বীরেন্দ্রনাথ সরকার

বাঙালী বিপ্লবী ও মুক্তিযোদ্ধা

বীরেন্দ্রনাথ সরকার (? — ৩ এপ্রিল, ১৯৭১) একজন বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ।

বীরেন্দ্রনাথ সরকার
মুক্তিযোদ্ধা বীরেন্দ্রনাথ সরকার.jpg
বীরেন্দ্রনাথ সরকার ভারতীয় ডাকটিকিটে
জন্ম?
রাজসাহী জেলা, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৩ এপ্রিল, ১৯৭১
আন্দোলনব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন

প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

বীরেন্দ্রনাথ সরকারের জন্ম রাজশাহী জেলার বাগমারা এলাকায়। রাজশাহী বিবি হিন্দু একাডেমি থেকে প্রবেশিকা পাশ করেন ১৯৩২ সালে। রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে আই.এ, ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ পাস করেন। ছাত্রাবস্থাতেই বিপ্লবী রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়।[১]

স্বাধীনতা আন্দোলনসম্পাদনা

প্রথমে তিনি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য ছিলেন। যাঁদের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেছেন, তাদের মধ্যে মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তীর নাম উল্লেখযোগ্য। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার অপরাধে, ১৯৩৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে বন্দী করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে বন্দী হয়েছিলেন। মুক্তি পান ১৯৪৫ সালে। আজাদ আজাদ হিন্দ ফৌজের আন্দোলনে ছাত্র-যুবদের মধ্যে নেতৃত্ব দেন তিনি।[২]

নাচোল বিদ্রোহসম্পাদনা

জেলে থাকাকালীন আইন পড়েছিলেন তিনি। নাচোল বিদ্রোহে সংগ্রামী নারী ইলা মিত্রর মামলায় বীরেন্দ্রনাথ সরকার কনিষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তার পক্ষে লড়েন কারণ সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে তার পক্ষে মামলা করার জন্য প্রথম দিকে প্রবীন আইনজীবীরা কেউই এগিয়ে আসেননি। এই বিখ্যাত মামলায় সরকারপক্ষের বাঘা বাঘা আইনজীবীর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন আদালতে। এছাড়াও গরীব কৃষক আন্দীলনকারী, অসহায় মানুষদের হয়ে স্বতপ্রবৃত্ত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে মামলা করতেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় আইনজীবী বীরেন্দ্রনাথ সরকার। রাজসাহী প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি।[১]

ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধেসম্পাদনা

তার জীবনের বিরাট অংশই কেটেছে বিভিন্ন জেলে বা অন্তরীন অবস্থায়। পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পরেও কারাবন্দী ছিলেন এই আজীবন বিপ্লবী। কমিউনিস্ট কর্মী আতাউর রহমান ও তার নেতৃত্বে ১৯৪৮ সাল থেকেই রাজশাহীতে বাংলা ভাষার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।[৩] বাংলাদেশ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধর সমর্থনে সমাবেশ ও মিছিলে বীরেন্দ্রনাথ সরকার ছিলেন বিশেষ ভূমিকায়। ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করে যাননি। তার গভীর বিশ্বাস ছিল, ‘অজাতশত্রু মানুষ আমি, কেউ আমাকে হত্যা করবে না।’ শুভানুধ্যায়ীরা তাকে বহুবার দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে অনুরোধ করলেও সাহসী বীরেন্দ্রনাথ পরোয়া করেননি।

মৃত্যুসম্পাদনা

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩ এপ্রিল রাজশাহী শহরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল রাতে বীরেন্দ্রনাথের বাড়ি ঘেরাও করে। ঘাতকবাহিনী ঘুমন্ত অবস্থায় এই মহান বিপ্লবীকে গুলি করে হত্যা করে।[১][২]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "বীরেন্দ্রনাথ সরকার"। প্রথম আলো। ৭ জানুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৯.০১.২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৬৩। 
  3. সৌরভ হাবিব (২০.০২.২০১৬)। "রাজসাহীতেই হয়েছিল প্রথম শহীদ মিনার"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ১৯.০১.২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]