A monograph; Seagull Books, Calcutta (1990)
  7. http://calcuttatube.com/the-new-theatres-is-back-with-adur-prem-46847/46847/
  8. Raha, Kironmoy (1991).
  9. "Bhagya Chakra (1935)". www.imdb.com.
  10. "Bhagya Chakra (1935)"। www.imdb.com। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৩