বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র

ভারতীয় সম্প্রচারকারী, নাট্যকার, অভিনেতা, অধ্যয়নকারী এবং থিয়েটার পরিচালক

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (৪ অগস্ট, ১৯০৫ - ৩ নভেম্বর, ১৯৯১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা ও নাট্য পরিচালক। তিনি কলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। পঙ্কজকুমার মল্লিককাজী নজরুল ইসলামের সমসাময়িক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯৩০-এর দশক থেকে সুদীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিওয় বেতার সম্প্রচারকের কাজ করেছেন। এই সময় তিনি একাধিক নাটক রচনা ও প্রযোজনাও করেন।[১][২]

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
জন্ম(১৯০৫-০৮-০৪)৪ আগস্ট ১৯০৫
আহিরীটোলা, কলকাতা
মৃত্যু৩ নভেম্বর ১৯৯১(1991-11-03) (বয়স ৮৬)
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামবিরুপাক্ষ (ছদ্মনাম)
পেশাবেতার সম্প্রচারক, নাট্যকার, অভিনেতা, নাট্য পরিচালক
পরিচিতির কারণমহিষাসুরমর্দিনী (১৯৩১-বর্তমান)

বীরেন্দ্রকৃষ্ণের সর্বাধিক পরিচিতি তার মহিষাসুরমর্দিনী নামক বেতার সঙ্গীতালেখ্যটির জন্য। ১৯৩১ সাল থেকে অদ্যাবধি মহালয়ার দিন ভোর চারটের সময় কলকাতার আকাশবাণী থেকে এই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ এই অনুষ্ঠানের ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেছেন।[৩][৪] বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক নাটকে অভিনয় ও পরিচালনার কাজও করেন। ১৯৫৫ সালে নিষিদ্ধ ফল নামে একটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছিলেন তিনি।[৫]

প্রথম জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

১৯০৫ সালের ৪ আগস্ট উত্তর কলকাতায় মাতুলালয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের জন্ম হয়। তার ডাকনাম ছিল বুশী। পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর কালীকৃষ্ণ ভদ্র ও মা ছিলেন সরলাবালা দেবী। পরবর্তীকালে ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কেনা ৭, রামধন মিত্র লেনে উঠে আসেন তার পরিবারবর্গ। কালীকৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি ১৪টি ভাষা জানতেন। নিম্ন আদালতে দোভাষীর কাজ করতেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক পরিচিত ব্যক্তিত্ব। কালীকৃষ্ণ পুলিশ কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কালীচরণ ঘোষের দ্বিতীয় সন্তান সরলাবালা দেবীকে বিবাহ করেন। ১৯২৭ সালে তিনি "রায়বাহাদুর" খেতাব পান। কালীকৃষ্ণের দুই পুত্র জন্মায় - ভূপেন্দ্রকৃষ্ণ ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ।

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ১৯২৬ সালে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৯২৮ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ একাধিক ধ্রুপদি কাহিনিকে বেতার নাট্যের রূপ দেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি যোগ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিওয়। এই সময় থেকেই দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেবী দুর্গার পৌরাণিক কাহিনি অবলম্বনে দুই ঘণ্টার সঙ্গীতালেখ্য মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।[৬] এই অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা করেছিলেন বাণীকুমার ভট্টাচার্য এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক।[৬] বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভাষ্য ও শ্লোকপাঠ করেন। আজও দুর্গাপূজা শুরু হয় এই অনুষ্ঠানটির মাধ্যমে। তিনি সাতটি ছদ্মনামে রেডিওতে প্রচুর অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন। তিনি অনেক রম্যরচনা ও নাটক লিখেছেন।[৭]

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ মেস নং ৪৯ সহ একাধিক নাটক রচনা করেন।[৮] বিমল মিত্রের সাহেব বিবি গোলাম উপন্যাসটিকে তিনি মঞ্চায়িত করেছিলেন।[৯] ১৯৫২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সুবর্ণ গোলক গল্পটিকে তিনি নাট্যায়িত করেন।[১০]

উত্তরাধিকার সম্পাদনা

আজও দুর্গাপূজার সূচনায় মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটির রেকর্ড আকাশবাণী, কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত হয়। এই অনুষ্ঠানটি এতটাই জনপ্রিয় যে, ১৯৭৬ সালে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ বীরেন্দ্রকৃষ্ণের পরিবর্তে জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমারকে দিয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলে, তা জনমানসে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষকে সেই অনুষ্ঠানের পরিবর্তে মূল মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটিই সম্প্রচারিত করতে হয়।[১১]

এই ঘটনার উপর ২০১৯ সালে চিত্রপরিচালক সৌমিক সেন মহালয়া নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চরিত্রে রূপদান করেন শুভাশীষ মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে উত্তম কুমারের চরিত্রে অভিনয় করেন যীশু সেনগুপ্ত[১২]

২০০৬ সালের মহালয়ার দিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কন্যা সুজাতা ভদ্র সারেগামা ইন্ডিয়া লিমিটেডের তরফ থেকে তার পিতার এই মহান কীর্তির রয়্যালটি স্বরূপ ৫০,৯১৭ টাকার একটি চেক পান।[১৩]

রচনাবলি সম্পাদনা

  • হিতোপদেশ, ১৯৪৮
  • বিশ্বরূপ-দর্শন, ১৯৬৩
  • রানা-বেরানা, ১৯৬৫
  • ব্রতকথা সমগ্র, ১৯৮৫
  • শ্রীমদ্ভাগবত: সম্পূর্ণ দ্বাদশ স্কন্দ, উপেন্দ্রচন্দ্র শাস্ত্রীর সঙ্গে, ১৯৯০

নাটক সম্পাদনা

  • ব্ল্যাকআউট[১৪]
  • সাত তুলসী, ১৯৪০ [১৫]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Luthra, H. R. (১৯৮৬)। Indian broadcasting। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting (India)। পৃষ্ঠা 35। 
  2. Das, Sisir Kumar (২০০৬)। History of Indian Literature: 1911-1956Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 173। আইএসবিএন 8172017987 
  3. Mahalaya ushers in the Puja spirit The Times of India, TNN 19 September 2009.
  4. Hindustan year-book and who's who, Volume 60. Publisher: M. C. Sarkar., 1992. pp 227, Death date ref.
  5. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (ইংরেজি)
  6. Pragya Paramita (সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৬)। "Heralding The Goddess"expressindia.com। Indian Express Newspapers (Mumbai) Ltd। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. বিশ্বাস, পিনাকী (মার্চ ২০২২)। জ্ঞানাদার ডায়েরি থেকে। কলকাতা: ছাপাখানা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৯৭। আইএসবিএন 978-81-955817-5-7 
  8. "Timeout: Drama"telegraphindia.comThe Telegraph। ডিসেম্বর ২২, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-০৬ 
  9. Staging a comeback[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Screen (magazine) , September 19, 2009.
  10. The story of the Calcutta theatres, 1753-1980, by Sushil Kumar Mukherjee. Publisher: K.P. Bagchi, 1982. pp 291.
  11. Timeless Tunes Indian Express, Sep 29, 2008.
  12. "Mahalaya Review {3.5/5}: The film does a fair job of merging the facts with the screenplay till the end credits roll" 
  13. Sujata Bhadra[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Indian Express, Sep 26, 2006.
  14. Bangla Academy journal, Volumes 21-22, by Bāngla Akademi (Bangladesh). Publisher:Bangla Academy., 1995, pp 113
  15. Natya Shodh Sansthan, 1981-91: catalogue, 1991, by Natya Shodh Sansthan (Calcutta, India), Publisher: The Sansthan. pp 76.

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা