১০ স্টোরি ফ্যান্টাসি

১০ স্টোরি ফ্যান্টাসি (টেন স্টোরি ফ্যান্টাসি হিসেবেও পরিচিতি) ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ও ফ্যান্টাসি ঘরাণার পাল্প ম্যাগাজিন ছিল। পাল্প ম্যাগাজিনের ব্যবসা ঐ সময়ই পড়তির দিকে ছিল, তাই ম্যাগাজিনটির একটিমাত্র সংখ্যাই প্রকাশিত হয়েছিল। এ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গল্পগুলোর মান সাধারণভাবে বেশ ভালো ছিল এবং এতে জন উইন্ডহাম, এ. ই. ভ্যান ভগট এবং ফ্রিৎজ লেইবার প্রমুখ সাহিত্যিকদের লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। ম্যাগাজিনে প্রকাশিত গল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল আর্থার সি. ক্লার্কের "সেন্টিনেল ফ্রম এটার্নিটি" গল্পটি অন্যতম, যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ২০০১: আ স্পেস ওডিশি চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়।

১০ স্টোরি ফ্যান্টাসির একমাত্র সংখ্যার প্রচ্ছদ, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম জানা যায়নি

প্রকাশনা ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৫০-এর দশকের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি প্রকাশনার জগতে এক নাটকীয় পরিবর্তন আসে। ১৯৪৯ সালের শুরুর দিকে অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে পাল্প ঘরাণায়েও এক ধরনের পরিবর্তন আসে। ১৯৫৫ সালের শেষদিকে প্রায় সকল ম্যাগাজিনের প্রকাশনাই বন্ধ হয়ে যায় কিংবা ডাইজেস্ট ধরনে পরিবর্তিত হয়ে যায়।[১] পাল্প বাজারের ব্যাপক অবনতির পরেও ঐ সময়ে বেশকিছু নতুন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিভিত্তিক ম্যাগাজিন পাল্প আকারে প্রকাশিত হয়।[২] ১৯৫০ সালে এভন পাবলিকেশন্স রোমান্স, ওয়েস্টার্ন ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি - এ তিন ধরনে নতুন করে পাল্প ম্যাগাজিন প্রকাশের চেষ্টা করে। এর প্রতিটিতেই বেশকিছু পৃষ্ঠাজুড়ে কমিক্স থাকত। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বিষয়ক পাল্প আউট অব দিস্ ওয়ার্ল্ড অ্যাডভেঞ্চারস ম্যাগাজিনের দুটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়; অন্যান্যগুলোর কেবল একটিই প্রকাশের মুখ দেখে।[৩]

এত ব্যর্থতার পরেও এভনের মালিক জোসেফ মেয়ের তার পরের বছর আরেকটি পাল্প ম্যাগাজিন প্রকাশের উদ্যোগ নিলেন। জে.ডব্লিউ. ক্লিমেন্টস কম দামে একটি পাল্প ম্যাগাজিন প্রকাশের প্রস্তাব দেয়ার পরে মেয়ের এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এভনের নির্বাহী সম্পাদক ডোন্যাল্ড এ. উলহেইম নতুন এ ম্যাগাজিনের নাম দেন ১০ স্টোরি ফ্যান্টাসি, যদিও প্রকৃতপক্ষে এতে মোট ১৩টি গল্প ছিল। এর মুদ্রণে আউট অব দিস ওয়ার্ল্ড অ্যাডভেঞ্চারস ম্যাগাজিনের সাদৃশ্য ছিলঃ উভয় ম্যাগাজিনেই সূচীপত্রের জন্য বৃহদাকারের চিত্র সংযুক্ত থাকত। এর অভ্যন্তরীণ নকশার বেশিরভাগ কাজই এভনের কমিক্স বিভাগের উইলিয়াম ম্যাকউইলিয়াম ও "মার্টিন" কর্তৃক অঙ্কিত হয়েছিল।

