১১৩৮-এর আলেপ্পো ভূমিকম্প

দ্বাদশ শতাব্দীতে সিরিয়ার ভূমিকম্প

১১৩৮ সালের আলেপ্পোর ভূমিকম্প ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্পগুলির মধ্যে অন্যতম। এর নামটি উত্তর সিরিয়ার উত্তর আলেপ্পো শহর থেকে নেওয়া হয়েছিল। যেখানে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছিল। ১১ অক্টোবর ১১৩৮ সালে এই ভূমিকম্প হয়েছিল এবং এর আগের দশমীতে ছোট্ট একটি ভূমিকম্প হয়।[২] এটি প্রায়শই ইতিহাসের তৃতীয় মারাত্মক ভূমিকম্প হিসাবে তালিকাভুক্ত। চীনের শেনেসি এবং থাংশান ভূমিকম্পের পরেই এর স্থান। [৩] তবে, ১১৩৭ সালের নভেম্বর মাসে জাজিরা সমভূমিতে ভূমিকম্প এবং ট্রান্সককেশীয় শহর গাঞ্জায় ১১৩৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের বিশাল ভূমিকম্পের সাথে এই ভূমিকম্পের ঐতিহাসিক সমন্বয়ের উপর ভিত্তি করে ২৩০,০০০ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ১৫শ শতকে ইবনে তাঘরিবির্দি সর্বপ্রথম ২৩০,০০০ জনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন। [৪]

১১৩৮ সালের আলেপ্পো ভূমিকম্প
১১৩৮-এর আলেপ্পো ভূমিকম্প সিরিয়া-এ অবস্থিত
১১৩৮-এর আলেপ্পো ভূমিকম্প
মাত্রা[১]
ভূকম্পন বিন্দু৩৬°১৩′ উত্তর ৩৭°১০′ পূর্ব / ৩৬.২১৭° উত্তর ৩৭.১৬৭° পূর্ব / 36.217; 37.167

পটভূমি সম্পাদনা

আলেপ্পো ভূতাত্ত্বিক ত্রুটির "মৃত সাগর ট্রান্সফর্ম সিস্টেমের" উত্তর অংশ বরাবর অবস্থিত, যা আফ্রিকান প্লেট থেকে আরব প্লেট কে পৃথক কারী একটি প্লেট সীমানা। এই অঞ্চলে দুটি তীব্র ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছিল। যার প্রথম ধাপ শুরু হয় অক্টোবর, ১১৩৮ সালে এবং শেষ হয় জুন, ১১৩৯ সালে। এবং দ্বিতীয় ধাপের শুরু হয় সেপ্টেম্বর, ১১৫৬ সালে, এবং শেষ হয় মে, ১১৫৯ সালে। এই ভূমিকম্পটি পূর্বাপেক্ষা তীব্র ছিল। প্রথম ধাপ আলেপ্পোর আশেপাশের এলাকা এবং এদেসা অঞ্চলের পশ্চিম অংশ (আধুনিক সানলউরফা, তুরস্ক) কম্পিত করে। দ্বিতীয় ধাপে উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া, উত্তর লেবানন এবং আন্তাকিয়া (দক্ষিণ তুরস্কের আধুনিক আন্তাকিয়া) এলাকা বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়। [৫] দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, উত্তর সিরিয়া একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ভূমি ছিল। পশ্চিম ইউরোপীয়দের দ্বারা গঠিত ক্রুসেডার রাষ্ট্র ও এন্টিওচ রাষ্ট্র উত্তর সিরিয়ার মুসলিম রাষ্ট্র এবং জাজিরা ও আলেপ্পো এবং মসুলের সাথে ক্রমাগত সশস্ত্র সংঘাতের মধ্যে ছিল। [৪]

