হ্যাপী আখন্দ

বাংলাদেশী গায়ক

হ্যাপি আখন্দ (১২ অক্টোবর ১৯৬৩ - ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭) একজন বাংলাদেশী গায়ক এবং সংগীত আয়োজক। তাকে বাংলাদেশী সঙ্গীতের বরপুত্র বলা হত। তিনি আর ডি বর্মণ,আববাসউদ্দীন, মান্না দে, সমর দাশের মতো সংগীতজ্ঞের প্রশংসা আর স্নেহ অর্জন করেছিলেন নিজ যোগ্যতায়। ২৮ শে ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে তিনি অকালে মারা যান।[১]

হ্যাপি আখন্দ
জন্ম
হ্যাপি আখন্দ

(১৯৬৩-১০-১২)১২ অক্টোবর ১৯৬৩
পাতলা খান লেন, ঢাকা
মৃত্যু২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৭(1987-12-28) (বয়স ২৪)
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশাগায়ক
পরিচিতির কারণগায়ক
আত্মীয়লাকী আখান্দ (ভাই)

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

হ্যাপি আখন্দ ১৯৬৩ সালের ১২ই অক্টোবর ঢাকার পাতলা খান লেনে জন্মগ্রহণ করেন।[১] জন্মের সময় তার ভাই লাকী আখান্দ তার হাতে একটি পয়সা গুজে দিয়েছিলেন এবং প্রায় ৪-৫ দিন পর তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরও তার হাতে গুজে দেওয়া পয়সাটা ছিল। ছোটবেলায় ভাত খাওয়ার সময় তিনি কাকদের ডেকে ডেকে ভাত খাওয়াতেন।[২] তিনি কোন বিষয় সম্পর্কে একবার শুনলেই মুখস্থ করে ফেলতেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার হাতে গিটারের তাল ধরা দেয়। শুরুর দিকে হ্যাপী আখন্দ ভাই লাকী আখন্দের সাথে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিতেন তবলা বাজানোর জন্য।[৩]

ব্যান্ড গঠন সম্পাদনা

হ্যাপি আখন্দ 'উইন্ডি সাইড অব কেয়ার' নামে একটি ব্যান্ড গড়েছিলেন যা ছিল একটি পাকিস্তানি ব্যান্ড।[৩] সেখানে তিনি দক্ষ হাতে গিটার বাজানোর পাশাপাশি গানও গাইতেন। কলকাতার মধু মুখার্জি ছিলেন তার ছাত্র। ১৯৭৫ সালে 'আবার এলো যে সন্ধ্যা' গানটি লিখেছিলেন এসএম হেদায়েত এবং সুর করেছিলেন লাকী আখন্দ। এই গানটির সংগীত আয়োজন করে হ্যাপি আখন্দ বাংলাদেশ টেলিভিশনে গেয়েছিলেন। লাকী আখন্দের সাথে হ্যাপির বয়সের ব্যবধান বড়জোর ১০ বছরের হলেও তারা ছিলেন বন্ধুর মতো।[৩] ১৯৭২ এর পর ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২৬ শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর এর মতো জাতীয় উৎসবগুলোতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করতো হ্যাপী।[১]

জনপ্রিয় গান সম্পাদনা

হ্যাপি আখন্দের গাওয়া জনপ্রিয় গান হলো ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘কে বাঁশি বাজায় রে’, খোলা আকাশের মতো তোমাকে হৃদয় দিয়েছি, ‘নীল নীল শাড়ি পরে’, ‘পাহাড়ি ঝরনা’, ‘এই পৃথিবীর বুকে আসে যায়’, স্বাধীনতা তোমায় নিয়ে গান তো লিখেছি’।[৩] তাঁর সংগীত আয়োজনে ফেরদৌস ওয়াহিদের গাওয়া ‘এমন একটা মা দে না’, প্রয়াত ফিরোজ সাঁইয়ের গাওয়া ‘ইশকুলখুইলাছে রে মাওলা’ গানগুলো ওই সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সংগীত পরিবারে জন্ম নেওয়ার ফলে বাবা এবং বড় ভাই লাকী আখন্দের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সংগীতজ্ঞান, আবেশী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে গিটার, পিয়ানো, তবলা সহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সহজাত দক্ষতায় বিস্মিত করেছিল সেই সময়ের শ্রোতা ও শিল্পীদের। হ্যাপী আখন্দ সম্পর্কে সঙ্গীতজ্ঞ লাকী আখন্দ বলেন, ‘হ্যাপির সংগীত-প্রতিভা ছিল আক্ষরিক অর্থেই বিস্ময়কর। সংগীতের প্রতি তাঁর একাগ্র নিষ্ঠা আর ভালোবাসার পাশাপাশি স্রষ্টা প্রদত্ত কিছু সহজাত গুণাবলি ও দক্ষতার কারণে আমরা যারা একই সময়ে সংগীত চর্চা করতাম, তাদের সবার মধ্যে ও ছিল সর্বাপেক্ষা উজ্জ্বল। নিজের সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে হ্যাপি শ্রোতাদের হূদয়ের সব বন্ধ জানালা খুলে দিতে পারতেন। গিটার, পিয়ানো, তবলা যা-ই বাজাতেন, এক অদ্ভুত ভালোলাগার জন্ম দিতে পারত তাঁর সংগীত। পৃথিবীর নানা ধাঁচের সংগীত শুনে শুনে ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুণী শিল্পীদের সান্নিধ্যে অর্জিত সংগীতের নানা জ্ঞান ও দর্শন অকাতরে বিলিয়ে দিতেন নিজের বন্ধুপ্রতিম সহশিল্পী আর ছাত্রদের মধ্যে। সেই সঙ্গে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ও নতুনত্ব আনতে হ্যাপি তাঁর উদ্ভাবনী শক্তিকে সব সময় কাজে লাগাতেন। একবার কলকাতার এইচএমভি সংগীত প্রযোজনা সংস্থার একটি গানের রেকর্ডিংয়ে আমি, হ্যাপি ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল কাজ করছিলাম। হ্যাপি তবলা বাজানোর সময় শুধু তবলার “বায়া” দিয়ে এমন অদ্ভুত সুন্দর তাল বাজাচ্ছিলেন যে এইচএমভির তৎকালীন পরিচালক কলিম শরাফী রেকর্ডিং রুমে ঢুকে অবাক হয়ে হ্যাপির বাজানো দেখছিলেন। হ্যাপির সংগীত সবাইকে আনন্দ দিলেও তার নিজের জীবন কেটেছে অনেক অভিমান আর কষ্টে।’ [৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুব্রত বড়ুয়া রনি (৪ জানুয়ারি ২০১৩)। "মনে পড়ে তার কথা"দৈনিক পূর্বকোণ। পূর্ব নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০২-১৫ 
  3. আখন্দ, লাকী (৮ অক্টোবর ২০১০)। "এক যে ছিল হ্যাপি"দৈনিক সমকাল। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২০১১  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. দাস, সৌরভ (১৪ অক্টোবর ২০১০)। "আবার এল যে সন্ধ্যা"দৈনিক প্রথম আলো। ২০১৯-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ২০১১  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)