মেয়ের নিজেই এ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ নির্বাচন করেন, উলহেইম নন। জন উইন্ডহাম রচিত "টির‍্যান্ট অ্যান্ড স্লেইভ-গার্ল অন প্লানেট ভেনাস" ("জন বেনন" ছদ্মনামে প্রকাশিত) গল্পের আঁচেই এই প্রচ্ছদ করা হয়েছিল।[৪] এই গল্পটি প্রথমে ব্রিটিশ নিউ ওয়ার্ল্ডস ম্যাগাজিনে "নো প্লেস লাইক আর্থ" নামে বিক্রিত হয়েছিল। উইন্ডহেম পরবর্তীকালে উলহেইমের কাছে এ গল্পের যুক্তরাষ্ট্রীয় স্বত্ব বিক্রি করেন। গল্পটি আটলান্টিকের দুই পাড়ের দেশেই প্রকাশিত হয়, একই সময়ে। মেয়ের নতুন ও আরো উত্তেজনাকর নাম বেছে নেন এবং পরবর্তী সংস্করণগুলোতে "নো প্লেস লাইক আর্থ" নামেই গল্পটি প্রকাশিত হয়।[৪][৫]

১০ স্টোরি ফ্যান্টাসির একটি বিখ্যাত গল্প "সেন্টিনেল ফ্রম এটার্নিটি", যার লেখক ছিলেন আর্থার সি. ক্লার্ক। ক্লার্ক ১৯৪৮ সালে বিবিসি আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় এ গল্পটি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু গল্পটি কোনো প্রকার পুরস্কার বা অনারেবল মেনশান - কিছুই পায়না।[৪][৬] পরবর্তীতে গল্পটির উপর ভিত্তি করেই ২০০১: আ স্পেস ওডিশি চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়। ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সকল গল্পের মানই বেশ ভালো ছিল, এবং নামকরা অনেক লেখক, যেমনঃ এ.ই. ভ্যান ভগ্ট, এল. স্প্রাগ দে ক্যাম্প, অগাস্ট ডার্লিথ এবং লেস্টার দেল রে প্রমুখেরা এসব গল্প লিখেছিলেন। খ্যাতিপ্রাপ্ত কিছু গল্পের মধ্যে সি.এম. কর্নব্লুথের "ফ্রেন্ড টু ম্যান", উলহেইমের "প্রাইভেট ওয়ার্ল্ডস" (মার্টিন পিয়ার্সন ছদ্মনামে প্রকাশিত), ফ্রিৎজ লেইবারের "ক্রাই উইচ" এবং ক্রিস নেভিলের "সিডস্ অব ফিউচারিটি" অন্যতম।[৪]

গল্পগুলোর মান বেশ উন্নত হলেও, প্রকাশক পরবর্তী সংখ্যা প্রকাশের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে রাজি হননি। এবং ১৯৫১ সালের বসন্তে প্রকাশিত এ সংখ্যাটিই ছিল ম্যাগাজিনটির একমাত্র সংখ্যা।[৪]

গ্রন্থাবলীর বিবরণ সম্পাদনা

ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন হিসেবে প্রকাশের ঘোষণা দেয়া হলেও মাত্র একটি সংখ্যাই প্রকাশিত হয়েছিল। ডোন্যাল্ড উলহেইম ছিলেন এই একমাত্র সংখ্যার সম্পাদক, যা ভলিউম ১-এর ১ নং সংখ্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। পাল্প ধরনে প্রকাশিত এ ম্যাগাজিনের দাম ছিল ২৫ সেন্ট এবং পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল মোট ১২৮। নিউ ইয়র্কের এভন পিরিওডিকালস ছিল এ ম্যাগাজিনের প্রকাশক।

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Ashley (1976), p. 106.
  2. Ashley (2000), pp. 220–223.
  3. Bousfield (1985a), pp. 467−471.
  4. Bousfield (1985b), pp. 654–659.
  5. Boston & Broderick (2013), p. 62.
  6. Cahir (2006), p. 228.

তথ্যসূত্র সম্পাদনা