বিবরন সম্পাদনা

দামেস্কের সেই সময়ের এক কালজয়ী ঐতিহাসিক ইবনে আল-কালানিসী বুধবার, ১১ ই অক্টোবর, ১১৩৩ সালে মূল ভূমিকম্প লক্ষ্য করেছিলেন। ইবনে আল-কালানিসী লিখেছেন যে, এটির আগে ১০ ই অক্টোবর একটি প্রাথমিক ভূমিকম্প হয়েছিল এবং ২০ অক্টোবর রাতে আবার হয়েছিল ছিল। ২৫ অক্টোবর, ৩ অক্টোবর, ১ নভেম্বর রাতে এবং সর্বশেষ ৩ নভেম্বর ভোরে ভূমিকম্প হয়। তবে পরবর্তী যুগের লেখক কামাল উদ্দ্বীন ১৯-২০ অক্টোবর মাত্র একটি ভূমিকম্প লক্ষ্য করেছিলেন, যা আল-কালানিসীর বিবরণের সাথে একমত নয়। আল-কালানিসী ও অন্যান্য ঐতিহাসিকদের বিবরন ১০ ও ১১ অক্টোবর তারিকে ভূমিকম্প হওয়া কে সমর্থন করে। তাই ১১ ই অক্টোবর তারিখে ভূমিকম্প হওয়াকে অনুমোদনযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়।

সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল হারেম অঞ্চল, যেখানে ক্রুসেডাররা একটি বিশাল দুর্গ তৈরি করেছিল। সূত্রগুলি ইঙ্গিত দেয় যে দুর্গটি ধ্বংস হয়েছিল এবং চার্চ নিজেই ধসে পরেছিল। মুসলমানদের দখলে থাকা আথারিব দুর্গ ধ্বংস হয়ে যায়। দুর্গটিও ভেঙে ৬০০ দুর্গ প্রহরী মৃত্যুবরণ করেছিল। যদিও গভর্নর এবং কিছু কর্মকর্তা বেঁচে ছিলেন এবং তারা পালিয়ে যান মোসুলে। যুদ্ধের বাহিনী দ্বারা ইতোমধ্যে জয় করা জারাডনা শহরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছিল, যেমনটি ছোট শিহ দুর্গ ধ্বংস হয়ে গিয়ে ছিল।

সেই সময়কালে কয়েক হাজার লোকের বিশাল একটি শহর আলেপ্পোর বাসিন্দারা কম্পনের ফলে সতর্ক হয়েছিল এবং মূল ভূমিকম্পের আগেই গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে যায়। দুর্গের প্রাচীরগুলিও দুর্গের পূর্ব ও পশ্চিম দেয়ালের মতো ধসে পড়েছিল। তাদের নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরগুলি রাস্তায় পড়ার কারনে অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতির সময় থেকে প্রাপ্ত সূত্রগুলি কেবলমাত্র এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ যে, আলেপ্পো শহর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, যদিও তুলনার বিবরনে বোঝা যায় যে তারা ভূমিকম্পের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

মূল ভূমিকম্প এবং এর পরবর্তি ভূমিকম্প দামেস্কে অনুভূত হয়েছিল, তবে জেরুজালেমে নয়। আর রাক্কাহের মাটির গর্তে পরে লোকজনের মৃত্যুর জন্য আলেপ্পোর ভূমিকম্পকে ভুলভাবে দায়ী করা হয়, দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এই বিবরনটি উল্লেখ করেন, সিরিয়ার মাইকেল। কিন্তু এই বিবরনটি ভুল ছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Grǖnthal G.; Wahlström R. (২০০৯)। "A harmonized seismicity data base for the EuroMediterranean region" (পিডিএফ)Proceedings of the 27th ECGS Workshop 'Seismicity Patterns in the Euro-Med Region: 15–21। ২০১৯-০৪-১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. "Encyclopædia Britannica online". Retrieved 19 October 2011."Anysiclopedia। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "The top 10 deadliest earthquakes in history"msnbc.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০৪-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৩ 
  4. "Ambraseys, N. (2004), "The 12th century seismic paroxysm in the Middle East: a historical perspective" (PDF), Annals of Geophysics, Istituto Nazionale Geofisica e Vulcanologia," (পিডিএফ)Ambraseys, N. 
  5. "Guidoboni, E.; Bernardini, F. & Comastri, A. (2004), "The 1138–1139 and 1156–1159 destructive seismic crises in Syria, south-eastern Turkey and northern Lebanon", Journal of Seismology, Springer, 8 (1): 105–127, Bibcode:2004JSeis...8..105G, doi:10.1023/B:JOSE.0000009502.58351.06"Guidoboni